Author Picture

জব্বার আল নাঈমের একগুচ্ছ কবিতা

জব্বার আল নাঈম

দ্রুতগামী হও, নয়তো সরে দাঁড়াও
*
সুরের গোপন শব্দে যদি ঘুম ভেঙে যায়
আস্তাবলে দাঁড়িয়ে থাকে— নিঃসঙ্গ ঘোড়া।
আমার পছন্দ সেই ঘোড়া— যে দ্রুতগামী
সকল বাঁধা উপেক্ষা করে
হাজার বছর আগে…
একা দাঁড়িয়ে থাকে রক্তস্নাত মঞ্চে।

হে আমার গোপন প্রণয়
দ্রুতগামী হও, নয়তো সরে দাঁড়াও
দেখো দেখো—
কোটি বছরের পুরাতন সূর্য
কতটা দীপ্ততা-ক্ষিপ্রতা নিয়ে দিব্যি বেঁচে আছে!

 

সম্পাদক, পান্ডুলিপি করিও না সম্পাদন
*
ভুল পথ ছেড়ে দিলে তোমার কাছে যাওয়া হবে
শেষ হবে দীর্ঘ যাত্রার আয়ুরেখা
তোমার দক্ষিণ দরিয়ায় অজ্ঞাত কুশীলবের বাস
শেখাবে শৌখিন গণিত- নিয়ে যাবে বাণিজ্যের দরজায়
আমাকে বলবে বিশুদ্ধ কলেমা
যা হবে সাংঘর্ষিক উত্থান
অথচ আমি ভালোবাসি ভুল করা মানুষ
যেতে চাই শৈশবের কোলে
স্বরবর্ণের মাদকতায়
যেখানে ভোরের শিশিরে সমুদ্র নামে
জানো, উত্থান শব্দে মূলত পতনের নিখুত ডাক।
মোরগের ডাকে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষের ঘুম ভাঙে
অদল-বদল রাস্তায় যে নাবিক শূন্যতা কুড়ায়
পাল তোলে সহাস্যে
ডাক দেয়- কামে আয় কালো মানুষ
কোনোদিন সেই ডাক উপেক্ষা করতে পারিনি
হেঁটে গেছে যে পথে বেটে ভাই
প্রতিনিয়ত শুনেছি রক্তের তোরজোড়।
রোজ সকালে সূর্যের ক্ষত মোছে আলোর ধরাতাম
ক্লান্ত শ্রমিকের মতো দিনের শেষে যে হয়ে যেত চাঁদ
অনিন্দ্যে বিশ্রাম পেতে কাটিয়েছি হাজার রাত
তবু চাইনি ছুটে যেতে বিশুদ্ধ পথে
ব্যাকরণ মেনে যে হয়েছে বড়
সেই পথে নিঃশব্দের সুন্দর অনুপস্থিতি।
যে কৃষক হাটু ভেঙে গতর ঢেলে সম্পর্ক রক্ষা করেছে জমির
সেই ঘর থেকেই গঠন এ শরীর
সেই আমি কি করে হবো শহরের চাকর?
চিনতে চাইনি অজ্ঞাত মহলের চাবি
যদি মেলে ধরো জ্ঞানের তাপস
পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা সংলাপ
নান্দনিকতার কাছে এ বড় নস্যাৎ লহমা
সত্যি হাসবে বন্ধুরা
যে কারিগর কাঁচা হলুদ গায়ে মেখে বাসর সাজায়
তাকে যদি চেনাতে আসো পারফিউম
অবজ্ঞার সকল সুর এক করে বলবে, তিক্ততার স্বাদ।
আমি গায়ের ছেলে- জেনে এসেছি এটাই বিশুদ্ধ সংকলন
সম্পাদক, পান্ডুলিপি করিও না সম্পাদন।

 

হজ্বের পাথর
*
কৈশোরে দূরে ঢিল ছুড়ে মারার খ্যাতি ছিল আমার
অনায়াসে লক্ষ্য স্পর্শ করতে পারতাম
এমন খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে পাড়া-মহল্লায়
একদিন ডাক পড়ে পাড়ার ক্রিকেট দলে; গতিদানব হিসেবে
উইকেটের পতন ঘটিয়ে—
প্রতিপক্ষের বিজয় ছিনিয়ে আনতাম সহজে।
বাতাসের বাহনে সে খবর পৌঁছে যায়—
ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের কানে;

সুযোগ পেয়ে যাই আমেরিকা সিরিজে
গতির তোপে নতজানু বাইডেন একাদশ

চাকিংয়ের অভিযোগ তোলে ভারত
কিছুই না ভেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল আইসিসি!
এ খবরে বগল বাজায় পাকিস্তান
এতেও দুঃখ কিংবা অভিযোগ নেই আমার
সামনে হজ্বের মাস- মক্কা-মদিনা তাওয়াফে যাব।

ইচ্ছে হওয়ামাত্র হজ্বের পাথর দিয়ে বোলিং শুরু করি
একি! প্রথমটি লাগে সৌদির মসনদে
দ্বিতীয় পাথরে কুপোকাত হোয়াইট হাউস
তৃতীয় ডেলিভারিতে ধরাশায়ী ডাইনিং স্ট্রিট

চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ পাথর ছুঁড়তেই ধ্বসে পড়ে
নাফতালির বেইত রোশ হামেমশালা
মুহূর্তেই পাল্টে যায় পৃথিবীর প্রকৃতি
সহজে আত্মসমার্পন করে— সগীরা, ওস্তা, আকাবা
তাদের কাছে জানতে চাই—
এমন পরাজয়ের কারণ?
সহাস্যে বলে- শয়তান-এ আজমের মৃত্যু হলে
আমরা দাঁড়িয়ে থাকি কার হিম্মতে!

 

সাপের ছোবল চিতার খাবোল
*
প্রিয় মিঠুন’দা,
চে গুয়েভারার কথা মনে আছে আপনার? প্রেমের আগুন মুখস্ত করে ইনফানতে জিন্দাবাদ বলে হিলদা গাডিয়ারকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। কিউবার মঞ্চে বিপ্লব ও বিদ্রোহ উপহার দিয়ে অ্যালাইদার বাটনে রেখেছিলেন মুখ।

জানেন তো, বিপ্লবীর রক্তে গোখরারাজ বাস করে, আর ফণা তোলে সকল অন্যায়ে। স্টালিন-লেনিন বিপ্লবকে জীবিত রাখতে- আলপথ হেঁটে গেছেন বহুদুর, মাও সে তুং।
বাংলার নির্মল সেন
আপস মানেনি বদরুদ্দিন
কবরে বিপ্লব বিপ্লব করেন সিরাজ শিকদার।

যারা শ্রমের বিনিময়ে চেয়েছিল মানুষের অধিকার
শরীরের পরিবর্তে মুক্তি
আর জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতা

মাহমুদ আব্বাসকে দেখুন
এরদোয়ানকে
কীভাবে শত্রুর বুক লক্ষ্যভেদ করছেন
বিপ্লবী খামেনি
ম্যারাডোনা, যে প্রতিটি বল ছুঁড়ে মেরেছেন শোষকের মুখে

অথচ আপনি নকশাল ছেড়ে, বিপ্লবকে বলির পাঠা বানিয়ে
গেরুয়া ভারতবর্ষের আকাশে উড়াতে চান কোন পতাকা!
সেই পতাকার কি রং?
মিঠুন’দা, ভুলে গেছেন সেই বিপ্লবের কথা?
মানুষ চায় আপনি বিপ্লবের প্লেটে বসে ভাত খান
গর্জন দিয়ে আকাশ থেকে বৃষ্টি নামান
তেজোদীপ্ত সূর্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বলুন- এভাবে লড়াই করেই বিজয় ছিনিয়ে আনতে হয়।
কারণ, নষ্ট রক্তের দাগ কেটে কাশ্মীরের জমিনে স্বাধীনতার আওয়াজ তোলা যায় না!

আরো পড়তে পারেন

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১) মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার….

সোহরাব পাশা’র একগুচ্ছ কবিতা

নিদ্রিত ঘ্রাণের শব্দ দীর্ঘ যায় আশালতা ফিরে আসে বিষণ্ণ গোধূলি ফিরে আসে দুঃখিত সকাল, ক্ষয়ে যাওয়া এক দূরের উপনিবেশ পাখির চেয়ে মানুষের কোলাহল বেশি কোনো মৃত্যু মানুষকে অপরাধী করে না নিঃশ্বাসের রোদে আবছায়া নিদ্রিত মেঘ স্মৃতির অসুখ বাড়ে; দূরে নির্জন আধাঁরে জেগে ছিলো মানুষের কথা পুরনো সে বাড়ি সেই ছায়াপথ মায়াপথ জুড়ে কতো ভুল মানুষের….

error: Content is protected !!