
সক্রেটিস
তোমার জন্মের পর পৃথিবী
অসংখ্য আবর্তনের বেড়ি
পরিয়েছে সূর্যের পায়ে।
আবর্তিত হতে হতেই দেখেছে
বিড়ালের চারপাশ ঘিরে
তোমার হামাগুড়ি দেয়ার।
কী গভীর মমতায় স্পর্শ করেছো মাটিকে
তারও সাক্ষী হয়ে আছে অনেকগুলো সকাল।
তুমি হেঁটে গেছো এথেন্সের রাজপথ ধরে।
তোমার পায়ের শব্দে হেসে উঠেছে
শীতে কাবু গাছের ডালও
মেঘের ডাকে জেগে ওঠা নদীর মতো।
সক্রেটিস
এরই মধ্যে সহস্রেরও অধিকবার
বেজেছে শতাব্দীর ঘণ্টা।
অথচ
মাটি ও বীজের চিরায়ত সম্পর্কের যত
এখনো প্রাসঙ্গিক তুমি।
বিষাদের অশ্রু জমে আছে সময়ের চোখে;
এত যে বৃষ্টি
তবুও মিটে না যেন বালির পিপাসা।
দেয়ালের পলেস্তারা খসে
হয়ে যায় পরাবাস্তব ছবি।
বইয়ের অচর্চিত তাকে
মরে পড়ে থাকে যুগল টিকটিকি।
চন্দনের সুরভি উবে যায় ভোরের আগেই।
অমৃত ভেবে হায়
প্রতিদিন পান করি মোহের গরল।
সক্রেটিস
তোমার নাম উচ্চারিত হলেই
পাখির শরীর থেকে ঝরে যায় খেলাপি পালক। আকস্মিক আঘাতে
স্মৃতিভ্রষ্ট মানুষ যেমন ফিরে পায় স্মৃতি
তোমার সত্তার ঘ্রাণে
খুলে যায় দরোজা আবার।
তুমি জানতে
রঙিন চাদর দিয়ে
সত্যকে ঢেকে রাখে স্তাবকের দল।
সেই স্তাবকেরা ছাতা মেলে
ঘোরে আজও এখানে সেখানে।
বিলবোর্ডে আঁকা হয় বিচিত্র মুখোশ।
সত্য হারিয়ে যায় ভ্রান্তির স্রোতে।
যুক্তিহীন আনুগত্যের প্রতি
ছিল তোমার আশৈশব ঘৃণা।
কেউ কেউ তোমাকে
বাঁধতে চেয়েছে কাঁটাতারে।
কিন্তু সেই পরিমাণ কাঁটাতার
নগরের ছিল না কোথাও।
হেমলক বিষ পানে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর
অনেকে অপেক্ষা করেছে
তোমার কাতরতা দেখার জন্য।
তোমার চোখে তখন
একটি বীজের অঙ্কুরিত হওয়ার স্বপ্ন
উড়ছিল উজ্জ্বল পতাকা হয়ে।
তোমার দণ্ডাদেশ শুনে
রুদ্ধ জলের ক্রোধ জাগে রক্তের ভেতরে।
শিকলবন্দী তারুণ্যের দ্রোহ
ফুঁসে ওঠে জলোচ্ছ্বাসের মতো।
কিন্তু তোমার মধ্যে ছিল ধ্যানমগ্ন ঋষির মৌনতা।
নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও
কী নিরুদ্বেগ অভিব্যক্তি তোমার।
তখনও ভাবছিলে তুমি
সভ্যতা এবং সৌন্দর্যের আপেক্ষিক বিকাশের কথা।
কোনো আক্ষেপ নয়
কোনো অনুতাপ নয়
মানুষের ভবিষ্যৎ অনুমান করতে করতে
ঠোঁট লাগিয়েছো তুমি
হেমলক বিষপূর্ণ গোধুলি রঙের গ্লাসে।
যেন পান করছো মধু
তোমার মুখাবয়ব জুড়ে ছিল
এমনই তৃপ্তির আভা।
সক্রেটিস
তোমার প্রতিটি শব্দই যেন মন্ত্র।
তার স্পর্শে
দৃষ্টিহীন অবোধ মানুষও
উঠোনে নেমে আসে হাঁসের ছানা হয়ে।
ক্ষয়ে যাচ্ছে সিঁড়ি।
সিঁড়িতে আটকে আছে নিরুপায় পা।
আমরা অপেক্ষায় আছি
অনির্ধারিত কোনো এক ট্রেনে
আগন্তুকের ছদ্মবেশে
আসতে পারো তুমি যে কোনো সময়।