Author Picture

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

গাজী গিয়াস উদ্দিন

ক্লান্তির গল্প

যারা উপনীত সন্ধ্যে বেলায়
ফিরে দেখো দিন
মলিন স্বপ্ন – ধূসর জীবন,
প্রখর রোদের শায়ক ক্রীড়া প্রাচুর্যে
আত্মহারা ছিলে স্বাধীন একদিন,
পশ্চিম বেলা চেয়ে চেয়ে আজ
শেষ করো ক্লান্তির গল্প।

 

ছড়ানো বিদ্রুপ

সাপের চুমোতে কোথা বিষ
হিংস্র নিশ্বাসে তোমার গরল
বিশ্বাসে আমাকে পাবে জিয়ল সরল।

রুক্ষতা ছেঁটে ফেল – চেহারা কমনীয়
সব ভুল ভুলে যাও চড়ুই যৌবন
রতিশীল রুচিশীল নমনীয়।

এত প্রেম এত রতি বিলিঙ্গ খেলা
সূর্য ভূমিতে হেলে – থেমে নেই বেলা।

এ জীবন ক্ষুধা মনে ও রণে চিন্তাশীল
চারপাশে ছড়ানো বিদ্রুপ তোমার খিলখিল।

 

বেলীর সরোদ

ফুলের প্রফুল্ল সত্তা অপত্য প্রেম
কুঞ্জ সাজাবে যদি প্রসত্য শ্যাম!

এ ফুল স্বর্গধন মর্ত্য ভূষণ
এ ফুল অর্ঘ্য ধ্যান – হয়না দূষণ,

এ পুষ্প সুঘ্রাণও হারাবে প্রীতি
এখনো হাসো- লুকাও কান্না ভীতি।

এ জীবন সৌরভে সুস্নিগ্ধ বোধ
মধুময় বাজুক হেনা – বেলীর সরোদ।

 

বিতর্কের রহস্য জালে

কেন আত্মসমর্পণ করো তুমি
বিধাতার বিস্ময়ে – প্রকৃতির সংশয়ে?
জটিল সংকটের আবর্তে ঘুরপাক মিথস্ক্রিয়া
দোষারোপের আঙ্গুল একবার স্বজাতির দিকে
দশবার যায় দ্বান্দ্বিক মত-বৈষম্যে
আরো কিছু স্বভাবের ব্যাখ্যায়!
কজন ভোলা মনে নিরাসক্ত গান গায়?

দেহ- মনো সমাজ – পরিবেশ ভাগ্য
মানবপ্রকৃতি, পুঁজি – শাসন
হিংস্র চাহিদার মারপ্যাঁচে সুষম ভালোবাসা
সাম্য- সংস্কৃতি বিশ্বে এতোই দুরাশা?

থাকে শুধু আত্মা ও মৃত্যুর পরিচিত জ্ঞান
বিতর্কের রহস্যজালে ভাঙবে কি জটিলতা ধ্যান?

 

ম্মৃতি- ছল

হংসীর জলকেলি প্রার্থিত স্বর্গ কদিন কাটে হংসের
একদিন উষ্ণতায় তোমার হয়েছিল ধন্য পিরিতি ঢের!

উর্বশী শবনম- শিশিরকণা আঁধারে গগন শশী
ইউসুফের জুলেখা হায় কৃষ্ণের রাধা প্রেয়সী!

কবিতার পংক্তিতে শিল্পের চিরায়ত হৃদয় ছোঁয়া
স্বপ্নের রানী জাগরণে বনলতা হীরারণ্যে কুহেলি – ধোঁয়া।

বর্ষণ- সন্ধ্যার তারাকাশে বিদায়ী সূর্য বধু
রাঙ্গুনিয়ার হুসনা খানম প্রথম বিরহ নিধু।

সিন্ধুর উর্মিমালা অংশুছটায় ক’ফোটা অশ্রুজল
হাফিজের নাবাত – রবীন্দ্রের ওকাম্পো আমার স্মৃতি- ছল!

 

উদভ্রান্তের গান

আমার হৃদয়বালা মরমের ফাল্গুনী পাখি
পূর্ণশশী শুক্লার তিথি রাধামন্ত্র আঁখি।

দিয়েছিলে যৌবনে মহামূল্য কৃষ্ণজীবন
প্রণয় অভিসারে সেসব উপাখ্যান প্রোজ্জ্বল আমরণ।

ভেলুয়া নগর বুকে পথে পথে প্রেয়সীর স্মৃতি
প্রিয়া মোর কোথা আজ, বসন্তের অপরাজনীতি?

কেন ভুল মহাশূল সোনার কপাট ভেঙে হৃদয় হরণ
সোনালু ফুল হারায় দুকূল দুঃস্বপ্নের রক্তক্ষরণ।

আমি আজ অন্ধ মূক বিরহ বিদগ্ধ বধির প্রেমিক
বিরহিণী শিরী প্রান্তর গিরি উদ্ভ্রান্তের তরে শত ধিক!

আরো পড়তে পারেন

তরুন ইউসুফের একগুচ্ছ কবিতা

বহ্ন্যুৎসব কত কিছু পুড়ল! গাড়ি পুড়ল বাড়ি পুড়ল দম্ভের দালান পুড়ে ক্ষার জলপাই সবুজ ট্যাংক নামল পুড়ল বই গল্প রূপকথার বেলুন হাতে পুড়তে পুড়তে ফানুস হয়ে উড়ে গেল বালক মায়ের আঁচল পুড়ল পুড়ল বুকের কাছের লোক যুবকের বুক পোড়াতে পোড়াতে পুড়ে গেল বন্দুক, থানার সেপাই কারো কারো স্বপ্ন পুড়ল আমিও পোড়ার গন্ধ পাই- আমার পুড়ল….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

বাবা আপনার ব্যর্থ শরীর জানত নিরাময় উড়ে গেছে আসমানে, আপনার মৃত্যু হবে। শেষবেলায় আপনি বড় নিঃস্ব, ঈশ্বরের মত নিদারুন, একমাত্র একা। সেকারনেই আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে ভেন্টোলিন সিরাপ খেতেন, অ্যাসমা’র বড়ি গিলে সারা রাত কাঁশতেন। আপনার কফ গলানো কাঁশির শব্দে কোন কোন রাতে আমাদের কাঁচা ঘুম ছিঁড়ে যেত, আমরা বিরক্ত হতাম। তারপর, আপনার জবুথবু মুখের দিকে….

মাহমুদ দারবিশের ডায়েরি ‘নদী মরে যায় পিপাসায়’— (পর্ব: ২)

মেয়েটি আর তার চিৎকার সমুদ্রতীরের মেয়েটি, যার একটি পরিবার আছে আর সেই পরিবারটির একটি বাড়িও আছে। বাড়িটির মধ্যে দুটি জানালা আর একটি দরজা আছে। সমুদ্রে একটি যুদ্ধজাহাজ মজার ছলে তীরে হাটাহাটি করতে থাকা লোকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে: চার, পাঁচ, সাত জন বালির উপর পড়ে যায়। একটি অস্পষ্ট ঐশ্বরিক হাতের সাহায্যে মেয়েটি কিছুক্ষণের জন্য কোন প্রকারে….

error: Content is protected !!