Author Picture

শতাব্দী জাহিদের তিনটি কবিতা

শতাব্দী জাহিদ

চিরপূণ্যের বৃষ্টির আয়োজন

অগ্রহায়ণের ঠান্ডা মেঘের ছন্দে নেমে আসা শীতের বৃষ্টি
তোমার চোখের ফ্রেমে চলে যাচ্ছে— ফলের দোকানে ঝুলে থাকা কলার কাঁদি।
আবাসিক হোটেলের মুছে যাওয়া নাম, অসামাজিক কার্যকলাপ মুক্ত পরিবেশ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত
জুম্মায় বিপ্লবী মুসলীমদের হুংকার নেমে এসেছে— বিরিয়ানী, গোস্তের ঘ্রাণে বাড়ি ফেরার আয়োজন।

বাংলাবাজারের ভিজে থাকা আকাশটা আমরা মাথায় তুলে নিয়ে
তোমার গোলাপি লিপষ্টিকের ঢেউয়ে আমরা চা খাচ্ছি উল্লাসে—
মৎস্য ব্যাপারিরা হাঁক তুলে, বৃষ্টিতে নেমে এসেছে নতুন মাছ
তাজা মাছ নিয়ে বাড়ি ফেরে কেউ কেউ, ব্যাপারির ছন্দের টোপে।
আমি তো এদের দলে নই, আমি এইসব ছেড়ে অনেক রাতে বাড়ি ফিরি একা

প্রোডিউসারকে সিনেমার স্ক্রিপ্ট শোনাবো বলে— লিখি-কাটি, আবার লিখি
পরদিন ঠিক তাকে বলে ফেলি— রিক্সার ঠান্ডা বাতাসে মেঘের দোলনায়
তোমাকে ছুয়েছে যে জল, আমি তো তাদের সিনেমা বানাই
আদতে আমি তাদের চিত্রকর।

 

কোয়ালা

কোয়ালা, একদিন নাম না জানা কোন শান্ত নদীর পারে একটা ছোট ঘর তুলবো
.           একটা ঘাসের বিছানা আর এক ফালি সাদা নীল আকাশ
.           মাঝে মাঝে মেঘ যেতে পারে তোমার চুল স্নান শেষে, আমি দেখবো—
.           তবে বৃষ্টির আসা বারণ। কেউ তোমাকে ছুলে আমার ঈর্ষা হবে;
.           আমি খুব সাধারণ তাই।

কোয়ালা, তোমার স্ট্রেট না করা চুলের গুহায় একটা পাখির প্রাসাদ করলে কেমন হয়?
.           আমাদের একটা রাজা-রানী ভাব হলো—
.           শাসক না হয়ে দুনিয়াটা ভালোবাসায় আঁকলাম, একটা যাযাবর সাম্রাজ্য হল আমাদের
.           বন্ধ করে দিলাম অস্ত্র কারবার, বিষের উপকরণ করলাম বাজেয়াপ্ত।

কোয়ালা, নাভীর বৃত্তাকার সীমানায় একটা প্রাচীন ঘোড়াশাল করে ফেললে কেমন হয়?
.           ঘোড়ায় চড়াবার বাহানায় তোমার নাভীর আদরে ঘুমিয়ে পড়লাম দাঁড়িয়ে
.           আবার তোমাকে ঘোড়ায় উঠাবার কায়দায় বড় নিঃশ্বাস ফেললাম গায়ে—
.           কোমরে হাত রাখলাম মাতাল যুদ্ধাহতের মত।

কোয়ালা, আমাকে গণিতশূন্য একটা বুদ্ধি দাও তো, একটা জীবন
.           তোমার ঘাম গন্ধ, সাত-পাঁচ, ভালো-মন্দ, স্বপ্ন-বাস্তবতা বেবাক বুকপকেটে নিয়ে
.           পরাজয় শূন্য, হারাবার শূন্য একক খেলা হতে পরি—

.           এমন একটা খেলার নাম দাও তো, মাঠ আবিষ্কার করে নিব নিজস্ব মহিমায়।

 

শবযাত্রা

জাত্যভিমান এক সিংহের জীবনকালেই শবযাত্রার ঘোষণা হলো বনের মাঠে
সিংহ বাবুতো এতকাল ছিল— জয়পত্র পাঠের অভিধানে
কিন্তু তার কেশরী বৃত্তে থাকা শক্তিমান কান মেনে নিতে চায় না। হুংকার তোলে—

জাত্যভিমান সিংহ, শরীর-মনহীন দৃষ্টিতে আবিষ্কার করে
আবছা কাছে আসতে থাকা প্রেমিকার চোখ।

আরো পড়তে পারেন

তরুন ইউসুফের একগুচ্ছ কবিতা

বহ্ন্যুৎসব কত কিছু পুড়ল! গাড়ি পুড়ল বাড়ি পুড়ল দম্ভের দালান পুড়ে ক্ষার জলপাই সবুজ ট্যাংক নামল পুড়ল বই গল্প রূপকথার বেলুন হাতে পুড়তে পুড়তে ফানুস হয়ে উড়ে গেল বালক মায়ের আঁচল পুড়ল পুড়ল বুকের কাছের লোক যুবকের বুক পোড়াতে পোড়াতে পুড়ে গেল বন্দুক, থানার সেপাই কারো কারো স্বপ্ন পুড়ল আমিও পোড়ার গন্ধ পাই- আমার পুড়ল….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

বাবা আপনার ব্যর্থ শরীর জানত নিরাময় উড়ে গেছে আসমানে, আপনার মৃত্যু হবে। শেষবেলায় আপনি বড় নিঃস্ব, ঈশ্বরের মত নিদারুন, একমাত্র একা। সেকারনেই আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে ভেন্টোলিন সিরাপ খেতেন, অ্যাসমা’র বড়ি গিলে সারা রাত কাঁশতেন। আপনার কফ গলানো কাঁশির শব্দে কোন কোন রাতে আমাদের কাঁচা ঘুম ছিঁড়ে যেত, আমরা বিরক্ত হতাম। তারপর, আপনার জবুথবু মুখের দিকে….

মাহমুদ দারবিশের ডায়েরি ‘নদী মরে যায় পিপাসায়’— (পর্ব: ২)

মেয়েটি আর তার চিৎকার সমুদ্রতীরের মেয়েটি, যার একটি পরিবার আছে আর সেই পরিবারটির একটি বাড়িও আছে। বাড়িটির মধ্যে দুটি জানালা আর একটি দরজা আছে। সমুদ্রে একটি যুদ্ধজাহাজ মজার ছলে তীরে হাটাহাটি করতে থাকা লোকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে: চার, পাঁচ, সাত জন বালির উপর পড়ে যায়। একটি অস্পষ্ট ঐশ্বরিক হাতের সাহায্যে মেয়েটি কিছুক্ষণের জন্য কোন প্রকারে….

error: Content is protected !!