Author Picture

কাব্য সুমী সরকারের একগুচ্ছ কবিতা

কাব্য সুমী সরকার

ছায়া

আমরা যেখানেই যাই নিজের ছায়াকে নিতে ভুল করি না
কিংবা নিজের দায় এড়াতে জানে না ছায়া।
আলো বা অন্ধকারে
ব্যর্থতার প্রতিটি প্রহরে
পাশে রয়, দেহে মিশে থেকে, দহন বহন বয়।

আমি তোমার বা তুমি আমার,
কোনদিন আলাদা যার তার
সুখ যেমন ফাঁকি দেয়
নিয়ম আর নিয়তির দোহায়ে
দীর্ঘশ্বাসও ভারী হয়

একদিন আমরা সব পিছনে ফেলে
একা একা ঘরে ফিরি শুণ্যতা নিয়ে
পেছনে তাকিয়ে দেখি-
মায়া হয়ে পাশে আছে শুধুই ছায়া
আগে ছিলো যা তা যাপিত জীবনের মায়া।

 

পরিতাপ

আলোতে স্পষ্ট হয় সব
জীবনের পথে আলো ফেলে মানুষ এগোয়
কিন্তু কিছু মানুষ আঁধারে খুঁজে নেয় নিজের মুখ

যখন অন্ধকার ঘনিয়ে আসে
তখন আমি নিজের মাঝে নিজেকে ফিরে পাই
এ যেন ছায়ার সাথে ছায়ার কথোপকথন
নিজেকে খুঁজি আঁধারের অতলে কোথায় যেন হারিয়ে
তোমার স্পর্শ টের পাই
কিছু মায়া কিছুটা বিভ্রম
তুমি কোথায়
বিদঘুটে আঁধারে স্মৃতি হাতড়ানো ছাড়া
অবশিষ্ট রইলো না কিছু।

জীবন এক হিসেবের অংক
কিন্তু তোমাকে চাইনি এইসব হিসাবের কঠিন জাবেদায়
আমিও জানি বেহিসেবি হলেই জীবন পরিতাপে হয়
আলোময় এই ভুবনে
যখন আপনার আলো থাকবে
তখন মুঠো মুঠো নিবে
যখন আপনি আলোহীন
তখন আপনি একা, খুব বেশি একা….
এ যেন অন্ধকারে নিজের কাছেই ফেরা

সম্পর্ক মানে হিসেব কষে
জায়গাটা চিনে অস্ত্রের তাক বসানোর নিশান

 

বেদনার সঙ্গীত

কথা ছিলো পাতা ঝরার দিন শেষে
ফিরবো তোমার কাছে।
বিশ্বাস করো-
ঝরতেই শুধু দেখেছি, কোমলতা আর দেখিনি।

বসন্ত বার বার শুধু ফাঁকি দেয় আমায়
এতো ফাঁকি নিয়ে কি আর
তোমার কাছে ফেরা যায় বলো?

আমিতো সতেজ পাতার আগমণী মুগ্ধতা নিয়ে
ফিরতে চেয়েছি তোমার ভুবনে!

এতো কাল পরে রুক্ষ পাতারা জানান দিলো আমায়
আমি নিজেই নাকি তাদের দলভুক্ত হয়ে গেছি।

 

ভাবনার হোঁচট

একদিন-
অঝর বৃষ্টিতে মুছে যাবে সব দাগ
দূর হবে বুকফাটা হাহাকার
প্রাণরস ফিরে পেয়ে পৃথিবীকে আবারো করব সবুজে সবুজময়
পাখিরা করবে হেমন্ত বিলাস।
এমন ভাবনা নিয়ে মরা খেতটি স্বপ্ন বুনে
আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনায় রত হয়ে
আকালেও যেন নাগালে দেখে সম্ভাবনা
তবুও মরার খরায় ফুরোয় সব সাধনা।
একদিন বাস্তবতা কাছে হোঁচট খায়
তখন তার দুয়ারে আগাম বার্তা নিয়ে হাজির হয় রোদ
আর বেশিদিন বাকি নেই
চৌচির হবে তোমার চির তৃষাতুর বুক।

 

আবার ফিরবো আমি

একটি শিশির বিন্দুর অপেক্ষায়
বেঁচে থাকে যে ঘাস
অপেক্ষা শেষে হয় সে  মুক্তোদানা
কি অপার মুগ্ধতার জীবন তার।

আমরাও একদিন মুগ্ধতায় জড়াবো।

ইচ্ছে ডানায় ভর করে
হয়তো আমি তোমার জন্য  ঘাসই হবো
দিনশেষে যদি ফিরে আসো অবেলায়
কেউ দুপায়ে মাড়িয়ে যায় অবহেলায়
জেনে রেখো-
আমি ধূসররূপে নয়
আরেকজন্মে ফিরবো
সজীবতা নিয়ে
তোমার মুগ্ধতা হবো একরাশ।

আরো পড়তে পারেন

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

বীভৎস খেলা নগরে বাতাসে মথিত জনস্রোতের কোলাহলে শুনতে পেয়েছি সারিগান গঞ্জের হাটে আকাঙ্খার গভীরে মন্দ্রিত অভিন্ন প্রাণ নীরব দর্শক ছিলাম ব্যর্থতার করুণ গান ফেরার মহড়ায় বঞ্চিত কুঁড়েঘরে সরাইখানার- শুঁড়িখানার মাছিরাও নেশায় বুদ্বুদ প্রকম্পিত কান্নার পর একদিন হাসির তিলকরেখা বিচ্ছুরিত শৈশবের ক্ষুধার্ত চিৎকার ক্রর হাসি চেপে মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলে ভাগ্য প্রহসনে যুদ্ধের ব্যগ্র দামামা থেমে গেলো-….

তোফায়েল তফাজ্জলের একগুচ্ছ কবিতা

উপায় অবলম্বন কাঁটা থেকে,  সুচালো কাঁকর থেকে পা রাখিও দূরে, জায়গা না পাক চলন-বাঁকা চেতনায় উড়ে এসে বসতে জুড়ে; এসবে খরগোশ কানে থাকবে রাতে, পড়ন্ত বেলায়, দ্বিপ্রহরে, পূর্বাহ্নে বা কাক ডাকা ভোরে। দুর্গন্ধ ছড়ানো  মুখ ও পায়ের তৎপরতা থেকে গ্রীষ্ম থেকে সমস্ত ঋতুতে একে একে নেবে মুখটা ফিরিয়ে তিলার্ধকালও না জিরিয়ে। কেননা, এদের চরিত্রের শাখা-প্রশাখায়….

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

error: Content is protected !!