
ষোলো
আমাদের বালক ও তার বন্ধুরা কোথা থেকে ইবনে খালদুন বা তার মতো অন্যদের রচনা পাবে! কেননা তাদের হাতে তো কেবল ওই, ‘জাদুর কিতাব, ‘সালেহীনদের গুণাবলি’ ও ‘উলি-আউলিয়াদের কারামত’ সংক্রান্ত বইপুস্তকই আসে। তারা তা পড়ে এবং একইরকম প্রভাবিত হয়। সুতরাং অনতিকালমধ্যে ওসবের পাঠ সমাপ্ত করে, একইরকম বিস্ময়ে ওসবের অনুসন্ধানে লিপ্ত হয়। ফলে শীঘ্রই সুফিবাদের অনুসরণ এবং সবধরনের জাদুবিদ্যাই তাদের হস্তগত হতে শুরু করে
এরমধ্যে খুব বেশি দিন অতিক্রম হয়নি। আমাদের বালক যেসব জ্ঞানার্জন করেছে, সেসবের বাইরে নতুন এক বিদ্যা অর্জন হয়েছিল তার। তা ছিল জাদুবিদ্যা। এদিকে পুস্তক বিক্রেতারাও গ্রাম, শহর ঘুরেঘুরে তাদের ঝোলাতে রাখা মোটা মোটা বই বিক্রি করত; যেগুলো সম্ভবত গ্রামীণ জনপদের মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়াদির ওপর রচিত ছিল। কেননা যে-সব বই সাধারণত তারা থলেতে করে নিয়ে আসত, ওগুলো ছিল : ‘সালেহীনদের গুণাবলি’ ‘বিভিন্ন যুদ্ধ বিগ্রহের গল্প’ ‘ইদুর বেড়ালের কেসসা’ ‘তার ও ইঞ্জিনের কথোপকথন’ এবং ‘জাদু শেখার বড় সূর্য।’ এছাড়াও এজাতীয় আরো বিবিধ বইয়ের সমাহার থাকত তাদের ঝোলায়; যেগুলোর নাম এখন ঠিকঠাক মনে করতে পারছি না। তবে হ্যাঁ এই একটির কথা মনে পড়েছে, যেটার নাম বোধকরি ‘দিয়ারবি’ ছিল। তাদের কাছে আরও পাওয়া যেত, ‘নবী জন্মের গল্প’, ‘সূফি কবিতা সমগ্র’, ‘ওয়াজ নসিহতের কথামালা’ এবং ‘বক্তৃতা ও আশ্চর্য বিষয়ের নানাবিধ তথ্যসমগ্র।’ এরপর আবার ওই, হিলালি ও জিনাতি বীরদের গল্পগাথা। আনতারা, জহির বাইবার্স ও সাইফ ইবনে জায়-ইয়াযানের বিজয় কাহিনি এবং এসবের সাথে পবিত্র কোরানুল কারিমও থাকত তাদের কাছে।
লোকেরা এইসব কিতাবাদি দেদারসে খরিদ করত এবং যা কিছু লেখা আছে এতে, সবকিছু গ্রোগাসে গিলত। ফলে তাদের চিন্তার জগতও পাঠকৃত পুস্তকাদির ওই সারাংশ দিয়েই গঠিত হয়েছিল। ঠিক যেমন, তারা যা খায় ও পান করে তাই তাদের দেহ শোষণ করে এবং তেমনই গঠিত হয়। আমাদের বন্ধুটি এসবের প্রায় সবকিছুই পাঠ করেছিল এবং মুখস্থ করেছিল। কিন্তু দুটি বিষয়ের উপর বিশেষত তার মনোযোগ নিবদ্ধ হয়েছিল। আর তাই তাকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। তা ছিল : জাদুবিদ্যা ও আধ্যাত্মিকতা। অবশ্য এই দুই প্রকারের শিক্ষার মাঝে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কিছুই ছিল না, এমনকি না ওগুলো কোনো কঠিন বা আশ্চর্য ছিল। কিন্তু যখনই এই দুইয়ের বৈপরীত্য প্রকাশ পায়; দেখা যায় বস্তুত একই ভূতল থেকে আগত ওগুলো। কেননা সূফী কি এ বিষয়ে নিজেকে ও লোকদের দৃঢ়ভাবে আশ্বস্ত করে না যে, তিনি গূঢ় বিষয়সমূহের পর্দা উন্মোচন করতে পারেন! অতীতে কি ঘটেছিল তা বলতে এবং ভবিষ্যতের পূর্বাভাসও দিতে পারেন! সেইসাথে প্রাকৃতিক নিয়মের সীমা অতিক্রম করে বহু অলৌকিক ও আশ্চর্য ঘটনাবলীও সৃষ্টি করতে পারেন তিনি! বিপরীতে জাদুকর! এই ভিন্ন আর কি করে সে! সেও কি অদৃশ্যের সংবাদ বিষয়ে নিজেকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে না? সেও কি প্রাকৃতিক নিয়মের সীমা অতিক্রম করে উর্ধ্ব জগতের সঙ্গে সম্পর্কের দাবি করে না? অবশ্যই করে। ফলে একজন সূফি ও জাদুকরের মাঝে একমাত্র এই একটি পার্থক্যই আপনি দেখতে পাবেন যে, প্রথমজন ফেরেশতাদের পাশে আর দ্বিতীয়জন শয়তানের পাশে। সুতরাং এসব বিষয়গুলো সত্যভাবে বোঝার জন্য অবশ্যই আমাদের ইবনে খালদুন এবং তার মত অন্যদের গভীরভাবে পাঠ করতে হবে। সেইসাথে তাদের রচনার বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যাগুলোর ওপর ভিত্তি করে জাদুবিদ্যা প্রত্যাখ্যান এবং এসবের প্রতি নিরুৎসাহিত হতে হবে। একইভাবে সুফিবাদের প্রশংসা ও এর প্রতি অতি উৎসাহের ব্যপারেও সতর্ক থাকতে হবে।
কিন্ত আমাদের বালক ও তার বন্ধুরা কোথা থেকে ইবনে খালদুন বা তার মতো অন্যদের রচনা পাবে! কেননা তাদের হাতে তো কেবল ওই, ‘জাদুর কিতাব, ‘সালেহীনদের গুণাবলি’ ও ‘উলি-আউলিয়াদের কারামত’ সংক্রান্ত বইপুস্তকই আসে তারা তা পড়ে এবং একইরকম প্রভাবিত হয়। সুতরাং অনতিকালমধ্যে ওসবের পাঠ সমাপ্ত করে, একইরকম বিস্ময়ে ওসবের অনুসন্ধানে লিপ্ত হয়। ফলে শীঘ্রই সুফিবাদের অনুসরণ এবং সবধরনের জাদুবিদ্যাই তাদের হস্তগত হতে শুরু করে। এতে খুব কমই তাদের চেতনায় জাদুবিদ্যা ও সুফিবাদ কোনোপ্রকার দ্বিধার সৃষ্টি করত এবং ভিন্ন দুটি বিষয় যেন মূলত একটি বিষয়ই হয়ে উঠেছিল। যেটার এক ও অভিন্ন উদ্দেশ্যই হলো, জীবনের সমৃদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ। সুতরাং আমাদের বন্ধুটির মনেও এই ছিল যে, সে একজন সূফী হবে এবং জাদুবিদ্যার অনুশীলন করবে। কেননা তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এতে আল্লাহ খুশি হবেন এবং পার্থিব জীবন থেকে বেরিয়ে আসার মাধ্যমেই জীবনের সাফল্য মিলবে। তবে বই ফেরিওয়ালারা যে-সব পুস্তাকাদি নিয়ে আসত, এসবের ভেতর একটি বই অধিকাংশ ছেলেদেরই হাতে থাকত। ওটা ছিল ‘আলিফ লায়লা’র একটি অংশ বিশেষ এবং যে গল্পটি ‘হাসান বসরি’ গল্প নামে প্রসিদ্ধ ছিল। এই গল্পে ওই অগ্নি-উপাসকের বিবরণ দেয়া হয়েছে, যে লোহাকে সোনায় রূপান্তর করতে পারে। এবং ওই রাজপ্রাসাদের আখ্যান বর্ণিত হয়েছে, যা বাতাসের ওপর সুবিস্তীর্ণ পাহাড়ের পেছনে সুউচ্চ স্তম্ভে নির্মিত। যেখানে বাস করে সাত জিনের সাত মেয়ে। যেখানেই একদা আশ্রিত ছিলেন হাসান আল বসরি। হাসান জানায়, কী দীর্ঘ, ভীতিপ্রদ আর কষ্টকর ভ্রমণই না ছিল জিনদের ওই নগরীতে। আর এ গল্পের মাঝে এমন কিছু আশ্চর্য, অনুপম বিষয়াদি ছিল, যা বালককে যারপরনাই বিস্মিত করে তুলেছিল। যেমন, কোনো এক ভ্রমণে হাসানকে একটি জাদুদ- দেয়া হয়। তা ছিল এমনই এক বিশেষ যষ্টি; যদি ওটা দিয়ে মাটিতে আঘাত করা হয়; তাহলে ভূমি বিদীর্ণ হয়ে তৎক্ষনাৎ সাতজন জিন বেরিয়ে আসে। যারা ওই যষ্টি মালিকের হুকুমের গোলাম। তারা জিনদের মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালি ও গগনচারী। তারা আকাশে উড়ে বেড়ায়, ঝড়ের মত দৌড়ায়, ভারি বোঝা বহন করে, পাহাড় সরিয়ে দেয় এবং বোধেরও অগম্য সীমাহীন বিস্ময়কর কাজবাজ করে নেয়। ফলে স্বভাবতই বালক ওই যষ্টি দ্বারা বিমুগ্ধ হয়ে পড়ে এবং তা পাওয়ার তুমুল আগ্রহ জন্মে তার মনে। এমনকি এই ভেবে সে বিনিদ্র রাত কাটায় আর সমস্ত দিন অস্থির হয়ে থাকে। সুতরাং এখন সে জাদুবিদ্যা ও আধ্যাত্মিক বিষয়াদির বইপুস্তক পড়া শুরু করে এবং জাদুকর সুফিদের সংস্পর্শে তা ধরে রাখার উপায় খুঁজতে থাকে।
যারা ওই যষ্টি মালিকের হুকুমের গোলাম। তারা জিনদের মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালি ও গগনচারী। তারা আকাশে উড়ে বেড়ায়, ঝড়ের মত দৌড়ায়, ভারি বোঝা বহন করে, পাহাড় সরিয়ে দেয় এবং বোধেরও অগম্য সীমাহীন বিস্ময়কর কাজবাজ করে নেয়
এদিকে মকতবে তারই সমবয়সী তার এক বন্ধু ছিল। সেও তার মতোই ওই জাদু দন্ডের ব্যপারে ভীষণ আগ্রহী ছিল। ফলে তারা দুজন মিলে আপ্রাণ চেষ্টা করে যে, কী করে তারা এমন কোনো পন্থায় পৌঁছতে পারে, যা তাদের উভয়কেই তাদের আকাঙ্খিত জিনিস পেতে সাহায্য করবে। আসলে তারা তা ‘দিয়ারবি’ কিতাবের মাঝে পেয়েছিল। তার প্রক্রিয়াটি এমন ছিল যে : ব্যক্তি প্রথমে সমস্ত কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একধ্যানে বসবে। তারপর সামনে অঙ্গারে পূর্ণ একটি তাম্র পাত্র রাখবে। ওটাতে কিছু ধূপগন্ধী ছিটিয়ে, আগুনের ওপর নিজের দুহাত রেখে আল্লাহর নাম সমূহের মধ্য থেকে ‘ইয়া লতীফ, ইয়া লতীফ’ বলে পড়তে থাকবে। এসময় একটু পরপরই আগুনে কিছু ধূপ নিক্ষেপ করবে। এভাবে যতক্ষণ না সমস্ত পৃথিবী তার চারপাশে বৃত্তাকারে পরিণত হয় এবং তার সম্মুখে দেয়াল ফেটে যায়; অনবরত সে তা পড়তেই থাকবে এবং ধূপ ছেটাতে থাকবে। তখনই কেবল জিনের সেবক আবির্ভূত হবে; আল্লাহর বিশেষ এ নামের কারণে যে উত্তর দিতে বাধ্য। যাহোক, এরপর ব্যক্তির যা ইচ্ছে সে চাইতে পারে এবং নিঃসন্দেহে তার যেকোনো প্রয়োজনই পূর্ণ করা হবে।
এসব পড়ে ওই দুই বালকের যেন আর তর সইছিলো না। তাই শীঘ্রই তারা ওই প্রক্রিয়াটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেমতে সর্ব প্রকারের সুগন্ধি খরিদ করে। এরপর আমাদের বন্ধুটি একাকী অতিথি কক্ষে বসে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। আগুন ভর্তি তামার পাত্রের ওপর দুহাত রেখে, ধূপগন্ধী ছেটাতে ছেটাতে বারবার ‘ইয়া লতীফ, ইয়া লতীফ’ পড়তে থাকে। এভাবে দীর্ঘক্ষণ সে এমন করতে থাকে এই আশায় যে, পৃথিবী তার চারপাশে বৃত্তাকার হয়ে আসবে এবং সম্মুখের দেয়াল চিড়ে তার সামনে জিনের সেবক উপস্থিত হবে। কিন্তু এমন কিছুই ঘটে না। মূলত এখানেই আমাদের বালক একজন সূফি জাদুকর থেকে একজন ঠক, চতুর ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হয়েছিল।
এরপর সে একরকম উন্মত্তের মতোই দুহাতে মাথা চেপে রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে আসে। তার জিহ্বা তখন একটি শব্দও উচ্চারণে অক্ষম। এসময় তার বন্ধু তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘জিন সেবকের সাক্ষাৎ পেলি? তার কাছে জাদুদ- চেয়েছিস তো?’ কিন্তু আমাদের বন্ধুটি এমনই অস্থির আর কাঁপছিল যে, কোনো উত্তরই দিতে পারছিলো না সে। এমনকি তার দন্তসমূহ এভাবে খটমট করছিল যে, এতে তার বন্ধুও ভয় পেয়ে যায়। এরপর বহু কষ্টে সামান্য শান্ত হওয়ার পর, কিছু দ্বিধাজড়িত আর চাপা কণ্ঠে সে তার বন্ধুকে বলে, ‘হঠাৎ দেখি আমার পায়ের নীচে মাটি চারপাশে ঘোরা শুরু করেছে, এতে আমি যেন একরকম পড়েই যাচ্ছিলাম। তখন দেখি দেয়াল চিড়ে গেছে এবং তা থেকে এমনই গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, মনে হল তা যেন সমস্ত রুমজুড়ে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে। এরপরই আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। কিন্তু যখনই জ্ঞান ফেরে, সবেগে ওখান থেকে ছুটে বেরিয়ে আসি।’ অপর বালকটি তখন নিশ্চল, বিস্মিত হয়ে তার বন্ধুর এসব কথা শোনে এবং আনন্দ ও প্রশংসায় তার হৃদয় পূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে সে তাকে বলে, ‘এ নিয়ে অত মাথা ঘামাস না। বোধকরি তুই একটু বেশিই ভয় পেয়ে গিয়েছিলি। যাহোক, চল আমরা কিতাবে খুঁজে দেখি অন্য কোনো পন্থা আছে কিনা! যা আমাদের জিনের সামনে দাঁড়াতে নিশ্চিন্ত ও সাহসী হতে সাহায্য করবে। তাকে যেকোনো কিছু নির্দেশের শক্তি যোগাবে।’
ফলে অনুসন্ধান তাদেরকে এই জিনিস আবিস্কার করতে সাহায্য করল যে, নির্জন ব্যক্তিটি পবিত্র হয়ে অবশ্যই প্রথমে দুই রাকাত নামাজ পড়বে। তারপরই কেবল ওই আগুন ভরা পাত্রের সম্মুখে বসে, ওপরে দু’হাত রেখে ‘ইয়া লতীফ’, ‘ইয়া লতীফ’ বলে ধূপ ছেটাতে থাকবে।’ সুতরাং পরদিন বালক তাই করে। সে ‘ইয়া লতীফ’, ‘ইয়া লতীফ’ বলে আগুন সুগন্ধি ছেটায় এবং সেইসাথে অপেক্ষা করে কখন তার চারপাশে জমিন ঘূর্ণিত হবে, দেয়াল ফেটে পড়বে। তারপরই সামনে উপস্থিত হবে জিনের সেবক। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটে না। তবে এবার বালক বেশ শান্ত, স্থির ও নিশ্চিন্ত মনেই রুম থেকে বেরুয়। তার বন্ধুকে জানায়, ‘পৃথিবী তার চারপাশে বৃত্তাকারে ঘুরে উঠেছিল, দেয়াল ফেটেছিল। এবং জীনের সেবক উপস্থিতি হয়ে তার থেকে সমস্ত প্রয়োজনই শুনেছিল। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না সে পূর্ণ নির্জনতার চর্চা করছে, আরও অধিক নামাজ পড়ছে, এবং বেশি পরিমাণে আল্লাহর নাম জপে বেশি করে আগুনে ধূপ নিক্ষেপ করছে-ততক্ষণ পর্যন্ত জিনের সেবক তার কোনো প্রকার জবাব দিতে অনিচ্ছা জানিয়েছে। অধিকন্তু তার এই আবেদন মঞ্জুর হওয়ার জন্য টানা একমাস তাকে এইধারায় আমল করে যেতে হবে। এরমাঝে যদি একদিন কোনোরকম ছুটে যায়, তাহলে পুনরায় তাকে নতুন করে নতুন মাসের জন্য শুরু করতে হবে।’ এদিকে বালকের বন্ধু তার সমস্ত কথাই প্রবলভাবে বিশ্বাস করে এবং নিয়মিত একমাস তাকে এই আমল করার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করে। সুতরাং বালক এখানে তার বন্ধুর দূর্বলতা কাজে লাগায় এবং সেমতে তাকে যে কোনো প্রকার কষ্ট ও সমস্যা সহ্যের কথা বলে। এতে যদি সে অস্বীকৃতি জানায় এবং অস্বীকারের কোনও লক্ষণও তার মাঝে প্রকাশ পায়, তাহলে সে তাকে সোজা বলে দিবে যে আগুনের সামনে অমন নির্জন বসতে পারবে না সে। লতীফ, লতীফ বলে জপতে পারবে না। আর জাদুর ওই যষ্টিও তার লাগবে না। এরপর নিশ্চয়ই সে বশীভূত হবে।
তারপরই সামনে উপস্থিত হবে জিনের সেবক। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটে না। তবে এবার বালক বেশ শান্ত, স্থির ও নিশ্চিন্ত মনেই রুম থেকে বেরুয়। তার বন্ধুকে জানায়, ‘পৃথিবী তার চারপাশে বৃত্তাকারে ঘুরে উঠেছিল, দেয়াল ফেটেছিল
যাহোক, তো আমাদের বন্ধুটি কেবল নিজ থেকেই এই জাদুবিদ্যা ও আধ্যাত্মিকতার পথে ঝুঁকেছে, এমন নয়। বরং তাকে ওই পথে পরিচালিত করা হয়েছে। আর যারা তাকে ওই পথে পরিচালনা করেছেন, তাদের একজন হলেন তার বাবা। কেননা শায়খ আল্লাহর কাছ থেকে অনেক কিছুই প্রত্যাশা করতেন। যদিও তার বেশ ক’জন সন্তান-সন্ততি ছিল এবং তিনি তাদের ভালো শিক্ষা ও উন্নত লালনপালনে বেশ আগ্রহী ছিলেন। কিন্ত তিনি এমনই দরিদ্র ছিলেন যে, সকলের উন্নত লেখাপড়ার খরচ বহন করা তার পক্ষে একরকম অসম্ভবই ছিল। ফলে প্রায়শই তিনি ধারদেনা করতেন আর তা পরিশোধ তার ওপর বিরাট এক বোঝা হয়ে আসত। তাই তিনি এই আকাঙ্খা করতেন যে, তার বেতন মাঝেমাঝে বৃদ্ধি পাবে। তাকে উচ্চতর শ্রেণীতে উন্নীত করা যেতে পারে, অথবা এক চাকুরী থেকে অন্য চাকুরীতে বদলিও হতে পারে। সুতরাং এইসব কিছুই তিনি তার প্রত্যহ নামাজ, দোয়া ও ইস্তেখারায় নিয়মিত করতেন। দোয়া-প্রার্থনায় তার প্রিয় আমল ছিল সূরা ইয়াসিনের পুনরাবৃত্তি। ফলে প্রায়ই তিনি তার ছেলেকে তা পাঠ করতে বলতেন। কেননা প্রথমত সে একজন শিশু; দ্বিতীয়ত দৃষ্টিহীন। সুতরাং এই দুই গুনের কারণে আল্লাহর কাছে সে অবশ্যই প্রাধান্য ও উচ্চ মর্যাদা পেয়েছিল বলেই তার (শায়খ এর) ধারণা। কারণ কিভাবেই বা আল্লাহ তায়ালা কোরান তেলাওয়াতের মাধ্যমে প্রার্থনা করা একজন অন্ধ বালকের চাওয়া ফিরিয়ে দিতে খুশি হবেন! সূরা ইয়াসিন পাঠের ছিল তনটি স্তর। প্রথমবার : পাঠকারী সমস্ত কোলাহল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোরানের এই সূরা একসাথে চারবার পাঠ করবে। তারপর যা চাওয়ার চাইবে এবং ফিরে আসবে। দ্বিতীয়বার : পাঠকারী সমস্ত কোলাহল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই সূরা সাত বার পাঠ করবে। তারপর যা চাওয়ার চাইবে। তৃতীয়বার : পাঠকারী নির্জনে এই সূরা একচল্লিশ বার পড়বে। আর প্রতিবার সূরা ইয়াসিন পাঠ শেষে এই দোয়া বলবে, ‘ইয়া উসবাতাল-খায়রি বিখায়রিল-মাল।’ এরপর যখন পাঠ পূর্ণ হবে তখন যা ইচ্ছে প্রার্থনা করবে। আর হ্যাঁ তৃতীয় এ স্তরের আমলে সুগন্ধি আবশ্যক।
ফলে ছোটোখাটো যেকোনো বিষয়ের প্রয়োজনেই শায়খ তাকে দিয়ে প্রথম পর্যায়ের পাঠ করায়। বিষয়গুলো আরেকটু গুরুত্বপূর্ণ হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের আমল। আর যদি সামগ্রিকভাবে সমস্যাগুলো জীবন ও পরিবার সম্পর্কিত হয়; তাহলে তার তৃতীয় পর্যায়ের পাঠ করতে হয়। সুতরাং এভাবেই যখন তিনি তার কোনো সন্তানকে ফ্রীতে মকতবে ভর্তি করাতে চেষ্টা করবেন, তখন তিনি সূরা ইয়াসীনের ছোট আমল করবেন। যদি ঋণ পরিশোধের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, তখন ইয়াসিনের মাঝারি আমল। আর যদি চাকুরির ক্ষেত্রে কোথাও বদলি হতে চান অথবা এক পাউন্ড বা পাউন্ডের কিছু অংশ পরিমাণ বাড়াতে চান; তাহলে এ হবে তার সবচেয়ে দীর্ঘতম সূরা ইয়াসিনের আমল। এদিকে প্রতিবার পাঠের জন্যই রয়েছে পুরস্কার। ফলে ছোটো পাঠের জন্য নির্ধারিত ছোটো হালুয়া বা মিষ্টির টুকরা। মাঝারি পাঠের জন্য পাচ মিলিমিটার আর দীর্ঘ পাঠের জন্য রয়েেেছ দশ মিলিমিটার সমপরিমাণ মিষ্টান্ন। এতে অসংখ্যবারই বালক তার অবসরে, চারবার, সাতবার এবং একচল্লিশ বার সূরা ইয়াসিন পাঠ করেছে। আর আশ্চর্যের বিষয়টি হলো প্রতিবারই এতে প্রয়োজন পুরো হয়েছে। ফলে শায়খ-এরও দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, তার ছেলে আল্লাহর পক্ষ থেকে আশীর্বাদপ্রাপ্ত ও সম্মানিত। মূলত জাদুবিদ্যা ও আধ্যাত্মিকতার বিষয়গুলো কেবল আকাঙ্খা পূরণ ও ভবিষ্যৎবাণী প্রদানের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং মন্দকাজ এড়ানো ও আত্মরক্ষায় এ সবকিছুই তারা অতিক্রম করে গিয়েছিল। ফলে বালক হয়তো অনেক কিছুই ভুলে যেতে পারে, কিন্তু যখন তাদের কাছে কায়রো থেকে এই সংবাদ পৌঁছে যে, কয়েকদিন পরই আকাশে লেজবিশিষ্ট এক নক্ষত্রের উদয় হবে, তখন যে ভয় শহর ও তার পার্শ্ববর্তী জনপদের মানুষের হৃদয়ে পূর্ণ দেখেছে- তা সে কখনোই বিস্মৃত হবে না। অধিকন্তু ওই সংবাদে এও ছিল যে, দুপুর দুটার সময় নক্ষত্রের লেজ মাটি স্পর্শ করবে এবং তারপরই প্রবল এক বাতাসের ঝাপটায় তা তুষ হয়ে উড়ে যাবে। যদিও গ্রামের নারী ও সাধারণ মানুষেরা এ বিষয়ে খুব সামান্যও চিন্তিত হয়নি। বরং যখন তারা এ বিপর্যয় সম্বন্ধে পরস্পর বলাবলি করতে শুনেছিল, তখনই কেবল তারা সামান্য শঙ্কা অনুভব করেছিল। এবং এর কয়েকদিন পরই আবার তারা তাদের স্বাভাবিক ও নিয়মিত জীবনে ফিরে এসেছিল। কিন্তু এদের বিপরীতে ফকীহ, সূফী, কারী ও তাদের ছাত্রদের অবস্থা ছিল বড়ো শোচনীয়। তারা এ নিয়ে এমনই উদ্বিগ্ন আর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল যে, যেন প্রত্যেকের হৃদয় তাদের পার্শ্বদেশ চিড়ে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। সাথে এ বিষয়ে তাদের নিরবিচ্ছিন্ন তর্ক ও বাদানুবাদ তো ছিলোই।
বালক হয়তো অনেক কিছুই ভুলে যেতে পারে, কিন্তু যখন তাদের কাছে কায়রো থেকে এই সংবাদ পৌঁছে যে, কয়েকদিন পরই আকাশে লেজবিশিষ্ট এক নক্ষত্রের উদয় হবে, তখন যে ভয় শহর ও তার পার্শ্ববর্তী জনপদের মানুষের হৃদয়ে পূর্ণ দেখেছে- তা সে কখনোই বিস্মৃত হবে না
তাদের কেউ কেউ বলছিল, এ বিপর্যয় কখনোই তাদের ধ্বংস করতে পারবে না। কেননা কোরানে কেয়ামতের যে পূর্বলক্ষণসমূহ বলা হয়েছে, ওসবের সাথে এর সামঞ্জস্য নেই। তাছাড়া পৃথিবী ধ্বংসের আগে জন্তুজানোয়ার, আগুন ও দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। এরপর ঈসা (আ:) এসে অন্যায় অবিচারে আচ্ছন্ন এ পৃথিবীকে পুনরায় সত্য ও ন্যায়ের আলোয় আলোকিত করবেন। এভাবে অন্য আরেকজন ধারণা করছিলেন, এই বিপর্যয় মূলত কেয়ামতরই বিভিন্ন লক্ষণের একটি। তখন তাদেরই অন্যজন বলেন, বিপর্যয়টি মূলত পৃথিবীকে সমূলে ধ্বংস না করে এর কিছু অংশ নাশ করে দিতে পারে। এভাবে সমস্ত দিন ধরে এ নিয়েই লাগাতার বিতর্ক করে তারা। অবশেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে এবং তারাও মাগরিবের নামাজ সম্পন্ন করে। নামাজান্তে বাড়ির সামনে মসজিদেই একত্রিত হয় এবং বারবার এই আয়াতের পুনরাবৃত্তি করতে থাকে, ‘কেয়ামত আসন্ন। আল্লাহ ছাড়া কেউই এটা ব্যক্ত করতে সক্ষম নয়।’* এমনকি এই আলোচনার ভেতরই তারা ইশার নামাজ আদায় করে। এভাবে দিনগুলো বিগত হয় এবং নির্ধারিত সেই দিন এসে উপস্থিত হয়। কিন্তু লেজবিশিষ্ট কোনো নক্ষত্রই আকাশে দৃশ্যমান হয় না। না বড়, ছোটো কোনো ধরণের বিপর্যয় পৃথিবী অতিক্রম করে যায়! ফলে ফকীহ, কারী ও সূফিরা এতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আর এদের মাঝে যারা আহলুল ইলম; তথা বইপুস্তক থেকে জ্ঞান আহরণ করেছেন এবং আযহারের সাথে সম্পর্ক রাখেন, তারাই বিজয় লাভ করেন। তারা বলেন, আমরা কি তোমাদের বলিনি কেয়ামতের লক্ষন আসার পূর্বে এই বিপর্যয় সংঘটিত হওয়া সম্ভব নয়? আমরা কি তোমাদের জ্যোতিষীদের মিথ্যা সংবাদ থেকে সতর্ক করিনি?
অন্যদিকে যারা কারী তারা বলেন, না! অবশ্যই এ বিপর্যয় আসন্ন ছিল; যদি না আল্লাহ স্তন্যপায়ী প্রানী, শিশু ও পশুপাখিদের প্রতি দয়ালু না হতেন। নইলে এ ধ্বংসযজ্ঞ নিশ্চিত ঘটে যেত। তদুপরি আল্লাহ প্রার্থনাকারীদের প্রার্থনায় সাড়া দিয়েছেন এবং মিনতকারীদের মিনতি মঞ্জুর করেছেন।’ আর আধ্যাত্মিক সূফী ও ইলমে লাদুনি ওয়ালারা বলেন, কখনোই না। নিশ্চয় এ বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী ছিল; যদি না কুতুব আল-মুতাওয়াল্লী মানুষ ও আল্লাহর মাঝখানে না থাকতেন। তিনিই মানুষের থেকে এই আপদ প্রতিহত করেছেন। এবং তিনিই (কুতুব) তাদের জন্য তাদের পাপ বহন করেছিলেন। তা আপনি হয়তো বলতে চাইছেন যে, এই যে প্রতিরোধকারী; যা মানুষকে ‘খামাসিন’ থেকে সুরক্ষিত করেছিল, তা ছিল জাদু ও আধ্যাত্মিকতা! কিন্তু না। আমি শুধু আপনাকে ‘শাম আন্ নাসিমের’ পূর্বের সেই আশ্চর্য দিনগুলোর কথা বলতে পারি, বালক যা মনে রেখেছিল। যখন নারী, শিশু ও কারীদের হৃদয় এক আশ্চর্য ভয় ও আনন্দের মিশেলে উদ্বেল হয়েছিল। যখন প্রতি শুক্রবার আহারে বিভিন্ন প্রকার খাবারে নিজেদের পরিপূর্ণ করত তারা। আর শনিবার আহারে রঙ্গিন ডিম দিয়ে অতিভোজন করত। অন্যদিকে এই দিনের জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নিত ফকীহরা। সেদিন তারা মিহি সাদা কাগজ খরিদ করে, ছোটো ছোটো টুকরায় ‘আলিফ-লাম-মীম-সোয়াদ’ লিখে তা ভাঁজ করে নিজেদের পকেটে রেখে দিত। তারপর শনিবার দিন ওসব কাগজের টুকরো নিয়ে তাদের অন্তরঙ্গ ও পরিচিতদের বাড়ীঘর ঘুরেঘুরে ওখানের বাসিন্দাদের মাঝে তা বিলিয়ে দিত। এবং প্রত্যেককেই আহার ও পানাহারের পূর্বে টুকরোসমূহ থেকে চার টুকরো গিলে ফেলার জন্য বলা হত। সেইসাথে তারা মানুষকে এই বলে আশ্বস্ত করত যে, যদি তারা কাগজের টুকরোগুলো গিলে ফেলে, তাহলে তা তাদের খামাসিন বায়ুর অনিষ্টতা ও বিশেষত চোখের প্রদাহ থেকে রক্ষা করবে। আর মানুষও তাদের বিশ্বাস করত এবং ওসব কাগজের টুকরোগুলো গিলে ফেলত। এমনকি এসবের জন্য লাল ও হলুদ ডিম দিয়ে ফুকাহাদের সম্মানিও দিত তারা। যদিও আমাদের বালক কোনোভাবেই বুঝতে পারে না এত এত ডিম দিয়ে আমাদের শিক্ষক করবেটাই কী? যা তিনি শনিবার প্রত্যুষে সংগ্রহ করতেন এবং প্রায়ই তা একশোর ওপরে হত।
যাহোক, তো এই দিনের জন্য ফুকাহাদের প্রস্তুতি কেবল ওই কাগজের টুকরো তৈরিতে থেমে থাকেনি। বরং তা এসব অতিক্রম করে অন্যকিছু পর্যন্তও চলে যায়। অর্থাৎ এখন তারা চকচকে মসৃণ সাদা কাগজ খরিদ করে। ওগুলোকে লম্বা ও প্রশস্ত করে কেটে, তার ওপর নবীজীর রেখে যাওয়া জিনিসের কথা লিখে : ‘মুখাল্লাফু ত্বহা সুবহাতানে ও মুসহাফ/ ওয়া মুকহালাতুন সাজ্জাদাতানে রাহান আ-ছা’ এভাবে যখন তারা নবিজির পুরাণিদর্শনের এই তালিকাটি শেষ করেছিল, তখন তারা এর সাথে একটি দোয়াও যোগ করেছিল। নিম্নলিখিত শব্দসমূহ দ্বারা যা শুরু হয়েছিল : ‘দানাবাদ দানবি, কারা কারানদি, ছারা ছারানদি, ছাবার ছাবারবতুনা, ওয়া আহসিবুল বায়ীদা আন্না লা-ইয়াআতীনা, ওয়াল কারীবু আন্না লা-য়ূযিনা…এভাবে শেষ পর্যন্ত।’ এরপর ওই কাগজগুলো তাবিজের মত ভাঁজ করে তারা তা বাড়ির নারী ও শিশুদের মাঝে বিলি করত। এবং বিনিময়ে দিরহাম (দুই পিয়াস্ট্রা সমতুল্য) রুটি ও বিবিধ মিষ্টান্নের টুকরো নিত। তারা মানুষকে এই বলে আশ্বস্ত করত যে, এসব তাবিজ তাদেরকে সেসব শয়তানের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করবে; খামাসিন বাতাস যাদের বয়ে নিয়ে এসেছে। ফলে নারীরা ওসব তাবিজ-কবচ প্রবল বিশ্বাসে গ্রহণ করত। কিন্তু কোনোভাবেই তা তাদের ‘শাম আন্ নাসিম’ এর দিনগুলোয় দুষ্ট আফরিতের অনিষ্টতা থেকে পেয়াজ ছিটিয়ে ও তা ঘরের দরজায় ঝুলিয়ে পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন থেকে প্রতিহত করতে পারেনি। এছাড়াও ভিন্ন কোনো খাবারের পরিবর্তে কেবল অঙ্কুরিত মটরশুঁটি খাওয়া থেকেও বিরত রাখেনি।
* ইবনে খালদুন : একজন মুসলিম সমাজ বিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক , দার্শনিক ও অর্থনীতিবীদ। জন্ম : ২৭ মে ১৩২২ সাল, তিউনিস। মৃত্য : ১৯ মার্চ ১৪০৬ সাল, কায়রো। এই মহান মনিষী তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘মুকাদ্দিমা’র জন্য দুনিয়াজোড়া ব্যিখাত।
* দিয়ারবি কিতাব : পুস্তিকাটির সম্পূর্ণ আরবি নাম হচ্ছে: ‘ফাতহুল মালিকিল মাজিদ আলমুয়াল্লাফ লিনাফয়ীল আবীদ ওয়া কাময়ী কুল্লি জাব্বারিন আনীদ।’ সংক্ষেপে এটাকে ‘মুর্জারাবাতে দিয়ারবি’ বলা হয়। বইটি মূলত জাদুবিদ্য সম্পর্কিত বিষয়াদীর উপর লিখিত। এর লেখক আহমদ বিন আমর আদ-দিয়ারবি; মৃত্যু ১১৫১ হিজরি।
* সূরা ইয়াসিন : পবিত্র কোরানের ৩৬তম সূরা। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ৮৩ এবং রুকু সংখ্যা ৫।
* সূরা নাজম : আয়াত ৫৭-৫৮
* কুতুব আল-মুতাওয়াল্লী : একজন রহস্য পুরুষ ও পবিত্র সূফী। বলা হয়, কায়রোর প্রাচীন গেইট সমূহের একটি ‘বাবে জুয়েইলার’ পেছনে বাস করতেন তিনি।
* খামাসিন : বাতাস
* শাম আন্ নাসিম অথবা শিম আন্ নাসিম : শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হলো: বাতাসের গন্ধ। এটি মিশরীয়দের অসামান্য এক ছুটির দিন। মুসলিম বা খ্রীষ্টধর্মের সাথে যার কোনো সংযুক্তি নেই। সম্ভবত প্রাচীন মিশরীয়দের বসন্ত উৎসব এটি।