
যুবক হতে চলা সকালের গায়ে বার্ধক্যের ক্লান্ত আলো যে হতাশার কথা মনে করিয়ে দেয়। তেমনি হতাশা আর পুরো শরীরে ব্যথা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে এক রোগী।
রোগী: ডাক্তার সাহেব আমার সারা শরীরে ব্যথা, যেখানে ধরি সেখানেই ব্যথা। আমাকে এই ব্যথা থেকে বাঁচান ডাক্তার সাহেব।
ডাক্তার: পুরো শরীরে ব্যথা তো অনেক ভয়ের কথা। আচ্ছা আপনি আপনার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিয়ে চাপ দেন তো দেখি।
ডাক্তারের কথা অনুযায়ী রোগী তার ডান হাত দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চাপ দিতে লাগলো এবং সেই সাথে চিৎকার করতে লাগলো। রোগীর চাপ দেওয়া আর চিৎকার দেওয়া লক্ষ্য করে ডাক্তারের সন্দেহ হল। ডাক্তার রোগীকে বলল, ’আচ্ছা আমার হাতে চাপ দেন তো দেখি।’ রোগী তার ডান হাত দিয়ে ডাক্তারের হাতে চাপ দিয়ে নিজেই চিৎকার করে উঠলো।
ডাক্তার: বুঝতে পেরেছি। আপনার পুরো শরীরে না, আপনার ব্যথা আঙ্গুলে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান চিত্র হানিফ সংকেতের এই কৌতুকের সাথে অনেকটাই মিলে যায়। বাংলাদেশ দল যখন হারে— তখন বলা হয় অমুক খেলোয়ারের কারণে হেরেছে, অধিনায়কের কারণে হেরেছে, কোচের কারণে হেরেছে। তাই কোচ বদলাও, অধিনায়ক বদলাও, নির্দিষ্ট খেলোয়ারকে বাদ দাও; কিন্তু মূল সমস্যা যে বোর্ডে সেখানে তাকানো, সেটাকে বদলানো বা তার ওপর থেকে পর্দা সরাবে না। কারণ তা হলেই চালু হয়ে যাবে অযোগ্যতা আর স্বেচ্ছাচারিতার তথ্যচিত্র।
আমাদের রাজনীতিবিদদের মতো আমাদের বোর্ড কর্তারাও সাধারণ মানুষের চাওয়াকে উপেক্ষা করে পদ আঁকড়ে থাকেন। যদি প্রশ্ন করেন, তারা কি ক্রিকেটের এই সমস্যাটা বুঝতে পারেন না, না কি বুঝতে চান না? এর সবচেয়ে সঠিক উত্তর মনে হয় এরকম, তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই এই সমস্যাটা গোপন করে যান। ইংরেজিতে একটা টার্ম আছে ‘কেয়ারফুলি কেয়ারলেস’ অর্থাৎ সচেতন ভাবেই অসচেতন থেকে যাওয়া। এর যে অনেক সুবিধা!
দলের সঙ্গে প্রধান কোচ হাথুরুসিংহ, টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট ভারতীয় শ্রীধরন শ্রীরাম আর দলের ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন মিলে কি কাজ করছেন দলের জন্য! ধর্মশালায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি হাথুরুসিংহ।
প্রধান কোচ বিশ্বকাপে এসেও তার একাদশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিন ম্যাচেই দলের ব্যাটিং অর্ডারে দেখা গেছে আস্থিরতা। মেহেদী হাসান মিরাজ আসলে কোথায় খেলবেন তা নিয়ে এখনো কাটেনি অনিশ্চয়তা। প্রথম ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে জয়ী একাদশ থেকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে আনা হয় শেখ মেহেদীকে। কিন্তু সেটা কোনো কাজেই আসেনি। বরং চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে হারে সাকিবরা। বিশ্বকাপে টাইগারদের প্রথম তিন ম্যাচের স্কোর কার্ডের দিকে তাকালে পরিষ্কার বোঝা যাবে টিম ম্যানেজমেন্টের পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্বেচ্ছাচারিতা।
হাথুরু-শ্রীরাম ও সুজনদের মতো ক্রিকেট বোদ্ধাদের দলের সঙ্গে রাখতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের খরচ হচ্ছে কোটি টাকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কাজের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি টিম বাংলাদেশে। বিপরিতে- রিয়ালিটি চেকিং, ব্যাটিং অর্ডারের অতিরিক্ত পরিবর্তন, দল নির্বাচনে অভিজ্ঞতার দাম না দেওয়া, খুব দ্রুতই জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া, পরিকল্পনাহীনতা গোছানো একটা দলকে অগোছালো করে ছেড়ে দিয়েছে।
আমাদের রাজনীতিবিদদের মতো আমাদের বোর্ড কর্তারাও সাধারণ মানুষের চাওয়াকে উপেক্ষা করে পদ আঁকড়ে থাকেন। যদি প্রশ্ন করেন, তারা কি ক্রিকেটের এই সমস্যাটা বুঝতে পারেন না, না কি বুঝতে চান না? এর সবচেয়ে সঠিক উত্তর মনে হয় এরকম, তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই এই সমস্যাটা গোপন করে যান। ইংরেজিতে একটা টার্ম আছে ‘কেয়ারফুলি কেয়ারলেস’ অর্থাৎ সচেতন ভাবেই অসচেতন থেকে যাওয়া। এর যে অনেক সুবিধা!
ক্রিকেট যে একটা টিম গেম কথাটা ভুলে যায় বিসিবি, তাই তো তাদের একজন পারফরমার দরকার—ভালো নেতৃত্বের দরকার নেই। যে পুরো টিমটাকে একসাথে গেঁথে দলীয় পারফরমেন্স দিয়ে সাফল্য বয়ে আনতে পারে। ভালো খেলোয়ার অধিকাংশ সময়ই ভালো কোচ বা ভালো অধিনায়ক হতে পারে না। ব্যপারটা শেষ পর্যন্ত দলের ভরা ডুবির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফিজিও’র কথা অনুযায়ী শতভাগ ফিট তামিমকে দলে নেওয়া বাংলাদেশের কাছে বিলাসিতা মনে হলেও নিউজিল্যান্ডের মতো দল বয়স্ক এবং শতভাগ ফিট না হওয়া সত্ত্বেও কেন উইলিয়ামসনকে দলের সাথে নিয়ে যায় এবং তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের সাথে অসাধারণ পারফরমেন্স করে দলকে জেতায়। এমনকি ইংল্যান্ডও আনফিট বেন স্টোকসকে দলের সাথে রাখতে পারে— আমরা পারি না।
প্রতিটা ম্যাচের পর বাংলাদেশের কেউ একজন প্রেস কনফারেন্সে এসে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের কথাগুলো কমবেশি একই রকম- আমরা এখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি, আমরা ভবিষ্যতে সেটা কাজে লাগাবো, আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা হলো। আদতে এসব শিক্ষায় তারা শিক্ষিত হয়ে ওঠে না। তাদের যে অভিজ্ঞতা হয় সেটা তাদের পরবর্তীতে কাজে লাগাতেও দেখা যায় না।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর বাংলাদেশের কোচ হাথুরুসিংহ একজন ওপেনারকে রান না করার পরেও বারবার সুযোগ দেওয়ার সাথে ইংল্যান্ডের ডেভিড মালানের যে তুলনাটা করেছেন সেটা ছিল ভুল তথ্যের ওপর। ডেবিট মালানকে ইংল্যান্ড টিম তাদের দলের জন্য বিবেচনা করেছেন যখন তিনি প্রায় পৌনে দুইশত প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। এবং সে সময় প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে তার রান ছিল ১২ হাজারের কাছাকাছি। এবং লিস্ট-এ ক্রিকেটে সে ম্যাচ খেলেছিল ১৫০ এর অধিক। আর সেখানে রান করেছিলেন ৬০০০ এর কাছাকাছি।
ক্রিকেটের ব্যাট কিনতে গেলে দুই ধরনের ব্যাট পাওয়া যায়। একটা হল যেটাকে খেলার উপযোগী করে নিতে হবে, আরকটা হলো খেলার উপযোগী করে রাখা হয়েছে, অর্থাৎ রেডি টু প্লে। খেলোয়ার তৈরির প্রক্রিয়াটাও সব দেশেই এরকম, কিন্তু বাংলাদেশে আমরা যেটা দেখি সেটা হল একটা খেলোয়াড় পুরোপুরি তৈরি না হতেই তার কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয় জাতীয় দলের বিশাল বোঝা। অনেকটা প্রিম্যাচিউর বেবির মতো। জন্মের সাথে সাথেই যাকে চলে যেতে হয় আই. সি. ইউ. -এর বেডে। যে জন্ম হতে পারতো উৎসবের উপলক্ষ- সেটা হয়ে ওঠে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তার গুনক। ছোট্ট শিশুর মনের ভাবনা তখন হয়তো এরকম থাকে, আমার জন্মটা মানুষের পৃথিবীতে হওয়ার কথা থাকলেও জন্ম হয়েছে দানবের পৃথিবীতে!
সাধারণ সমর্থকরা বুঝতে পারে না কেন একটা খেলোয়াড়কে পুরোপুরি তৈরি হওয়ার আগেই জাতীয় দলে নিতে হবে। তবে আমার মতে এর দুইটি কারণ থাকতে পারে —একটি হলো এটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটার তৈরির প্রক্রিয়া, অন্যটি হল নির্দিষ্ট সেই খেলায়ারটি অসম্ভব মেধাবী। কিন্তু দ্রুত দলে নেওয়ার পর আবার দ্রুতই তাকে বাদ দেওয়া দেখলেই বোঝা যায় দ্বিতীয় কারণটি ভুল।
বয়স ভিত্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশ সব সময়ই ভালো খেলে, অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয় সে কথাই প্রমাণ করে। আসলে এরপরই শুরু হয় অন্য দেশের সাথে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের পার্থক্য। অন্য দেশ যেখানে এই ধরনের খেলোয়াড়দেরকে সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় ধরে নিয়ে ভালো করে পরিচর্যা শুরু করে, সেখানে বাংলাদেশ মনে করে এখনই এরা পরিণত; তাদেরকে জাতীয় দলে সুযোগ করে দেয়। অর্থাৎ নিজ প্রতিভায় উঠে আসা বাংলাদেশের এই সম্ভাবনাময় প্রতিভাকে পর্যাপ্ত সুযোগ, সুবিধা এবং সময় দিয়ে তাদেরকে এগিয়ে নেওয়ার কাজটা ঠিকমতো করতে পারছে না বিসিবি। যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের কয়েকজনকে ইতিমধ্যে জাতীয় দলে সুযোগ দেয়া হলেও তাদের সফলতার হার খুবই কম। তাদের অনেকেই এখন দলের সাথেও নেই। আমার কাছে এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে ভয়ংকর দিক যেটা মনে হয় সেটা হল বাদ পরা এই সম্ভাবনাময় ছেলেগুলো বিসিবির গুডবুক থেকে বেরিয়ে যায়, এদের ক্ষেত্রে বিসিবি মনে করে এরা পারবে না। অন্যদিকে, বাদ পরা খেলোয়াড়রাও মানসিকভাবে অনেক পিছিয়ে যায়, তারা নিজেরাও মনে করে যে আমরা পারবো না, আমাদের দিয়ে হবে না। ব্যাপারটা বাংলাদেশের ক্রিকেট ভবিষ্যতের জন্য অনেক ভয়ের।
শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়, বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের এই করুণ চেহারাটা বিশ্বকাপের আগে থেকেই চলমান। এই বছর আগে ব্যাটিং করা ১৩টি ম্যাচের মধ্যে ৬টিতেই বাংলাদেশ ৫০ ওভার খেলতে পারেনি। এত এত ব্যর্থতার পরও একটা দল জিতবে, এটা কষ্ট-কল্পনা
চলতি বিশ্বকাপের আগে কিছু জিনিস প্রত্যাশিতই ছিল। ভারতীয় কন্ডিশনে ব্যাটিংয়ের ভূমিকাটা বেশি থাকবে, বড় রান করাটা জয়-পরাজয়ে মুখ্য হয়ে উঠবে। এই চাহিদার বিপরীতে বাংলাদেশ যে তিনটি ম্যাচ খেলেছে, সেখানে ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স একেবারেই হতাশার। বাংলাদেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়টা পেয়েছে মূলত বোলারদের সৌজন্যে।
শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়, বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের এই করুণ চেহারাটা বিশ্বকাপের আগে থেকেই চলমান। এই বছর আগে ব্যাটিং করা ১৩টি ম্যাচের মধ্যে ৬টিতেই বাংলাদেশ ৫০ ওভার খেলতে পারেনি। এত এত ব্যর্থতার পরও একটা দল জিতবে, এটা কষ্ট-কল্পনা।
বাংলাদেশী ব্যাটারদের কাছে নিজেদের উইকেটের খুব বেশি মূল্য আছে বলে মনে হয় না। তারা খুব সহজেই নিজেদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন— ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে থাকা, ইনিংস বড় করা শব্দগুলো বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের কাছে বাতুলতা মাত্র। বিপক্ষ দলের ফিল্ডাররা যেভাবে ফাঁদ পাতেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা অবলিলায় সেই পাতা ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের মেধা এবং ডেডিকেশনকে এক ধরনের প্রশ্নের মধ্যে ঠেলে দেন। আবার বাংলাদেশ যখন বল করে বাংলাদেশী বোলারদের ফিল্ডিং সেটআপ এবং সেই অনুযায়ী বোলিং করতে খুব বেশি দেখা যায় না। যেটা বিপক্ষ দলকে খুব সহজেই রান করার সুযোগ করে দেয়। আমাদের অধিনায়ক ব্যাখ্যা করেছিলেন ভারতের মাটিতে খেলা বলে ভারতীয় শ্রীধরন শ্রীরাম বাংলাদেশ দলে খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন, বাংলাদেশ আরও ভালো পরিকল্পনা সাজাতে পারবেন— অথচ বাংলাদেশের খেলা দেখে আর কিছু পাওয়া গেলেও পরিকল্পনা খুঁজে পাওয়া যায় না।
যেই বাংলাদেশ তাদের পুরোটা সময় ৫০ ওভার টিকে থাকার ক্রিকেটটাই খেলে এসেছে, হাথুরুসিংহ দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়ে সেই দলটাকেই ইংল্যান্ডের বাজবল ক্রিকেট বা ইন্ডিয়ার ইনটেন্ট ক্রিকেট দলে পরিণত করতে চাইলেন। সেই দাবি তুলে কোচ একের পর এক অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের দল থেকে বাদ দিলেন এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বকাপে এসেও। এর পরিণতি কি হলো— আমরা এখন না পারছি বাজবল ক্রিকেট খেলতে, না পারছি ৫০ ওভার খেলতে। তাই তো বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম এই খেলা আবার না বাংলাদেশ ফুটবলের পথ ধরে এই আশঙ্কা এখন ঘুরে ফিরে চলে আসে ক্রিকেটের আলোচনায়।
বাংলাদেশ দল যে সময়ে নিয়মিত ৫০ ওভার খেলার আগেই অলআউট হয়ে যায়, সেই বাংলাদেশ স্ট্রাইক রেটের দোহাই দিয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ারের পরিসমাপ্তি ঘটায়। শুধু এটুকু দেখলেই বোঝা যায়—কতটা বিচক্ষণহীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতায় ধ্বংস করা হচ্ছে দেশের ক্রিকেট। বিশ্বকাপের তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদুল্লাহর কারণেই বাংলাদেশ পঞ্চাশ ওভার খেলতে পেরেছিল। মাহমুদুল্লাহ বাংলাদেশ দলে দীর্ঘদিন ধরে এই রোলটাই প্লে করে আসছেন। যখন তিনি ক্রিজে আসেন অধিকাংশ সময়ই তাকে ইনিংস রিবিল্ড করার দায়িত্ব নিতে হয়— আর সে কারণেই তার স্ট্রাইক রেট বাংলাদেশের অন্য খেলোয়াড়দের তুলনায় একটু কম থাকে। অথচ সেই পিছিয়ে থাকা স্ট্রাইক রেটের কারণ দেখিয়ে তাকে দল থেকে বাদ দেয়া হয়।
এত নাটকের ফলে কোন রেজাল্ট যে আসবে না এটা দেশবাসীর মত বোর্ডও জানত। তবুও তারা বোর্ডে নিজেদের ব্যস্ততা এবংপ্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সতত ব্যস্ত। ইন্টেলিজেন্সের পরিভাষায় এটা ডাইভার্সন, ফুটবলের পরিভাষায় ফলস স্টেপ, আর সাধারণ ভাষায় আইওয়াশ।
জানার ইচ্ছা থাকলে দেখবেন— আমাদের বোর্ড আছে, বোর্ডের চেয়ারম্যান আছে, ডজন ডজন ডিরেক্টর আছে, নির্বাচক আছে, কোচ আছে, সহকারি কোচ আছে, ক্যাপ্টেন আছে, খেলোয়াড় আছে, মাঠ আছে— শুধু খেলাটাই অনুপস্থিত। এ প্রসঙ্গে একটা কৌতুক মনে পরে গেল—এক ভদ্রলোক গেছেন মোবাইল ফোন কিনতে। তো ভদ্রলোক একটা মোবাইল দেখিয়ে সেলসম্যানের কাছে সেটার ফিচার জানতে চাইলেন। সেলসম্যান- “স্যার, এই ফোনের প্রসেসর অক্টা কোর ৩ GHz, স্ন্যাপড্রাগন এইট জেনারেশন, ১২ জিবি র্যাম, ৬.৮ ইঞ্চি ডিসপ্লে, ক্যামেরা ১০০ মেগাপিক্সেল, ফ্রন্ট ক্যামেরা ৪০ মেগাপিক্সেল, ব্যাটারি ৫০০০ অ্যাম্পিয়ার এবং ফাস্ট চার্জিং, ফেস আইডি/ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর, ডাস্ট/ ওয়াটার প্রুফ। তবে স্যার একটা সমস্যা আছে— এটা দিয়ে কথা বলা যায় না”।