
ইথিওপিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আছে ‘অ্যারতে-আলে’ নামে লাভা উৎক্ষেপণে প্রজ্বলিত একটি আগ্নেয়গিরি। আমরা বেশ কয়েকজন পর্যটক আজ জোট বেঁধে, একটি ট্যুর কোম্পানির গাইডের তত্ত্বাবধানে ওই আগ্নেয়গিরির পাশের একটি লাভা-হ্রদের পাড়ে ক্যাম্পিং করার উদ্যোগ নিয়েছি। ওখানে যেতে হলে প্রথমে একটি বেস-ক্যাম্পে এসে প্রস্তুতি নিয়ে ট্র্যাক করতে হয় ঘণ্টাকয়েক। বেস-ক্যাম্পে পৌঁছানোও ঝকমারি বিশেষ, আমরা ঘণ্টাকয়েক ল্যান্ডরাবারে প্রায়-দুর্গম এক মরুভূমি অতিক্রম করি। অতঃপর লাভালিপ্ত প্রান্তরের ওপর দিয়ে পায়ে হেঁটে এসে পৌঁছেছি বেস-ক্যাম্পে।
বেস-ক্যাম্পে ভরপেট ডিনারের তামাদি হতেই শুরু হয়ে যায় গ্রুপিংয়ের পালা। ট্র্যাভেল কোম্পানির লোকজন দক্ষতার সঙ্গে দ্রুত আমাদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করেন। যাদের হরেক এলিভেশনে ট্র্যাকিংয়ের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের গ্রুপগুলো রওনা হবে প্রথমে।
তারপর যাবে যারা দৈহিকভাবে সক্ষম, তবে লাভা লেপ্টানো পাথুরে টেরেইনে হাঁটার অভিজ্ঞতা কম-তারা। তৃতীয় দলে পড়েন স্লো ওয়াকাররা। যাদের পায়ে ইনজুরি আছে বা ভুগছেন নানা ধরনের রোগশোকে তাদের ক্যাটাগরিতে পড়ি আমি, আমার সঙ্গে খুশবাস হালতে এসে জোটেন, ইসরাইল থেকে আগত বয়োজ্যেষ্ঠ পর্যটক-জুটি মিস্টার ইয়াকেব ইহোনাথান ও মিসেস এলিশেবা ইহোনাথান।
আমরা গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হাঁটতে শুরু করি। একজন গাইড মেগাফোন দিয়ে জানান, যাত্রাপথের মাঝামাঝি ঘনিয়ে আসবে অন্ধকার, তাই কপালে যেন হামেহাল স্ট্র্যাপ দিয়ে আটকানো থাকে হেডল্যাম্প। পথে-প্রান্তরে-খানিক দূরে দূরে, দু-চার জন সৈনিকের দেখাসাক্ষাৎও মিলবে। এদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কারণ সৈন্যরা দায়িত্ব নিয়েছে নিরাপত্তা বিধানের।
অন্ধকারে পথ হারানো নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ারও কিছু নেই, দিগন্তে আগ্নেয়গিরির লালচে আভা স্পষ্ট হয়ে উঠবে, এমনকি উৎক্ষিপ্ত স্ফুলিঙ্গও দেখা যেতে পারে। তদুপরি বেশ কয়েকজন গাইড সারাক্ষণ হাঁটাচলা করে যাত্রার তদারকি করবেন… ‘সো নো প্রবলেম… প্লিজ বি রেডি ফর দি মেসমেরাইজিং রোড ট্রিপ।’ ট্র্যাকাররা পিঠে ব্যাকপ্যাক ঝুলিয়ে, কপালে কিংবদন্তির দৈত্যের তৃতীয় চক্ষুর মতো হেডল্যাম্পের স্ট্র্যাপটি বেঁধে, টেনেটুনে বুটজুতার ফিতা অ্যাডজাস্ট করে প্রস্তুত হয়ে ওঠে। পাশ দিয়ে ঘণ্টা বাজিয়ে চলে যায় কয়েকটি উট। এদের পিঠে শক্ত করে বাঁধা ফোমের মেট্রেস। বুঝতে পারি, লাভাহ্রদের পাড়ে খোলা আসমানের তলায় আমরা এসব মেট্রেস বা তোশকে শুয়ে রাত কাটাব।
পুরো চার ঘণ্টা ট্র্যাক করে, কায়ক্লেশে আমরা উঠে আসি আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি ক্যাম্পিং-সাইটে। কানে ভেসে আসে পোলিশ, সোয়াহিলি ও জার্মান ভাষায় উচ্চারিত কথাবার্তা। ভূতুড়ে ছায়ার মতো টুংটাং ঘণ্টা বাজিয়ে হাঁটছে একটি-দুটি উট। চোখে অন্ধকার সয়ে এলে, এদিক-ওদিক তাকিয়ে ক্যাম্পিংলটের আলাদা আলাদা প্রাইভেট পরিসরগুলোর একটা আন্দাজ পাই। বোল্ডার জড়ো করে, ফুট খানেকের মতো দেওয়াল তুলে বর্গাকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে খোপ খোপ মতো এক-একটি ক্যাম্পিংলট। ওখানে অলরেডি মেট্রেস পাতা দেখতে পেয়ে স্বস্তি পাই। সটান শুয়ে পড়তে ইচ্ছা হয়। বিছানার পাশেই ফেলে রাখা গোলাকার একটি পাথর, তাতে জোড়া মোমবাতি ও ম্যাচ। পাথরটির পাশে পানির বোতল ও ফ্রুট-জুসের প্যাকেট পোড়া আমার ব্যাকপ্যাকটিও পড়ে আছে। বুঝতে পারি, এটি উটবাহিত হয়ে আমার আগেই পৌঁছে গেছে ক্যাম্পিংলটে।
কিছুক্ষণ জিরানোর পর খোঁজ নিতে গাইড এলে, উঠে পড়ে আমি ব্যাকপ্যাকে ভরে নেই-ট্র্যাভেল ডকুমেন্টস্, জলের এক্সট্রা বোতল ও ফ্রুট-জুসের প্যাকেটগুলো। হেডল্যাম্প জ্বেলে আমরা অতঃপর রওনা হই। রিমের প্রান্তিকে এসে থেমে পড়ে গাইড টর্চ জ্বেলে দেখিয়ে দেয়, লাভাস্তরে ধাপে ধাপে নেমে যাওয়ার সংকীর্ণ সিঁড়ির মতো এবড়োখেবড়ো একটি ট্রেইল।
তার তলায়, বেশ নিচে, কুচকুচে কালোপনা মাঠ, দু-পা এগিয়ে যেতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অ্যারতে-আলের পার্মানেন্ট লাভা-লেক। ইয়াকেব এক্সাইটেডভাবে বলে ওঠেন, ‘লুক অ্যাট দ্যা ড্রাম্যাটিক অ্যাকশন অব দি বয়লিং লাভা।’ চুপচাপ আমরা দেখি-লোহিত বর্ণের সরোবরে বলকাচ্ছে তরল অগ্নি, মাঝেসাজে উত্থিত হচ্ছে ফোয়ারার মতো ধারাপ্রবাহ, ছড়িয়ে পড়ছে স্ফুলিঙ্গ।
সাবধানে নামতে শুরু করি আমরা। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি সোপানগুলোকে সিঁড়ি না বলে, বরং বলা উচিত নারোম লাভায় তৈরি গাছের শিকড়ের আকৃতি, তাতে পা আটকাতে গিয়ে লাভাখণ্ড ভেঙে হুমড়ি খান এলিশেবা। গাইড বোধ করি প্রস্তুত ছিল, সে তাকে জাপটে ধরে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ভালোয় ভালোয় আমরা নেমে আসি নিচের লেয়ারে।

অবশেষে এসে দাঁড়াই লাভাহ্রদের পাড়ে। উত্তাপ ও বিবিধ বর্ণের আলোর বিচ্ছুরণে ভ্যাবাচ্যাকা লেগে যাওয়ার উপক্রম হয়। দেখতে দেখতে সামনের আধো-অন্ধকার পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে সোনালি আবির। তার আলোয় দেখতে পাই, তুমুল গরম উপেক্ষা করে বেশ কতজন পর্যটক দাঁড়িয়েছেন অগ্নিকুণ্ডের প্রান্ত ঘেঁষে।
সম্মোহিতের মতো আমরা তাকিয়ে থাকি, প্রতি মুহূর্তে বদলে যাওয়া সোনা ঝরানো জ্যামিতিক নকশার দিকে, আমি নোটবুক খুলে এ ইমেজটি টুকে নিতে চাই, তাতে কলমের নিব ছোঁয়ানোর আগেই দৃশ্যটি বদলে গিয়ে তৈরি করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বইতে আঁকা নক্ষত্রমণ্ডলের চিত্র। লু-হাওয়া বয়ে আনে হরেক কিসিমের খনিজদ্রব্য একত্রে পোড়ানোর পানজেন্ট গন্ধ। বলকে ওঠে ফের লাভা সরোবরের তরল আগুন। তার আভায় দেখি, চৌকশ চেহারার এক তরুণী আগুনহ্রদের হাশিয়ায় দাঁড়িয়ে, সেলফিস্টিক বাগিয়ে তুলে নিচ্ছেন নিজস্ব তসবির। তাকে ছাড়িয়ে আরেকটু সামনে বাড়ি।
যেতে যেতে অগ্নিকুণ্ডের দিকে তাকিয়ে ফের দাঁড়িয়ে পড়ি। বুঝতে পারি, আগুনের বিরাট এ দিঘিকে আগ্নেয়গিরি পরিদর্শনের পরিভাষায় বলা হয়ে থাকে ‘পিট ক্রেইটার’। জ্বলন্ত এ হ্রদটি আকৃতিতে সাব-সার্কুলার বা কিছুটা বৃত্তাকৃতির, অনুমান করা হয় এ গহ্বরের গভীরতা ২০০ মিটার, ব্যাস কোনো কোনো জায়গায় ৩৫০ মিটারের মতো।
দূর থেকে দেখতে পাই, ঠিক ক্রেইটার পিটের পাড়ে দাঁড়িয়ে কেমন যেন মশগুল হয়ে ক্যামেরায় ক্রমাগত ছবি তুলছেন সাউথ আফ্রিকার আলোকচিত্রী গুন্থার শোয়াংকি। কমলালেবু রঙের আশ্চর্য আভায় আচ্ছন্ন ধূসর চুল-দাড়িওয়ালা মানুষটিকে রীতিমতো ধ্যানস্থ দেখায়।
কেপটাউনের ফটোগ্রাফার শোয়াংকি নাম করেছেন মূলত আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফি করে। তিনি রঙিন ছবির প্লেটওয়ালা দুটি ভারী পুস্তকও ছাপিয়েছেন। তার ছবিগুলোতে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে জলতলে অক্টোপাসের দিনযাপনের ডিটেল।
গরমের তুমুল আঁচে বেশিক্ষণ টিকতে পারি না হ্রদ-পাড়ে। সরে আসি ক্যাম্প-সাইটের দিকে। এদিকে লেপ্টানো লাভায় তৈরি হয়েছে সমতল চাতাল। উত্তাপ বাঁচিয়ে পর্যটকদের অনেকেই জড়ো হয়ে রীতিমতো মচ্ছব করছেন। মাঝেসাজে লু-হাওয়া উড়িয়ে আনছে ধূসর ছাই।
আচানক একটি দৃশ্য চোখে পড়ে। জনাকতক শ্বেতাঙ্গ নওজোয়ান চার হাত-পায়ে ঘোড়া সেজেছে। তাদের পিঠে পা দিয়ে দুজন তরুণ ওপরে উঠে পড়ে বয়েজ স্কাউটের কায়দায় তৈরি করে পিরামিড। তৃতীয় স্তরে উঠে সটান দাঁড়ায় পাটা-পুতার মতো গাব্দগোব্দা একটি যুবক। লিকলিকে দেহটিকে বাইন মাছের মতো বাঁকিয়ে একটি তরুণী বেয়ে উঠে বসে পড়ে নাদুসনুদুস জওয়ানটির ঘাড়ে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার কোনো দেশ থেকে সার্কাস কোম্পানির পুরো এক্রোবেটিক ট্রুপ এসে হাজির হয়েছে এখানে। কাঁধে বসে পা-ঝুলানো মেয়েটি এবার ঊর্ধ্বে তুলে ধরে আইফোনটি। কিছু একটা ঘটে যায়। তামেশগিররা হাততালি দেয়, বুঝতে পারি, মেয়েটি তালাশ পেয়েছে নেটওয়ার্কের। সে ‘নখটে-মখটে’ শব্দে অদৃশ্য কার সঙ্গে শুরু করে ফোনালাপ।
আমি নেটওয়ার্ক সন্ধানীদের পিরামিডটি ছাড়িয়ে আগ বাড়তে বাড়তে ভাবি, এক জামানায় খাবার ও বাসস্থানকে মনে করা হতো মানুষের মৌলিক দুটি চাহিদা, আজকাল মনে হয়, বেসিক নিড কনসেপ্টের বদল হয়েছে, মৌলিক চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে আইফোন ও ওয়াইফাই কানেকশন।
খানিক দূরে আমোরা নামে এক মেক্সিকান-আমেরিকান যুবতীকে ঘিরে স্তবকরা রীতিমতো বুহ্য রচনা করেছে। আমি উত্তাপে নাস্তানাবুদ হওয়া ট্র্যাকারদের হাতে জলের বোতল বা ম্যাংগো জুসের প্যাকেট দিতে দিতে আড়চোখে আমোরাকে ঘিরে দাঁড়ানো বৃত্তটিকে নজর করি। চোখমুখের এক্সাইটমেন্ট দেখে মনে হয়, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
লালিবেলা শহরের একটি গেস্টহাউজের কাছাকাছি কটেজে বাস করেছি আমরা সপ্তাহ দিন, একই রেস্তোরাঁয় আহার-বিহার করার অসিলায় আমোরার সঙ্গে যৎসামান্য চেনাজানাও আছে। মেয়েটি লাস ভেগাসের ট্রেজার আইল্যান্ড নামক একটি ক্যাসিনোতে পৌল ড্যান্সার হিসাবে কাজ করে। বছরখানেক ধরে সে এ ক্যারিয়ারে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছে। তার আগে আমোরা স্ট্রিপার গার্ল হিসাবে ব্যাচেলর পার্টিগুলোতে বিবস্ত্র হয়ে পারফর্ম করত। মেয়েটির ড্রাম্যাটিক আচরণ করার স্বভাব আছে। স্তাবকরা এ মুহূর্তে সরে গিয়ে তাকে জায়গা করে দিচ্ছে। স্লিভলেস টপের সঙ্গে নাভির নিচে নামিয়ে হটপ্যান্ট পরা আমোরা ঘুরে দাঁড়িয়ে আমাকে ওয়েভ করে। তার কোমরে মোচড় পড়তেই নাভিমূলে গাঁথা বেলিবাটন রিংয়ে ঝিলমিল করে উঠে তানজানাইট পাথর।
লাভাহ্রদ থেকে লম্ফ দিয়ে উঠে আগুনের ফুলকি ছড়ানো চিকন একটি স্তম্ভ। স্তাবকদের মধ্যে থেকে উত্থিত হয় উৎসাহের ‘ইয়াহু’ ধ্বনি। আমোরা তার হাত দুটিতে ভর দিয়ে, দু-পা সুদর্শনভাবে বাতাসে ছড়িয়ে শূন্যে ঝুলে থাকে কিছুক্ষণ। কটিতে জড়ানো ত্রিকোণা একটি স্কার্ফ খুলে পড়ে ভিজিবোল প্যান্টি-লাইন ছাপিয়ে উছলে ওঠে তার ভরাট নিতম্ব।
মাথা ঝুঁকিয়ে বাও করে উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েটি যুগলবক্ষ স্ফুরিত করে কিছুক্ষণ হাঁপায়। আমি ব্যাকপ্যাকের বাকি কয়েকটি বোতল এখানে বিতরণ করি। আমোরা এগিয়ে এসে শুকনা ঠোঁটে জিবের অগ্রভাগ বুলিয়ে কপট অভিমানের ভঙ্গিতে জানতে চায়, ‘ডু আই নট ডিজার্ভ অ্যা ড্রিংক?’ আমি তার দিকে একটি ম্যাংগো জুসের প্যাকেট বাড়িয়ে দেই। সে ফিক করে হেসে বলে, ‘ফ্রম নাউ অন ইউ আর দ্যা বেস্ট পার্সন অব দি হৌল ওয়ার্ল্ড।’
একজন গাইড মেগাফোন দিয়ে এনাউন্স করেন, ঘণ্টাখানেকের ভেতর চাঁদ উঠতে শুরু করবে। ভরা জ্যোৎস্নায় লাভাহ্রদটির উথলে ওঠার স্বভাব আছে। তিনি সবাইকে আধ ঘণ্টার ভেতর ক্যাম্পিংলটে ফিরে গিয়ে বিশ্রাম নিতে অনুরোধ করেন।

কিন্তু কারও মধ্যে ফিরে যাওয়ার কোনো উদ্যম দেখা যায় না। মেগাফোনওয়ালা ফের সবাইকে পানীয়জল হিসেব করে খরচ করতে বলে আশ্বাস দেন বেস-ক্যাম্প থেকে ব্রেকফাস্ট হিসাবে মিষ্টি রুটি, পানি ও ফ্রুট জুসের প্যাকেট প্রভৃতি নিয়ে উটগুলো রওনা হচ্ছে। সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ তা বিতরণ করা হবে।
ক্যাম্পিংলটে ফিরতে হয়, কিন্তু কোথাও গাইডকে লকেট করতে পারি না। তো মেগাফোনওয়ালাকে পাকড়াই, তিনি আমাকে একজন সৈনিকের হাওলা করে দেন। আমরা হেঁটে সরে আসি হ্রদ-পাড় থেকে বেশ দূরে। হেডল্যাম্পের আলোয় ছড়ানো-ছিটানো লাভাস্তূপ ছাড়া তেমন কিছু দেখা যায় যায় না। ঠিক বুঝতে পারি না, এদিকে ক্যাম্পিংলটে উঠে যাওয়ার জন্য নির্দ্দিষ্ট কোনো ট্রেইল আছে কি না। জুতা কেবলই জড়িয়ে যাচ্ছে চিটচিটে লাভায়। নানা হাঙ্গামার ভেতর দিয়ে কোনোক্রমে উঠে আসি ক্যাম্পিং এরিয়ায়।
আমার নিজস্ব ক্যাম্পিংলটে এসে দেখি, পাশের লটে ম্যাট্রেসের ওপর জানু বিড়িয়ে চুপচাপ বসে আছেন ইয়াকেব। বলেন, ‘উই আর ওয়েটিং ফর ইউ, সুলতান।’ আমি তার সঙ্গে যোগ দিয়ে মেট্রেসে বসি, কিন্তু এলিশেবাকে কোথাও দেখতে পাই না। এদিক-ওদিক তাকাতেই ইয়াকেব আঙুল দিয়ে ইশারা করেন। দেখি, বেশ দূরে, শালে কাঁধ-মাথা ঢেকে, নিরিবিলিতে একাকী দাঁড়িয়ে এলিশেবা দুলছেন।
কিছু জিজ্ঞেস করতে হয় না, ইয়াকেব নিজে থেকে ব্যাখ্যা দেন, ‘এলিশেবা প্রার্থনা করছে, প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে সে একবার তার অপঘাতে মৃত পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে পবিত্র গ্রন্থ তোরাহ পাঠ করে, তারপর বেশ খানিকটা সময় নিয়ে প্রার্থনা করে।’
কথাবার্তায় জানতে পারি, এলিশেবা বছর তিরিশেক আগে তার জন্ম দেশ পোল্যান্ড ছেড়ে ইজরাইলে এসে অভিবাসী হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির দখলদার নাৎসি বাহিনী পোল্যান্ডে বাসরত ইহুদি সম্প্রদায়কে বন্দি করে পাঠিয়েছিল কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে। ওখানকার গ্যাসচেম্বারে নির্মমভাবে খুন হয়েছিলেন এলিশেবার পিতামহের-প্রায় পুরো-পরিবার, যার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন দাদা-দাদিসহ কিশোর বয়সি দুই চাচা ও এক খালা। তার পিতার বয়স ছিল মাত্র চার, অজ্ঞাত কারণে শিশুটিকে জার্মানরা গ্যাসচেম্বারে পাঠায়নি। কিছুদিন পর সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মি নাৎসিদের পরাজিত করে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দি হালতে বেঁচে থাকা বাদবাকি ইহুদিদের উদ্ধার করে। তার পিতা বেড়ে উঠেছিলেন ওয়ারসো শহরের একটি এতিমখানায়।
ধন্যবাদ দিয়ে আমি উঠতে যাই। হাতের ইশারায় ইয়াকেব আমাকে থামিয়ে দিয়ে আস্তে করে বলেন, ‘ওয়েট অ্যা বিট, মিসেস হ্যাজ সামথিং টু শেয়ার উইথ ইউ।’ ঠিক ধরতে পারি না, এলিশেবার অভিপ্রায় কী?
প্রার্থনা সেরে ক্যাম্পিংলটে ফিরে এসে ‘শালুম শালুম’ বলে হিব্র“ কেতায় শান্তি কামনা করে এলিশেবা আমাকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি ব্যাকপ্যাকের জিপার টেনে খুলে কী একটা খোঁজাখুঁজি করছেন। মোমবাতির মৃদু আলোয় আমি তার মুখের দিকে তাকাই, মনে হয়, মহিলা একটু আগে প্রার্থনার সময় দুলে দুলে অজোরে কেঁদেছেন। তিনি গ্র্যান্ড মারিনার নামে একটি ফরাসি লিক্যুরের শিশি বের করে বলেন, ‘প্যারিসের চার্লস দ্যাগল এয়ারপোর্টে আমাদের ঘণ্টাকয়েকের জন্য যাত্রাবিরতি ছিল। তখন ছোট্ট বোতলটি কিনি এ ট্রিপে সুন্দর কিছু ঘটলে তা সেলিব্রেট করার জন্য।’
ইয়াকেব দ্রুত প্লাস্টিকের শর্টগ্লাসে তা ঢালেন। এলিশেবা একটি গ্লাস তুলে নিয়ে টোস্ট করার ভঙ্গিতে ক্রমশ ফুটে ওঠা ছায়াপথের দিকে ইশারা করে বলেন, ‘দিস ইজ ইনডিড এন আনফরগেটেবোল নাইট।’ আমি আকাশের বেশ কতগুলো নক্ষত্রে তৈরি ক্যাসিওপিয়ার রানির সিংহাসনের দিকে তাকিয়ে ইয়াকেবের বাড়িয়ে দেওয়া হাত থেকে শর্টগ্লাসটি তুলে নিই। ‘শালুম শালুম’ বা ‘শান্তি শান্তি’ ধ্বনি তুলে আমরা অতঃপর কমলালেবুর ফ্লেভার ছড়ানো পানীয়তে ঠোঁট ছোঁয়াই।
চুমুক দিয়ে এলিশেবা মৃদুস্বরে বলেন, ‘এই যে তোমার সঙ্গে একত্রে ট্র্যাভেল করে আমরা বন্ধু হয়ে উঠেছি, এ বিষয়টি কিন্তু আমাদের মনে থাকবে।’ শুনে আমি নীরবে তার মুখের দিকে তাকাই। তিনি বাড়িয়ে দেন তার শিরা ভাসা শীর্ণকায় হাতটি, আমি তাতে চুমো খাই। ইয়াকেব পাত্রের সম্পূর্ণ তরল খালাস করে দিয়ে বলেন, ‘রিমেম্বার, উই আর ফ্রেন্ডস্ নাউ।’ সারা দিনে ধকল তো কম যায়নি। এ দম্পতির ঘুমানোর প্রয়োজন আছে। তো ‘গুডনাইট মাই ফ্রেন্ডস্’ বলে আমি বিদায় নিয়ে ফিরে আসি আমার ক্যাম্পিংলটে।
আসমানের তলায় গায়ে লেফ-চাদর কিছু ছাড়া ঘুমানোর চেষ্টা করি। আকাশগঙ্গা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। চেষ্টা করি, নক্ষত্রের নকশায় তৈরি তারকামণ্ডলগুলোর নাম মনে করতে। বোধ করি চাঁদ উঠছে, কারও প্রতি পূর্বরাগের নিবিড় অনুভূতির মতো ভাসমান কিছু বিচ্ছিন্ন মেঘদল রঙিন হয়ে উঠে ছড়াচ্ছে অপার্থিব আলো। একটু আগে এলিশেবার মুখে শোনা কথাটি মনে ফিরে আসে ‘দিস ইজ ইনডিড এন আনফরগেটেবোল নাইট।’
কখন যে চোখ মুদে এসেছে ঠিক বুঝতে পারিনি। ধড়মড় করে ঘুম ভাঙে ব্যাপক হল্লা-চিৎকারে। ঠিক বুঝতে পারি না, ক্যাম্পগ্রাউন্ডে ডাকাত-লুটেরার উৎপাত হচ্ছে কি? মনে হয়, সারা চরাচর কেঁপে উঠছে থেকে থেকে। দেওয়ালের বোল্ডারগুলো থেকে নড়াচড়ার শব্দ হচ্ছে। বালিশের পাশে রাখা হেডল্যাম্পটিও গড়িয়ে পড়ে।
উঠে বসি। চতুরদিকে সাজ সাজ রব উঠছে। কে যেন কোথায় আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে আজান ফুঁকে। পড়ি মড়ি করে জনাকয়েক ছুটে যায় আধো অন্ধকারে। খিস্তিখেউড়ের আওয়াজও শোনা যায়। বিলাতের ককনি উচ্চারণে, ‘দ্যা ফাকিং ভলকেনো ইজ ইরাপটিং, গুড গড, উই আর গোনা ডাই, অল আর গোনা ডাই,’ বলে অস্থিরতা ছড়ান কোনো এক আংরেজ-সন্তান।
আড়মোড়া ভেঙে আমি উঠে দাঁড়াই। কাউকে হঠাৎ করে ভালো লাগলে, ক্র্যাশজনিত বিপুল মুগ্ধতার মতো জ্যোৎস্নায় ছাপিয়ে যাচ্ছে আকাশ। থেমে গেছে ভূকম্পন। ক্যাম্পিংলট থেকে বেরিয়ে আসি আমি। দু-পা সামনে বাড়তেই দৃশ্যটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। লাভাহ্রদ থেকে আগুনের একাধিক মিনার লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে রীতিমতো আতশবাজির বিস্ফোরণে ভেঙেচুরে ছত্রখান হয়।

দেখি, আমার পাশে ছায়ামূর্তির মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে পনিটেইলওয়ালা পর্যটক কর্নেলিয়াস। উথলে ওঠে ফের লাভাহ্রদ, তিনি ‘লুক অ্যাট দিস স্পেকটাকুলার ফায়ার শো,’ বলে পরিমিতভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
উথলানো আগ্নেয়গিরির সম্পূর্ণ ভিউ পাওয়ার জন্য আমি আরও কয়েক পা এগিয়ে যাই। হ্রদ থেকে অগ্নিময় ঊর্মিতে বলক উঠছে প্রচুর, কিন্তু এখন যাকে বলে ‘জাম্পিং ফায়ার কলাম’ তা আর লাফিয়ে উঠছে না। হালকা উদ্গীরণের ব্যাপারটা মিইয়ে আসে, কিন্তু চারদিকে চিৎকার-চেঁচামেচি, নানা ভাষায় ইষ্টনাম জপের বহর বেড়ে যায় ব্যপকভাবে। ঠিক বুঝতে পারি না, আধো অন্ধকারে কোথায় কী ঘটছে?
ক্যাম্পিংলটের দিকে ফিরি, হুড়মুড়িয়ে লাভাখণ্ড ছিটকিয়ে, অনেক ঘণ্টা একত্রে বাজিয়ে ধেয়ে আসে গোটাকতক উট। কপাল জোরে ট্রেইলের একপাশে লাফিয়ে সরে সটকে গিয়ে জান বাঁচাই। ছুটন্ত জানোয়ারগুলোর পেছন পেছন ডান্ডা হাতে ছুটছে সহিসরা। কেওস-কোলাহল চূড়ান্তে পৌঁছায়। কোনোক্রমে ক্যাম্পিংলটে ফিরে মেট্রেসের ওপর বসে পড়ি। পাশের লটে ইয়াকেব ও এলিশেবা সম্ভবত ড্রাগসের আচ্ছন্নতায় বেঘোরে নাক ডাকাচ্ছেন। তর্কবিতর্ক ও ঝগড়াঝাঁটির আওয়াজ চূড়ান্তে পৌঁছে।
প্রভাতি তারাটি অস্তাচলে যাওয়ার খানিক পর আমি হাঁটতে বেরোই। হালকা-পাতলা গোলোযোগ তখনো চলছে। ছুটে যাওয়া একজন মুখচেনা গাইডকে দাঁড় করিয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে চাই। মানুষটিকে ভারি বিব্রত দেখায়।
জানতে পারি, বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কিছু পর্যটক চাঁদ ওঠার পর হ্রদপাড়ে ঘুরপাক ও গুলতানি অব্যাহত রাখেন। অনেকেই মজলিস বসিয়ে পান করছিলেন। তারপর হ্রদ থেকে ট্রেমারের সঙ্গে উত্থিত হলে হালকা ইরাপশন এদের কেউ কেউ ব্যাকপ্যাক ইত্যাদি ফেলে প্রাণ নিয়ে এলোপাথাড়ি ছুট লাগান। উড়ন্ত ছাই-এর জন্য হেডল্যাম্পের আলোয় তেমন কিছু দেখাও যাচ্ছিল না। কেউ কেউ হোঁচট খেয়ে গাড্ডায় পড়ে হাত-পা মচকিয়েছেন।
এরা এখন ডিমান্ড করছেন, গাইডরা যেন হ্রদপাড়ে গিয়ে তাদের ব্যাকপ্যাক ইত্যাদি উদ্ধার করে নিয়ে আসে। ব্যাকপ্যাকে পাসপোর্টসহ নানাবিধ ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট, টাকা-পয়সা ও ক্রেডিট কার্ড প্রভৃতি আছে। বিষয়টা ক্রিটিক্যাল, তাই সৈনিকরা কাউকে হ্রদপাড়ের দিকে যেতে দিচ্ছে না।
তাদের বক্তব্য, গাইডরা আলো ফুটলে সব মালমাত্তা উদ্ধার করে এনে এক জায়গায় জড়ো করবে। তারপর পর্যটকরা নিজেদের ব্যাগ-বোঁচকা শনাক্ত করে ফেরত পাবেন। এ দিকে হয় অগ্নি উৎপাতে না হয় গোলযোগে গোটাসাতেক উট পালিয়েছে।
এ উটগুলোর পিঠে বোঝাই দেওয়া ছিল ব্রেকফাস্টের রুটি-ফুটি ও পানীয় জল। তাদের এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আরও জানতে পারি, উটগুলো মাঝরাতের পর খাবার নিয়ে বেস ক্যাম্প থেকে কেবল নাকি অ্যারতে আলের রিমে এসে পৌঁছেছিল, খাবার অনলোড করার আগে আগুন উথলে উঠে, তারপর বাঁধলো ঘোরতর কোন্দল।
যেহেতু আমি ব্যাগ-বোঁচকা কিছু হারাইনি, পাসপোর্ট প্রভৃতি কোমরে বেল্ট দিয়ে শক্ত করে বাঁধা ফেনি-প্যাকটিতে আছে, সুতরাং উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। ভাবি, এ সুযোগে সুবে সাদেকের মোলায়েম আলোয় ফের একটু ঘোরাফেরা করে দেখে নেই লাভাহ্রদের হাল হকিকত।
কিন্তু সৈনিকরা বন্দুক হাতে চৌকি বসিয়েছেন। ট্রেইল বেয়ে নিচে নামতে তারা ইঙ্গিতে নিষেধ করেন। কাঁচুমাচু হয়ে বলার চেষ্টা করি, অনেক দূরের দেশ থেকে এসেছি বাবারা, জিন্দেগিতে কখনো জীবন্ত লাভাহ্রদ চাক্ষুষ করিনি, মেহেরবানি করে একবার কাছে গিয়ে আলবিদা বলার সুযোগ দাও। আমার বকোওয়াসে চিড়া ভিজে না।
কাছেই গামছা বিছিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন আরেকজন সৈনিক, তিনি সালাম ফেরাতে আমি আবেদন করি। নামাজ শেষ করে, টিপসের বিনিময়ে ভারি মিঠে করে হেসে, লাভাহ্রদের রিজে পৌঁছার ট্রেইলটি দেখিয়ে দেন। তবে একা যেতে দেন না, ডাকখুঁজ করে অতঃপর আমাকে কঞ্চিহাতে নাবালক বয়সি আরেক সৈনিকের হাওলা করে দেন।
পাক্কা তেইশ মিনিট উতরাই ভেঙে, বেহদ মেহনতে অবশেষে উঠে আসি আগ্নেয়গিরির শিরদাঁড়ার মতো রিজে। নিচে লাভাহ্রদের পারফেক্ট ভিউ পাওয়া যায়। চুপচাপ একটু দাঁড়াই, মনে হয়, নিশিরাতের নিরিবিলিতে ইরাপশন শেষে রতিক্লান্ত সত্তাটি ভোরবিহানের আবহে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। তার থই থই দেহে যেন স্বপ্নের ঘোরে মাঝেসাজে ছলকে যাচ্ছে বিদ্যুতের স্বর্ণালি রেখা।
ক্যাম্পিং এরিয়ায় ফিরে এসে দেখি, জনাকয়েক পর্যটক ও গাইডদের মধ্যে রীতিমতো দ্বন্দ্বযুদ্ধ বেধে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পলাতক একটি উটের পিটে নাকি বাঁধা ছিল ফার্স্টএইডের বাক্স, সেও অন্ধকারে ছুটে গেছে, কে জানে কোন পগারে। এদিকে যাদের হাত-পা মচকেছে, তারা ডিমান্ড করছেন আইস, কারও কারও প্রয়োজন ব্যান্ডেজ।

আমাদের গাইড চিনুয়ার কোনো সন্ধান পাই না, সম্ভবত সে উষার মরুতে সার্চ করছে পলাতক উট। ভোরবিহানের কবোষ্ণ আলোয় ক্যাম্পিংলটগুলোর পাথুরের স্ট্রাকচার দেখতে দেখতে সামনে বাড়ি। এক জায়গায় দেখি, একটি উটের পিটে কাঁথা-কম্বল বোঝাই দিয়ে বেস ক্যাম্পে ফেরার প্রস্তুতি চলছে।
চলে আসি নিজস্ব ক্যাম্পিংলটে, এলিশেবা ও ইয়াকেব বেস ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন। রাতে এলিশেবার পা ফুলে-টুলে এমন হালত হয়েছে যে, তার পক্ষে ট্র্যাক করা হবে খুব মুশকিল। তবে কপাল জোরে তাদের একটি উট জুটে গেছে। এলিশেবাকে তার পিটে চাপিয়ে পেছন পেছন হেঁটে বেস ক্যাম্পের দিকে রওনা হন ইয়াকেব।
একটু পর আমিও পিঠে ব্যাকপ্যাকটি চাপিয়ে পথে নামি। পর্যটকদের কেউ কেউ অলরেডি ট্র্যাক করতে শুরু করেছেন, বেস ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার ট্রেইলটি ভোরের আলোয় দেখাচ্ছে সোজাসাপ্টা, আমার শ্রীচরণ ফের হয়ে ওঠে পথবান্ধব। একা পথ চলতে কিন্তু খারাপ লাগে না।
সড়কের প্রতিটি ডিটেলের দিকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে, যাতে পথ না হারাই তার জন্য সাবধান থাকতে হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে, হাতের কাছে রেখেছি কাঁটাকম্পাস, বারবার বাইনোকুলার দিয়ে নিরিখ করে নিচ্ছি পথরেখার সঠিক নিশানা। হাঁটতে হাঁটতে শরীর-মনে ফিরে আসে তীব্র ফোকাস। দিনদুনিয়া সম্পর্কিত কোন স্ট্রেস বা ক্লেশ কোনো ঘোড়ার ডিম নিয়ে দুশ্চিন্তা করার অবকাশ পাওয়া যায় না। একা ট্র্যাক করতে দারুণ লাগে।
ট্রেইলের কাছে এক জায়গায় আগ্নেয়শীলার ওপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন জনাছয়েক পর্যটক। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ি। দু-একজন ঘাড় তুলে নির্লিপ্ত ভঙিতে আমাকে দেখেন, কিন্তু ওয়েভ-ব্যাক করেন না। খানিক তফাতে বসে তাদের ইথিওপিয়ান গাইড। মনে হয়, একটু আগে তাদের মধ্যে তুমুল বাকযুদ্ধ হয়ে গেছে।
আমি নীরবে আগ বাড়ি, স্ট্রেনুয়াস ট্র্যাকিং বলে একটি কথা আছে, পথপরিক্রমার শেষে দেহমনে আচমকিতে নামে তীব্র বিষাদ, মানসিক প্রস্তুতি না থাকলে ভ্রমণের শেষ দিকে মেজাজ কেবলই খাট্টা হতে থাকে।
হাঁটতে হাঁটতে পাথুরে টেরেইনের কালচে রং বদলে হলুদাভ হয়ে ওঠে। উষ্টা-বিষ্টা বাঁচিয়ে এদিকে হাঁটতে হয় কাদাখোঁচা খেচরটির মতো ভারি সাবধানে। খানিক পথ চলতেই দেখতে পাই, দুজন সৈনিক হেঁটে ফিরছেন বেস ক্যাম্পে। তারা দাঁড়িয়ে পড়ে হাসিমুখে হাত নাড়েন।
ভাষাগত ব্যাবধানের জন্য বাতচিত কিছু হয় না। জানতে কৌতূহল হয়, এ মানুষগুলো যারা ধন্যবাদের তোয়াক্কা না করে দিন-কে-দিন বিধান করে চলছেন আগত পরিব্রাজকদের নিরাপত্তা, তাদের কোনো ধারণা আছে কী, দূর দেশ থেকে বেশুমার পর্যটক অ্যারতে আলেতে ফি বছর আসে কেন?
মরুপথটি মূলত ডাউনহিল অর্থাৎ বেজায় ঢালু, তাই দিনের আলোয় হেঁটে যেতে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। চেনা কয়েকটি ল্যান্ডমার্কও চোখে পড়ে। কিন্তু থেকে থেকে তুমুল খিদা জানান দিচ্ছে। ভাবি, ঘণ্টাদুয়েক পয়দলে আগাতে পারলে বেস ক্যাম্পে রুটি-ফুটি কিছু নির্ঘাত পাওয়া যাবে।
দেখি, প্রায় সাড়ে ছয় ফুটি একটি শিলাপাথরে চড়ে বসে নিরাভরণ পা দুটি দোলাচ্ছে পৌল ড্যান্সার মেয়ে আমোরা। পারফরমেন্সের সময় তাকে পৌল বা দীর্ঘ একটি দণ্ডে বাওয়া-বাওয়ি করে প্রদর্শন করতে হয় ফিগারের খাঁজ-ভাঁজ। তো শিলা বেয়ে ওঠা তার জন্য বিরাট কোনো চ্যালেঞ্জ না।
চোখাচুখি হতেই আমি ওয়েভ করে আগাই। ভারি ফ্লার্টি ভয়েসে সে আওয়াজ দেয়, ‘হেই হিপি ড্যুড, স্টপ…।’ আমি দাঁড়িয়ে পড়ে ঘাড় বাঁকাই, ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি ঝুলিয়ে সে বলে, ‘হিপিরা সামজিক হয়, পথেঘাটে তারা জানাশোনা কাউকে দেখতে পেলে হ্যালোও বলে।’ তো আমি তার দিকে পা বাড়িয়ে বলি, ‘হোয়াটস্ আপ, আমোরা?’
সুরুজের নওল রশ্মিতে তার নাভিমূলে গাঁথা তানজানাইট পাথরের নীলাভ বেলিবাটন রিং ঝলসে ওঠে। হাসিটি বজায় রেখে ব্রেডস্টিকের প্যাকেট দেখিয়ে সে বলে, ‘ভাবলাম, দিন-দরিদ্র হিপি ড্যুডের সঙ্গে একটু খাবার শেয়ার করি, আরন্ট ইউ হ্যাংরি?’

আমি তার বাড়িয়ে দেওয়া হাত থেকে কয়েকটি ব্রেডস্টিক তুলে নিয়ে প্রশ্ন করি, ‘টেল মি, হোয়াই ইউ থিংক আই অ্যাম অ্যা হিপি?’ ব্রেডস্টিক চিবাতে চিবাতে সে মন্তব্য করে, ‘তোমার গাছপালার ছবিওয়ালা বহো মটিফের টি-শার্টগুলো আমি খেয়াল করেছি, এক কালের বহেমিয়ান হিপিরা এ রকম ডিজাইনের টি-শার্ট পছন্দ করে।’
শুনে প্রতিক্রিয়ায় আমি বলি, ‘লুক, আই অ্যাম অ্যা প্রফেশনাল এইড ওয়ার্কার, এক সময় অধ্যাপনাও করেছি।’ ঠোঁটমুখে বিদ্রুপের ভঙ্গি করে সে প্রশ্ন ছুড়ে, ‘লেট মি আস্ক ইউ সামথিং, তোমার টি-শার্টের ছবিতে যে গাছটি দেখছি, প্লিজ এক্সপ্লেইন, হোয়াট ইজ ইট?’
জবাবে আমি জানাই, এটি চীনদেশের একটি ভেষজ তরু, ঔষধি গুণের জন্য হাজার বছর ধরে মানুষজন এটি সংগ্রহ করে পিষে চা-এর সঙ্গে পান করে। গেল চল্লিশ বছরে এর ডিমান্ড মারাত্মকভাবে বেড়ে গেলে হঠাৎ করে গাছটিকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বোটানিস্টরা একে বিরল প্রজাতির বৃক্ষ বলে চিহ্নিত করেছিলেন। তারপর একদিন পাথুরে টেরেইনে ট্র্যাক করতে গিয়ে কিছু পর্যটক খেয়াল করে যে, তরুটি পত্রালির রং বদলিয়ে দিব্যি মিশে আছে পড়ে থাকা শিলাপাথরের বোল্ডারগুলোর সঙ্গে।’
মৃদু কৌতূহল নিয়ে আমার কথা শুনে আমোরা। সে মন্তব্য করে, ‘দিস ইজ ইন্টারেস্টিং, হিপিদের সঙ্গে যে সামান্য দিন আমি সময় কাটিয়েছি, তখন খেয়াল করেছি, গাছপালা, পাথর ও প্রকৃতির প্রতি তাদের তীব্র আগ্রহ।’ আরও কয়েকটি ব্রেডস্টিক হাতে নিয়ে আমি প্রতিক্রিয়া জানাই, ‘ইয়েস, আই লাভ ট্রিজ্, রকস্ অ্যান্ড অল, তাতেও কিন্তু প্রমাণিত হয় না আমার হিপিত্ব, আমার ঘরসংসার আছে, সব সময় আমি ভবঘুরে হালতে ঘোরাফেরাও করি না।’
বক্তব্যে কনভিন্স না হয়ে আমোরা পাল্টি দেয়, ‘লুক অ্যাট অল দিজ ইন্টারেস্টিং স্টোনস্ ইউ হ্যাভ ইন ইয়োর ফিংগার রিংস্। হাতের তিন আঙুলে তিন ধরনের পাথর পরা, গলায় টারকুইজের লকেট ঝুলানো, দিস অল আর দ্যা হলমার্কস্ অব হিপি কালচার।’ আমি এ মন্তব্যের সরাসরি জবাব না দিয়ে প্রসঙ্গকে ভিন্ন দিকে ফেরানোর চেষ্টা করি, জানতে চাই, ‘আমোরা, তোমার সঙ্গে হিপিদের যোগাযোগ কোথায় হয়েছিল, ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড টেলিং মি অ্যা বিট।’
তার ইলাবরেট জবাব থেকে আমি মেয়েটি সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করি। ষোলো বছর বয়সে আমোরা বাড়ি থেকে নানা কারণে বিরক্ত হয়ে পালিয়ে গিয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার এক রিমোট পাহাড়ি অঞ্চলে। উপত্যাকায় একটি ফার্মে কাজের বিনিময়ে সে পেয়েছিল তাঁবু খাটিয়ে নিরিবিলিতে বসবাসের নিরাপত্তা। খামারের অনেকগুলো গ্রিন হাউজে নানাবিধ সবজি ও ফলফলাদির সঙ্গে সংগোপনে উৎপন্ন হতো কনোবিসের আবগারি ফসল।
আরোমার কাজ ছিল, কনোবিসের প্রসূন সংগ্রহ করে স্যান্ডুইচের প্যাকেটে পুরে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা। ওখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল, তাঁবু খাটিয়ে ঝোপ-জঙ্গলের আড়াল আবডালে বসবাস করা বেশ কতজন হিপি নারী-পুরুষের। বহোমিয়ান কেতার জীবনযাপনে অভ্যস্ত এ ভবঘুরে মানুষজনরা তার সঙ্গে কেনোবিসের প্রসূন তোলার কাজ করত।
আমোরা আলোচনার প্রসঙ্গ ফের আমার টি-শার্টে আঁকা ভেষজ তরুটির দিকে ফেরায়। সে মন্তব্য করে, ‘তরুটি যে আত্মগোপন করে নিজেকে ঔষধি হান্টারদের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছে, গাছপালার এ বিহেবিয়ারকে কী বলে?’
আমি জবাব দেই, ‘আই থিংক দিস ইজ কল্ড প্ল্যান্ট ইনটিলিজেন্স।’ সে ফিক করে হেসে বলে, ‘দিস প্ল্যান্ট ইজ মোর ইনটিলিজেন্ট দেন ইউ আর। তরুটি নিজেকে কী সুন্দরভাবে লুকাতে পেরেছে, কিন্তু তুমি নিজেকে হাইড করতে পারছ না, আই অ্যাম শিওর, তুমি একজন ছদ্মবেশী হিপি।’
তা হলে হলাম, এ নিয়ে আমি আর কথা বাড়াতে চাই না। তাই বলি, ‘আই নিড টু কিপ ওয়াকিং, তুমি কী আমার সঙ্গে হেঁটে বেস ক্যাম্পে যেতে চাও?’ নির্লিপ্তভাবে সে জবাব দেয়, ‘আই কাইন্ড অব লাইক ওয়াকিং এলোন।’

আমি চতুর্দিকে তাকাই, কোথাও কোনো ট্র্যাকার, গাইড বা উট-গাধা কিছু দেখতে পাই না। সে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে, ‘ইজন্ট দিস ডেজার্ট বিউটি সামহোয়াট আনসেটলিং?’ আমি জবাব দেই, ‘ইয়েস, এ মুহূর্তের নীরবতাও কী রকম যেন নেশা ধরানো।’
অতঃপর খানিক দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন করি, ‘আর ইউ কমফরটেবল সিটিং হিয়ার অল এলোন?’ খুব কনফিডেন্টলি সে জবাব দেয়, ‘ইয়েস’, তারপর কী যেন ভেবে যোগ করে, ‘ডোন্ট ওয়ারি অ্যাবাউট মাই সেফটি। আমি পৌল ড্যান্সিংয়ের মতো রিস্কি প্রফেশনে আছি, অনভিপ্রেত পুরুষদের ঠেকানোর কৌশল আমাদের শিখতে হয়। আমি উটকো ঝামেলা মোকাবিলা করার জন্য কুংফু ও তায়কোয়ান্দো শিখে নিয়েছি।’
প্রতিক্রিয়ায় আমি বলি, ‘গুড, গ্ল্যাড টু হিয়ার দিস, কিন্তু চমৎকার এ সুরুজ ঝলমলো ভোরবিহানে তুমি একাকী হেঁটে যেতে চাচ্ছ কেন?’ হালকা ব্লাশে গণ্ডদেশ রক্তিম করে সে জবাব দেয়, ‘এ ট্র্যাকিংয়ে এসে আমার জুটেছে জনাকয়েক গুণমুগ্ধ পুরুষ, আমি চাই না, তাদের কেউ হাঁটতে হাঁটতে আমার পায়ের প্রশংসা করুক, কিংবা হাঁটার গতি কমিয়ে দিয়ে পেছন থেকে আমাকে অবলোকন করুক। আই প্রেফার টু ওয়াক থ্রু দিস ইমেন্স সাইলেন্স অল এলোন।’ আমি, ‘ওয়েল… আমোরা, গুডবাই দেন’ বলে ফের ট্র্যাক করতে শুরু করি।
হাঁটতে হাঁটতে আমোরার কাছ থেকে তার জীবনযাপন সম্পর্কে যা শুনেছি, তা স্মৃতিতে ধারণ করতে চেষ্টা করি। তার কুংফু বা তায়কোয়ান্দো প্রভৃতিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়টি আমাকে অবাক করে না। তবে হিপি-সংস্কৃতির প্রতি তার আগ্রহ কৌতূহলী করে তুলে।
আরেকটি বিষয়, আমি ব্যাকপ্যাকে করে বয়ে বেড়াচ্ছি একটি স্ট্যাম্প অ্যালবাম, যাতে সাঁটা আছে বছর তিরিশেক ধরে হরেক দেশ থেকে সংগ্রহ করা বেশ কিছু ডাকটিকিট। অনেক বছর হলো আমি আর ডাকটিকিট সংগ্রহ করছি না, কিন্তু টিকিটগুলো ফেলে দিতেও ইচ্ছা হয় না। তাই খুঁজছি কয়েকজন সুহৃদ, যারা নিজেরা ডাকটিকিট সংগ্রহ করেন ও বিরল টিকিটের কদর করাও তাদের স্বভাবের অন্তর্গত।
ভাবছি, এ ধরনের মানুষজনের সাক্ষাৎ পেলে টিকিটগুলো তুলে দেবে তাদের হাতে। এ উদ্দেশ্য সামনে রেখে, লালিবেলা শহরে বসবাসের সময়, আমি গেস্টহাউজের লবিতে আড্ডা দিতে দিতে কয়েকজন সহযাত্রী পর্যটককে আমার স্ট্যাম্প অ্যালবামটি দেখিয়েছিলাম। আমোরাও এ দর্শনার্থীদের দলভুক্ত ছিল। তার কথাবার্তা থেকে জানতে পেরেছিলাম, মেয়েটিও প্যাসোনেটভাবে অনেক বছর ধরে কালেক্ট করছে বিরল ডাকটিকিট।
হাঁটতে হাঁটতে আমি সচেতন হয়ে উঠি, আমার ভাবনায় সক্রিয় হয়ে আছে সামান্য সময় আগে আমোরার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার ব্যাপারটি। সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হই। বছর-কে-বছর ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি যে, ঝুঁকিপূর্ণ ট্রিপের শেষ পর্বে সহযাত্রী কারও প্রতি আকর্ষণ জন্মানো অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু এ ধরনের অনুভূতি দানা বেঁধে উঠলে আখেরে জন্ম নেয় বিষণ্ণতা। এ ধরনের ব্যাধি নিরাময়ের সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, প্রথম থেকে ফিলিংসকে আমল না দেওয়া।
আমি হাঁটার গতি বাড়িয়ে, সড়কের প্রতিটি ডিটেলসের প্রতি মনোযোগ দিতে শুরু করি। এতে কাজ হয়, হ্রাস পেতে পেতে শ্রবণ থেকে ক্রমশ মিলিয়ে যাওয়া ঘণ্টাধ্বনির মতো আমোরার চেহারা-সুরত ও কণ্ঠস্বর উবে যায় আমার মন থেকে।
ঘণ্টাখানেক হেঁটে আমি সামান্য বিরতি নেই। ফিরে তাকাই অ্যারতে আলের দিকে। নিশি রাতের অগ্নিময় লাভাহ্রদটি স্পষ্টত ঝিমিয়ে পড়েছে, সামান্য ধোঁয়া ছাড়া আর তেমন কিছু দেখা যায় না, তবে সামান্য দূরে আরেকটি ক্রেইটার বৃত্ত হয়ে ফুটে ওঠে।
আমি ফের হাঁটতে শুরু করি। এ অঞ্চল নিয়ে হরেক রকমের ভ্রমণপুস্তক পড়ে আমি অবগত যে, ট্রেকাররা মাঝেমধ্যে এ ট্রেইলে খুঁজে পায় বর্ণালি পাথর-খণ্ড কিংবা ফসিল। আরও ঘণ্টাখানেক আমি হাঁটি, ইন্টারেস্টিং তেমন কিছু আমি পাই না বটে, তবে মরুবালুকা ও পাথরের ছড়ানো-ছিটানো স্তরের ফাঁকফোকরে গজিয়ে ওঠা প্রচুর তরুলতার সন্ধান পাই। আর হন্টনজনিত পরিশ্রম জানের ওপর উঠে গেলে দেখতে পাই, আমি এসে পৌঁছে গেছি বেস ক্যাম্পে।