Author Picture

অসীম বিভাকরের একগুচ্ছ কবিতা

অসীম বিভাকর

বিচ্ছেদ
.
একটা কাক মৃত পুকুরের শোকে
পিপাসা নিয়েই কাটিয়ে দেয় দিন।
বৃক্ষের কতিপয় পাতা
উদ্বাস্তু শিশুর মতো
ঝরে পড়ে নর্দমার জলে।

বিকেলের ছায়া ছুঁয়ে
কিছু লোক
হেঁটে চলে দুর্বোধ্য অভিধানের দিকে।
কাকের শোকার্ত মুখ
অথবা পুষ্টিহীন পাতার শরীর
কিছুই দেখে না তারা।

সামান্য জলের অভাবে
থেমে যায় বৃক্ষের হৃৎপিণ্ডের ধ্বনি।
অথচ মমতামাখা
এক আঁজলা জল পেলেই
প্রকাশ‍্যে কিংবা গোপনে
দেখতে হতো না আর
ভাঙা দুপুরের অশোভন নৃত্য।

 

অমীমাংসিত
.
অপেক্ষার অলিন্দে বসে
নতুন সুরের স্বাদে
বিটোফেন জিহ্বা ভেজায়।
খোলাহুড রিকশায়
জ‍্যাম ঠেলে যেতে যেতে
রোদে পুড়ে শরীর তামাটে হয়।
বিড়ালের মৃতদেহ কাঁধে
কেউ বা দাঁড়িয়ে থাকে।
তবুও হয় না জানা
আমার আঙ্গিনা ছুঁয়ে
সময়ের কঙ্কাল হাতে
কে যায় কে যায়!

 

হরিণশিশু নেচে চলে বুকের পাটাতনে
.
সকাল সন্ধ্যা যুদ্ধ করি
নিজের সাথে নিজে।
কখনো জল হেসে ওঠে
কখনো বা অসময়ে
অমাবস্যার শিশিরে যাই ভিজে।

চোখের সামনে দুলতে থাকা
পাতাই শুধু দেখি;
অন্তরালে পড়ে থাকা দেখি না তার শোক।
তন্দ্রাকাতর বিকেল বেয়ে আসে
বিষাদমাখা রক্তপায়ী জোঁক।

নাচের মুদ্রা থাকে কি আর ঠিক
ভুল যদি হয় তালের ব‍্যাকরণে?
বিবাগী মন যতোই বিরূপ হোক
তবু একটা হরিণশিশু
নিজ খেয়ালে নেচেই চলে
বুকের পাটাতনে।

 

বারান্দার পাটি দেখে জোসনার চাঁদ
.
বীজ নেই, শুধু খোসা ঝুলে আছে গাছের বোঁটায়;
বাতাসের ছোঁয়া লেগে দুলে ওঠে খোসার শরীর।
ফল ভেবে পাখিগুলো খুঁটে খায় পাথরের কণা;
বেলা শেষ হয়ে যায়, তবুও শূন্য থাকে পাখির উদর।

পথের দূরত্বরেখা বাসের হাতলে এঁকে
নেমে যায় সকল পথিক;
পথ থাকে পথের মতোই।
বৃক্ষের অকাল প্রয়াণে পথের কি নেই কোনো দায়?
নাকি তার জানা ছিলো মানুষেরই কোনো ভুলে
একদিন এমন হতো‌ই।

একটুকরো ভাঙা কাঁচ পড়ে থাকে পায়ের পাশেই;
চোখের চঞ্চলতা ঊর্ধমুখী মোহে।
বাঁশঝাড় হয়ে যায় জনহীন গৃহ;
বারান্দার পাটি তবু একা একা বসে দেখে
জোসনার ভরা চাঁদ।

 

ক্ষেতজুড়ে শুয়ে আছে বন্ধ‍্যা শকুন
.
একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শব্দের শরীর
কেটে দুভাগ করি কতো সহজেই;
তার জন্য বিন্দুমাত্র অনুতাপ জমে না মনে।
একদিন ঠিক ভুলে যাই
এখানে একটি শব্দকে খুন করা হয়েছিলো।

নিহত শব্দের স্থান
অবলীলায় দখল করে নেয়
কণ্টকময় বিষাক্ত উদ্ভিদ।
শৈশবময় মুখর সকালে
বৌছি খেলা স্বচ্ছ দীঘি
ক্রমে ক্রমে ডোবা হয়ে যায়।
কী এক পীড়নে
পথ শেষ না হতেই
হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে দুরন্ত খরগোশ।

একফোঁটা বৃষ্টির জন্ম দিতে গিয়ে
মেঘের যে প্রসবযন্ত্রণা
উদাসী পথিক মূল্য বোঝে না তার।

পাখা বন্ধ করে কেন ঝিমায় সারস
হন্তারক কি জানে তার মৌল কারণ?
অক্ষত আবরণ দেখে নির্ভার হেঁটে চলে যাই;
বহুদিন জানতে পারি না
ক্ষেতজুড়ে শুয়ে আছে বন্ধ‍্যা শকুন‌

আরো পড়তে পারেন

তরুন ইউসুফের একগুচ্ছ কবিতা

বহ্ন্যুৎসব কত কিছু পুড়ল! গাড়ি পুড়ল বাড়ি পুড়ল দম্ভের দালান পুড়ে ক্ষার জলপাই সবুজ ট্যাংক নামল পুড়ল বই গল্প রূপকথার বেলুন হাতে পুড়তে পুড়তে ফানুস হয়ে উড়ে গেল বালক মায়ের আঁচল পুড়ল পুড়ল বুকের কাছের লোক যুবকের বুক পোড়াতে পোড়াতে পুড়ে গেল বন্দুক, থানার সেপাই কারো কারো স্বপ্ন পুড়ল আমিও পোড়ার গন্ধ পাই- আমার পুড়ল….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

বাবা আপনার ব্যর্থ শরীর জানত নিরাময় উড়ে গেছে আসমানে, আপনার মৃত্যু হবে। শেষবেলায় আপনি বড় নিঃস্ব, ঈশ্বরের মত নিদারুন, একমাত্র একা। সেকারনেই আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে ভেন্টোলিন সিরাপ খেতেন, অ্যাসমা’র বড়ি গিলে সারা রাত কাঁশতেন। আপনার কফ গলানো কাঁশির শব্দে কোন কোন রাতে আমাদের কাঁচা ঘুম ছিঁড়ে যেত, আমরা বিরক্ত হতাম। তারপর, আপনার জবুথবু মুখের দিকে….

মাহমুদ দারবিশের ডায়েরি ‘নদী মরে যায় পিপাসায়’— (পর্ব: ২)

মেয়েটি আর তার চিৎকার সমুদ্রতীরের মেয়েটি, যার একটি পরিবার আছে আর সেই পরিবারটির একটি বাড়িও আছে। বাড়িটির মধ্যে দুটি জানালা আর একটি দরজা আছে। সমুদ্রে একটি যুদ্ধজাহাজ মজার ছলে তীরে হাটাহাটি করতে থাকা লোকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে: চার, পাঁচ, সাত জন বালির উপর পড়ে যায়। একটি অস্পষ্ট ঐশ্বরিক হাতের সাহায্যে মেয়েটি কিছুক্ষণের জন্য কোন প্রকারে….

error: Content is protected !!