Author Picture

শফিকুল ইসলাম সোহাগ-এর একগুচ্ছ কবিতা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ফাগুনে যে রোদ খেলা করে
.
এই ফাগুনে ঝরে গেছে ক্লান্তি চোখের মর্মধ্বনি
প্রতিক্ষণের স্বরলিপিতে রংদুপুরের ঠোটের হাসি
সম্ভাবনার সরোবরে পূর্ণমনেই দাঁড়িয়ে আছি
হলুদ রঙের ছোঁয়া লাগা শব্দপাঠের গালিচাতে
বিরুদ্ধতার প্রলয় শাখায় সুপ্ততাপের বাসন্তী ঘ্রাণ
আশাফুলের নতুন সুরেই জাগরণের অগ্নিশিখা

বহুমুখী প্রশান্তিরা শিল্প ছুঁবে দীপ্ত আলোয়
আম্রকানন মৌমাছিরা গুঞ্জরণের অগ্রপ্রাতে
এসে গেছে ফাগুন বেলা রক্তরসের সৌখিনতা
চাঙ্গা মনের রঙিন দুপুর অফুরান শখ ইচ্ছেমনে
চোখের তারায় ফাগুন এলো সযতনের বেলকনিতে
তৃষ্ণা জুড়ায় হলুদ মিছিল স্বপ্নপূরণ কুচকাওয়াজে

থুবড়ে পড়া বেদনারা উঠবে জেগে শিমুল ফুলে
কৃষ্ণচুড়ার রঙিন আলো ছড়িয়ে যাবে মুগ্ধ দুপুর
থাকুক প্রণয় অপেক্ষাতে ধরায় বসুক আনন্দসুর
অপরূপের রৌদ্রমেলায় প্রজ্জ্বলিত হাসুক আগুন
প্রতিচ্ছবির বাঁকে লুটায় কুসুমিত আপন আকাশ
ছন্দপ্রাণের সখা সাজাক অপরাহ্নের বসন্ত গান

 

অবিনশ্বর ভাবনার স্মারক
.
অবিশ্রান্ত লিখে যাও
বিপন্ন মুক্তির এই করিডোরে
প্রতিবাদী প্লাবনে উছলে উঠুক যৌবন ।

কবিতারা জাগুক অলিন্দে
পরিশুদ্ধ চেতনার মিনার ছুঁইয়ে
সমস্ত অবসাদ ছুঁড়ে দাও ,
চির অক্ষয়ের অস্তিত্ব নির্মাণে
প্রতিশ্রুতির অনুভবের সূর্যদীপ্তে ।

চিত্তে আঁকো-
সঞ্চারিত অবিনশ্বর ভাবনার স্মারক ।

তবু শৃংখলা ফিরে আসুক
ফিরে আসুক আগমনীর গান
জবান খুলে যাক-
কামড় বসাক অত্যাচারী বিষ-পিপঁড়ে
আবদ্ধ রাষ্টের মগজ ধোলায়ে
নতুন মেরুতে দোকান সাজুক-ভাঙা দিনের
রক্ত চোখে তবু হোক বোধের উৎসব ।

 

সভ্যতার আড়ালে পৈশাচিক চোখ
.
তালি মারা ইতিহাস- কুটচালে জব্দ
হিংসার আগুনে ত্রাস ছড়ায় হালের বলদ
সোনালি কাবিনের দেশে হাসে উপোসীর ঘর
নোংরা ইশারায় চলে নিরপরাধ পিঠে হাতুড়ি
অপরাজনৈতিক সংস্কৃতির রোষানলে
অস্পৃশ্য মেঘ পুঁজিপতি শক্তির বাহুবন্ধনে…
ভাটোয়ারা হয় মধ্যবিত্তের মুখের খোরাক

অপযশের মুখচোরা
প্রগতির মুমুর্ষু মগজে –
তাচ্ছিল্য করে অলৌকিক আজান
অস্তিত্বের স্বচ্ছ উঠোন
যেথায় বিশ্বাসের নিশ্চিত পথ,
নষ্ট ভাগ্যই বটে আমাদের

আয়ুরেখা শেষ হবে জানি
তবু কেন কানাকানি-মগজের প্যাঁচ
কেন এত বিশ্বাসের ভাঙ্গন খেলা
আতঁলামি মানুষের স্মর,
ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে-
মানচিত্র সাজছে হলুদ আলোয়
কাছাকাছি লাল সংকেত দিচ্ছে, অপলাপের জর

অতপর শিকারী পাখিরা এখনো প্রস্তুতি নিচ্ছে…

 

মমতার বাড়ি
.
যেখানে শিমের মাচা আর লাউয়ের ঘুরি
শালিকের দেশ যেন শ্যামলের বহুরূপী ঢেউ
সৃষ্টির গহীন সমুদ্রে-বাতাসের আবেগী হানা
কৃষকের মাঠে রাখালি সুর আর কাঠালের ঘ্রাণ

সবুজ আঁচড়ের দাগ-অসীমের পরমতম সুখ
মৃত্তিকার আকাশ মায়াবী অপেক্ষায় থাকে রোজ
নক্ষত্রের সড়কে জানি নেমে আসে বোধের ঢল
জীবন্ত নদীর শাখা-প্রশাখায় ফিরি মমতার বাড়ি

ওখানে ইচ্ছেরা প্রতি প্রহরে নিভায় মননের আগুন
জন্ম থেকেই পুড়ি বেদনাদগ্ধের ধূসরাভনীল মাঠ
যন্ত্রণাহীন মন্ত্র পাঠে সোনালি বৃক্ষ শাখায় পাখিদের শীষ
সবুজ পাতার জংশনে অনুবাদ হয় সৃষ্টিতত্বের বোধ

নিরব কুয়াশা ভেজা চোখ মুছি শহোরের দেয়াল ঘেঁষে
যাওয়া হয়নি আজও-উৎসবের বটবৃক্ষের কুটিরে
যেখানে হেসে ওঠা সকাল ফুলে-ফলে ভরা রূপালি গ্রাম

 

আশান্বিত ঢেকুর
.
সর্বাত্মক একটা বিপ্লব
আকুতি জানায় বেরসিক নগরের লোক
যেখানে অবৈধতার আয়না ভেঙ্গে
তৈরি হবে প্রসারিত নাগরিক দেয়াল

ব্যবচ্ছেদের উল্টো পিঠে
নিখুঁত একটি অভিযান জাপটে ধরবে
গণতন্ত্রের বেওয়ারিশ প্রলাপ
শোকাহত পাখিদল আবার
ডানা ঝাপটাবে সৃষ্টি এবং কৃষ্টির বৃষ্টিতে।

ছিঃ! মান শাসন নিশ্চিহ্নে
অপেক্ষায় একটি সম্ভাব্য মানচিত্র রাষ্ট্র
যেখানে মানুষ পাবে-স্বাচ্ছন্দ্য মেমোর পরিচ্ছন্ন খসড়া

 

ভাঙ্গো
.
সম্মুখে চলো তুমি ঠেলে মেঘ
সাহসটা বুকে নিয়েই বহুদূর
সত্যের পথপানে মনসব
ভেঙ্গে দাও মসনদ শত্রুর।

হাসিমুখে মোকাবেলা শুরু হোক
সরে যাক কালোছায়া প্রতারক
মিথ্যার জালে পড়ুক দুশমন
রোদ হোক আগামীর মসনদ।

ঠেঙ্গাও যতসব বেইমান
সমাজকে ভাঙ্গছে প্রতিদিন
এখনি শুরু হোক প্রতিবাদ
মেরামত হবে আজ রাষ্ট্রের।

গ্লানিসব চিরতরে উঠে যাক
কর্মঠ আলো হোক প্রগতির
স্বপ্ন ছুঁয়ে যাক দশদিক
সুখ হোক স্বস্তির নিঃশ্বাস।

জেনে গেছি ইতিহাস নিরবে
তুমি কি আর জবানে বলবে
চাপাবাজী করে সব হয়না
বরনের পালা এখন ক্বলবে।

আর কত রক্ত বাংলার আকাশে
মিডিয়া খুললেই বুঝা যায়
স্বার্থের হুকুমত জনমনে ধিক্কার
ভাঙ্গবে তাবেদারি হুকুমত।

শেকড়ে ছুঁয়ে আছে হিম্মত
রঙিন দুপুরটা জাগতে
খেলাটা হবে যেন শিঘ্রই
দাজ্জালের উতসব ভাঙ্গতে।

আরো পড়তে পারেন

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১) মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার….

সোহরাব পাশা’র একগুচ্ছ কবিতা

নিদ্রিত ঘ্রাণের শব্দ দীর্ঘ যায় আশালতা ফিরে আসে বিষণ্ণ গোধূলি ফিরে আসে দুঃখিত সকাল, ক্ষয়ে যাওয়া এক দূরের উপনিবেশ পাখির চেয়ে মানুষের কোলাহল বেশি কোনো মৃত্যু মানুষকে অপরাধী করে না নিঃশ্বাসের রোদে আবছায়া নিদ্রিত মেঘ স্মৃতির অসুখ বাড়ে; দূরে নির্জন আধাঁরে জেগে ছিলো মানুষের কথা পুরনো সে বাড়ি সেই ছায়াপথ মায়াপথ জুড়ে কতো ভুল মানুষের….

error: Content is protected !!