Author Picture

মুজাহিদ আহমদের একগুচ্ছ কবিতা

মুজাহিদ আহমদ

বৃষ্টি-সজ্জিত ঘাস

মাথার ওপর থেকে মেঘের পাহাড় সরাও— খণ্ড খণ্ড ঘৃণা ভাসিয়ে দাও বৃষ্টি— সজ্জিত ঘাস-মাটির টিলায়। যাবতীয় তরুলতায় এতোক্ষণে মিশে গেছে কেশ— ঘ্রাণ। ঠিক পিঠের দিকটায় যে বৃক্ষটি দাঁড়িয়ে-তার লজ্জায় আমিও লজ্জিত প্রায়।

আগুন লেগেছে বনে—

এই আগুন তোমারই পোষা। এখন যতোই আগুন লাগুক বনে— বিস্তীর্ণ জলাশয়ে-মুছে ফেলো। অবাঞ্চিত ঘোষণা করো জেগে ওঠা ক্ষোভ।

আমরা নির্দোষ; নির্লোভ—

আসকারা পেয়ে-আকাশ ভেঙে আসা বৃষ্টি-ফোঁটায় ঠোঁট মিশাই। যুদ্ধফেরত কোনো সৈনিকের মতো উদযাপন করি জয় ও সময়।

যেখানে তুমি আর আমি উল্লাসিত সমানে সমান।

 

তড়িঘড়ি উড়ে গেলো পাখি

সন্ধ্যা নামার কথা ছিলো। সন্ধ্যা নামলো না— সন্ধ্যার বদলে বৃষ্টি নামলো অবিকল ফুলের পাপড়ি ছিটানোর মতো। বৃষ্টিফুলের পাপড়িতে ঢেকে গেলাম। একেবারে কাক— ভেজার মতো।

মাথার ওপর দিয়ে তড়িঘড়ি যে পাখিটি ওড়ে গেলো— তার শরীরে কী যেনো ঘোরলাগা এক সুগন্ধি ছিলো। চোখে ছিলো চুম্বক রেখা, ডানায় ছিলো দীর্ঘ আলিঙ্গনের সাহস।

হঠাৎ পাতার দরজাগুলো খুলে গেলো। আকাশ আর আমাদের মাঝে থাকলো না কোনো ব্যবচ্ছেদ।

পাপড়ি ছিটানো পাহাড় ভেঙে—চরম লজ্জার দিকে গুটিপায়ে অগ্রসর হয়েছিলাম।

 

বৃষ্টি শেষ হোক

আপাতত থামো— বৃষ্টি শেষ হোক। বৃষ্টি থেমে গেলে না হয় অন্য ডালে যাও। অন্য বৃক্ষে বসে যুধিষ্ঠির মতো হেসে ওঠো। বৃষ্টির পরে ওড়াউড়ি করো দারুচিনি ছায়ায়। প্রশান্তির ছুটিতে উড়াল দিয়ে আবার মায়াবনে এসো।

এই জঙ্গলে দেবদারু, দারুচিনি, নেপতালিনবৃক্ষ লাগাতার। বৃক্ষভর্তি বনের বুক ও কপালের খোলা মাঠ তোমার। তুমি হাত রাখো-কারো কপালে; রাখো কারো বুকে মাথা। বিন্যস্ত দ্যুলোকে সমর্পণ করো ঠোঁটের স্পর্শ; চুম্বক-চুম্বন।

বৃক্ষরা আরেকবার ঝাঁকি দিয়ে উঠুক—মেঘ রাঙানো মায়াবনে।

বৃক্ষের ভাষা বোঝোনা, না—কি বোঝো। বন পুড়ে যাওয়ার আগে সুগন্ধি ছড়ানো নাভীতে নিয়ে রাখো আরেকবার হাত। ফিরে যাক আগুন— জল, পোড়া পোড়া কথা, গুচ্ছ গুচ্ছ ঢেউ— অবাঞ্ছিত দাবানল।

 

সময়—জলে—ভাসা লিপি

কোনো সরল দিনের মতো তোমাকে ভুলে যেতে
চাই। ভুলে যেতে চাই পাড়ার লালমাটি পথ—
সময়—জলে—ভাসা লিপি, মনে জেগে ওঠে মিশে
যাওয়া ইন্দ্রধনু।

সব ভুলেই যেতে চাই— সব

পরিপাটি স্বপ্নের ভাঁজে ভাঁজে কৃষি-আগুন
কপালের সামান্য ওপরে চিকন চাঁদ, চাঁদের
স্পর্শও নৌকাডুবি গল্পের মতো ভুলে যেতে চাই।

কয়েক পৃষ্ঠা ভুলেও গেছি—

চোখে ভাসে ছাপার হরফ জলে ভেজা কবিতার
বই। মগজে কারফিউ জারি করে জলশ্রী’র
সবকটি ফুল।

মানুষ ভুলের ভেতর আসলেই কী শতভাগ নির্ভুল?

 

পাথর পাঠ

মেঘালয় থেকে যে পাথরকন্যা গড়াতে গড়াতে চলে এলেন ধলাই জলে— তিনি বুকের ওপর চেপে বসে অসংখ্য নুড়ি পাথর জন্মান। এরপর থেকে বুকে পাথরের খুব বেশি চাপ।
পাথরও বুঝতে পারেন—পাথর মানে ভার, পাথর মানে চাপ। বুক আর পাথরের মাঝে বিদ্যমান কঠিনতম জ্যামিতিক এক পরিমাপ। তবুও তিনি বসেন—জন্ম দেন অতিরিক্ত প্রস্তরসময়! অপ্রত্যাশিত ধকলে যাচ্ছে প্রহরের পর প্রহর।
দলছুট পাথরকন্যা—হঠাৎ শীতল জল ছেড়ে ছড়ে বসেন প্রতিবেশী পাহাড়ের ঘোলাটে সবুজ ছবির ওপর। যে ছবির নাভি চুয়ে স্ফটিক জল ঝরে দীর্ঘ যুগ, দীর্ঘ বছর।
পাথরকন্যাবিহীন মেঘালয়ের গায়ে পড়েনি মেঘের ছায়া; বৃষ্টি-পালক। পাথরকন্যা, তোমার মুখের বদলে ওখানে ভাসতে দেখি সূর্যগিরি; আলোর বিপরীতে লাগাতার লাভা।
পাথরের বুক চিরে মুদ্রিত বালিকা-স্রোত; টলমল জলের গান— এসব তো সবুজ বনের ঋতুরঙ; লাভা-সাপ। রঙঢঙে কাটে বেলা। রঙে ভাসে মেঘ। মেঘে ভাসে লাভা স্রোত—জলে ও পাথরে চলতে থাকে অপঠিত লীলাখেলা।

আরো পড়তে পারেন

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১) মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার….

সোহরাব পাশা’র একগুচ্ছ কবিতা

নিদ্রিত ঘ্রাণের শব্দ দীর্ঘ যায় আশালতা ফিরে আসে বিষণ্ণ গোধূলি ফিরে আসে দুঃখিত সকাল, ক্ষয়ে যাওয়া এক দূরের উপনিবেশ পাখির চেয়ে মানুষের কোলাহল বেশি কোনো মৃত্যু মানুষকে অপরাধী করে না নিঃশ্বাসের রোদে আবছায়া নিদ্রিত মেঘ স্মৃতির অসুখ বাড়ে; দূরে নির্জন আধাঁরে জেগে ছিলো মানুষের কথা পুরনো সে বাড়ি সেই ছায়াপথ মায়াপথ জুড়ে কতো ভুল মানুষের….

error: Content is protected !!