Author Picture

নেইমার: রাজা হতে না পারা এক যুবরাজ

মেজবাহ উদদীন

মানুষের ফুসফুস সচল রেখে জীবনের সার্টিফিকেট বিতরণকারী ব্রাজিলের অ্যামাজন অরণ্য দেয় পৃথিবীর পাঁচ ভাগের এক ভাগ অক্সিজেনের জোগান। আর ব্রাজিলের মাটি দেয় ফুটবল মাঠের অমর ফুটবলশিল্পীর জোগান। জানেন নিশ্চয়ই অমর সেই চ্যাম্পিয়নরা কিভাবে তৈরি হয়। টাকা পয়সা চ্যাম্পিয়ন করতে পারে না, গর্বিতভাব চ্যাম্পিয়ন করতে পারে না। অসাধারণ স্কিলস, পরিশ্রম আর কষ্টের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে খাঁটি সোনা হয়ে ওঠার মতো করেই চ্যাম্পিয়ন মানুষ তৈরি হয়। তাদের পাগলামি এমন পর্যায়ে থাকে যে সম্পূর্ণ দুনিয়াও যদি তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায় তবুও তারা তাদের লক্ষ্য থেকে সরে যায় না। আজ কথা বলবো ফুটবলের এমন এক চ্যাম্পিয়নকে নিয়ে, ফুটবল মাঠে যার রাজত্ব করার কথা ছিল।

উপমহাদেশের সড়কে চলতে গিয়ে যে কাউকে বিশ্বের সেরা তিনজন ফুটবলারের নাম জিজ্ঞেস করলে অনেক সম্ভাবনা আছে যে, মেসি রোনালদোর পরে তৃতীয় নামটি বলবে নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র। মেসি রোনালদোর পর ফুটবলের রাজত্ব তারই হওয়ার কথা ছিল। সে সম্ভাবনা তিনি নিজেই তৈরি করেছিলেন। ফুটবলে তার স্কিল মানুষের অবাক হওয়ার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে প্রতিবার।

জীবনে সফলতার, বড় হওয়ার, ভালো মানুষ হওয়ার মোটিভেশন বইয়ে খুঁজলে সহজেই মিলবে; কিন্তু ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ার তৈরি করার, ফুটবলার হিসেবে সফল হওয়ার মোটিভেশন পাওয়া যাবে ব্রাজিলের উর্বর ভূমিতেই। ব্রাজিল থেকে উঠে এসে বিশ্বজয় করেছেন— পেলে, জিকো, গরিঞ্চা, সক্রেটিস, রোমারিও, রোনালদিনহো, রবার্তো কার্লোস, রোনালদো তালিকাটা অনেক অনেক লম্বা। তবে কোন এক অজানা কারণে গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে সেখান থেকে কোন তারকা ফুটবলারকে উঠে আসতে দেখা যায়নি, একমাত্র ব্যতিক্রম নেইমার জুনিয়র।

ব্রাজিলের ফুটবলীয় মাটি থেকে উঠে আসা প্রতিভাবান খেলোয়াড়টি তার সামর্থ্যের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছতে পারেনি। অধিকাংশ ব্রাজিলিয়ানের মতোই ১৯৯২ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি, ব্রাজিলের সাও পাওলোতে জন্ম নেওয়া নেইমারের শৈশব থেকেই বলের সাথে সখ্যতা। বলা হয় নেইমার ফুটবল খেলার জন্যই জন্মগ্রহণ করেন। নেইমার যে এখন মাঠে প্রচুর স্কিল দেখান, তার কারণ তিনি খেলা শিখেছেন ব্রাজিলের রাস্তায়, ফুটসাল খেলে। নেইমারের ফুটবল স্ক্রিল, প্লেয়িং স্টাইল লক্ষ্য করলে সেই ফুটসালের ফ্লেভার এখনো পাওয়া যাবে। ২০০৩ সালে তিনি যোগ দেন ‘কালো মানিক’ পেলের এক সময়ের ক্লাব সান্তোসে। নেইমারের শুরুর দিকের ক্যারিয়ারে এতই চমক ছিল যেটা আমরা বেশিরভাগ মানুষ চিন্তা করতে পারি না। সান্তোসের যুব একাডেমিতে থাকার সময়ে তেরো বছরের নেইমারের সাথে একটা চুক্তি স্বাক্ষর করে খেলাধুলার সামগ্রী প্রস্তুতকারী বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান নাইকি ইনকর্পোরেশন।

ব্রাজিলীয়ান ঐতিহ্যবাহী ক্লাব সান্তোস হীরা চিনতে ভুল করেননি, তাই তো মাত্র সতেরো বছর বয়সেই তার সাথে পেশাদার চুক্তি করে সান্তোস। যেখানে দিনের পর দিন নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে থাকেন নেইমার। ২০১০ সালে নেইমার তার ক্লাব সান্তোসের হয়ে ৬০ খেলায় ৪২ গোল করে সব আলো নিজের দিকে টেনে নেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে পেলে যখন সান্তোসকে শেষবার ল্যাতিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খ্যাত কোপা লিবার্তোদোরেস জিতিয়েছেন, নেইমারের তখন জন্ম হয়নি। সালটা ছিল ১৯৬৩। এরপর সান্তোসে আসেনি ল্যাতিন আমেরিকার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই ট্রফি। নেইমার ২০১১ সালে ফাইনালে ওঠালেন সান্তোসকে, প্রতিপক্ষ উরুগুইয়ান ক্লাব পেনারল। পেনারলের মাঠে নেইমার গোল করলেন, আর ২-১ গোলে জয়ী হয় সান্তোস।

উপমহাদেশের সড়কে চলতে গিয়ে যে কাউকে বিশ্বের সেরা তিনজন ফুটবলারের নাম জিজ্ঞেস করলে অনেক সম্ভাবনা আছে যে, মেসি রোনালদোর পরে তৃতীয় নামটি বলবে নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র। মেসি রোনালদোর পর ফুটবলের রাজত্ব তারই হওয়ার কথা ছিল। সে সম্ভাবনা তিনি নিজেই তৈরি করেছিলেন। ফুটবলে তার স্কিল মানুষের অবাক হওয়ার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে প্রতিবার

নেইমার নিজের ড্রিবলিং আর স্কিল দিয়ে সবাইকে এতটাই মুগ্ধ করেন যে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই ব্রাজিল লিজেন্ড রোনালদিনহোর সাথে তাকে তুলনা করা শুরু হয়ে যায়। আর ডিসেম্বর ২০১০ এর মধ্যে নেইমার মাত্র ১৮ বছর বয়সে দক্ষিণ আমেরিকার মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের তালিকায় উঠে আসেন। সেই বছরই নেইমারের জন্য ইউরোপের বড় বড় ক্লাব নিজেদের আগ্রহ দেখাতে শুরু করে। তখন বিশ্বজুড়ে নেইমারের ফুটবল স্কিলের চর্চা এতটাই বেড়ে যায় যে, ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি যারা সাধারনত অন্য কোম্পানিতে ইনভেস্ট করে তারা নেইমারের ৫ পার্সেন্ট সেলিং রাইটস কিনে নেয়।

২০১৩ সালে নেইমার যোগ দেন ‘মোর দ্যান আ ক্লাব’ আদর্শবাণীর বার্সেলোনায়। বার্সেলোনায় শুরুটাও বেশ ভালোই ছিলো, নিজের প্রথম ক্লাসিকোতেই তুলে নেন গোল। তবে ২০১৩-১৪ মৌসুমটা জঘন্য যায় বার্সেলোনার, কোনো শিরোপাই ঘরে তুলতে পারেনি তারা। তবে বিশ্বকাপে গিয়ে ঘরের মাঠে ঠিকই আলো ছড়াচ্ছিলেন নেইমার, দলকে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত তোলার পথে করেছিলেন ৪ গোল। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার জুনিগার এক ভয়ংকর ফাউল; বিশ্বকাপ শেষ নেইমারের, ব্রাজিলেরও।

পরের সিজনে মেসি সুয়ারেজ আর নেইমার মিলে বার্সেলোনাতে গড়ে তুললেন ‘এমএসএন’, পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম ভয়ংকর আক্রমণত্রয়ী, যারা লা লিগাতে ডমিনেট করা শুরু করেছিল। এই তিনজন সম্মিলিতভাবে ২০১৪-১৫ সিজনে লা লিগা, কোপা দেল রে, চাম্পিয়নস লিগ জেতানোর মাধ্যমে বার্সেলোনাকে কন্টিনেন্টাল ট্রেবল জিতিয়েছেন। বার্সেলোনা আজ পর্যন্ত একমাত্র ক্লাব যারা এই কন্টিনেন্টাল ট্রেবল দুইবার জিতেছে। ওই সিজনে এমএসএন ত্রয়ী বার্সেলোনার হয়ে ১২২ গোল করছিল। ২০১৫-১৬ সিজনে নেইমার বার্সেলোনার হয়ে দুটা ডোমেস্টিক শিরোপা অর্জনের পাশাপাশি মেসি সুয়ারেজ নেইমার ত্রয়ী নিজেদের আগের রেকর্ড ভেঙে ১৩১ গোলের নতুন রেকর্ড করেন।

যে নেইমারকে বার্সেলোনায় ভাবা হচ্ছিল লিওনেল মেসির যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে, সেই নেইমার ২৫ বছর বয়সে, নিজের সেরা সময়ে ক্লাব ছেড়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে বসলেন। নেইমার মনে করতেন, মেসির ছায়ায় তার গৌরব পুরো প্রকাশ পায় না। তাই সে বার্সেলোনার জন্য যাই করুক না কেন মেসির ছায়া থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না।

নেইমারকে বিক্রি করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না বার্সেলোনার। যে কারণেই ২২২ মিলিয়ন ইউরোর রিলিজ ক্লজ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার নামের পাশে। মনে করা হয়েছিল সেই ট্রান্সফার ফি’র কারণে নেইমার বার্সেলোনাতে থেকে যাবেন। কিন্তু পিএসজি প্রেসিডেন্ট নাসের আল খেলাইফি সেই ‘ভল্ট ভাঙ্গা’ ট্রান্সফার ফি দিয়ে তাকে নিয়ে গেলেন পিএসজিতে।

পিএসজিতে যোগ দেওয়া নেইমারের জন্য ছিল অনেক ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ ফ্রেঞ্চ লীগকে মনে করা হয় নন্দিত নরক। সেই লীগ অনেক বেশি ফিজিক্যাল, তাই তো নিজের স্টাইল অনুযায়ী দীর্ঘক্ষণ নিজের পায়ে বল রাখাটা নেইমারের জন্য ব্যাকফায়ার করল। ২০১৮ থেকে ২০২২ এই চার বছরে ইউরোপের সবচেয়ে বেশি ফাউলের শিকার হওয়া প্লেয়ারের নাম নেইমার।

পরাজয়কে যারা কোন অবস্থায় তবুও মেনে নিতে অপারগ নেইমার তাদের দলে। তাই তো ইনজুরিকে ফাঁকি দিয়ে বারবার উঠে দাঁড়ানোর গল্প লিখেছেন। নেইমার জুনিয়র প্রজন্মের এমন এক খেলোয়াড় তার সম্পর্কে আপনার মতামত যাই হোক না কেন আপনি এটা অস্বীকার করতে পারবেন না যে তার ভিতরে যে পরিমাণ ন্যাচারাল অ্যাবিলিটি আছে এটা অনেক কম খেলোয়াড়ের আছে। তবুও প্রশ্ন থেকে যায় নেইমার কী তার সম্ভাবনা তার ট্যালেন্ট অনুযায়ী সফল হতে পেরেছেন?

বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ, ক্ষিপ্রগতি, রেইনবো, ইলাস্টিকো, টর্নেডো ফ্লিক; সবই ছিল নেইমারের মাঝে। তখন পর্যন্ত ব্রাজিলের জার্সিতে অভিষেক হয়নি নেইমারের। কিন্তু ক্লাব ফুটবলে সান্তোসের হয়ে একের পর এক রেকর্ড গড়ে যাচ্ছেন, পায়ের জাদুতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার পাশাপাশি মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন চারদিকে। জাতীয় দলে খেলার আগেই ফুটবল–পাগল দেশটির বড় তারকায় পরিণত হন। যাকে বিশ্বকাপ দলে নেওয়ার জন্য তোলপাড় শুরু হয়েছিল ব্রাজিলজুড়ে। পেলে–রোমারিও পর্যন্ত চিঠি লিখেছেন তৎকালীন কোচ দুঙ্গার কাছে, নেইমারকে দলে একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য।

নেইমারের গ্রাফটা যেভাবে উঠেছিল, ঠিক সেভাবেই পতিত হয়েছে। সান্তোস, বার্সার নেইমারের সঙ্গে পিএসজির নেইমারকে মেলানো দায়। খেলার স্টাইল থেকে লাইফস্টাইল, যত দিন গড়িয়েছে, ততই পথভ্রষ্ট হয়েছেন তিনি। ভাগ্যিস সহজাত প্রতিভা ছিল বৈকি, না হলে অনেক আগেই হারিয়ে যেতেন ফুটবলের ইতিহাস থেকে। প্রতিভার নিদারুণ অপচয়ের সর্বশেষ উদাহরণ নেইমার। মেসি রোনালদো পরবর্তী ফুটবল কিং হিসেবে যাকে মনে করা হয়েছিল। তিনি কিনা সময়ের বিবর্তনে পরাজিত যুবরাজ-এ পরিণত হয়েছেন

নেইমারের গ্রাফটা যেভাবে উঠেছিল, ঠিক সেভাবেই পতিত হয়েছে। সান্তোস, বার্সার নেইমারের সঙ্গে পিএসজির নেইমারকে মেলানো দায়। খেলার স্টাইল থেকে লাইফস্টাইল, যত দিন গড়িয়েছে, ততই পথভ্রষ্ট হয়েছেন তিনি। ভাগ্যিস সহজাত প্রতিভা ছিল বৈকি, না হলে অনেক আগেই হারিয়ে যেতেন ফুটবলের ইতিহাস থেকে। প্রতিভার নিদারুণ অপচয়ের সর্বশেষ উদাহরণ নেইমার। মেসি রোনালদো পরবর্তী ফুটবল কিং হিসেবে যাকে মনে করা হয়েছিল। তিনি কিনা সময়ের বিবর্তনে পরাজিত যুবরাজ-এ পরিণত হয়েছেন। ৩১ বছর বয়সের আগেই রোনালদো মেসির অর্জন ছিল অসংখ্য ট্রফি, আর নেইমার সেই ৩১ বছর বয়সেই ছেড়ে গেলেন ইউরোপ।

ফুটবলের শব্দকোষ তন্ন তন্ন করে খুঁজে পাওয়া উপমাগুলো যার নামের সাথে জুড়ে দেওয়া যায় অনায়াসে; ২০০২ এর পরে আরেকটা শিরোপার জন্য ব্রাজিলের সাধারণ মানুষ যার ওপরে সবচেয়ে বেশি বাজি ধরেছেন। যাকে নিয়ে ব্রাজিলের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার পারদ ছিল আকাশচুম্বী সেই তারকার এমন পতন ব্রাজিলের হেক্সা জয়কে করে তুলেছে সুদূর পরাহত। কেন নেইমারের মতো একজন ফুটবলশিল্পী নিজেকে তুলে দিলেন বাণিজ্যের বাটখারায়? ফুটবল প্রেমী মানুষ সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে চাইলেও, ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই তত্ত্ব বিক্রি করা এই দুনিয়ায় সেটা আরেকটা বুদবুদের মিলিয়ে যাওয়ার মতোই ঘটনা!

২০১৪-১৫ সিজনের নেইমার ছিলেন তার ক্যারিয়ারের বেস্ট ভার্সন। নিজের হারানোর এই গল্পে নেইমার সর্বশেষ অংক যোগ করলেন সৌদি ক্লাব আল হিলালে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে। নেইমার হয়তো তার ফুটবল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ভুলটি করলেন, প্রথম ভুলটি অবশ্যই ছিল ২০১৭ সালে বার্সেলোনা ত্যাগ করা।

রোনালদো, বেনজেমা, কান্তে থেকে শুরু করে ফিরমিনো—অনেকেরই পরন্ত ক্যারিয়ারের নতুন ভালোবাসা এখন মরুভুমির ফুটবল। তবে ইউরোপে নেইমারের দেওয়ার মতো অনেক কিছুই ছিল, তার কিছুই পূরণ করতে পারেননি। না পেরেছেন আরেকটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে, না পেরেছেন ব্যালন ডি’অর অথবা ইউরোপের সেরা খেলোয়াড় হতে। আল হিলালে তার চুক্তির দিকে তাকিয়ে আপনি হয়তো বলবেন, ফুটবল উপভোগ করতে নয়; বরং টাকা কামাতেই সৌদি এসেছেন তিনি। সৌদি ক্লাবে ১০০ মিলিয়ন ইউরো বেতনের সঙ্গে ২৫ কক্ষের প্রাসাদ, লেটেস্ট মডেলের গাড়ি, ১০ জন গৃহকর্মী, ২ জন ড্রাইভার। এমনকি ছুটির দিনগুলোতে যা খরচ হবে, সবটাই বহন করবে আল হিলাল। রোনালদো-বেনজেমাও এত সুযোগ–সুবিধা পাননি, যা নেইমার পেতে চলেছেন।

১৮ বছর বয়সেই ব্রাজিলের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দুটিই ভাবা হয়েছিল নেইমারকে। অথচ সেই নেইমার মাত্র ৩১ বছর বয়সেই বলার মতো কিছু করা ছাড়াই ইউরোপ থেকে বিদায় নিলেন। অথচ এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। একসময় ক্যারিয়ারজুড়ে ছিল কোটি মানুষের সমর্থন, পণ্ডিতদের প্রশংসাবাক্য আর ফুটবলের প্রতি অনন্ত ভালোবাসা। এখন কি সেগুলোর কিছু আর অবশিষ্ট আছে? তাঁকে নিয়ে দেখা কোটি স্বপ্ন পরিণত হয়েছে আফসোসে, তাঁকে নিয়ে আশার বাণী ছড়ানো পণ্ডিতেরা বদলে ফেলেছেন মতামত!

ফুটবল শুধু ড্রিবলিং এর খেলা নয়। ড্রিবলিং, ভিশন, স্কোরিং অ্যাবিলিটি, প্লে-মেকিং সবমিলিয়ে তৈরি হয় একজন কমপ্লিট বা সুষম ফুটবলার। বর্তমানের স্থিরচিত্রে মেসি হলেন একজন কমপ্লিট ফুটবলার। রোনালদিনহোর মোহনীয় ড্রিবলিং অ্যাবিলিটি থাকলেও স্কোরিং অ্যাবিলিটি ছিল কম, রোনালদোর ড্রিবলিং, স্কোরিং অ্যাবিলিটি থাকলেও প্লে-মেকিং অ্যাবিলিটি কম থাকায় তাদেরকে কমপ্লিট ফুটবলার বলা যায় না। ড্রিবলিং, ভিশন, স্কোরিং অ্যাবিলিটি, প্লে-মেকিং নিয়ে মেসির পর নেইমার হতে পারতেন আরেকজন কমপ্লিট ফুটবলার।

লিওনেল মেসি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর বর্তমান ফুটবল বিশ্বের তৃতীয় প্রতিভাবান ফুটবলার নেইমারের কেন এই অবস্থা? এটা কি তার শৈশবের আচরণ না বদলানোর কারণে, নাকি তার মানি মাইন্ডেড ট্রিক্স এর কারনে, নাকি তার ইনজুরি প্রবণতার কারণে?

আরো পড়তে পারেন

ক্রিকেটের এপিটাফ

কারো জন্য অংশগ্রহণ-ই বড় কথা। আবার কারো জন্য জয়লাভ-ই শেষ কথা। এই দুই পৃথিবীর ভেতরে দর্শনের যে ফারাক, তাই-ই আজ আমাদের ক্লান্ত করছে। আর আমরা সেই আমাদের ওয়ান ডে ক্রিকেটের চিরপরিচিত রূপকে ক্রমাগত ক্ষয়ে যেতে দেখে আহত, রক্তাক্ত হচ্ছি। খিদের আগুনই তো জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে, ছুটিয়ে বেড়ায়। সে পেটের খিদে হোক কিংবা জয়ের খিদে। ক্রিকেটারদের….

ক্রিকেটে আমাদের গন্তব্য কোথায়!

যুবক হতে চলা সকালের গায়ে বার্ধক্যের ক্লান্ত আলো যে হতাশার কথা মনে করিয়ে দেয়। তেমনি হতাশা আর পুরো শরীরে ব্যথা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে এক রোগী। রোগী: ডাক্তার সাহেব আমার সারা শরীরে ব্যথা, যেখানে ধরি সেখানেই ব্যথা। আমাকে এই ব্যথা থেকে বাঁচান ডাক্তার সাহেব। ডাক্তার: পুরো শরীরে ব্যথা তো অনেক ভয়ের কথা। আচ্ছা….

ক্রিকেট বিশ্বকাপ: দুঃখ-সুখের জামদানি

কাব্য করার এই অবেলায় গোধূলি নেমেছে সুরের বারান্দায়। মনখারাপের মেঘ তাই কয়েক প্রজন্মের আকাশ জুড়ে। সমস্যার সাগরে ডুবে থাকা বাঙালির নাকের ওপর আক্ষরিক অর্থেই নয় হাত পানি। আপাদমস্তক হতাশায় মোড়া বাঙালির জীবনে যেটুকু আলো আসে সেটা ক্রিকেটের জানালা গলেই। বাঙালির একান্ত সেই যায়গাতেও‌ এখন বিভক্তির সুর। ফুটবল বিশ্বকাপে বাঙালি সমর্থকরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে—….

error: Content is protected !!