
নিরাপদ দূরত্ব
এতোটা কাছে এসো না
ভালোবাসার তাপেও
পুড়ে যাবার ভয় আছে।
অতটা দূরে যেও না
মহাকর্ষের টানও কভু
ছিন্ন হয়ে যায় পাছে।
থাকো নিরাপদ দুরত্বে
বাঁচো প্রয়োজনীয় গুরুত্বে।
বোধের প্রলয়
আমার মস্তিষ্কের উদর ভর্তি
কিলবিলে কীটেরা যদি
হয় তোমার সু-খাদ্য, অভিজ্ঞান,
তবে তাতে মিশিয়ে দেব
প্রেমিকার সর্পিল চোখের বিষ।
পৃথিবীর সব নিভৃত কোটরে
ওঁৎ পেতে থাকে
চতুর সু-দক্ষ চোখের
ধূসর, নীল আর সবুজ নক্ষত্র।
পৃথিবী, আকাশ ও নক্ষত্রের
ভেদ বোধে যাহা জানি
তাহা প্রেমিকার সুনিপুণ চুম্বনে
হয় না সিক্ত
অথবা তাহা শুধুই
বোধের প্রলয়ে উজ্জ্বল অগ্নিশিখা।
আর আজ দেখ,
পুরনো প্রেমিকারা সব
দাঁড়িয়েছে এসে সারিবদ্ধ
ছিন্ন বসনে, শুন্য থালা হাতে।
তবু আমাতে নেই আজ
কোন অবশিষ্ট প্রেম
যাহা ছিল তাহা
দিয়েছি উজাড় করে
বহু আগে।
জীবন
উৎসর্গঃ পৃথিবীর সকল বাবাদের
স্রোতস্বিনী নদীর মত
বয়ে চলা প্রয়াত সময়ের সাথে
বয়ে চলেছে জীবন।
অজানা পথের বাঁকে
খুব গোপনে
ওঁৎ পেতে আছে মরণ।
জীবনের ত্রিকোণমিতি, পরিমিতি
আর জ্যামিতি মিলাতে গিয়ে
ঘোরলাগা চোখে বাবাদের
সামনে ভেসে ওঠে
অসহায় পীথাগোরাসের মুখ।
মায়েদের ভাতের পাতিলে
প্রতিদিন সুদে আসলে
সিদ্ধ হয়ে যায়
সংসারের পাটিগণিতের সুখ দুখ।
তবু এইসব সাজানো গোছানো
অথবা অগোছালো জীবন ভালোবেসে
প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু হয়
একেকটি মুহুর্তের।
মানুষ মূলত প্রতিনিয়ত
অনিশ্চিত জীবন ভালোবেসে
এগিয়ে যায় নিশ্চিত
মৃত্যুর দিকে।
সময়ের তালে পড়ে
ব্যাগ ভরে কিনে এনে
রাজনীতি দৈনিক,
ঘরে ফিরে খেয়ে দেয়ে
হয়ে যাই চৈনিক।
বৈদিক যুগ থেকে
ধার করা কাব্য
কত আর এই দিয়ে
রীতিনীতি ভাবব।
ভাবনার যত কিছু
ভেবে দেখ মস্তকে
কত আর মুখ খুশে
পড়ে রবে পুস্তকে!
প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ,
জীবনের শিক্ষা,
এইসব থেকে তব
নিয়ে নাও দিক্ষা।
যুগে যুগে কালে কালে
পুঁথিগত বিদ্যা
সময়ের তালে পড়ে
হয়ে গেছে মিথ্যা।
পুঁথি আজ লেখে যত
বড় বড় পণ্ডিতে,
মুক্ত সে নয়তো
বাঁধা আছে গণ্ডিতে।
তাই বলি ভেবে দেখ
নিজেদের কাজটা
সন্তানের মাথায় ঝুলে
আকাশের বাজটা।
অফুরন্ত প্রেম
আমাদের প্রেমের মাধুর্যতা ছিল
ভীষণ যত্ন অথবা অবহেলায়
পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে ফুটে ওঠা
সুন্দরতম ফুলেদের মত।
তবু তোমার আকষ্মিক
ইতি টানা প্রত্যাখ্যানে
ছিল না কোন যৌক্তিকতা।
ঠিক যেন খেয়ালি বালিকার খেলাচ্ছলে
তছনছ করা পুতুল সংসারের মত
মুহূর্তেই ভেঙ্গে দিলে সব।
তবু প্রতিটি সবুজ পাতায়,
বৃষ্টি ফোঁটার স্পর্শে,
প্রতিটি ঘাসের ডগায়,
শিশির কণার বিন্দুতে
প্রাণবন্ত সজীব হয়ে আছে
আমাদের প্রতিটি চুমু।
প্রতিটি ফুলের পাপড়িতে
বাতাসের ছোঁয়ায় ভেসে বেড়ায়
আমাদের স্পর্শগুলো।
প্রতিটি প্রজাপতি আর ভ্রমরের ডানায়
প্রতিটি পরাগায়নে এখনও জিবন্ত
আমাদের প্রতিটি সঙ্গম।
আকাশের প্রতিটি বিদ্যুৎ চমকের সাথে
আজও বেজে ওঠে আমদের একান্ত শীৎকার।
প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা
ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা যোগাড়ে
তোমাকে এতোটা ব্যাস্ত রাখা হয়েছে
যাতে তোমার প্রতি ঘটা অন্যায় টের না পাও
এবং নিজের ও সন্তানদের অধিকার
বেমালুম ভুলে যাও।
সেই সাথে এইটুকুন যোগাড় করতে
তোমাকে এতোটা খাটতে হবে,
যার পর এইসব অসঙ্গতি নিয়ে
ভাববার, বলবার বা করবার মত
শারীরিক বা মানসিক কোন শক্তি
আর অবশিষ্ট থাকবে না।
মূলত বর্তমান সাধারণ জনগণ
দাস যুগের দাসদের আধুনিক
রূপান্তর মাত্র।
আত্মবিশ্বাস
নানাবিধ জঞ্জালে পৃথিবীর আনাচেকানাচে
আজও ফোটে স্বর্গের সুভাষ ভরা
বিশুদ্ধ, পবিত্র, নির্মল, নিষ্পাপ
সুগন্ধি ফুল।
নির্বোধ শুয়োরের পাল তবু
দুর্গন্ধময় আবর্জনার
স্তূপই ভালোবাসে।
বিশুদ্ধ প্রেমে প্রেমিকার
নেই কোন বিশ্বাস,
অর্থ আর আভিজাত্যেই তার
শেষতম আশ্বাস।
প্রতিটি ধ্বংশলীলার শেষতম বিন্দুতেই
নিহিত থাকে নতুন কোন
সৃষ্টি মহীরুহের বীজ।
বহুবহু আশ্বাসময় প্রতারণায়
বহুবার হয়েছি জর্জরিত…………
আশ্বাসে নয় হে মানুষ
হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা
আত্মবিশ্বাসে হও প্রকাশিত।
কারো কোন আশ্বাসে নয়
সত্য মানুষকে
আত্মবিশ্বাসে বাঁচতে হয়।
কে পারে আমি ছাড়া
তোমার পানে উড়ে যাওয়া আমার স্বাধীন
উচ্চকিত পাখিদের ফিরিয়েছ আহত…….
বুকে জমা অতি যতনে
সেইসব বেদনার ক্ষত।
তবু কে পারে করতে তোমায়
আমি ছাড়া ঐশ্বর্যবতি অত?
কে পারে আর, এক চুম্বন-শিহরণে
অমনি ধারা হৃদয়পুলক জাগাতে?
কে পারে, এক আলিঙ্গনে ঝড়ের মত
থরথর ও বুক কাঁপাতে?
আছে কার হিম্মৎ আমি ছাড়া,
যে পারে তোমার সীমানা ডিঙ্গোতে?
বরফের হৃদয়
ঝরা পাতার বুকে জমে থাকা
নিঃশ্বাস হয়ে বেঁচে আছি
পিপিলিকার স্পর্শে পাই
জীবনের ঘ্রান
তারা চুরি করে নিয়ে যায়
আমার প্রাণ।
বরফের হৃদয় ছুঁয়ে দেখ
জলের আন্তরিক হাহাকার
সেখানে রয়েছে জমাট।
বাসনা
বেদনার রঙ নীল ক্যন?
দেহের বাহ্যিক কোন অংশে
আঘাত লাগলে, আঘাতপ্রাপ্ত যায়গাটুকু
ব্যাথায় নীল হয়ে ওঠে।
অন্তরও তেমনি হলে, হাতের মুঠোয়
নিয়ে চাপ দিলে, আমার অন্তর
নিংড়ানো রসে হতে পারে
এক নীল সমুদ্র তবু,
সেই সমুদ্র পাড়ি দিয়ে একদিন
ঠিক আবিস্কার করব
পৃথিবীর এমন এক দ্বীপ
যেখানে কোন বেদনা নাই।