Author Picture

বিপিন বিশ্বাসের একগুচ্ছ কবিতা

বিপিন বিশ্বাস

একটি কোষ
.
অসম্ভব সুন্দর স্বপ্নের জগৎ
তার চেয়েও সুন্দর একটি কোষ
আমি স্বপ্নের ভেতর
আমি একটি কোষের ভিতর
নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখছি
একটি কোষ একটি ইতিহাস
পৃথিবীর ইতিহাস
আদিজীবাণুর ইতিহাস
আমার পূর্বজন্মের ইতিহাস
সমাজের ধনী গরিবের ইতিহাস
নক্ষত্র সূর্য চাঁদ আহ্নিক গতির ইতিবৃত্ত
সবই যেন তার মধ্যে বর্তমান
একটি কোষ রূপান্তরের কথা বলে
একটি কোষ আবেগ ভালোবাসা ভালোলাগার কথা বলে
আমি একটি কোষের ভেতর আছি
আমি একটি স্বপ্নের ভেতর আছি
একটি কোষ দাঙ্গা হাঙ্গামা রক্তাক্তের ইতিকথা বলে
একটি কোষ পৃথিবীর যৌবন জীবনের বার্তা দেয়
কোষের মধ্যে শান্তি,মানবতা, সৃষ্টির তপোধ্বনি বাজে।

 

স্মৃতির চিলেকোঠা
.
স্মৃতি গন্ধা জলের আঁচল
ছুঁয়েছে আমার মন
শৈশবের খেলার সাথী
খোঁজার জন্য মন করে আকিঞ্চন।

মনের গহীনে অতীত অনুভূতি
জীবাশ্মের স্তুপ
উঁকি দিয়ে খুঁজে
হারানো কৈশোর।

বিষন্ন দুপুর দুরন্ত বিকেল
আবেগী সকালের মৌমৌ ঘ্রাণ
কাদামাখামাখি গোল্লাছুট হাডুডু কানামাছি খেলা
গ্রামের প্রকৃতির সাথে বেড়ে উঠা।

সূর্যাস্তের গোধূলির মতোই
চেয়ে থাকি বেলা-অবেলা।

দুঃখ জয়ের গল্পগুলো
এখনো জোগায় সাহস।

আমি বেঁচে আছি
বিন্দু বিন্দু বাস্তবতার
নগ্ন জলের পা স্পর্শ করে
স্মৃতির চিলেকোঠায় মননের পূজা করে।

 

দুঃখের সাতকাহন
.
দুঃখগুলো মসৃণ কখনো সৌখিন
দুঃখগুলো আবেগের হেঁসেলে নতুন গল্প বুনে
এই দুঃখগুলো আমার ওই দুঃখগুলো তোমার
এভাবে আর কতদিন।

সব দুঃখই আমাদের সব দুঃখই তোমাদের
দুঃখের আখ্যান জোয়ার ভাটার মত।

সকলের হৃদয়ে দুঃখ্যের সাতকাহন
কত না বর্ণিল!
কত না আপন!
স্বমহিমায় করে কীর্তন।

দুঃখগুলো শক্তিশালী
পৌঁছে যায় অনন্ত হৃদয়ের আঙিনায়
মানুষকে কাঁদায়
কাঁদায় আমাকে তোমাকে।

আমিও দুঃখ্যে কাঁদি তুমিও দুঃখ্যে কাঁদো
দুঃখের ব্যঞ্জনা সাগরের নোনা পানির মত।

 

অস্পষ্ট অন্ধকার
.
অস্পষ্টতার অন্ধকারে ডুবে আছে বাঁশ ঝাড়
কাকের কণ্ঠে শুনি ঘৃণার আর্তনাদ
অবহেলিত শিশু সেও বেঁচে আছে
ফুটপাতকে ভালোবেসে, কুয়াশার ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে।
তার মা নিকষ কালো অন্ধকারে বেহিসেবে ভালোবাসায় মেতে উঠে ছিলো
তার পর থেকেই কুলসুমের পেট ফুলেফেঁপে উঠে
একদিন ফজরের ওয়াক্তে পেট চুপসে বেরিয়ে আসে
ভালোবাসার দান আত্মপ্রকৃতি নূর নাহার দিলো তার নাম
যে মা কামনার গ্রাসে নিজেকে সঁপে ছিল
সে জন্মেছিল কুঁড়েরঘরে, আর তার মেয়ের জন্ম হলো বস্তির কোলে।
কে নূর নাহারের পিতা, কামাতুর স্রোতের ধারায়
আধো আলো আধো অন্ধকারে ভুলে গেছে সবি।

শান্তির মায়াকান্না পুরুষের কণ্ঠে বাজে
সূর্যের কিরণ খিলখিলিয়ে হাসে
দিগন্তের দেয়াল টপকে
সত্যের নির্মলতাকে খোঁজে
সভ্যতার ভব্যতায়
টুকটুকে এক শিশু
সেও জানতে চায়
কে তার পিতা, কি তার পরিচয়
সমাজ কিতা দিতে পারবে!

 

মায়া বিথীতলে
.
জীবনকে বোধের জাহাজে তুলে
নিমগ্ন থাকতে চাই কবিতার শরীর জুড়ে
কুয়াশার জমিনে এক ফোঁটা অনুভূতি
পাখি হয়ে উড়ে এলে
আকাশের আঙ্গিনায় লিখি স্বর্গের দ্রুপধী।

বাতাসে শুনি মিহি গলার গান
চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে শান্তির আহ্বান।

নীলাম্বরী মেঘপুঞ্জ হেঁসেখেলে উড়ে
আকাশ ফুঁড়ে বৃষ্টি ঝরে মায়া বিথীতলে।

 

হারিয়ে যাই নিজের অলিগলি পথে
.
আত্মার গভীর থেকে শুদ্ধতা
ছড়িয়ে পড়েছিল আকাশের ছায়া তলে
স্পর্শ করেছিল মহাজাগতিক রশ্মির খোঁপাকে
এর ফাঁকে নিবিড় অনুভূতিগুলো সাঁতরিয়ে সাঁতরিয়ে
মুক্তির পতাকা নিয়ে পৌঁছে গেল
তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা সারিসারি দেবদারু গাছের কাছে।
মুক্তবাক সারসের সুর
হিল্লোলে প্রশান্তির প্রচ্ছায়া আঁকে
অন্তরে তখনও নির্জনতাটুকু সম্বল করে বসে আছি
বেহিসাবি মনের দেয়াল ভেদ করে
নিজেকে চেনার তরে
এই দুনিয়ায় ব্যাকুল হৃদয় ছাড়া
আর কিছু পাই নি
যাকে বলতে চাই সত্যের কথা
অনুভূতির কথা-
সেও ডুবে আছে বিষাদের নিমজ্জিত জলে।

আমার গভীর দীর্ঘশ্বাস অনন্ত যৌবন
পবিত্র আত্মার ঘ্রাণে নেশাতুর হয়ে ঊর্ধ আকাশে নাচে
আমি অনাথ, স্মৃতিচিহ্ন খুঁজি
হারিয়ে যাই নিজের অলিগলি পথে।

 

মায়ার ঘোর
.
নিরবতা নির্যাস
ধ্যানে বারে উচ্ছ্বাস
আমার আছে অভিলাষ
খুঁজি আমি সত্যের আভাস।

মায়ার ঘোরে
মন ঘুরে
ঠিকানা খুঁজে পায় না
স্থির না হলে কেউ
নিজেরে চিনে না।

চিত্তবৃত্তি নিরোধ হলে
সত্যের বাঁশি
নিজেই বাজে
দুঃখ বেদনার পথ রুদ্ধ হলে
আত্মজ্ঞানের জোসনা হাসে
প্রেমানন্দ কয়জনে বুঝে?
কর্ম জ্ঞান ভক্তি বুঝলে
মুক্তির লাটাই নিজ হাতে রচে
মায়ার আঁধার কেটে গেলে
দৃশ্য অদৃশ্য এক রুপে চলে।
জ্ঞানের নাড়ী মজবুত হলে
বিন্দু বিন্দু সময় জমে
ধরা দেয় নিজ নয়নে
চেয়ে আছি তাই স্থির পানে।

 

প্রত্যাশা
.
অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে
একদিন নিশ্চয় শুরু হবে নব দিগন্তের
দিগন্তরেখা আচ্ছন্ন হয়ে থাকবে মানুষকে ঘিরে
মনের গৃহে বড় হয়ে উঠবে শুদ্ধ ভাবনা চিন্তা
গাছের প্রকৃতির মতই পুষ্প গন্ধ সৌন্দর্য বিলাবে
মানুষের বুকে শুয়ে থাকা আশা-আকাঙ্ক্ষার পালকে ফানুস উড়বে
নিকষ কালো অন্ধকার দূরীভূত হয়ে
জেগে উঠবে আত্মিক বন্ধন আলোর ঝর্ণা ধারা
অবারিত আকাশের দৃঢ়তা
দিবে সাহস দিবে আস্থা
বলবে আমি যে তোমাদেরই লোক
প্রতিটি ভোরের আলো তোমাদের হোক।

আরো পড়তে পারেন

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

বীভৎস খেলা নগরে বাতাসে মথিত জনস্রোতের কোলাহলে শুনতে পেয়েছি সারিগান গঞ্জের হাটে আকাঙ্খার গভীরে মন্দ্রিত অভিন্ন প্রাণ নীরব দর্শক ছিলাম ব্যর্থতার করুণ গান ফেরার মহড়ায় বঞ্চিত কুঁড়েঘরে সরাইখানার- শুঁড়িখানার মাছিরাও নেশায় বুদ্বুদ প্রকম্পিত কান্নার পর একদিন হাসির তিলকরেখা বিচ্ছুরিত শৈশবের ক্ষুধার্ত চিৎকার ক্রর হাসি চেপে মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলে ভাগ্য প্রহসনে যুদ্ধের ব্যগ্র দামামা থেমে গেলো-….

তোফায়েল তফাজ্জলের একগুচ্ছ কবিতা

উপায় অবলম্বন কাঁটা থেকে,  সুচালো কাঁকর থেকে পা রাখিও দূরে, জায়গা না পাক চলন-বাঁকা চেতনায় উড়ে এসে বসতে জুড়ে; এসবে খরগোশ কানে থাকবে রাতে, পড়ন্ত বেলায়, দ্বিপ্রহরে, পূর্বাহ্নে বা কাক ডাকা ভোরে। দুর্গন্ধ ছড়ানো  মুখ ও পায়ের তৎপরতা থেকে গ্রীষ্ম থেকে সমস্ত ঋতুতে একে একে নেবে মুখটা ফিরিয়ে তিলার্ধকালও না জিরিয়ে। কেননা, এদের চরিত্রের শাখা-প্রশাখায়….

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

error: Content is protected !!