Author Picture

মিন্টু রায় এর একগুচ্ছ কবিতা

মিন্টু রায়

অন্তরীন প্রত্যাশা

.

পৃথিবীতে জন্মনেয়া সকল অক্ষর গান হবে একদিন,

সমস্ত হৃদয় হবে স্রোতঃস্বীনি কোনও নদী।

নিমিষেই হেসে উঠবে ভালোবাসা জমানো অজস্র চোখেরা সব,

পৃথিবীর তাবৎ মৃতেরা মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে; ভয়হীন।

শুনিয়ে চলবে মৃত্যুদিনের মনমাতানো সব উপখ্যান!

প্রতিক্ষায় থাকা সারিবদ্ধ চোখ ডুবতে ডুবতে বেঁচে যাবে সেদিন।

 

বলি বলি করেও যে কথাকে কেড়ে নিয়েছিলো মরণ!

সে কথাও এ মুহূর্তে মন খুলে হেসে উঠবে।

হয়তো আমিই তখন গান হয়ে যাবো;

আমিই পৌঁছাবো হৃদয়ের প্রতিটি সত্ত্বায়!

হয়তো আমিই সেদিন নদী হয়ে বইতে থাকবো

স্রোতের অবাধ্য তাড়নায় ভেঙে চলবো কিনার সকল।

হয়তোবা আমিই সাঁতরে কাটাবো অথৈ রাত্রি,

কেবল, প্রিয়তমার মুখখানি একঝলক দেখে নেয়ার প্রত্যাশায়।

 

 

অসহায় ঠোঁট

.

আহত চুম্বনের পাশেই পড়েছিল আমার অসহায় ঠোঁট,

অনায়াসে চুরমার হচ্ছিলো আয়ূরেখার সকল আশ্রয়।

 

আগুনের প্রার্থনাকে জানা ছিল না আমার,

দেবতাকে বশে রাখা মন্ত্রও শিখি নি আমি!

শুধু ঝোড়ো হাওয়ার মতো ব্যাকুল ছিল এ ঠোঁট,

সেই অপরাধে জব্দ করা হচ্ছিলো-

আমার হৃদয়ের স্থাবর-অস্থাবর; সব।

ভালোবাসার আকুতি, ভালোলাগা দৃষ্টি;

কাছে চাওয়া যন্ত্রণা; অনুভবের স্পর্শ,

কাছে পাওয়ার প্রতিজ্ঞা; হাসি-কান্না, মোহ, মায়া;

নিমিষেই সব কিছু কেড়ে নেয়া হচ্ছিলো।

 

ঘুমের আড়ালে জেগে থাকে জাতিস্মর স্বপ্ন,

তাই, চিবুক ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা ছিল বিধাতার কাছে-

একদিন মানুষ হবোই; আর শাশ^ত প্রেমের গল্প হয়ে

প্রবল চুম্বনে ভরে দিব- প্রেয়সীর আকুলতা ভরা ঠোঁট।

 

 

ইচ্ছের মৃত্যু

.

ইচ্ছেরা সারাক্ষণ পা ফেলে স্বপ্ন খুঁজে খুঁজে,

পাশে রেখে মৃত্যুমুখী আধো চাওয়া চোখ।

প্রণয়ের গল্প মিথ্যে হলে কান্না কান্নাকে জড়িয়ে ধরে,

শ্বাস-প্রশ্বস জুড়ে তখন স্বর্গের সিঁড়িটা ওঠে নামে।

 

ঝরা ফুল খুঁজে চলে এই পৃথিবীর কঠিন চিবুক,

ক্ষতের ভিন্নতায় কখনো সান্তনাকে বদলে নিতে হয়।

তখন বলতে সাধ হয়, ইচ্ছে তুই

কেনরে আজ হাত পাকিয়ে জোছনা ধরিস!

অকাল মৃত্যুকে তোর কত ভালো লাগে আর?

 

 

ছুটোছুটি

.

এই ঢেউ একটু আগেও এখানে ছিল না,

যেটা আছে সেটাও অন্যত্র ছুটে যাবে অন্যমোহে।

এমন করেই হাত খরচে হাত বদলায় সময়ের পাঁজর,

তবু পৃথিবীকে বুকে ধরে হাসতে চায় মানুষেরা!

 

সুখ পেতে খুঁজে চলে তিলক-চিহ্ন কপাল,

হয়তো অন্য কারো মুখপানে চেয়ে সে-ও

অলখ্যে মুছে নিয়েছে সময়ের যতিচিহ্ন;

মায়াবী সে ঠোঁটে তার বর্ষার স্রোত থৈথৈ,

হয়তো নির্দয় উত্তাপে তা-ও শুকাবে একদিন।

চোখে জমবে বসন্ত ঘ্রাণ অন্যকোনো ঠোঁটের নেশায়,

 

অন্য কারো স্পর্শ আশায় হয়তো জেগে রবে প্রাণ।

হয়তো কেউ ছুটে চলেছে অন্য কোনো খানে-

অন্য গ্রহের অন্য কারো নিবিড়তার টানে।

আসলে পৃথিবীতে কোনো বন্ধনই কি চিরস্থায়ী হয়?

 

 

উদাস হৃদয়

.

তোমার চোখে দারুন সময় তোমার চোখে ভোর,

আমার চাওয়ায় মোহ নেশার উদ্ধত অক্ষর।

দক্ষিণ হাওয়ায় সাজিয়ে দিলে হৃদয় ভাঙ্রা গান,

আমি তখন দুহাত তুলে চাইছি পরিত্রাণ।

আঁধারটুকু যখন তুমি আপন করে নিলে,

স্বপ্ন ছুঁয়ে মান ভাঙালে আপন আলো জে¦লে।

আজকে আমি সহজভাবে হাতটি ছুঁয়ে থাকি,

আপন ভেবে তোমার বুকে উদাস হৃদয় রাখি।

জড়িয়ে থেকো এমন করে জনম জনম কাল,

তোমায় দেখে ফাগুন ছুঁবে কৃষ্ণচূড়ার ডাল।

 

 

ভালোবাসার অন্ধকুপ

.

আমাদের ভালোবাসার অন্ধত্বকে মৃত্যুদ্ব- দেয়া হবে,

খোলস জুড়ে সেঁটে দেয়া হবে হাজার প্রজাপতির মৃত্যুঘ্রাণ।

অনায়াসে রংশূন্য করা হবে পৃথিবীর সব নীরব নকশা,

রং বদলের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাঁচতে চাওয়া-

এই চোখকে দেয়া হবে শত জনমের আঁধার বাস।

 

হয়তো পৃথিবীর তখন অন্যরকম এক আকাশ হবে,

হয়তোবা অন্যরকম এক বাসর ঘরে-

নির্ঘুম রাত কাটাবে পুরানো কোনো পরিচ্ছন্ন দেবী!

হয়তো অন্য কোনো চোখকে প্রদক্ষিণ করে-

হেসে উঠবে অন্য কোনো মোহনিয়া আবেশ।

 

রাজহংস নেশায় আমি তখনো হয়তো-

আলো-আঁধারকে বিভেদ করার মোহে ডুবিয়ে চলবো ঠোঁট;

রূপালি চাঁদের বিচ্ছুরিত জোছনাধারা বেয়ে নেমে আসবে-

মৃত কোনো সন্যাসিনীর কান্নার মোহমুগ্ধ সুর!

হয়তোবা চোখে চোখ রেখে অন্ধ হবার

সুখ বর্জিত মানুষ হবো সেদিন-‘শুধুমাত্র ভালোবাসার অপরাধে’।

 

 

দীর্ঘশ্বাসের পরম্পরা

.

চোখের মুখোমুখি চোখ;

ছায়ার বিপরীতে ছায়ার প্রতিবিম্ব,

অন্ধকার ঘেঁটে দেখেছি…

নিঃশ্বাসটুকু একদিন আমারই ছিল।

 

প্রণয়াবদ্ধ কালকেউটে-

আজো এখানে ফনা তোলে-বিষাক্ত চুম্বনে।

অধরা ঠোঁট ফিকে হয় আষাঢ়ী চাঁদকে ছুঁয়ে,

আজো নিঃশব্দে মিলতে থাকি অচেনা মায়ায়।

 

আমারই পূর্বসুরী- সেও সয়েছিল হৃদয় দহন,

এই গ্রহ জন্ম থেকেই ঘুরছে।

উত্তপ্ত হৃদয়ে অতৃপ্ত ক্ষুধা লয়েই বেঁচে আছে,

যেমন করে বেঁচে থাকে আমাদের দীর্ঘশ্বাসের পরম্পরা।

 

 

পৃথিবী বয়সী ক্ষুধা

.

যতটা লুকিয়ে তুমি কবিতা লিখো,

যতটা আপন করে চিনেছিলে এই চোখ!

বুনো সুখে পৃথিবীর সাথে যতবার তোমার ইচ্ছেটা বদলাও;

ততবার এই শহরের সব নিয়ন আলো ফেলে-

আমি পেলব হাতে ছুঁতে থাকি ওই চাঁদ।

 

ক্ষয়িষ্ণু এ হৃদয়কে ঘিরে-

আজও পাড় ভাঙার গান সাজায় আদিম অক্ষরের যত অশান্ত ঢেউ,

ঝলমলে মিছিলে হারানো আলোর নেশায়

চোরাসুখ চুমুখায় অকালে- বহুকাল জমে থাকা আকাল চোখে।

 

কে কাকে এড়িয়ে চলতে চায়!

মিথ্যা এমন আয়োজনের কিইবা প্রয়োজন আর?

দুজনেই দুজনকে তো ভীষণ চিনি-

আমি যেমন মৃত্যুকে ; আর মৃত্যুওতো আমাকে!

জমা-খরচের খাতায় আনমনা পড়ে আছে

বহুজনমের একঝাঁক দুর্দান্ত মৃত্যু!

তারপরও পৃথিবীর বয়সের মতো

হৃদয় লয়ে থাকি নেশা ভরা চোখে;

শুধু একটিবার তোমার চোখে চোখ রেখে হেসে উঠবো বলে।

আরো পড়তে পারেন

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

বীভৎস খেলা নগরে বাতাসে মথিত জনস্রোতের কোলাহলে শুনতে পেয়েছি সারিগান গঞ্জের হাটে আকাঙ্খার গভীরে মন্দ্রিত অভিন্ন প্রাণ নীরব দর্শক ছিলাম ব্যর্থতার করুণ গান ফেরার মহড়ায় বঞ্চিত কুঁড়েঘরে সরাইখানার- শুঁড়িখানার মাছিরাও নেশায় বুদ্বুদ প্রকম্পিত কান্নার পর একদিন হাসির তিলকরেখা বিচ্ছুরিত শৈশবের ক্ষুধার্ত চিৎকার ক্রর হাসি চেপে মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলে ভাগ্য প্রহসনে যুদ্ধের ব্যগ্র দামামা থেমে গেলো-….

তোফায়েল তফাজ্জলের একগুচ্ছ কবিতা

উপায় অবলম্বন কাঁটা থেকে,  সুচালো কাঁকর থেকে পা রাখিও দূরে, জায়গা না পাক চলন-বাঁকা চেতনায় উড়ে এসে বসতে জুড়ে; এসবে খরগোশ কানে থাকবে রাতে, পড়ন্ত বেলায়, দ্বিপ্রহরে, পূর্বাহ্নে বা কাক ডাকা ভোরে। দুর্গন্ধ ছড়ানো  মুখ ও পায়ের তৎপরতা থেকে গ্রীষ্ম থেকে সমস্ত ঋতুতে একে একে নেবে মুখটা ফিরিয়ে তিলার্ধকালও না জিরিয়ে। কেননা, এদের চরিত্রের শাখা-প্রশাখায়….

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

error: Content is protected !!