Author Picture

সোহরাব পাশা’র একগুচ্ছ কবিতা

সোহরাব পাশা

নিদ্রিত ঘ্রাণের শব্দ

দীর্ঘ যায় আশালতা
ফিরে আসে বিষণ্ণ গোধূলি
ফিরে আসে দুঃখিত সকাল,

ক্ষয়ে যাওয়া এক দূরের উপনিবেশ
পাখির চেয়ে মানুষের কোলাহল বেশি
কোনো মৃত্যু মানুষকে অপরাধী করে না
নিঃশ্বাসের রোদে আবছায়া নিদ্রিত মেঘ
স্মৃতির অসুখ বাড়ে;

দূরে নির্জন আধাঁরে জেগে ছিলো মানুষের কথা
পুরনো সে বাড়ি সেই ছায়াপথ মায়াপথ জুড়ে
কতো ভুল মানুষের ভিড়ে তুমিও কী গিয়েছো ভুলে
অপ্রাপ্তির নির্ঘুম বাসনা
অগোছালো দিনগুলি গুছিয়ে নেওয়ার
দিন
মানুষের কী প্রিয় থাকে শুধু ধূধূ গতকাল!

 

আগস্টের কালোমেঘ

অবরুদ্ধ গোলাপ বাগান
প্রিয়ছায়া ছিঁড়ে যায় ভুল মানুষের দীর্ঘ ভিড়ে
নেমে আসে তীব্র আবছায়া মেঘের অক্ষর
শূন্যতার হাত ধরে দীর্ঘ যায় স্বপ্ন-ভালবাসা,

শিশুর হাসির ভেতর ছিটকে পড়ে রক্ত
তীব্র লাল রক্ত ।বাতাস ভিজে যায় মৃত্যুগন্ধে

অশ্লীল আগুনে পোড়ে প্রিয় পাতাগুলি
বিষাদের কবিতা লেখে বাংলাদেশ;

বিষণ্ণ বিরাম চিহ্নগুলি নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে
ধূলির কুয়াশা ওড়ে
উদ্যান ভুলে প্রজাপতি বসে থাকে ভাঙা কার্নিসে
বিষাদ নদীর ঢেউ ভাঙে অপর সন্ধ্যার চোখে
রাত্রিরা নোঙর ফেলে যতদূর শব্দের রোদ্দুর
বারান্দায় নেমে আসে উজ্জ্বল আধাঁর
মানুষ ভুলে যায় শরীরের তীব্র আগুন ভাষা
চোখের হাসির ঘ্রাণ
অন্ধকার অনুবাদ করে প্রিয় সম্পর্কের দ্যুতি;

স্তব্ধতার অগ্নিজলে দাঁড়িয়ে অবাক-বাকরুদ্ধ
বাংলাদেশ ,
পৃথিবীতে নিয়ত ভুল মানুষগুলি সুন্দরকে হত্যা করে।

 

তোমার জন্যে

চারদিকে নৈঃশব্দ্যের শব্দ-সৃজনের পাড় ভাঙে ,
ভাঙছে প্রিয় গল্পের বাড়ি

দৌড়ুচ্ছে সবাই-অস্থির তোমার জন্যে
টোকা দিচ্ছে অন্য দরোজায় –
যেখানে তোমার উপস্থিতি নেই দীর্ঘকাল ধরে;

অন্যরকম ঘ্রাণের শব্দ মধ্যরাতে
মেঘের পঙক্তি খোঁজে অপর আঙুল
তোমার চুলের ভাঁজে- বিহ্বল শরীরে,

কোথাও কেউ গোপন করছে অবেলার ক্লান্তি অশ্রু
শেষ পাতাটি থেকেও সরে যাচ্ছে সোনায় মোড়ানো
স্নিগ্ধ আলো
শুধু তোমার চোখের উপমা ছাড়া অন্য কোনো
প্রিয় ব্যাখ্যা নেই গোলাপের;

ডানা ভাঙা নদী ডাকে-‘ও জল ও জল ‘
জল নেই, উঠে আসে রৌদ্রেপোড়া কালি
শূন্যতার বিষণ্ণ বিদ্রুপ,

তুমি এখন ভীষণ অন্য প্রিয়
খুব রাত্রি প্রিয় বাসনা বৃষ্টির কাছে।

 

বাড়িগুলি খুব একা

কেউ আসবে না অবেলায়
ভালোবাসার চেয়ে গুঞ্জন বেশি গাঢ়
চোখের কার্নিসে বেড়ে যাচ্ছে
তীব্র ভীতি ও সংশয়ের বিষণ্ন মেঘ;

বিচ্ছিন্নতার বিহ্বল ছায়াগুলি জন্মান্ধ বধির
ক্লান্তির কালো আগুনে ত্রস্ত-
দ্রুত বাড়ছে ভুল-সম্পর্কের দূরত্ব
স্নিগ্ধ রোদের নিঃস্বতা;

দীর্ঘ অন্ধকারে ভালো থাকে না মানুষ
শূন্যতাই সব চেয়ে ভারী
জ্যোৎস্নার তৃপ্ত অহঙ্কারী প্রতিভা নেই
কান্নার অন্ধ প্রহরে;

দুর্দান্ত কোলাহলের ভিড়ে
বাড়িগুলি খুব একা-
প্রিয়গল্পগুলি নিঃসঙ্গ-নির্জনে
পোড়ে ;

শোক ও আর্তনাদের শুশ্রূষা নেই
পৃথিবীতে
বাড়িগুলি খুব একা।

 

বধ্যভূমি : একাত্তর

দূর থেকে
গদ্য রীতিতে মেঘেরা আসে
কোথাও নির্জন হারিয়ে যায়
সঞ্চয়ের প্রত্ন মুদ্রা,

গূঢ় অন্ধরাত্রির মাত্রাশূন্য অক্ষর
দাহ পথে নীল রক্তপাত
অর্ধসেদ্ধ দেহ ,আগুনের লাল ঘূর্ণি
দগ্ধ ছেঁড়া প্রিয় ছায়া
রুগ্নদিন
হৃদয় তখন বেদনার বধ্যভূমি;

দুঃসহ উৎপীড়ন-প্রতিশ্রুতি নেই শুশ্রূষার
মর্মের ভেতরে ধূধূ বিদীর্ণ দহন
তীব্র ভাঙচুর নিঃস্বতার অশ্লীল গুঞ্জন-ঈর্ষা
প্রবঞ্চনার সূক্ষ্ম দ্যুতি মলিন গোধূলি সন্ধ্যের
দীর্ঘ নির্জনতা কাঁপা অশ্রুশূন্য চোখ,

মানুষ ভুলে যায় বিনয়ী শিল্পভাষা

উন্মাদ সময়-নিঃস্ব কোলাহল। অন্ধ
স্বপ্নের কুহকে ছেঁড়া ক্লান্ত দীর্ঘশ্বাস

মাটির শেকড় খোঁজে ভীত-ত্রস্ত চোখ
উন্মূল জীবন;
বধ্যভূমি থেকে তীব্র শহিদ মিনার
অবাক হাসে প্রিয় বাংলাদেশ।

আরো পড়তে পারেন

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১) মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার….

কামরুল আলম সিদ্দিকী’র একগুচ্ছ কবিতা

সেরিব্রালে হারানপাড়া সেরিব্রালে হারানপাড়া, রাত জমেছে ঊষে; হুঁশ ফিরেছে মনের চুলোয় ধিকিধিকি তুষে! তুষের জ্বালে হাড়ের ব্যথায় ওঠছে কথা ভালের— টের পেয়েছি পিঁড়ায় তোমার নড়ছে নূপুর কালের! একটু ধরো, জ্বালাই কুপি— ঠুলিমুসি খুঁজি, ঠুলি তোমার ভাঙছে বেড়াল, মনটা খারাপ বুঝি? মুখটা তোল চোখটা দেখি, কোন বিড়ালী নাচে; কোন সরালি ডুব দিয়েছে পরের গাঙ্গের মাছে! একটু….

error: Content is protected !!