Author Picture

ওসিডি (পর্ব-০৬)

হারুন আল রশিদ

পড়ুন— ওসিডি (পর্ব-০৫)

তেরো

আমার সামনে কলের নলের উপর দেয়ালে লাগানো সোনালি রঙের অষ্টভুজ ফ্রেমে বাঁধানো মুরানো দ্বীপপুঞ্জের আদি-কারিগরদের তৈরি ভেনিশিয়ান কাচ। আমি আর পাগল মুরানোর একত্রিশটা দোকান আর আটটা কাচের কারখানা ঘুরে এই আয়না কিনেছিলাম। এই বাড়িতে সকল ধাতব জিনিসে কিছু না কিছু মরিচা পড়ে গেছে। এই আয়না এখনও অনাক্রান্ত আছে। পাগল সোনিয়াকে শিখিয়েছে কী করে এটাকে মুছতে হয়। এটাতে যাতে কোনওভাবেই পানি না লাগে পাগল সোনিয়াকে সে খেয়াল রাখতে বলেছে। আর যদি এটাতে পানির ছিটা পড়ে, সোনিয়া যেন সাথে সাথে সূতি কাপড়ের রুমাল দিয়ে ওটা মুছে শুকিয়ে ফেলে। সোনিয়া এ কাজে কোনও ভুল করে না। দিনে দশ বার সে আয়নাটা পরীক্ষা করে। পানির দাগ না থাকলেও সে ওটাকে সূতি কাপড়ের রুমাল দিয়ে মোছে। আর সেই সুযোগে সোনিয়া নিজের চেহারাটাও দেখে নেয়।

.            আমি যতটা দূর অতীতে ঘুরে এলাম, ধারণা করি, হামিদের ভূতও ততটা দূর অতীতে চলে গেছে। এতই দূরে যে, মনে হয়, সে এখানে আসেইনি। সে আমাকে ঠেলে ঠেলে এই বাথরুমে ঢুকায়নি। আমার আশে পাশে কোনও ভূতের অস্তিত্ব নাই। আমি মুখ ধুই। আমার চোখ পড়ে আমার তর্জনিদ্বয়ের উপর। দেখি কমনীয় সরু আঙ্গুলের মাথা। আয়নায় মুখ দেখি। নারীর মুখ, যা বুকের ওজন, পেটের নির্ভারতা, কটিদেশের ফ্লোরা এন্ড ফাওনা অনুভব করতে সক্ষম। আমার ত্বকে ঘামের ইঙ্গিত। আমার গরম লাগছে।

.            পেট্রোলিয়াম জেলি ছাড়া আমি মুখে কিছু মাখি না। তারপরও মা-নানি থেকে পাওয়া ত্বকের রংটা একই রয়ে গেল। ধর্মে, মর্মে সবখানে এই রঙের সুনাম। চাহিদা। কে মানুষকে শেখাল কোন রং নাড়িতে টান দেয়, কোন রং বিবমিসা ডেকে আনে? এত রঙে রঙিন প্রকৃতি। এত ধনে ধনী। এত প্রাণের বৈচিত্র্য। অভাব শুধু ন্যায়বিচারের।

.            ভূততো গেছেই। এখন আমার চোখে আর পাপের সীসাও নাই। তারা এখন নিখাদ মানবিক নির্যাসের দর্পণ। আমার মণি দুটির ভেতর মায়ার দ্যুতি। দেখি আমার মানানসই খাড়া নাকের আকর্ষণ। সকলে আমার প্রলম্বিত চিবুকের প্রশংসা করে। আমাদের চেয়ারম্যান স্যার বলেন আমার চিবুক তাঁর কাছে বিধ্বংসী এক তীর, এক অদৃশ্য চুম্বক। আমার চিবুক নাকি স্যারকে নাকে রশি বাঁধা উটের মতো ঘোরাচ্ছে। তা-ও নাকি সতেরো বছর ধরে। যে দিন প্রথম আমি তাঁর ক্লাশে যাই, সে দিন থেকে। তারপর তিনি নাকি পনেরো বছর অপেক্ষা করেছিলেন, আমাকে কথাটা জানানোর জন্য। স্যার একটা বিরক্তিকর শব্দ ব্যবহার করেছেন। যে শব্দ সবাই ব্যবহার করে। রুচির দুর্ভিক্ষে। যা এখন আমার মুখে আসছে না। এমন চিবুক নাকি স্যার আর একজনের মধ্যে দেখেছেন। তিনি হলেন ভার্জিনিয়া উল্ফ। মিসেস ডালওয়ে নামক এক উপন্যাসের লেখিকা। স্যার আমাকে এও বলেছেন, বর্তমানে টেলিভিশন আর সিনেমার পর্দায় যত নারী চিবুক দেখা যায় তার সবগুলোই নাকি এ রকম। তবে সেগুলি নকল। আর্টিফিশিয়াল ম্যাটেরিয়্যাল। কোনওটা ছয় মাস থাকে, কোনওটা পাঁচ বছর। নির্ভর করে কে কত খরচ করে আর কোন শল্যবিদ দিয়ে তা নির্মাণ করে তার উপর। মেয়াদ চলে গেলে নাকি আবার নতুন চিবুক লাগাতে হয়। আর আল্লাহ আমাকে তা অসীম দয়ায় এমনি-এমনি দিয়েছেন। চেয়ারম্যান স্যার নাকি শুধু এমন চিবুক দেখার জন্য এক সময় দিনে সাত-আট ঘন্টা বোম্বাই নায়িকাদের নাচ দেখতেন। টিভিতে নায়িকাদের নাচ। মগজে ডোপামিনের উৎপাদন। আহা, স্যার বলেন। আমি বিশ্বাস করি স্যার বোম্বাই নাচ দেখে জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় কাটিয়েছেন। তাতে শুধু নাচ কেন, আরও অনেক কিছু দেখা যায়। সচল বাঁক, উন্মুক্ত রান, খোলা বাহু, রং করা চোখ, পলিস্টার সূতার অক্ষিপক্ষ্ম, বদলানো চেহারা, সবই এক সাথে দেখা যায়। ডোপামিন, আহা।

.            কেউ শুধু চিবুক দেখার জন্য বোম্বাই নাচ দেখতে বসে না। স্যার চিবুকের কথাটা আমাকে খুশি করার জন্য যোগ করেছেন। স্যার বলেছেন, তিনি যখন জানলেন ওই চিবুকগুলো আর্টিফিশিয়াল, তখন থেকে বোম্বাই নাচ দেখা ছেড়ে দিয়ে আবার ভার্জিনিয়া উল্ফে ফিরে গেছেন। আমার ধারণা স্যার কোনও সুনির্দিষ্ট নায়িকার কাছে ফিরে গেছেন। স্যার চমক দিতে পছন্দ করেন। আর সেই জন্য হয়তো তিনি ভার্জিনিয়া উল্ফকে আবিষ্কার করেছেন। স্যার বলেছেন, “তুমি বিশ্বাস কোরছ না? শোনো। আমার কাছে ভার্জিনিয়া উল্ফের সাতাশটা ফটো আছে। আরও কিছু ফটো আমি পেয়েছিলাম, তবে গুলো ঝাপসা ছিল।” স্যার দুঃখ করেন কেন উল্ফ বেঁচে থাকতে ডিজিটাল যুগ আসল না। তা হলে তিনি উল্ফের হাজার হাজার ফটো সংগ্রহ করতে পারতেন। “তবে শিশিরকণা, তোমার চিবুক দেখে আমার সেই অনুশোচনা  ঘুচে গেছে,” স্যার বলেছেন। আমার চিবুকতো আর ফটোতে দেখতে হয় না। উন্মুক্ত লাইভ চিবুক। এক মিনিট দেখলে স্যারের নাকি পঞ্চাশ হাজার ফটো দেখার সাধ মেটে। আমার চিবুক তাঁর নাকে দড়ি লাগিয়েছে। সেই ছিদ্রে, যেই ছিদ্রে মেয়েরা, এবং অনেক দেশে ছেলেরাও, লটকন পরে। আমি লটকন, নাকফুল কিছুই পরি না। আমার নাকে নাকফুল পরার একটা ছিদ্র করা হয়েছিল। তা এখনও আছে। হামিদকে খুন করার পর আর কখনও নাকফুল পরিনি। যেই জায়গায়টায় লটকন লাগানোর ছিদ্র করা যায়, স্যারের নাকের সেই জায়গাটা সুপরিসর। স্যার নিজে আমাকে দেখিয়েছেন। আর বলেছেন, “তুমি দেখতে পাচ্ছো না, কিন্তু এখান থেকে একটা দড়ি ঝুলছে। আর সেই দড়ির মাথা বাঁধা রয়েছে তোমার চিবুকের সাথে। এখন বল আমি কী করি? তবে আমি তোমার কাছে প্রতিজ্ঞা করছি, জীবনে আর কখনও অন্য কোনও চিবুকের দিকে আমি তাকাব না। তোমার চিবুকে হাত রেখে আমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই। আল্লাহর কসম, শিশিরকণা।”

.            স্যার এর পর আরও পঞ্চাশ কি বায়ান্নটা জিনিসের কসম খেয়েছেন শুধু আমার চিবুকের উপর।

.            স্যারের দাবি, এবং আমি তা বিশ্বাস করি, স্যার নারীর সৌন্দর্যের সমঝদার। স্যার বলেন আমার দুই গালে এখনও কিশোরীর আভা। আমার শরীর নাকি রানীদের মতো টাটকা। উদয়পুরের রানী। জর্দানের রানী। স্পেনের রানী। হল্যান্ডের রাজকুমারী। প্রিন্সেস অফ ওয়েলস। ডাচেস অফ সাসেক্স। প্রিন্সেস অফ আস্তুরিয়াস। প্রিন্সেস অফ অরেঞ্জ। রাজকুমারী সুরাইয়্যা। স্যার এঁদের কথা বলেন। রুদফোর্ডের রাজকুমারী ওফেলিয়া হাসপাতালে নার্স হিসাবে যোগদান করেছেন সিফিলিস রোগীদের সেবা করতে। মেলোমোলিয়ান জলদস্যুদের বন্দিশালা থেকে সিফিলিস নিয়ে পালানো এক সাইরেনকে রুদফোর্ড রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়। আর ছয় মাসের মাথায় ছোট দেশ রুদফোর্ডে সিফিলিস রোগীর সংখ্য এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। এদের মধ্যে যাঁরা পাগল হয়ে যান, রাজকুমারী ওফেলিয়া নিজেকে তাঁদের সেবায় নিয়োজিত করেন। স্যার রাজকুমারী ওফেলিয়ার একটা আকাশী-নীল রঙের অ্যাপ্রন পরা ছবি দেখিয়ে কয়েকদিন আগে আমাকে বলেছিলেন, তুমি এমন একটা অ্যাপ্রন পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখো। দেখবে তুমি এই রাজকুমারীর চেয়ে কত বেশি সুন্দর।

.            আমি রানী বা রাজকুমারীদের জৌলুসপূর্ণ জীবনের সাথে নিজেকে মেলাতে পারি না। তবে তাদের দুঃখের সাথে আমি নিজেকে সনাক্ত করতে পারি। এই জগতের কোন রানী সুখশয্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে? যাদের গল্প পড়েছি তাদের কাউকে জীবনের শেষ বিশ-ত্রিশ বছর কোনও পুরুষ স্পর্শই করেনি। কেউ কেউ দশ বছর গোসল করেনি। তাদের শরীরের চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে ছত্রাক বাসা বেঁধেছে, চামড়ার উপর শত শত তিল গজিয়েছে। কারও কারও আঁচিল পাঁচ ইঞ্চি লম্বা হয়েছে। অনেকে আঁচিলের দৈর্ঘ্যে সান্ত্বনা খুঁজেছে। অনেকে ঠ্যাঙানি খেয়ে অল্প বয়সে মারা গেছে। রানী হওয়ার যদি এত কষ্ট, প্রজা শ্রেণির নারী হওয়ার কষ্ট তাহলে কত? আর রাজা হওয়াই কি অনেক আনন্দের? খুনখারাবি না করে কোন রাজা কবে ধরাধাম ত্যাগ করেছে? সবচেয়ে বড় করুণার বিষয় হল সব রাজাই অসচেতনতা নিয়ে মরে, মানে শেষ নিঃশ্বাস বের হয়ে যাওয়ার আগে আতঙ্কে বেহুঁশ হয়ে যায়।

আমি রানী বা রাজকুমারীদের জৌলুসপূর্ণ জীবনের সাথে নিজেকে মেলাতে পারি না। তবে তাদের দুঃখের সাথে আমি নিজেকে সনাক্ত করতে পারি। এই জগতের কোন রানী সুখশয্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে? যাদের গল্প পড়েছি তাদের কাউকে জীবনের শেষ বিশ-ত্রিশ বছর কোনও পুরুষ স্পর্শই করেনি। কেউ কেউ দশ বছর গোসল করেনি। তাদের শরীরের চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে ছত্রাক বাসা বেঁধেছে, চামড়ার উপর শত শত তিল গজিয়েছে

.            ওজন বাড়েনি বলে আমার দুই গাল এখনও কোমল আছে। চর্বি এসে ভর করলে তা আর থাকবে না। টাইট মনে হবে। আমার পা দু’টি অনেক লম্বা। আমি জানি রাস্তার ধারে ধারে তারা প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা রাখে। চেয়ারম্যান স্যারকে তারা খাড়া রাখে। যে সব সুন্দরী মেয়ে অল্প বয়সে সৌন্দর্যের সফল ব্যবহারের একটা পরিকল্পনা করে ফেলে, আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। তবে এমন কয়েকজনের কথা আমার জানা আছে। ওদের কে কোথায় গিয়ে শেষ আস্তানা গেড়েছে, তা-ও আমি জানি। আর তানিয়ার স্বরূপতো আজকেই দেখলাম। সকাল থেকে বারাঙ্গনাটা আমার মগজে সাঁতার কেটে চলেছে।

.            বাথরুমের দরজায় টোকা পড়ে। আমি সোনিয়ার গলার আওয়াজ শুনি। “খালাম্মা! আইন্নে কুনু ?”

.            “আমি এখানে।”

.            আমি এমনভাবে সোনিয়ার সাথে কথা বলি যেন কিছুই হয়নি। যেন আমি দোজখ আর বেহেশত ঘুরে আসিনি।

.            “খালাম্মা?” বাথরুমের দরজার আড়াল থেকে সোনিয়া ডাকে। “ছাদো যাইতাইন না?”

.            “ছাদে কী?”

.            “আপনে কি হাতকালা? কানে কি কিছু হুনুইন না?”

.            আমি শুনছি। আতশবাজির শব্দ।

.            বাথরুম থেকে বের হয়ে আমি আরও কিছু আতশবাজির শব্দ শুনি। মনে হয়, আহা, যদি তানিয়াকে আতশবাজির মতো উড়িয়ে দেয়া যেত।

.            বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি আমার বিছানার বেহাল দশা। আমি সোনিয়াকে বলি, “তাড়াতাড়ি কর।” আমি আমার বিছানার চাদরের এক কোনা ধরি। সোনিয়া আর এক কোনা ধরে। ঘর ঘোছানোর আগে আমি ঘর থেকে বের হতে পারি না।

.            আমি দরজা খুলে বারান্দায় আসি। ত্রিকোণাকার ছোট একটা বারান্দা। এখানে ধূলার আধিপত্য। এত বড় বাসা। পরিষ্কার করা অনেক ধকলের ব্যাপার। সোনিয়ার একার পক্ষেতো আর তা সম্ভব নয়। আমি মাঝে মাঝে হাত লাগাই। সব সময় লাগাই না। বাড়ির অনেক জায়গায় ধূলার আধিপত্য আমি মেনে নিয়েছি। কিছু জায়গা পাগলের জন্য পরিষ্কার রাখতে হয়।

.            বারান্দায় আমার সাথে সোনিয়া। নিচে রাস্তায় রিক্সার টুংটাং শব্দ। পথচারীও আছে। রাস্তাটাতে আলো আছে, তবে অপর্যাপ্ত। আমি উপরের দিকে তাকাই। আকাশে লাল-নীল আলো দেখি। এটা ভাল। ঢাকা শহরে এখন আতশবাজি ফোটে। এক সময় সারা দেশে ককটেল আর পাইপগানের শব্দের দৌরাত্ম্য ছিল। মানুষ ভয়ে কাঁপত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, জগন্নাথ কলেজ ইত্যাদি জায়গায় ক্যাডাররা প্রতি রাতে বন্দুকযুদ্ধ করত। তাদের গোলাগুলির আওয়াজে আশপাশের মানুষ ঘুমাতে পারত না। শহরবাসিরা কোনও দিন সকালে খবরের কাগজে পড়ত অমুক হলের পানির টাংকিতে দুইটা লাশ পাওয়া গেছে, কোনও দিন পড়ত তমুক হলের পুকুর পাড় থেকে পুলিশ তিনটা লাশ উদ্ধার করেছে। তখন আমি ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। এখন শিক্ষক। এখন এই শহরে এমনকি টেম্পুর সংখ্যাও অনেক কমে গেছে।

.            বাইরের সংঘর্ষ কমেছে। আর আমাদের মধ্যে ঘর্ষণের ওসিডি বিস্তার লাভ করেছে। ব্যাপারটার পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা না দিয়ে এটাকে নেশা বলাটা অন্যায্য। চাইলে ভাতকেও নেশার দ্রব্যে পরিণত করা সম্ভব, সম্ভব ভাতের একটা বড় কালোবাজার তৈরি করা। নিয়ম করা হোক এক প্লেট ভাত খেতে হলে পঁচিশ বার অজু করতে হবে। তখন মানুষ অজু না করে ভাত খাওয়ার সুযোগ খুঁজবে। তখন দেখা যাবে ভাতের কালোবাজারের জিডিপি রাষ্ট্রের মোট জিডিপির বিশ শতাংশ হয়ে গেছে। ঘর্ষণ যেহেতু অবৈধ, তাই তা নেশারূপে আবির্ভূত হয়েছে। আর শূন্যস্থান পূরণের জন্য ব্যাপক বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই বিশেষ বাজারে, কিংবা কালোবাজারে, পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ দুই-ই বেড়েছে। তাতে শান্তি যদিও আসেনি। বরং মানুষের বাসনা আর সমাজের বিশ্বাসের মধ্যে ফারাক থাকায় এই চাহিদা বিপর্যয় ঘটিয়ে চলেছে। তাই প্রায়ই মেয়েদের সিলিং ফ্যানের ডান্ডা থেকে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। অবশ্য দরজা ভেঙ্গে ঘরের ভেতর ঢোকার পর। এ মেয়েগুলোকে সবাই এতটাই চোখে চোখে রাখে যে কারও লাশ গলার আগেই তার খবর চলে আসে পত্রিকায়। কদাচিত দুই একটা ছেলেও এই হোটেলে, সেই সুঁড়িখানায় মরে পড়ে থাকে। যদিও ওদের লাশের দিকে পিতামাতা ছাড়া আর কেউ তাকায় না। পৃথিবীর অনেক শহরেই ঘর্ষণের জন্য লোকলজ্জায় কাউকে আত্মহত্যা করতে হয় না। জানি না, কোন শহরের প্রশংসা করব: নিজ শহরের, না ওই শহরগুলোর?

.            আতশবাজির শব্দে আমার ধ্যান ভাঙ্গে। বোধ হয় আমাদের দুই ব্লক পরের কোনও একটা বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। স্ত্রীকে স্বামীর বাড়ি নেয়া হবে। তার আগে আকাশে শব্দ আর আলো ছুঁড়ে পৃথিবীকে জানানো। ধরনী তৈরি হও। রোমাঞ্চ ঘটতে চলেছে, রোমাঞ্চ। কৌমার্য বিসর্জনের রোমাঞ্চ। মহাবিশ্ব তন্ময় হয়ে একটা সতীচ্ছদ খোঁজে। এক ফোঁটা রক্ত না ঝরলে কেয়ামত হয়ে যাবে। ছেলেটা কী ভাবছে, তা আমি জানি। মেয়েটা কী ভাবছে, তা আমরা কেউ জানি না। ওদের জন্য শুভ কামনা। ওরা সুখী হোক। সবার উপর সত্য হল দাম্পত্যের উপর সমাজের বিশ্বাস অটুট রয়েছে। দাম্পত্যের বিপর্যয়ের মহামারি এই আস্থায় কোনও চিড় ধরাতে পারেনি।

.            “খালাম্মা, দেরি অইতাছে,” সোনিয়া বলে।

.            সোনিয়ার মায়াভরা চোখে ব্যগ্রতা। আমি সোনিয়াকে বুঝি। আতশবাজির শব্দে মন চঞ্চল হয় না এমন তরুণী কে আছে?

 

চৌদ্দ

কোনও দয়ালু জমিদার তার দাসীর ঘরে জন্ম নেয়া সন্তানকে যে চোখে দেখে, যতটুকু ভালবাসে, সোনিয়াকে আমি সে চোখে দেখি, ততটুকু ভালবাসি। তবে সোনিয়ার জন্য আমার ভালবাসাকে আপনার প্রশংসা না করে উপায় নাই। সোনিয়া আমার ঘরে ঘুমায়। তবে এক বিছানায় অবশ্যই নয়। আবার মেঝেতেও নয়। আমি যে কাপড়ের জামা পরি সোনিয়াও সে কাপড়ের জামা পরে। আমি যে খানা খাই সোনিয়া সেই খানা খায়। তবে সোনিয়ার বাথরুম আমার ঘর থেকে একশ মিটার দূরে। সোনিয়া রাতে দুই বার করে বাথরুমে যায়। দরজা খোলার একটা কট শব্দ করে। আর এতে করে রাতে আমার চার বার ঘুম ভাঙ্গে। তবু আমি সোনিয়াকে আমার ঘরে রাখি। আমি মনে করি আমি সোনিয়ার জন্য অনেক করেছি।

.            এক সময় আমাদের আশরাফ শ্রেণির জীবন কাজের লোক ছাড়া অচল ছিল। তখন আমাদের বাসায় এক ঝাঁক চাকর-চাকরানি ছিল। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে। চাকর-চাকরানি সবাই বাইরে চলে গেছে। এখন তারা গার্মেন্টসের কারখানায় সেলাইয়ের কাজ করে। সেলাইয়ের কাজ দিয়ে জীবন শুরু করে এদেরই অনেকে আবার কারখানার মালিকও হয়েছে। তারা ইংরেজিতে কথা বলতে পারে আর পারে উড়োজাহাজে চড়ে বিদেশ ভ্রমণ করতে। তাই এখন বাসাবাড়িতে কাজের লোক দুর্লভ। এখন আমাদের আছে শুধু সোনিয়া, যাকে আমরা মায়া খালার মাধ্যমে পেয়েছি।

.            সোনিয়া আমার প্রিয় মানুষ হলেও সোনিয়ার নামটা আমার প্রিয় না। হিন্দি সিনেমাগুলিতে এ নাম অনেক বার শুনেছি। ওরা চুম্বকের মতো আকর্ষণীয় ছবি বানায়। আর নায়িকাদের নাম রাখে সোনিয়া, সানজানা, কবিতা, প্রিয়া, পিয়া, মালা, লিলা, খেলা। অবশ্য অনেক রাশিয়ান মেয়ের নামও সোনিয়া। সোনিয়া বুঝি একটা আন্তর্জাতিক নাম। নিউইয়র্কেও আছে। ময়মনসিংহেও আছে।

.            সোনিয়ার কালো মুখের উপর সাদা পাউডার ধূসর মসৃণ আবরণ তৈরি করেছে। কোনও পেশাদার মেকআপম্যান ছাড়া মুখের উপর প্রসাধনের এমন প্রলেপ তৈরি করা সম্ভব নয়। এমন কাজ শুধু নিজের জন্য করা সম্ভব। আমার গালে এমন করে সোনিয়া কখনও পাউডার লাগিয়ে দিতে পারবে না। শত চেষ্টা করলেও না। যে যত্ন নিয়ে সোনিয়া নিজের গালে পাউডার লাগায় সে যত্ন সে আমার ক্ষেত্রে করতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক।

.            সোনিয়া আমার জীবনের এক সিসিফাস। ও কত সুখী তা ওর চুল দেখেও বোঝা যায়। চুল শক্ত করার মেশিন ছাড়াই ও শুধু চিরুনি দিয়ে দিনের পর দিন ভেজা চুল টেনে টেনে তা সোজা করেছে। আর সেই চুল ওর ঘাড়ের উপর খাড়া হয়ে আছে। সোনিয়ার মাথায় অনেক চুল। এই চুলে বেনী করলে ওকে অনেক ভাল দেখাত। সোনিয়া তা করবে না। কারণ ও চায় ওর চুলের বাদামি আভা চারিদিকে ছড়িয়ে যাক। বাদামি আভাটা অবশ্য আমার কাছে ওর ছোটবেলার অপুষ্টির লক্ষণ বলে মনে হয়। তবে আমি এটাও জানি এই ঢাকা শহরের কত মহিলা চুল বাদামি করার জন্য কত বিউটি পার্লার চষে বেড়ায়।

বাইরের সংঘর্ষ কমেছে। আর আমাদের মধ্যে ঘর্ষণের ওসিডি বিস্তার লাভ করেছে। ব্যাপারটার পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা না দিয়ে এটাকে নেশা বলাটা অন্যায্য। চাইলে ভাতকেও নেশার দ্রব্যে পরিণত করা সম্ভব, সম্ভব ভাতের একটা বড় কালোবাজার তৈরি করা। নিয়ম করা হোক এক প্লেট ভাত খেতে হলে পঁচিশ বার অজু করতে হবে। তখন মানুষ অজু না করে ভাত খাওয়ার সুযোগ খুঁজবে। তখন দেখা যাবে ভাতের কালোবাজারের জিডিপি রাষ্ট্রের মোট জিডিপির বিশ শতাংশ হয়ে গেছে। ঘর্ষণ যেহেতু অবৈধ, তাই তা নেশারূপে আবির্ভূত হয়েছে। আর শূন্যস্থান পূরণের জন্য ব্যাপক বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে

.            সোনিয়ার হাসিটা এখন অনেক সুন্দর আর ছিনাল হয়েছে। দুই বছর আগে যখন ও আমাদের কাছে আসে তখন ভোতা রঙের কারণে ওর দাঁতগুলি চোখে পড়ত না। এখন সোনিয়া হাসলে ওর সুন্দর বড় বড় দাঁত দেখা যায়। সোনিয়া টিভি দেখে সাজগোজের সব কিছু শিখেছে। দিনে ও আটটা নাটক দেখে। নয়তো তিনটা সিনেমা। ইউটিউব সোনিয়ার স্বর্গ। এখনও ওর জীবনের স্বপ্ন কোনও পুরুষ নয়, ওর স্বপ্ন হল শুধু রাতদিন ইউটিউবে নাটক আর সিনেমা দেখা। তবে আমি জানি প্রথম সুযোগেই সোনিয়া পেট বাধাবে। অবশ্য আমি ওকে রক্ষা করার চেষ্টা করে যাব। আমি না থাকলে ও তো মুক্তি ক্লিনিকেও পৌঁছতে পারবে না। রাস্তার ধারে কিংবা ডাস্টবিনের পাশে সন্তান প্রসবের ঘটনার সংখ্যা কি কম?

.            সোনিয়ার বয়স এখন ষোলো। বাড়ি ময়মনসিংহে। আমাকে বলেছে ওর গ্রামের নাম চরদুলালবাড়ি। সোনিয়া তার থানার নাম জানে না। তাই আমিও তা জানি না। দাম্পত্যের বিপর্যয় সোনিয়া আমার চেয়ে বেশি দেখেছে। দুই বছর আগে সোনিয়া আমাকে বলেছে ওর মায়ের বয়স আটাশ। বাবার বয়স একশ কুড়ি। ধনী মানুষের স্বভাব তার বয়স পঞ্চাশ বছর হলে তা ত্রিশ বছর বলা, আর গরীব মানুষের স্বভাব তার বয়স আশি বছর হলে তা একশ কুড়ি বছর বলা। আমি ধরে নিয়েছি সোনিয়ার বাবার বয়স আশি বা তার একটু বেশি।

.            সোনিয়ার বাবা সোনিয়ার মাকে ত্যাগ করেছে যখন সোনিয়ার বয়স পাঁচ। তারপর সোনিয়ার বাবা বার বার বিয়ে করতে থাকেন। তাঁর ঘরে সব সময় দুই কি তিনটা করে বউ থাকত। সোনিয়ার বাবা সর্বশেষ বিয়ে করেছেন দুই বছর আগে। সেই বউয়ের বয়স তখন ছিল তেইশ। জানা গেছে সম্প্রতি সোনিয়ার বাবা আবার বিয়ে করেছেন।

.            সোনিয়ার বাবা সোনিয়ার মাকে ছেড়ে দেয়ার পর সোনিয়ার মার আরও কয়েকটি বিয়ে হয়। এখন সোনিয়ার মা থাকেন সোনিয়ার নানার সাথে। নানার ঘরেও এখন দুইটা বউ আছেন। সোনিয়ার নানি মারা গেছেন হাঁপানিতে। সোনিয়ার অনেক বড় ভাই আছে। কয়টা কে জানে? তাদেরও ঘরে একাধিক স্ত্রী। সবচেয়ে বড় ভাইগুলিরও সন্তান রয়েছে। ওই সব সন্তানের মধ্যে যারা পুরুষ, তাদেরও একাধিক স্ত্রী।

.            “খালাম্মা, আইন্নের মা এক্কানি?” দুই বছর আগে সোনিয়া যখন আমাদের বাসায় আসে, তখন এটা ছিল আমার প্রতি সোনিয়ার প্রথম প্রশ্ন।

.            সোনিয়ার প্রশ্ন শুনে আমার আব্বার কথা মনে পড়ে যায় আর আমি কান্না ঠেকানোর জন্য চোখে পানি দিতে যাই।

.            পৃথিবীর পুরুষদের মধ্যে সোনিয়া সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে ওর নানাকে। নানার বহুবিবাহ সোনিয়ার কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। ও জানে পুরুষরা বিয়ে করে এক-একটা চাহিদা মেটানোর জন্য। ওর বাবা বিয়ে করে সে-মেয়েকে, যে-মেয়ে ভাল পা টিপতে পারে। এক বার হাতের উপর পুতা পড়ে সোনিয়ার মার কব্জি ভাঙ্গে। কয়েকদিন তিনি সোনিয়ার বাবার পা টিপতে পারেননি। তিনি স্বামীর পা মাড়িয়ে স্বামীকে সুখ দেয়ার চেষ্টা করেন। ওই পদ্ধতিতে সোনিয়ার বাবা তাঁর পেশিগুলিতে কাঙ্খিত আরাম পেতেন না। তবে সেটা বড় সমস্যা ছিল না। অঘটন ঘটে অন্য কারণে। স্ত্রী তার স্বামীর পায়ের উপর উঠে পা মাড়াচ্ছেন, ব্যাপারটা সোনিয়ার এক ফুফু দেখে ফেলেন। সেই ফুফুর পাঁচ বিয়ে হয়েছে। কোনও স্বামীর ঘরেই তিনি স্থায়ী হতে পারেননি। ফুফু সোনিয়ার মাকে তাঁর ভাইয়ের পায়ের উপর থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে আনেন। তারপর তিনি পুরুষের পায়ের উপর নারীর দাঁড়ানোর শাস্তিস্বরূপ সোনিয়ার মাকে উঠানে পড়ে থাকা হাসমুরগির বিষ্ঠা মাখানো একটা ঝাড়– দিয়ে পিটান। সোনিয়ার ফুফু সোনিয়ার মাকে যত আঘাত দেন সোনিয়ার বাবা সোনিয়ার মাকে তত জোরে গালি দেন। এর পর সোনিয়ার মাকে বাপের বাড়ি চলে যেতে হয়। সোনিয়ার বাপ তত দিন একটা মেয়েকে তাঁর ঘর করতে দেন যত দিন মেয়েটা তাঁর পা টিপে তাঁকে সন্তুষ্ট রাখতে পারে।

.            সোনিয়ার বাবা, নানা আর প্রতিবেশি পুরুষগুলি ভাগ্যবান। তাঁদের দাম্পত্যের বিপর্যয় হয় ক্ষণস্থায়ী। তাঁরা যত খুশি তত বিয়ে করেন আর যখন যাঁকে ইচ্ছা ছেড়ে দেন। আবার প্রথম সুযোগেই আর একজনকে ঘরে নিয়ে আসেন। এলাকার হুজুর এই আসা-যাওয়ার বিষয়টা তদারকি করেন। এতে কোনও ঝক্কিঝামেলা নাই।

.            আমি আশরাফ শ্রেণির করিম চাচা, বাহার চাচা ইত্যাদি পুরুষের প্রতি যত উদার তার চেয়ে বেশি উদার আতরাফ শ্রেণির মানুষ সোনিয়ার পিতা, নানা, ফুফা এদের প্রতি। সোনিয়া এখন জেনে গেছে তার পিতাকে শরীরে নিরন্তর জেগে ওঠা উত্তাপে বরফ ঢালতে হয়। বিয়ে করা ছাড়া তাঁর এই আগুন নেভানোর বিকল্প কোনও পথ নাই। তাঁর সুযোগ আছে একাধিক মেয়ে রাখার। তাই তিনি রাখেন। তিনি জীবনকে সহজ রাখতে চান। একটার পর একটা বিয়ে করে ঘরে মেয়ে নিয়ে আসা তাঁর জন্য সহজ কাজ। আর ওই মেয়েগুলি কত না কাজে লাগে। সোনিয়ার বাবা তাঁর বউদের দিয়ে ধান কাটান, জোতদারের বাড়িতে কাজ করিয়ে টাকা উপার্জন করান। এতে করে তিনি চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়ার অবসর পান, টেলিভশন দেখতে পারেন। শুধু একটা জিনিস তাঁর কপালে নাই। সুখ। বুড়ো বয়সেও তাঁর স্বাস্থ্য ভাল। তারপরও তিনি নাকি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হা-পিত্তেশ করেন, আকাশের পানে তাকিয়ে সবাইকে গালিগালাজ করেন, ধানের জমির আইলে আইলে পাহাড়-ভারী জীবনটাকে টেনে বেড়ানোর কষ্ট নিরন্তর আল্লাহকে জানাতে থাকেন। তিনি জানেন না সুখ তাঁর কপালে যেমন নাই, তিনি যাঁদের হিংসা করেন, সেই ধনীদের কপালেও তা তেমনই নাই। এটা জানলে গরিব হওয়ার জন্য তিনি এত অনুশোচনা করতেন না। সোনিয়া দেখেছে, কষ্টের নামে তার পিতা যত আহাজারি করেন, কষ্ট তাঁর তত বাড়ে। সোনিয়াও তার পিতার দুঃখে দুঃখিত। মাতার দুঃখেও দুঃখিত। মানুষকে বিচার না করা সোনিয়ার সহজাত অভ্যাস, ঠিক আমার আব্বার মতো। যে জ্ঞান আমি কষ্ট করে অর্জন করেছি সে জ্ঞান সোনিয়া মায়ের পেট থেকে নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে।

 

পনেরো

আতশবাজির শব্দ। এক এক বার মনে হয় এক গামলা খই ফুটছে। চালের বা গমের বা ভুট্টার খই নয়। চল্লিশ-পঞ্চাশটা খিরা বা শশার খই এক সাথে ফোটে। সৃষ্টি হয় শব্দের ফোয়ারা।

.            “কী অইতাছে খালাম্মা?”

.            “বিয়ে।”

.            “তাত্তাড়ি আয়ুইন।”

.            “একটু দাঁড়া,” আমি বলি।

.            আমি পাগলের ঘরে যাই। আলো জ্বালাই। পাগল লাল কম্বলটা মুড়ি দিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। কম্বল দিয়ে সে পুরো মাথা ঢেকে রেখেছে। তারপরও তার পায়ের পাতা দেখা যাচ্ছে। আর দেখা যাচ্ছে সেই কালো পোশাক। সে তা বদলায়নি। আর সে নড়ছেও না। আমি তার এ অবস্থা বুঝি। সে জেগে আছে। এখন সে আমার দিকে তাকাবে না। আমি ডাকলেও সে সাড়া দেবে না। আর এখন তাকে ডাকার সাহসও আমার নাই। আর কোনও দিন কি সেই সাহস হবে? আমার বুক চিপে। আজকে আমরা যে দোজখ সৃষ্টি করলাম, তার পর যদি আর কখনও সে আমার ডাকে সাড়া না দেয়, তা হলে আমার কি কিছু বলার থাকবে? এমন কিছু যদি হয়, তা হলে আমি কী করব? আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমাদের ঝগড়ার পর আমি সব সময় ভান করে ধরে নিই সে ঘুমাচ্ছে। সেও ভান করে, সে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু আজকের ঝগড়া! আমি একটা কড়া ঝাঁকুনি খাই। আমার মাথা শিনশিন করে। চোখ বন্ধ করে আমি মাথা ধরা থামাই।

.            চোখ খুলে আমি কিছু সময় পাগলের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার চোখ ভিজে যায়। সবাই চলে গেছে। পাগল যায়নি। সকল কষ্ট সহ্য করে পাগল আমার জন্য পড়ে আছে। অনুভব করি অশ্রু আমার অক্ষিপক্ষ্ম ছুঁয়েছে। আমি আলো নিভিয়ে নীরবে পাগলের ঘর থেকে বের হই। বাকি অশ্রু ছাদে গিয়ে ঝরাব।

.            সোনিয়াকে নিয়ে আমি ছাদের উদ্দেশে রওয়ানা দিই।

.            সিঁড়িতে সোনিয়া আমাকে জিজ্ঞেস করে, কোথায় বিয়ে হচ্ছে? আমি যেন পাড়ার সব খবর রাখি।

.            আমাদের এই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় চট্টগ্রামের অনেক ধনী মানুষ বাস করেন বলে শুনেছি। তাঁদের দিল অনেক বড়। কারণ হিসাবে বলা হয় এঁদের পূর্বপুরুষদের বেশির ভাগ মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছেন। আরব সাগর, লোহিত সাগর, পারস্য উপসাগরের পাড় থেকে নৌকা ছেড়ে তাঁরা চিটাগঙে এসে নোঙর ফেলতেন আর স্থানীয় নারীদের ইসলামি রীতিতে বিয়ে করতেন। বিয়ে করে অনেকে সস্ত্রীক নাকি মালয় উপদ্বীপে চলে যেতেন। পেনাং ছিল তাঁদের প্রিয় গন্তব্যস্থল। যাঁরা থেকে যান তাঁরা পরে সওদাগর হিসাবে পরিচিতি পান। তাঁরা বন্দরে বাণিজ্য করে অনেক টাকা কামান। তাঁদের ওয়ারিশরা ছেলেমেয়েদের বিয়েতে দুহাত খুলে টাকা খরচ করেন।

.            বিশ বছর আগের বসুন্ধরার সাথে আজকের বসুন্ধরার তুলনা চলে না। আমরা যখন এখানে জায়গা কিনি তখন এই এলাকা পানির নিচে ছিল। জায়গাটা কেনার আগে এক বর্ষায় আমরা নৌকায় চড়ে এখানে এসেছিলাম। অনেক মজার নৌকা ভ্রমণ ছিল সেটা। শরৎ কাল বুঝি প্রায় যায় যায়। যে বৃষ্টি পড়ছিল তার জন্য ছাতা মাথায় না দিলেও চলত। আমার চুলে অনেক পানি জমা হয়েছিল। চারিদিকে বৃষ্টির গন্ধ। আমাদের তখন সুখের বসন্ত। নৌকাতে আব্বা আমাকে তার কোলে বসিয়ে রাখে, কারণ আমি সাঁতার জানি না। আমি অবশ্য আজও সাঁতার জানি না। আর মার পাশে ছিল রাশেদ। রাশেদ সাঁতার জানত। আমি তখন এখান থেকে কচুরিপানার ফুলের ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম। ছবিটা এখনও একটা অ্যালবামে আছে। কচুরিপানার ফুল যে এত সুন্দর তা বোধ হয় আমি কখনও জানতামই না ওই ছবিটা না তুললে। সেই বসুন্ধরা এখন একটা পুরোদস্তুর আবাসিক শহরতলী। এবং ঢাকা শহরের অন্যতম গোছানো এলাকাও বটে। আর এখানে তুলনামূলকভাবে বাসা ভাড়াও কম। আমি যেহেতু বাড়িওয়ালী, আমার জন্য এটা সুখবর হতে পারে না। তবে অনেক ভাল মানুষ এখানে বাসা নিতে আসেন। কম ভাড়ার সুযোগ গ্রহণ করতে। যাতে তাঁরা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য একটু বাড়তি খরচ করতে পারেন। মন্দ কী তাতে?

যেই জায়গায় আমার পায়ের ছাপ পড়ে ছিল সেই জায়গায় স্যার ঠোঁট ঘষেন। আমি লাফ দিয়ে গিয়ে আমার পেছনের জানালার পর্দাটা টেনে দিই। সাথে সাথে ছোট ঘরটাও অন্ধকার হয়ে যায়। কোনও লাইট যে জ্বালানো ছিল না, সেটা আমার খেয়ালে ছিল না। তবে আমার চোখের ক্ষমতা অনেক। আমি অন্ধকারেও সব দেখতে পাই। সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা যে দরকার, সে বিষয়ে আমার ধীশক্তি সজাগ হয়ে যায়। আমি জানালা থেকে উল্টো দিকে দৌড় দিই দরজার ছিটকানি বন্ধ করার জন্য

.            বসুন্ধরায় এখন ছয় তলার নিচে কোনও ইমারত নাই। আতশবাজি ফুটছে বেশ দূরে। বড় কোনও বাড়িতে নিশ্চয়ই। না হলেতো বিয়ের জন্য হল ভাড়া করা হত। হলের মধ্যে আতশবাজি পোড়ানো সম্ভব নয়। তবে এটা বিয়ে ছাড়া অন্য কিছুর অনুষ্ঠানও হতে পারে। বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আতশবাজি ফোটার পাশপাশি অবিরাম গান চলছে। হিন্দি ছবির কল্যাণে আমরা জানি বিয়েতে স্থানীয় শিল্পীদের ডেকে এনে আমরা কী গান গাওয়াই। আর আমাদের ছোট ছোট মেয়েগুলিকে কোন ঢংয়ে নাচাই। বোলে চুড়িয়া বোলে কাঙ্গনা। মেহেদি লাগাকে রাখনা। সাজান তুমসে পেয়ারকি লাড়াই মে। মুঝে সাজান কি ঘার যানা হে। তেরে ঘর আয়া মে আয়া তুঝকো লেনে।  দুলহে কা চেহরা সুহানা লাগতা হে। মেহেঁদি হে রাচনেওয়ালি। আমরা সবাই নাচনেওয়ালি। আমার দুই পায়ের দুই বৃদ্ধাঙ্গুল ড্রামের বিটে সাড়া দেয়।

.            “খালাম্মা, আইন্নে কি আর বিয়া কত্তাইন না?” সোনিয়া বলে।

.            “চুপ কর্,” আমি বলি। তারপর ডানে বামে পেছনে তাকাই। হামিদের ভূত কোথাও নাই। ওই ভূত আবার কবে আসবে কে জানে? হামিদকে মেরেছি। এখন আর তার প্রতি আমার কোনও রাগ নাই। মাঝে মাঝে ভূত যদি আসে আসুক। আমার কোনও সমস্যা নাই।

.            সোনিয়া আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়। আমার গায়ে কাঁটা দেয়।

.            “করব,” আমি বলি।

.            সোনিয়া আনন্দের হাসি হাসে। “খালাম্মা, আমারে অনেক বাজি কিন্যা দিয়ুন লাগব। আইন্নের বিয়াত জ্বালায়াম।”

.            জ্বালাস। আমি মনে মনে বলি।

.            “আজকে যে পাত্র দেখলি তাকে কেমন লাগল?” আমি বলি।

.            “হেরে আমি ঝাডা দিয়া বাইরায়াম।’’

.            “ওর সাথে আমার বিয়ে হলে কেমন হত চিন্তা কর্,” আমি সোনিয়াকে বলি। “তোর বাবার আর মার বিয়ের মতো। তোর কি বয়স্ক পাত্র পছন্দ নয়?”

.            “বুইড়া অইলে কুনো সমস্যা নাই,” সোনিয়া বলে। “তবু হেরে ঝাডা দিয়া বাইরায়াম।”

.            সোনিয়া যদি বন্দুকের ব্যবহার জানত, তা হলে হয়তো বলত, “হেরে আমি গুলি কইরা মাইরালায়াম।”

.            সোনিয়া সব দেখেছে। সব বুঝেছে।

.            “এক পাত্র না হয় গেছে,” আমি বলি। “আর একটা আসতে কতক্ষণ।”

.            “এরুম কেউরে আনুইন না যে, যারে আমার ঝাডা দিয়া বাইরান লাগব,” সোনিয়া বলে। “আইন্নে কি একটাও বালা মানুষ চিনইন্না।”

.            আমি মন খুলে হাসি। আর মনে মনে বলি, দেখা যাক, সোনিয়া, কী হয়। তবে একটা কথা ঠিক। চেয়ারম্যান স্যারের মতো এমন ক্লাসিক পাত্র আর পাব না।

 

ষোলো

চেয়ারম্যান স্যার গতকাল সকাল এগারোটায় আমার অফিসে এসেছিলেন। আমরা যখন স্টুডেন্ট ছিলাম তখন আমাদের অনেক শিক্ষকেরই কোনও বসার জায়াগা ছিল না। এখন যখন আমরা শিক্ষক হয়েছি তখন আমার নিজেরই একটা ছোট অফিস আছে। আর চেয়ারম্যান স্যারের অফিসটাতো শুধু ঐতিহাসিকই না, বিশালও বটে।

.            স্যার এসে সরাসরি আমার পায়ের উপর পড়েন। স্যারের সাথে আসা বাতাসের ঝড় থেমে যায়। প্রেম নিবেদনের ঝড় শুরু হয়। এটা স্যারের স্বভাব। উনি যখন আমাকে একা পান তখন আমার পায়ে পড়েন। আর যখন সাথে অন্য মানুষ থাকে তখন তিনি আমার চোখ আর চিবুক দেখেন। আহা, ডোপামিন।

.            স্যারকে হামাগুড়িরত রেখে আমাকে উঠতে হয়। স্যার উঠেন না। যেই জায়গায় আমার পায়ের ছাপ পড়ে ছিল সেই জায়গায় স্যার ঠোঁট ঘষেন। আমি লাফ দিয়ে গিয়ে আমার পেছনের জানালার পর্দাটা টেনে দিই। সাথে সাথে ছোট ঘরটাও অন্ধকার হয়ে যায়। কোনও লাইট যে জ্বালানো ছিল না, সেটা আমার খেয়ালে ছিল না। তবে আমার চোখের ক্ষমতা অনেক। আমি অন্ধকারেও সব দেখতে পাই। সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা যে দরকার, সে বিষয়ে আমার ধীশক্তি সজাগ হয়ে যায়। আমি জানালা থেকে উল্টো দিকে দৌড় দিই দরজার ছিটকানি বন্ধ করার জন্য। ছিটকানি লাগানো পর্যন্ত আমার নিঃশ্বাস আটকে থাকে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর আমার নিঃশ্বাস বেশ জোরে মেঝেতে আঘাত করে। আমার শরীরেও শিথিলতা ফিরে আসে।

.            আমার ছোট্ট অফিস কক্ষে তখন শতভাগ রোমাঞ্চের পরিবেশ। তিনটা চেয়ার আর একটা টেবিল আর বইয়ের একটা ছোট আলমারি ছাড়া আমার অফিসে আর কিছু নাই। আমার পায়ের ছাপের উপর আমার প্রেমিক সেজদারত। আমি টেবিলে আমার জায়গায় ফিরে এলে তিনি উঠে দাঁড়ান। তাঁর দৃষ্টিশক্তি বুঝি আমার দৃষ্টিশক্তির চেয়েও প্রখর। তিনি আমার গালের রং খুঁজছেন বুঝি। কে না জানে এমন সময় কুমারী মেরি হোক, কিংবা অজাচারিণী ক্লিওপাত্রা হোক, কিংবা আমার মতো ছিনাল হোক, সবাই লজ্জায় লাল হয়ে যায়। বুঝলাম স্যার আমাকে দেখে সন্তুষ্ট হতে পেরেছেন। কামনায় ওনার চোখ দুটি রাজহাসের ডিমের মতো ফুলে উঠেছে। ওই চোখ দিয়ে তিনি ডানে বামে দেখেন। আমি তাঁকে দেখি। আমার প্রাথমিক ঘোর কেটে গেছে। দরজা বন্ধ করতে পেরেছি। জানালা বন্ধ করতে পেরেছি। এই খুশিতে আনন্দধারা একবার আমার মাথার তালু থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত গড়িয়ে যায় আবার পায়ের পাতা থেকে মাথার তালু পর্যন্ত বেয়ে বেয়ে ওপরে ওঠে। স্যার কী খুঁজছেন আমি জানি। কিন্তু কী করা? জীবনে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়। স্যারের দৃষ্টি কোনও সুবিধাজনক আসবাবপত্র খুঁজে পায় না। আমার কতক চাচার অফিসে চেয়ারের পেছনে ছোট একটা ঘরে একটা করে খাটও আমি দেখেছি। সে ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাই। ভিসি স্যারের অফিসে আছে হয়তো। আমি তা জানি না। সেই জায়গায় আমার কখনও যাওয়া হয়নি। চেয়ারম্যান স্যার চোখ নামিয়ে আমার অফিসের ফ্লোরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মাপতে থাকেন। আন্দাজ করতে থাকেন কোন দিকে একটা কবর খোঁড়া যাবে। পূর্ব-পশ্চিমে? উত্তর-দক্ষিণে? কোনাকুনি? টেবিলটা একটু সরালে কেমন হবে? ওটার ভার কত? উনি একা সরাতে পারবেন? না কি আমাকেও ধরতে হবে? চেয়ারগুলি টেবিলের ওই পাশে রাখলে কেমন হয়? স্যারের দৃষ্টি টেবিলটার উপর আটকে থাকে। আবছা অন্ধকারে স্যারের চোখ দুটি চকচক করে ওঠে, যেন তারা অন্ধকার মহাসড়কের ক্যাট’স আই। আবার স্যারের চোখজোড়া মিইয়েও যায়। টেবিলটার প্রস্থ অপরিমেয়। আমি ওটার উপর পা ঝুলিয়ে বসতে পারি। তবে আমার পেছনে হাতের তালু ঠেকানোর মতো যথেষ্ট জায়গা টেবিলটাতে নাই।

.            কী আশা যে জেগেছিল স্যারের মনে। কিন্তু তাঁর ইনটুইশনও বেশ টনটনে। আর তা হবেই না বা কেন? তাঁর অভিজ্ঞতারতো কোনও ঘাটতি নাই। ছয় দশক আর পাঁচ মহাদেশের অভিজ্ঞতা। আর কত শত নারীর রানের চিপার, তা আমি নিজেও জানি না। যেই বুঝলেন পর্দা টানা আর দরজা বন্ধের উদ্দেশ্য শুধু ভেতরের এই মানবিক দৃশ্যটাকে লোকচক্ষুর আড়াল করা, আর তাঁর সমগ্র বাসনা এক তরফা, যেমন খদ্দের বারবনিতাকে চুমু খায় কিন্তু বারবনিতা খদ্দেরকে প্রতিচুমু দেয় না, আমার পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা শুধুই সতর্কতামূলক, কামনা-প্রভাবিত নয়, অমনি স্যারের লাল আর ফেঁপেফুলে ওঠা আর্য মুখ একটা এক কেজি ওজনের গোল বেগুন এক মাস পুকুরে পচলে যেমন হয়, তেমন রং ধারণ করে।

.            স্যারের পরিস্থিতি মেনে নিতে বিশ সেকেন্ডের মতো সময় লাগে। আর ওই সময়টা ওনার মুখটা এতটা হা হয়ে থাকে যে আলো থাকলে আমি তাঁর কলিজা দেখতে পেতাম। বিশ সেকেন্ড পর স্যার নিজেকে ফিরে পান। তিনি আবার আমার পায়ের উপর সেজদায় চলে যান। আমার যে আঙ্গুলগুলো এখন বিয়ে বাড়ির গানের তালে তাল দিচ্ছে তখন স্যারের হতাশ নিঃশ্বাস তাদের ধুলা ঝাড়ছিল। আর কী যে গরম স্যারের নিঃশ্বাস ।

.            “উঠুন স্যার,” আমি বলেছিলাম। “যা বলার আগামী কাল আমার বাসায় এসে বলবেন।”

 

ওসিডি‘র প্রকাশিত পর্বগুলো পড়ুন—
ওসিডি (পর্ব-০১)
ওসিডি (পর্ব-০২)
ওসিডি (পর্ব-০৩)
ওসিডি (পর্ব-০৪)
ওসিডি (পর্ব-০৫)
ওসিডি (পর্ব-০৬)
ওসিডি (পর্ব-০৭)

আরো পড়তে পারেন

ওসিডি (পর্ব-১০)

পড়ুন— ওসিডি (পর্ব-০৯) উনিশ আমরা সিঁড়ি বেয়ে বারন্দাতে নামি। ড্যাব করে একটা আওয়াজ হয়। একটা ফুলের টব উল্টে গেছে। প্লাস্টিকের হালকা টব। মাটি আছে ওটার ভেতরে। সোনিয়া বসে গাছটার গোড়া ধরে ওটাকে টেনে তোলে। বারান্দার ছাদের বাইরের দিকের দুই কোনায় দুটি বাল্ব আছে। তাদের ঢাকনাগুলি বেশ পুরনো আর ওদের ওপর অনেক ধুলাও জমেছে। আবছা আলো।….

ওসিডি (পর্ব-০৯)

পড়ুন— ওসিডি (পর্ব-০৮) এরপর আমার আসল পরীক্ষা শুরু হয়। পাগল এক বালতি পানি আর একটা নতুন তোয়ালে নিয়ে এসে দরজার সামনে বসে যায়। পাগল পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে ফ্লোর মোছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে দরজার সামনে আর যাওয়ার উপায় থাকে না। প্রথম ঝগড়াটা হয় আমার চপ্পল-জোড়া নিয়ে। আমার চপ্পল পাগলের মোছা ফ্লোর ময়লা করে। সেই চপ্পল যেই….

ওসিডি (পর্ব-০৮)

পড়ুন— ওসিডি (পর্ব-০৭) আঠারো শপাত! শপাত! .            কীইইই? আমি লাফ দিয়ে উঠি। সত্যিই কি চেয়ারম্যান স্যারের পিঠে জুতার বাড়ি? আমি এতক্ষণে চিত হয়ে পড়ে যেতাম, যদি আমি এক যুগ আগের শিশিরকণা হতাম। সেই পতনে আমার মাথা ফাটত। কিন্তু আমি এক যুগ আগের শিশিরকণা নই। শপাত! শপাত! চেয়ারম্যান স্যারের পিঠে আবার জুতার….

error: Content is protected !!