Author Picture

রোমেল রহমানের তিনটি কবিতা

রোমেল রহমান

মধ্যাহ্নে

দুপুর হেঁটে চলে যাচ্ছে,
আমি তাকে থামাতে পারছি না।
আমি ভাত মেখে বসে আছি না খাওয়ার বাহানা মাথায়! হাত মুছে পালাব আমি?!
গাছের পাতারা হলুদ হচ্ছে, আমার অশ্রুরা তাদের সবুজ ফেরাতে পারছে না।
আকাশ ভেঙে পড়ছে একাকী কান্নায়।
আম্মা শিশু হয়ে যাচ্ছেন আর আমি বুড়ো!
(কি আশ্চর্য মধুর আমাদের মধ্যকার হাহাকার।)
ছাদে দাঁড়ালে একটা লোক দেখি প্রায় গোপনে দুঃখ মোছেন ডানার শোকে। কে তাকে কিনে দেবে দুঃখের বিদায়?!

বিকেলটা বিষণ্ন লাগে, বাগানে ফড়িঙের স্বচ্ছ ডানা। কয়েকটা পরিচিত বুড়ো ব্যাঙ। উন্মূল দাঁড়িয়ে দেখি এইসব।
কেউ ফিরবে ঘেমে স্যাঁতসেঁতে?!

আমি কিছুই বেঁধে রাখতে পারি না।

 

করতলে তুমি পুষ্প ফোটাও

জলের ছায়া তোমার গায়ে
তুমি টের পাচ্ছ না,
অথচ কি তীব্র মুষল বৃষ্টি
তবু
তুমি ভিজে যাচ্ছ না।
তোমার চোখে নদীর বিম্ব নেই?
আমাকে তুমি দেখতে পাচ্ছ না?

নৌকা হেঁটে যাচ্ছে রাস্তায়!
পারাপারের এমন পরিস্থিতি!
বরফ গলে জল হয়ে যাচ্ছে
তুমি বরফ আঁকড়ে বসে আছ
বিকল ঘড়ি তোমার হৃদয়।
রুয়েলিয়া শুকিয়ে গেছে এরমধ্যে!
তাকে থামাও!

তোমার চিবুকে রোদ
তুমি হা করে আছ;
ফটিক জল তো তুমি পাবে না।
তোমার পাঁজর বাক্সে— পাথর ঠোকাঠুকি।

বেদনাকে তুমি কুকুর তাড়া করো!
অথচ আমাকে নিয়ে বন্দি হয়ে আছো,
যেন এক বর্ষাকাল!
রেস্তোরাঁর টেবিল গুলোর পায়ে পায়ে ঝিন ধরে গেছে!!

আমি বসে থাকতে থাকতে গলে যাচ্ছি,
অথচ তুমি দেখতে পাচ্ছ না।

 

একটা সকাল মরে যাচ্ছে নিরবে

শিশুর পায়ের মতো তুলতুলে ভোর।
ঘুম ভেঙে দাঁড়িয়েছি আমি।
রক্তাক্ত হবার আগে দেখে নিতে চাই সবটুকু।
এই নিস্পন্দতা— যেন জায়নামাজে কারো সিজদায় পড়ে থাকা।

তোমার হাসি দেখলে মনে হয়—
.               আমি কেন মরে যাবো?

দোয়েলের শিস চুরমার করে যায় আমাদের মধ্যকার নির্জনতাকে।
কি তীব্র সবুজে ঘেরা আমার আঙিনা।
আকাশে লেগেছে শরতের আলো।
বুকের মধ্যে উজ্জ্বল অস্থিরতা : টের পাচ্ছি তোমাকে দেখিনা বহুদিন!
হৃদয় আমার উন্মাদ ঘোড়া হয়ে যাচ্ছে বিকল।

তোমার মুখ মনে পড়লেই মনে হয়,
.               আমি কেন মরে যাবো?!

আরো পড়তে পারেন

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১) মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার….

সোহরাব পাশা’র একগুচ্ছ কবিতা

নিদ্রিত ঘ্রাণের শব্দ দীর্ঘ যায় আশালতা ফিরে আসে বিষণ্ণ গোধূলি ফিরে আসে দুঃখিত সকাল, ক্ষয়ে যাওয়া এক দূরের উপনিবেশ পাখির চেয়ে মানুষের কোলাহল বেশি কোনো মৃত্যু মানুষকে অপরাধী করে না নিঃশ্বাসের রোদে আবছায়া নিদ্রিত মেঘ স্মৃতির অসুখ বাড়ে; দূরে নির্জন আধাঁরে জেগে ছিলো মানুষের কথা পুরনো সে বাড়ি সেই ছায়াপথ মায়াপথ জুড়ে কতো ভুল মানুষের….

error: Content is protected !!