Author Picture

আতিদ তূর্য’র একগুচ্ছ কবিতা

আতিদ তূর্য

চুরি

দিনেদুপুরে হারিয়ে যাচ্ছে সব।
উঠোনে ফেলে রাখা সাইকেলও
হারিয়ে গেলো এমন জোয়ারে৷
রোদে দেওয়া আচার—
শুকোতে দেওয়া কাপড়
হচ্ছে গায়েব চোখের পলকে।
বাড়িতে জম্বির মতো ঘুরছি আমরা
মায়ের হাত-কান-গলা খালি।
পুলিশরা সব করে কি?— দাদু বলে।
রোদমাথায় বাবা গেছেন ভোটাভুটিতে
চুরি না-কি হয়েছে সেখানেও।

 

বানরনাচন

ঐতিহ্যবাহী বানরখেলা হালে পানি পেয়েছে।
রসিক মহাজন গদিতে আসীন
এক হাতে ডুগডুগি, এক হাতে লাঠি
বানর শ্বশুরবাড়ি যায় বগলে নিয়ে ছাতি।
বানর বসনে ভদ্দর জামা
দূর থেকে অবিকল কোনো সাহেব।
বানর ঘোল বেচতে যায় হাটে
বানর নায়কের পাট করে,
লাঠি বাগিয়ে মুঠোয়—বক্তৃতার ভান ধরে
বানর চোর-পুলিশ খেলে ভালো;
বানরমনিব কালো কৌতুকে পটু।
কলা খাওয়ার আগে বানর শেষ খেলা দেখায়—
নেতার মতো হাত নেড়ে গণসংযোগ চালায়।

 

পেঁচা

ঘুমগুলো এক কার্তিকে গুম হয়ে গেলে
মানুষ আশ্রয় নেয় নিরপেক্ষ ডালে।
বছরজুড়ে চলে অবিশ্বাস্য অফার—
‘ডিড নাথিং, বি ওয়ান’।
অ-দৃশ্যত কোনো গোলযোগ নেই
তবু হারিয়ে যাচ্ছে জীবনদাসের পেঁচা।
অশ্বত্থের ডালে বসে নেই আর
শিশির করেনি শিকার।
জেগে পার করে দিবস শঙ্কায়
জেনে গেছে গোপন সংবাদে—
অস্ত্রউদ্ধারে যেতে হবে যেকোনো সময়।

 

ছায়াযুদ্ধ

এবেলা তুমিও করে নাও বউনি
এইতো এপাশে ধর্মযুদ্ধ চলছে
জন্ম কতোটা সহি? রেফারেন্স নেই।
প্রাগৈতিহাসিক কোনো মেরুকরণ
হাওয়া বড়ো বেগতিক, সুনসান
মুখোশই এখন সবচাইতে মূল্যবান।
বাজেটে আবারও বাড়তে পারে সম্পর্কের দাম
খেলাপির খামারে কবিদের ভিড় ;
তোমার মাথা গোঁজার ছাদ—ছদ্মবেশী কোনো যুদ্ধশিবির।

 

আমেরিকা

কেমন আছো, স্বপ্নের দেশ?
বেশকিছুদিন হলো তোমাকে নিয়ে দুঃস্বপ্নের সিরিজ দেখছি।
টিভি খুললেই একজন বন্দুকধারী
ঢুকে পড়ছে বাচ্চাদের স্কুলে—
দুইজন আততায়ী ঢুকে পড়ছে শপিংমলে
কেউ একজন মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে
জনপ্রিয় খেলার মতোন
যাকে দেখছে গুলি করছে।
জনৈক ভদ্রলোক ঠাণ্ডামাথায়
গাড়ি উঠিয়ে দিচ্ছে মানুষের মিছিলে।
তোমার অবাধ সামরিকস্বর্গে
একজন কিশোরও আজ পকেটে
মৃত্যু নিয়ে ঘোরে।
তোমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বন্দুক
চেয়ে দেখো গাদ্দারি করছে।

আরো পড়তে পারেন

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১) মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার….

সোহরাব পাশা’র একগুচ্ছ কবিতা

নিদ্রিত ঘ্রাণের শব্দ দীর্ঘ যায় আশালতা ফিরে আসে বিষণ্ণ গোধূলি ফিরে আসে দুঃখিত সকাল, ক্ষয়ে যাওয়া এক দূরের উপনিবেশ পাখির চেয়ে মানুষের কোলাহল বেশি কোনো মৃত্যু মানুষকে অপরাধী করে না নিঃশ্বাসের রোদে আবছায়া নিদ্রিত মেঘ স্মৃতির অসুখ বাড়ে; দূরে নির্জন আধাঁরে জেগে ছিলো মানুষের কথা পুরনো সে বাড়ি সেই ছায়াপথ মায়াপথ জুড়ে কতো ভুল মানুষের….

error: Content is protected !!