
অন্ধকার ১১১—ক্লান্তি
.
ক্লান্তি এক গাছ; আমার ভিতরে স্থির ও অস্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে
পাতায় বিমুগ্ধ আমি সংগোপন গুহার মতন;
ওদের ঝরবার আগের ধৈর্য আমার ভাল লাগে; আমার তা নেই;
ধৈর্য কিম্বা অধৈর্য কোনো কিছু নেই এ-আমার, এক ডিসইউনিটি আর ক্লান্তি ছাড়া;
অন্তরীন ডিজইউনিটির মধ্য থেকে ক্লান্ত চোখ বের করে—এক সময়ে
সব ক্লান্তি চোখে এসে জমে— ডালে মুগ্ধ হয়ে আমি,
উপরে তাকাই, তারপর আরো উপরে
তারপর অনেক অনেক উপরে; উপরের উপরে আমি তাকিয়েই থাকি
ঘাড় ব্যথা করে; চোখ আরো ক্লান্ত হয়; তবু ফিরতে পারিনা;
ক্লান্ত পায়ে, আরো ক্লান্ত মনে, চলে যাই অন্য কোথাও;
গাছের উচ্চতা আমি দেখতে পাই, সে উচ্চতা ফিজিকাল নয়;
গাছ তার শীর্ষ ছাড়িয়ে অনেক উপরের এক অপার্থিব ক্লান্তিতে
চলে গেছে, আমি কেঁপে উঠি,
যে কোনো মুগ্ধতার মধ্যে কেঁপে ওঠা থাকে; ক্লান্তি থাকে;
গাঢ় ঐক্য আর গভীর অনৈক্য আমি টের পাই জেগে আছে সব মুগ্ধতায়,
আর আমার ভিতরে; গাছের সংগোপন
গুহার ভিতরে নেমে যেতে ইচ্ছা করে; ভোর থেকে ঘুম পায় রাত্রির সন্ত্রাসে;
প্রতিটি গাছের চারপাশে ঘূর্ণনে ক্লান্ত অদ্ভুৎ সূর্য ঘুরছে রাতদিন;
ক্লান্তির বিবিধ সূর্য আছে পৃথিবীর ভিতরে বাইরে
সারাদিন সারারাত ঘুরছে ওরা বিবিধ উদ্ভিদের চারদিকে;
ক্লান্ত সূর্য ঘুরছে ক্লান্ত গাছের চারদিকে; ক্লান্ত মানুষ তা দেখে, আর ভাবে
প্রতিটি গাছ একটি গ্যলাক্সি, তাই তার উচ্চতা ফিজিকাল,
কিম্বা নন-ফিজিকাল নয়
গাছের ক্লান্তি কিম্বা বেদনা দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ, কিম্বা যে কোনো বাদানুবাদের
বেদনার অনেক বাইরের ঘূর্ণমান স্থায়ী ক্লান্তি, মানুষের যুক্তির বাইরে;
বাতাসের শব্দের মত শব্দহীন হয়ে যাই আমি
ঘুম পায়, ব্ল্যাকহোলের মত সারাদিন ঘুম পেতে থাকে, তুমি জেনো
২৯/১০/২২
অন্ধকার ১১০—মিসপ্লেসড
.
ভোর থেকে মিসপ্লেসড, অর্ধ রাগান্বিত কাক, মনোবেদনায়, ডেকে যাচ্ছিল
একটু দূরে বসে নগরের ডাহুক ডাকছিল গ্রামের বিষন্ন নাড়িকেল গাছের মত
টেম্পারেচার কমে গিয়েছিল, কিন্তু এখন আবার বাড়ছে
শীতের পাতাল প্রগাঢ়তা এ শহরে কবে যে আসবে…
তার আগে আমি অন্য শহরে চলে যাব
কিন্তু আমার জীবনে আমি যা দেখছি তা হল,
একেবারে চলে যাওয়া যায়না কোথাও
চলে যাওয়া ফিরে আসা—এসবের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই;
যেদিকেই যাও না কেন, কিছু না কিছু তোমার পিছনে থাকবে,
আর কিছু না কিছু থাকবে সামনে
এই মিসপ্লেসড সরল রেখার মত বৃত্তের হাত থেকে মুক্তি নেই,
যখন নিজের ভিতরে তুমি বিপর্যস্ত শীতকাল আজীবন বহন করছ;
কি হয় এসব লিখে? অথবা না লিখে? অর্ধ রাগান্বিত বলে কাক যে ব্যথিত
তুমি কি তা দেখো— বহু জীবনে মিসপ্লেসড হবার পরাজয় তার কণ্ঠ থেকে
বের হয়ে আমার অস্তিত্বে এসে ঢুকছে ক্রমান্বয়ে; জীবন ও মৃত্যুর বাইরে
চলে যেতে ইচ্ছা করছে খুব, তার ও আমার;
যা অসম্ভব পাওয়া, মন পেতে চাইছে তা;
অর্থাৎ এইসব পাওয়া সম্ভব ছিল কোনো দিন; এখন আর নেই;
কোনো জ্ঞান হারিয়ে গিয়েছে; সমস্ত বেদনা, কাক, ডাহুক,
ওই হারিয়ে ফেলার পর্যায়ক্রমিক ফলাফল; মিসপ্লেসড হয়ে গেছি,
আমিও এর ফলে
মিসপ্লেসড মানুষেরা পৃথিবীতে হাঁটছে দল বেঁধে; হাসছে, সঙ্গম করছে
একা হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে দালালনের ভিতরে ঢুকে দরদালানের অনন্তে
সিএনজি থেকে নেমে, নিজের অজান্তে পা ব্যবহার করে বন্ধ করছে
সিএনজি’র দরজা, তার এই পায়ের ব্যবহার প্রায় এক লাথি হয়ে
লাগছে বৃদ্ধ চালকের মনে; কিছুক্ষণ বসে থেকে, নিজেকে মিসপ্লেসড ভেবে
চলে যাচ্ছে রৌদ্রালোকিত এক পাতালের দিকে; বহু পাখি মিস-প্লেসড
হয়ে বসে আছে ডালে ডালে, আমার মায়ের শূন্য, মাছের মতন চোখ,
গভীর বার্ণিং-এ আপাত ভাবলেশহীন, বসে আছে পাখিদের সাথে;
অনেক পাখির দিকে তাকিয়ে আমি দেখতে পাচ্ছি আমার মায়ের
গাঢ় বেদনার ডায়াবেটিসে পুড়ে যাওয়া, মিসপ্লেসড মুখ
কেন যেন অর্ধ নির্মিত আর মিসপ্লেসড হয়ে গেছি
আজ আমরা অনেকেই, সকলেই
কাল হয়ত অন্য অন্য কিছু হব; কিন্তু আজ, কোনো বোধ নয়,
বরং এক বোধগম্যহীনতা, এক নিরর্থক বক্ষ-চাপ,
আমি বহন করব সারাদিন
২৮/১০/২০২২
অন্ধকার ১০৯—জোকার
.
ঝড়ে গাছ যেভাবে দুমড়ে মুচড়ে দাঁড়িয়ে থাকে হৃদয়ের আকাঙ্খায়,
জোকার সেইভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে তোমার মনের প্রতি ঝুঁকে
জোকার পারেনা তবু তোমার নিকটে পৌঁছাতে, অবিরাম হামাগুড়ি দেয়;
আটলান্টিক পার হয়; মাটির অনেক নিচে আরেক নক্ষত্রে পৌঁছায়;
তার কাছে যেতে আমি পারি না কখনো; মাঝে মাঝে
তাকে দেখি দূর থেকে অন্যের সহিত; সকলের সাথে তাকে সুন্দর মানায়
তবু যেন মানায় না এক অব্যখ্যাতভাবে
জেগে থেকে যেখানে পৌঁছাতে পারেনা, সেখানে জোকার পৌঁছাতে চায় স্বপ্নে;
কিন্তু তার সকল স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন, ট্রপিজের খেলায় পড়ে যেতে থাকা,
তার স্বপ্নে সাপ আসে, তুমি কখনো আসোনা;
ভয়ে আমি চিৎকার করে জেগে উঠে, নিজেকে অধিক নগ্ন দেখি;
সারদিন, অন্ধকারে, তোমার অবয়ব শত শত পিন,
জোকারের দুচোখে ঢুকতে থাকে
অদ্ভুত স্বপ্নের মধ্যে কাঁচের সহস্র সাপ, হাত;
তোমার নিকটে যাওয়া স্বপ্নেও হয়না
জোকারের বেদনাকে টের পাই; সার্কাসে যে জোকার, হাসে ও হাসায়
ব্যাক্তিগত জীবনে সে কে? গভীর বিমর্ষতা সে, বৃষ্টির মত দুইপা
মেলে দিয়ে, সার্কাসের তাবুর ক্ষুদ্র ঘরে বসে, হয়তবা কাঁদে কিম্বা হাসে;
কিম্বা কিছুই করেনা; নিস্তব্ধতা কাকে বলে, জোকারকে, জোকারের পোষাকহীন
অবস্থায় দেখে বোঝা যায়; নিজেকে সমস্ত দিন হাস্যকর লাগে
মনে মনে নিজের সামনে একটা আয়না টানিয়ে, ঐ আয়নায়
সারাদিন নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে বা না তাকিয়ে,
মনে মনে সারাদিন হাহা করে হাসি কিম্বা কাঁদি,
আমাকে দেখে তা কেউ বুঝতে পারেনা
মাঝে মাঝে দুএকটি অদ্ভুত শব্দ কিম্বা সাড়া,
আমার অস্তিত্ব থেকে নির্গত হয়
অদিনের বৃষ্টিপাতে গাছগুলি কাঁপছে এখন, কি অদ্ভুৎ রূপ তবু তার;
হাতগুলো এক স্থির নাচের ভঙ্গিমায় উপরে উঠেছে
ডাল দিয়ে তৈরি করা রূপের নিপুন জাল ক্রমান্বয়ে ভেসে উঠছে অসীমের দিকে
ওরা যেন ছায়া পথে চলাচল করতে থাকা মহাকাশ-যান
চল ঐ যানে উঠে চলে যাই এ গ্যালাক্সি ছেড়ে, অন্তত একবার বলি
মনের সম্পূর্ণ কথা অদিনের বৃষ্টিপাতে কাঁপতে থাকা প্রকৃতির মত
জোকারেরও মন আছে, আজ আর অস্বীকার কর না সে কথা
২৪/১০/২০২২
অন্ধকার ১০৮—আরেক পৃথিবী
.
পৃথিবীর সংগোপন গুহা মানুষের চিন্তার চেয়ে বহু বেশি দীর্ঘ ও গভীর;
গুহাগুলি নেমে যায় ঝাপ্সা সূর্যের আরেক পৃথিবীতে ক্রমান্বয়ে,
যার রূপ উপরের, পৃষ্ঠার মানুষ, দেখে নাই, শোনে নাই, ভাববার
চেষ্টা করে নাই; পৃষ্ঠায় থেকে গেছে সহস্র বছর, ভিতরে নামেনি;
রক্তের তৃষ্ণায় বেঁচে থেকে
সবুজ মাঠের মধ্যে, গোপালি ফুলের পাশে, মানুষের রক্ত ঝড়িয়ে,
সব কিছু লাল করে, নিজের দৃষ্টিকে লাল ও অন্ধকার করে,
সংগোপন গুহামুখ থেকে আরো দূরে সরে গেছে; যাচ্ছে আজো;
মানুষের অন্ধকার বেদনার উৎস হল ক্রমান্বয়ে গুহামুখ থেকে
এইভাবে দূরে যেতে থাকা
পথ-বিহীনতায় ভুগছে মানুষ; যেভাবে আক্রোশে ড্রিল করে পৃথিবীর
কেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করছে, সেটা পথ নয়, বরং ল্যাবিরিন্থ পথবিহীনতা;
পথের সম্যক অর্থ কেন যেন জানা হয় নাই,
বোমার সকল সূত্র জেনেছে মানুষ, কিন্তু পথের বিনয় জানে নাই;
গভীর শীতের দিকে যেতে হবে পথ খুঁজে পেতে হলে; বরফ পেরিয়ে,
বরফের কেন্দ্রের সেই গুহা মুখে, আরেক সবুজের দেখা পেতে হবে;
গুহার ভিতরে যাওয়ার অনুমতি নিতে হবে মনের ভিতরে নেমে গিয়ে;
মানুষ তা পারবেনা; তার আগে ধ্বংস হয়ে যাবে,
কিম্বা পারবে, বহু পরে, ধ্বংসের পরে;
অদৃশ্য পর্দার পরতের আড়ালে তুমি আছ, এতো কাছে,
হাত বাড়ালেই ধরা যায়
অথচ তোমাকে আমি দেখছি না, সময়ের পরতের ওই পাশে স্থিরভাবে
দাঁড়িয়ে রয়েছ; সময়ের লেয়ারকে ভাঙতে পারছিনা;আমার হাত
তোমার উপস্থিতি টের পায়, কিন্তু স্পর্শ করতে পারেনা;
ভূমি-পৃষ্ঠা আরেক লেয়ার, তার বহু নিচে গভীর বাগান; তুমি
ওই গভীর বাগানে আর সময়ের লেয়ারের ঐপাশে একসাথে আছ
আমার অনাত্মা টের পাচ্ছে, কিন্তু আমার শরীর তোমাকে দেখছেনা
লেয়ার বাই লেয়ার পার হয়ে তোমার নিকটে পৌঁছাব, সে সক্ষমতা নেই;
তাই বরফের দেশে আমি যাবো, হাঁটব বরফের ভিতর দিয়ে একা একা
পরিপূর্ণভাবে পাতাহীন হয়ে যাওয়া উলঙ্গ শাদা অরণ্যের দিকে তাকিয়ে,
নিজেও উলঙ্গ হয়ে, দাঁড়িয়ে থাকব অনেক বছর
আমার অন্ধকার উন্মত্ততার ভিতরে আমি ধীরে ধীরে আরো নগ্ন হব
দেখব, বাতাসে মৃত্যু হয়, অথচ হয়না, আরেক পৃথিবীতে
যত দিন যাবে আমার কথার স্পষ্টতা ভেসে যাবে আরেক বাতাসে
২২/১০/২০২২
অন্ধকার ১০৭—শহর
.
বিপর্যয়ে মনোরম শীতকাল, আমার এ অস্তিত্বের নরম নিভিয়া,
তোমার ধোঁয়ার ভিতর দিয়ে যেতে যেতে, একজন নাগরিক বটগাছ
দেখলাম, নিঃসঙ্গ, নীরব, ফুটপাতের উপর অদ্ভুদ করুণায়,
একা দাঁড়িয়ে রয়েছে;
যত সে উদ্ভিদ, তত নাগরিক নয়; তার পাতায়
সিমেন্ট ভেদ করে যাওয়া শিকড়ের বেদনা; ধুলা জমতে
আরম্ভ করেছে, ধ্বস্ত পিরামিডে, তারহীন বিদ্যুতের ভিতরে,
সব নিচু হচ্ছে; সিমেন্টের বহু নীচে মহা এক শীতকাল
হামাগুড়ি দিচ্ছিল; বটের শিকড় তাকে স্পর্শ করছে;
মানুষকে মনে পড়ল
একজন টিনএজ ফেরিওয়ালা বটের নিচে একা বসে ছিল,
কোনো দিকে না তাকিয়ে, কোন সুদূরের দিকে চোখ মেলে,
বসে ছিল বালক ফেরিওয়ালা;
এইভাবে না তাকিয়ে, তাকিয়ে থাকাই তার স্কুল ও পিতা-মাতা;
এ শহরে,কোথায় পিতা বা মাতা? এ শহরে পিতা মাতা
কজনের আছে, কে তা জানে;
পিতৃ-মাতৃ হীন টিনএজ ফেরিওয়ালা বসে আছে ফুটপাতে, এটাই কমন;
আর তার উপরে সিমেন্টে দাঁড়িয়ে থাকা বট, ডাল মেলে আছে,
এই তো এ শহর;
কবিদের ভ্রান্ত প্রতিযোগীতার সাথে এর কোনো সম্পর্কই নেই;
জীবন আড়ালে আবডালে এক বালক ফেরিওয়ালা;
ফুটপাতে বসে থাকতে থাকতে,
একসময়ে যে তার ছেঁড়া জুতা টেনে নিয়ে তার উপরে বসে
কোনো কাস্টমার নেই—সে তাকিয়ে আছে—
অপেক্ষাবিহীন চোখ বহুদিন খুলে রেখে ঘুম পাচ্ছে তার
মৃত লোকের গান, গাছ থেকে ভেসে আসে; মনে হয় ছায়া হয়ে
ওরা সব ছেলেটির মাথার উপরে শত হাত মেলে আছে; আমি শ্বাস নেই;
কে যেন আঘাত করে ছেলেটিকে হেঁটে যেতে যেতে, সে আরো একটু
দেয়ালের দিকে সরে যায়; মানুষ যে মানুষকে আঘাত করে, জানি,
তবু ওই আঘাত, আঘাতই এ শহর, আঘাতের মত এসে
ধাক্কা দিল আমার অস্তিত্বে
আঘাতের কথা জানা ছিল তবু আঘাত লাগছে ঠিক আঘাতের মত
আমি ভাবি আমি মৃত। কিন্তু আমি মৃত নই; নাগরিক বটগাছ কষ্টে বেড়ে উঠছে;
গরু আর বৃহৎ পাতার মধ্যে মিল খুঁজে পাই; বাছুরটা বসে আছে, হাম্বাবিহীন
শ্বাস নেয় ঐখানে একা বসে। জানতে চাওয়ার ইচ্ছাই বা না-ইচ্ছাই তার শ্বাস;
আঘাতের কথা জানতে চাওয়াই হাম্বাহীন শ্বাস; এ শহর
যে আঘাতে মরে গেছে, তাকে জানতেই তার নিশ্বাস চলছে
২১/১০/২০২২
অন্ধকার ১০৬
.
রৌদ্রের উজ্জ্বল টাইলস পেরিয়ে গেল গোল্ডেন ঈগল, ডানাহীন আমার ঝিমুনির
মধ্য দিয়ে; কেন আমি ভোর থেকে ঝিমাচ্ছি কে জানে; কাল রাতে
ভালো ঘুম হয়েছিল মনে পড়ে; স্বপ্নে বহু মৃত লোক এসেছিল; বসেছিল
বিছানার কিনারায় স্নেহ বশে; আগেও দেখছি আমি, মৃত লোকদের পক্ষাপাতিত্ব
এ আমার প্রতি বেশ গাঢ়; আমি ওদেরই লোক, ওরা তাই ভাবে; ফলে আমি
মৃত লোকদের চিন্তা স্পষ্ট শুনতে পাই—রাতে উদ্দীপক, ভীতিকর স্বপ্ন দেখি
আর সারাদিন নিরবচ্ছিন্ন ঝিমাই;
আমার ভিতর দিয়ে প্রতি ক্ষণে কোটি কোটি গোল্ডেন ঈগল উড়ে যায়
আমাকে চাওনা তুমি আমি সেটা জানি; তোমার সমস্ত কথা অর্ধ সত্য, এক ‘প্রায়’;
দীর্ঘসূত্রীতার চেয়েও বহু বেশি বেদনার মুখ এই ‘প্রায়’; সকালে বেতন বাড়ে
সন্ধ্যায় কমে; মাঝরাতে ঋণ এসে ঘিরে ফেলে জালের মতন; পুকুরের উপরে
বৃষ্ট হয়, ভিতরে পৌঁছায় কিনা ভাবি; ভোরে উঠে টের পাই নিঃশ্বাস এখনো চলছে
অলীক মাছের মত ভিন্ন হয়ে বৃষ্টিগুলো শুয়ে আছে পুকুরের অসীম তলায়
বৃষ্টিকে বুকে নিয়ে বসে আছে বেদনার গোল্ডেন ঈগল, ছায়া হয়ে উড়ছে চিন্তা;
চিন্তার শরীর নেই, তবু তার ছায়া আছে, দেখে খুব ভয়াবহ লাগছে,
গোল্ডেন ঈগল পুকুরের নিচে বসে আছে, তার ছায়া বের হয়ে উড়ছে আমার
ক্লান্ত জানালার পাশে পাশে
আমার শরীর, টের পাছি, ক্লান্ত গোল্ডেন ঈগল, কবে ডানা মেলেছিল, মনে নেই;
গোল্ডেন ঈগল ঘুরছে আমাকে ও দালানকে ঘিরে, শান্ত কিন্তু বিপর্যস্ত স্বপ্নের মত
আমার ভিতরে কিম্বা উঁচু উঁচু দালানের কক্ষে তার সন্তান হারিয়ে গেছে ঘুমে
১৭/১০/২০২২