বীভৎস খেলা
নগরে বাতাসে মথিত
জনস্রোতের কোলাহলে
শুনতে পেয়েছি সারিগান
গঞ্জের হাটে
আকাঙ্খার গভীরে
মন্দ্রিত অভিন্ন প্রাণ
নীরব দর্শক ছিলাম
ব্যর্থতার করুণ গান ফেরার
মহড়ায় বঞ্চিত কুঁড়েঘরে
সরাইখানার- শুঁড়িখানার
মাছিরাও নেশায় বুদ্বুদ
প্রকম্পিত কান্নার পর একদিন
হাসির তিলকরেখা বিচ্ছুরিত
শৈশবের ক্ষুধার্ত চিৎকার
ক্রর হাসি চেপে মৃত্যু পরোয়ানা
ঝুলে ভাগ্য প্রহসনে
যুদ্ধের ব্যগ্র দামামা
থেমে গেলো- থেমে যাবে
মাতাল মাছিদের মচ্ছব
সংক্রমণের জোয়ার থামাবে কে ?
হিংস্র বীভৎস খেলা।
যাযাবর ব্যাধি
অসময়ে গজানো ব্যাধিগুলো প্রশ্রয় খোঁজে
তোমরা যাকে প্রেমের মহত্ব দাও
সে স্বর্গরত্ন সুযোগে মর্ত্যকে তছনছ করে দেয়,
জলের প্রলয়- সমুদ্রব্যাধিতে জনপদ ডোবে
তখন আপন পর রাধাকৃষ্ণের কেউ থাকেনা
তখন দুটো সত্ত্বার সন্ধিসূত্র মানেনা গণিত
মানে জ্ঞান-বিজ্ঞান-ধর্ম দর্শন
সমাজ সংসার দুহাতে ছাই উড়িয়ে
সে বিষমুরলী বাজায় বৃন্দাবনতত্ত্ব
অলিকূল গুঞ্জরণে ভ্রমে কুহুকুহু
মধুঋতু মধুমিলনে রাধার জীবনসখা
অসময়ে মেতে উঠে যাযাবর ব্যাধি
যদি চড়ুই হয়ে ঘর বাঁধি
বহুগামী বাবুই কেনবা কাঁদি ?
ভুলোমন দৃশ্যমান হও
যন্ত্রণার যুক্তি বোঝো
দুর্গতের ক্ষতের উপশম খোঁজো
ব্যাধির রক্তক্ষরণ থেকে মুক্তি দাও।
সুরের মাঝে
সুদৃশ্য স্বর্গীয় মেয়েটি
গান গেয়েছিল- দুটোই স্বর্গীয়
শিল্পীর দেহপদ্ম- এক পুরুষের চোখ
যুবতী কি তরুণী সেজেছিল
খোঁপায় রজনীগন্ধা
খুবসুরত আলো ঝলমলো
গানের সুর আর জুটির যৌথকণ্ঠ
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর একটুকরো বেহেশ্ত
হুর গেলমানের কলকাকলিতে উদ্ভাসিত
হৃদয় মঞ্চেও তোলপাড় শীতের সন্ধ্যায়
রোমাঞ্চ রাত কোনদিন ভুলবোনা
জলসা ভুলিয়েছে ঘরে ফেরা।
অবিশ্বাস্য আনন্দ আন্দোলন
ঢেউয়ের প্রপাত- কেউ জানেনা
বন্ধুত্ব- মনুষ্যত্ব- শুদ্ধতা সব কাছে আসে,
জানলাম- দূরে সরে জীবনের অপগ্লানি
হায় এ-তো হারিয়ে যাবার সময়
এম্নি সুরের মাঝে যদি হতো
বসবাস চিরকাল?
যাই যদি
জন্মস্থানে ফিরে যেতে আকুলতা সবার
যাবো যদি জন্ম বাড়িঘরে,
দু’দিনের অতিথি এ ক্ষণিকালয়ে
ছেড়ে যেতে বাধা কিসের তবে।
জন্মপূর্ব সবি রেখেছো আঁধারে
বড্ড মায়ায় পড়ে গেছি এপারে,
কতো শংকা জাগে যেতে ওপারে !
সবেতো গেলো নির্ভয়ে অজানায়
আমিও যদি যাই- চিরবিদায়
এগিয়ে দিয়ো ভাইবন্ধু অভাগারে।
মায়াটুকু মধুটুকু
আব্রুর শালীনতা কাড়ে যদি স্বাধীনতা
তবে ঢেকে দাও এ মহান প্রকৃতি
নিসর্গের বন্দনায় মানায় কি অধীনতা ?
আরবের শ্রেষ্ঠ কবি ইমরুল কায়েস
লুটে নেয় বুকে বস্ত্র- রক্ত প্রবাহের আনন্দ
উনায়যা বিবস্ত্র স্নানোত্তর-লাজুক প্রেয়সী
রাধাকৃষ্ণের ‘বস্ত্রহরণ খণ্ড’ শাস্ত্র
উন্মোচিত হোক বিবস্ত্রশাস্ত্র
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য ভূয়সী।
প্রাণসখী, একান্ত কামনা বশে
বস্ত্রাপসরণের প্রতীক্ষার মায়াটুকু মধুটুকু
অনন্ত রসবিহবল সূর্যোদয়-
মহানের মহত্ত্ব অম্বর- তাই নীলাম্বরী
কবির বাসররাত্রির পবিত্র বাসনা স্মরি।
প্রেমধন জাগো বসন্ত হৃদয় ধমনী ক্ষরণ
শোনো ওই স্বর্গমন্ত্র- পূজিত রমণী শরণ!
মহাযাত্রার পথে পথে
প্রকৃতির রহস্য সেঁচে আমরা কি পাই?
বজ্রবিজলী এ সময়ে করে উৎপাত
কেউ মেজাজ বিগড়ে গর্জে উঠে !
প্রকৃতি ও মানুষের হাসিকান্না
দুটোই নশ্বর- রহস্যবাজ।
প্রকৃতি- মানুষ সেবার কৃতিত্বে মত্ত
এ জগৎ- এ সভ্যতা- সংস্কৃতি চর্বিত চর্বন
মানুষের মহাযাত্রার পথে পথে রহস্য ছড়ানো।
স্বার্থসিদ্ধি এবং ভোগ করার মূলনীতি
মানুষ শিখেছে
আর কিছু তার ঢোকেনা মাথায়
লাভ কষে আকাশে পাতায় পাতায়।
ভুলেছে নিরীহ সজ্জন সুকৃতি আজ
শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত সমাজ
মনুষ্যত্বের স্বপ্নকে পারেনা গুড়িয়ে দিতে
জুলুমের অদম্য ভোগ- তৃষ্ণা
হিংস্র নররূপী কারা এরা
চিনিনা জানিনা
কিভাবে প্রপঞ্চে ফেরা।
স্বর্গমর্ত্য একাকার
অন্তরীক্ষে নক্ষত্রগুলো হাজার শতাব্দী জুড়ে পুড়ছে
জ্বলছে আমাদের আগুন বিচিত্র দ্বন্দ্বসংকটে,
আমরা তরুপাখি, ফুলশিশু নারী থেকে
আজো পাইনি পরম কোন দীক্ষা,
নিরুত্তাপ এ জীবন অফলন শস্যখেতে
অভাবের অভিশাপে কলংক ভিক্ষা
শিখেছে আলস্য ব্যাধি বিজয়ের ডানা এক
কুসংস্কার ঢিবি
সুন্দর চিবিয়ে খায় অসুন্দর প্রিয়তম,
ভূ-মাটি চুলার আগুনে জ্বালানো যায়না
কালো ধোঁয়ায় আটকে দম
যারা মিশেছে মাটির গহীনে সমাদর শয্যায়
নয় পরাজয়-সমর্পন অনুপম,
মহাজাগতিক শোভাযাত্রায় নতুন পৃথিবীর খোঁজে
স্বর্গমর্ত্য একাকার-নক্ষত্রের স্বর্গায়নে মানুষ
দর্শন বিজ্ঞান নুয়ে পড়ে, সাজদার মানে বোঝে !