Author Picture

মাহমুদ দারবিশের কবিতা

এনামূল হক পলাশ

ভূমিকা ও পরিচিতি

মাহমুদ দারবিশ তার প্রজন্মের পথিকৃত হিসাবে বিবেচিত। তিনি অন্য যে কোনো আধুনিক আরবি কবির চেয়ে বেশি অনুদিত। তিনি ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে ফিলিস্তিনি গ্রাম আল-বিরওয়াতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে হাজার হাজার আরবকে বাস্তুচ্যুত করায় তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।

তিনি তার বেশিরভাগ কবিতার মধ্যে আরবি ছন্দের সাথে আধুনিক কবিতা মিশ্রিত করেছেন। তার লেখার বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে ১৯৬৫-১৯৯৩ সালের ফিলিস্তিনি বিপ্লব এবং ১৯৪৮ সালের গণত্যাগ যা বিপর্যয় বা নাকবা নামে পরিচিত। দারবিশ বেশ কয়েকটি মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছেন, তার মধ্যে একটি হচ্ছে ২০০৪ সালের প্রিন্স ক্লজ ফান্ড।

তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন লেখক রানা কাব্বানি। তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের পর ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি তিনি মিশরীয় অনুবাদক হায়াত হেনিকে বিয়ে করেন। তার কোনো সন্তান ছিল না। দারবিশের কবিতার ‘রিতা’ ছিলেন একজন ইহুদি মহিলা যাকে তিনি হাইফায় বসবাস করার সময় ভালোবাসতেন।

তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন; ১৯৮৪ সালে তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। ১৯৮৪ এবং ১৯৯৮ সালে তার দুটি হার্ট অপারেশন হয়। প্রাথমিক সময়ে তার লেখাগুলি ছিল ব্যক্তিগত ও নমনীয় ভাষার। তার প্রাথমিক কবিতার পরোক্ষ ভাষা ছিল বৈশিষ্ট্যযুক্ত স্লোগান এবং ঘোষণামূলক। দৃশ্যত তার ভাষা অরাজনৈতিক মনে হলেও রাজনীতি থেকে তা কখনও দূরে ছিল না। দারবিশ ইরাকি কবি আবদ আল-ওয়াহাব আল-বায়তি এবং বদর শাকির আল-সায়াব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি আর্থার রিমবড এবং অ্যালেন গিন্সবার্গ দ্বারাও প্রভাবিত।

দারবিশকে ফিলিস্তিনি প্রতীক এবং ইসরায়েলের আরব বিরোধিতার মুখপাত্র হিসেবে ব্যাপকভাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু তিনি ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ সবসময় প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘অভিযোগ হল যে আমি ইহুদিদের ঘৃণা করি। এটা আমার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যের নয় যে তারা আমাকে শয়তান এবং ইসরায়েলের শত্রু হিসাবে দেখায়। আমি অবশ্যই ইসরায়েলের প্রেমিক নই। আমার হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু আমি ইহুদিদের ঘৃণা করি না।’
ইসরায়েলি লেখক হাইম গৌরির মতে, যিনি তাকে ব্যক্তিগতভাবে জানতেন। দারবিশের হিব্রু ছিল চমৎকার। তার কবিতার চারটি খণ্ড হিব্রু ভাষায় অনুবাদ করেছেন মুহাম্মদ হামজা ঘানিম।

২০০০ সালের মার্চ মাসে ইসরায়েলের শিক্ষামন্ত্রী ইয়োসি সারিদ প্রস্তাব করেন যে দারবিশের দুটি কবিতা ইসরায়েলের উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। দারবিশের মৃত্যুর সাথে সাথে, ২০০৮ সালে ইসরায়েলি স্কুল পাঠ্যক্রমে তার কবিতা অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে বিতর্ক পুনরায় চালু হয়।

‘যদিও ইহুদি ছাত্রদের জন্য দরবিশ অধ্যয়ন করা এখন প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব, তবুও তার লেখা এখনও আরব স্কুলগুলিতে নিষিদ্ধ। আরব শিক্ষায় ব্যবহৃত পাঠ্যক্রমে ১৯৮১ সালে কমিটি দারবিশের লেখা অন্তর্ভূক্ত করতে সম্মত হয়েছিল কিন্ত এই কমিটির একমাত্র ইহুদি সদস্য তাতে ভেটো দিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন ‘এটি অসুস্থ আত্মা তৈরি করতে পারে’।’

দারবিশ হিব্রুকে ‘প্রেমের ভাষা’ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি নিজেকে ফিলিস্তিনে বিদ্যমান ইহুদি সভ্যতার অংশ বলে মনে করতেন এবং ফিলিস্তিনি ও ইহুদিদের মধ্যে পুনর্মিলন আশা করতেন। তিনি মনে করতেন যখন এটি ঘটবে, ‘ইহুদিরা নিজেরকে আরব পরিচয় দিতে লজ্জিত হবে না এবং আরবরা ঘোষণা করতে লজ্জিত হবে না যে ইহুদিদের তারা সাথে নিয়েছে।’

হামাসের নেতৃত্বাধীন মিউনিসিপ্যালিটি কর্তৃপক্ষ বলেছে যে এই ধরনের কথা ইসলাম দ্বারা নিষিদ্ধ। মিউনিসিপ্যালিটি কোয়ালকিলিয়া চিড়িয়াখানায় গান বাজানো নিষিদ্ধ করেছে। জবাবে, দারবিশ সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে ‘আমাদের সমাজে তালেবান ধরণের উপাদান রয়েছে এবং এটি একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক লক্ষণ।’

টেক্সাসের হিউস্টনের মেমোরিয়াল হারম্যান হাসপাতালে হার্ট সার্জারির তিন দিন পর ৯ আগস্ট ২০০৮ সালে ৬৭ বছর বয়সে মাহমুদ দারবিশ মারা যান। ইব্রাহিম মুহাভির মতে, কবি যদিও হার্টের গুরুত্বর সমস্যায় ভুগছিলেন, জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়নি এবং অপারেশনের জন্য নির্ধারিত দিনটি একটি প্রতীকী দিন হিসেবে নেওয়া হয়েছিল।

আরবি সংবাদপত্রে তার মৃত্যু প্রচার করার সময় দারবিশের ইচ্ছার বরাত দিয়ে তাকে ফিলিস্তিনে দাফন করার কথা উত্থাপন করা হয়। মূলত তিনটি স্থান প্রস্তাবিত ছিল; তার নিজ গ্রাম আল-বিরওয়া, পার্শ্ববর্তী গ্রাম জাদেইদা যেখানে দারবিশের পরিবারের কেউ কেউ এখনও বসবাস করে, বা পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরে। রামাল্লার মেয়র জ্যানেট মিখাইল পরে ঘোষণা করেছিলেন যে দারবিশকে রামাল্লার প্রাসাদ সংস্কৃতির পাশে রামাল্লার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকণ্ঠে জেরুজালেমকে উপেক্ষা করা একটি পাহাড়ের চূড়ায় সমাহিত করা হবে এবং তার সম্মানে একটি মন্দির তৈরি করা হবে। আহমেদ দারবিশ বলেন, ‘মাহমুদ শুধু একটি পরিবার বা একটি শহরের নয়, বরং সমস্ত ফিলিস্তিনিদের এবং তাকে এমন জায়গায় সমাহিত করা উচিত যেখানে সমস্ত ফিলিস্তিনি এসে তার সাথে দেখা করতে পারে।’

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস দারবিশকে সম্মান জানাতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেন এবং তাকে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মর্যাদায় দাফন করা হয়।

টেক্সাস থেকে মরদেহ বিমানে আনার ব্যবস্থা করতে এক দিনের জন্য দাফন বিলম্বিত হয়েছে। এরপর দারবিশের মরদেহ আম্মান, জর্ডান থেকে রামাল্লায় দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হাজার হাজার মানুষের সমাগমে প্রথম প্রশংসা করেন। আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে বেশ কিছু বামপন্থী নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া সেখানে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কবি ডমিনিক ডি ভিলেপিন। অনুষ্ঠানের পরে, দারবিশের কফিনটি শবযাত্রার মাধ্যমে হাঁটা গতিতে মুকাতা থেকে সংস্কৃতির প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় পথে তার হাজার হাজার অনুসারী জড়ো হয়।

৫ অক্টোবর ২০০৮, বার্লিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে মাহমুদ দারবিশের স্মরণে পাঠ আয়োজন করা হয়।


 

পরিচয়পত্র

লিখে রাখো
আমি একজন আরব
আর আমার পরিচয়পত্র নম্বর হচ্ছে পঞ্চাশ হাজার
আমার আটটি সন্তান
আর নবমটি আসবে গ্রীষ্মের পর।
তুমি কি রাগ করবে?

লিখে রাখো
আমি একজন আরব
একটি খনিতে সহকর্মীদের সাথে নিযুক্ত
আমার আট সন্তান আছে
আমি তাদের জন্য রুটি,
পোশাক এবং বই জুটাই
পাথর থেকে..
আমি তোমার দরজায় এসে ভিক্ষা করি না
আমি তোমার কক্ষে পদচিহ্ন রেখে
নিজেকে ছোটও করি না।
তাই বলে রাগ করবে?

লিখে রাখো
আমি একজন আরব
শিরোনাম ছাড়া আমার একটি নাম আছে
যেখানে একটি দেশ রোগী
সেখানে মানুষ ক্ষুব্ধ
আমার শিকড়
কালের জন্মের আগেই আবদ্ধ ছিল
আর যুগ শুরু হওয়ার আগেই
পাইন আর জলপাই গাছের আগে
আর ঘাস বড় হওয়ার আগেই।
আমার বাবা.. চাষার পরিবার থেকে এসেছি
কোনো অভিজাত শ্রেণি থেকে নয়
আর আমার দাদা ছিলেন একজন কৃষক
না ভালো বংশ থেকে, না তার ভালো জন্ম থেকে।
কীভাবে পড়তে হয় তা শেখানোর আগে
আমাকে সূর্যের অহংকার শেখানো হয়
আর আমার বাড়িটা যেন
শাখা ও বেত দিয়ে বানানো প্রহরীর কুঁড়েঘর।
তুমি কি আমার সামাজিক মর্যাদা নিয়ে সন্তুষ্ট?
শিরোনাম ছাড়া আমার একটি নাম আছে।

লিখে রাখো
আমি একজন আরব
তুমি আমার পূর্বপুরুষদের বাগান
আর আমার সন্তানদের সাথে
যে জমি চাষ করতাম তা চুরি করেছ।
আর এই পাথরগুলো ছাড়া
তুমি আমাদের জন্য কিছুই রেখে যাও নি..
তাই রাষ্ট্র কি তাদের নেবে
যেমন বলা হয়েছে?

অতএব,
প্রথম পৃষ্ঠার ওপরে লিখো:
আমি মানুষকে ঘৃণা করি না
আমি দখলও করি না
কিন্তু ক্ষুধার্ত হয়ে গেলে
দখলদারের মাংস হবে আমার খাদ্য।
সাবধান..
সাবধান..
আমার ক্ষুধা হতে
আর আমার রাগ হতে।

 

ক্যাকটাসের অমরত্ব

সে তার সঠিক পথ অনুভব করেছে
নিজের অবয়ব অনুভব করার মতো
আর নিশ্চতভাবে।

সে বলেছিল
যেমন তারা কাঁটার বেড়া দিয়ে আরোহণ করেছিল:
মনে রেখো, আমার পুত্র,
এখানে ব্রিটিশরা তোমার পিতাকে
ক্যাকটাসের কাঁটার ওপর দুই রাত
ক্রুশবিদ্ধ রেখেছিল
কিন্তু তিনি স্বীকারোক্তি দেননি।

তুমি বড় হবে, আমার পুত্র,
আর যারা তাদের বন্দুকের উত্তরাধিকার
ধারণ করে তাদেরকে বলে দিও
লোহার ওপর রক্তের গল্প…

-ঘোড়াটাকে একা রেখে গেলে কেন?
-বাড়িগুলোকে সঙ্গ দেওয়া প্রয়োজন ছিল,
আমার পুত্র
বাড়িগুলো মারা যায়
যখন তাদের বাসিন্দারা চলে যায়…

অনন্ত দূর থেকে তার দরজা খুলে দেয়
রাতের চলাচলের দিকে।
মরুভূমির নেকড়েরা গর্জন করে
এক ভয়ার্ত জোছনায়।
আর একজন পিতা পুত্রকে বলে:
তোমার দাদার মতো শক্তিশালী হও!
আমার সাথে শেষের ওক পাহাড়ে উঠো,
আমার পুত্র, মনে রেখো:
এখানে জেনিজেরিরা খচ্চর যুদ্ধে পতিত।
অতএব আমার সাথে অবিচল থাকো
আর আমরা অবশ্যই ফিরে আসব।

– কখন বাবা?
– আগামীকাল। সম্ভবত দুদিনের মধ্যে আমার পুত্র!

[টীকাটিপ্পনী: জেনিজেরি হচ্ছে তুরস্কের পদাতিক সৈন্য]

 

আমি সেখান থেকে এসেছি

আমি সেখান থেকে এসেছি
আমার স্মৃতি আছে
মানুষের মতো তা জন্মেছে।

আমার মা আছে
আর আছে অনেক জানালাসহ একটি বাড়ি
আমার ভাইয়েরা আছে, বন্ধুরা আছে
আর আছে একটি ঠাণ্ডা জানালার জেল কক্ষ।
এই তরঙ্গ আমার,
সমুদ্রের চিল দ্বারা ছিনিয়ে নেওয়া,
আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে,
আর আছে ঘাসের একটি অতিরিক্ত পাতা।
শব্দের দূরাগত প্রান্তে আমার আছে চাঁদ,
আছে পাখিদের অনুগ্রহ,
আছে অমর জলপাই গাছ।

তরবারির জীবন্ত দেহকে
টেবিলে রাখার আগে এ দেশে হেঁটেছি।
আমি সেখান থেকে এসেছি।
আমি তার মায়ের কাছে
আকাশ সমর্পণ করেছি
আকাশ যখন তার মায়ের জন্য কেঁদেছে।

আর আমি নিজেকে জানতে কাঁদি
ফিরে আসা মেঘের কাছে।
রক্তের দরবারে যোগ্য কথাগুলো শিখেছি
যাতে আমি নিয়ম ভাঙতে পারি।
আমি সমস্ত শব্দ শিখেছি আর সেগুলি ভেঙেছি
একটি একক শব্দ বানাতে: স্বদেশ….

 

পাসপোর্ট

তারা আমাকে ছায়ার মধ্যে চিনতে পারেনি
এই পাসপোর্ট চষে বের করে আমার গায়ের রং
আর এটি ছিল আমাকে তাদের আঘাতের নমুনা
একজন পর্যটকের জন্য যারা
ছবি সংগ্রহ করতে ভালোবাসে
তারা আমাকে চিনতে পারেনি।

আহ… ছেড়ে যেও না
আমার করতলে সূর্য নেই
কারণ গাছ আমাকে চিনেছে
ফ্যাকাশে চাঁদের মতো আমাকে ছেড়ে যেও না।

সব পাখি আমার করতলের দিকে
দূরবর্তী বিমানবন্দরের দরজায়
সকল গমের ক্ষেত
সকল কারাগার
সকল সাদা সমাধি ফলক
সকল কাঁটা তারের বেড়া
সকল আন্দোলিত রুমাল
সকল চোখ
আমার সাথে ছিল,
কিন্তু তাদেরকে আমার পাসপোর্ট থেকে
তারা বাদ দিয়েছে।

আমার নাম আর পরিচয় কেড়ে নিয়েছ
মাটিকে আমি নিজ হাতে পুষ্ট করেছি
আজ চিৎকার করে উঠল কাজ

আকাশ ভরে:
তৈরি করো না আমার উদাহরণ আবার।
হে ভদ্রলোকেরা, নবীগণ,
গাছেদেরকে তাদের নাম জিজ্ঞাসা করো না
উপত্যকাদের জিজ্ঞেস করো না তাদের মা কে?

আমার কপাল ফেটে বের হয়
ঘাসের মাঠের আলো
আর আমার হাত থেকে বের হয়
নদীর পানির ধারা
সব মানুষের হৃদয়ই আমার পরিচয়
তাই আমার পাসপোর্ট কেড়ে নাও।

 

ফিলিস্তিনি

হে অধরা গোলাপ সময়ের নাগালের বাইরে
হে আবৃত চুম্বন মাথায় বাঁধা রুমালের বাতাসে
আমাকে একটি স্বপ্ন দিয়ে অবাক করে দাও
যা আমার পাগলামিকে
তোমার থেকে সরিয়ে নিবে।

তোমার কাছ থেকে সরে যেতে যেতে
তোমার অভিমুখে যাওয়ার জন্য
আমি আমার অনুভব বুঝতে পারলাম।
তোমার কাছাকাছি যেতে যেতে
কাছে আসা আর সরে যাওয়ার মাঝে
এক পাথরের আয়তন স্বপ্ন আছে।

যা কাছে আসে না
যা পিছু হটে না
তুমি আমার দেশ
আমি না কি একটি পাথর
তাই আমি আকাশের দিকে
মুখ রাখতে পছন্দ করি না।

আমি মাটির সমতলে মরব না
কিন্তু আমি একজন আগন্তক,
সবসময় আগন্তক।

আরো পড়তে পারেন

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

বীভৎস খেলা নগরে বাতাসে মথিত জনস্রোতের কোলাহলে শুনতে পেয়েছি সারিগান গঞ্জের হাটে আকাঙ্খার গভীরে মন্দ্রিত অভিন্ন প্রাণ নীরব দর্শক ছিলাম ব্যর্থতার করুণ গান ফেরার মহড়ায় বঞ্চিত কুঁড়েঘরে সরাইখানার- শুঁড়িখানার মাছিরাও নেশায় বুদ্বুদ প্রকম্পিত কান্নার পর একদিন হাসির তিলকরেখা বিচ্ছুরিত শৈশবের ক্ষুধার্ত চিৎকার ক্রর হাসি চেপে মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলে ভাগ্য প্রহসনে যুদ্ধের ব্যগ্র দামামা থেমে গেলো-….

তোফায়েল তফাজ্জলের একগুচ্ছ কবিতা

উপায় অবলম্বন কাঁটা থেকে,  সুচালো কাঁকর থেকে পা রাখিও দূরে, জায়গা না পাক চলন-বাঁকা চেতনায় উড়ে এসে বসতে জুড়ে; এসবে খরগোশ কানে থাকবে রাতে, পড়ন্ত বেলায়, দ্বিপ্রহরে, পূর্বাহ্নে বা কাক ডাকা ভোরে। দুর্গন্ধ ছড়ানো  মুখ ও পায়ের তৎপরতা থেকে গ্রীষ্ম থেকে সমস্ত ঋতুতে একে একে নেবে মুখটা ফিরিয়ে তিলার্ধকালও না জিরিয়ে। কেননা, এদের চরিত্রের শাখা-প্রশাখায়….

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

error: Content is protected !!