Author Picture

খান মুহাম্মদ রুমেল এর একগুচ্ছ কবিতা

খান মুহাম্মদ রুমেল

নগ্ন বসন
.
নগ্ন পা উসকোখুসকো চুল মলিন বসন
তাকে দেখেছিলাম শহিদ বেদিতে!

তারপর রে রে করে তেড়ে আসা একদলের
কারণ শৃঙ্খলা রক্ষার সবটা দায় তাদের।

হাতে নেই পুষ্পগুচ্ছ নেই লাল সবুজ পিরান
অনাহুত এই আগন্তুক সাজানো বেদিতে কেন-
সরাও সরাও- এক্ষুনি সরাও-
উঠেছিলো কলরোল!

তিনি শহিদের পিতা!
টেনে নামিয়ে দেয়ার সময়-
বলেছিলেন কেউ একজন

সেই শব্দটুকু পৌঁছেনি কারো কানে
অনেক শব্দ আর রোশনাইয়ের ভিড়ে!

কারণ প্রতিবাদের কণ্ঠটি ছিলৌ খুবই ম্রিয়মান।

রাহু

.
বিক্রি হয়ে গেছে স্বপ্নগুলো সব-
আনমনা এক পূর্ণিমায়!
ছোপ ছোপ মেঘের কোলে রয়ে গেছে তবু
আমাদের অনর্জিত প্রবল অধিকার!

সানগ্লাসে জমা আছে শেষ বিকেলের রোদ কিছু
কিছু নিয়েছে কেড়ে স্বপ্ন হন্তারক করপোরেটওয়ালা!

দুপুর রোদ দিয়েছি পাড়ি- বর্মহীন আনাড়ি
কেটে গেছে কতো বৃষ্টি দিন- ছিলো না বর্ষাতি।

এখন তবে খোঁজ করি কিসের
জাগি কার লাগি নিদহীন আঁধারে!

এ যে লোভ, পাওয়ার লোভ চরম
লোভ মুক্তির রাহু কাটুক, কেটেই যাক।

বিষন্ন সন্ধ্যা
.
প্রতি সন্ধ্যায় জমাট ভিড় জমে
-এই শহরে।
অগনণ ঠাস বুনটের মাঝেও
-খুব একা
একজন কেউ যাপন করে একাকিত্ব!
ভীষণ রকম বিষন্নতায় খুঁজে ফেরে আলো।
আলো, সে কোথায়- তাকে নিয়ে ফেরার হয়েছে কেউ
অনেক অনেক আগের এক পূর্ণিমা রাতে।

আজ তাই-
চা-খানায় মাঠে ময়দানে শপিংমলে
হাজার মানুষের ভিড়ে একা একজন!

প্রাপ্য প্রতিশ্রুতির হিসেব বুঝে না পেয়ে-
হয়রান কতিপয় অভিমানী মানুষ।

যাদের শ্রমের ঘামে তৈরি হলো সুরম্য প্রাসাদ
যাদের আকণ্ঠ নিষ্ঠায় তৈরি হলো মনোরম বাসর
তারাই আজ পড়ে গেছে অপাংক্তেয়র খাতায়!

তাদের জমাট নিশূন্যতার প্রবল দীর্ঘশ্বাসে-
তৈরি হবে একদিন আপনার পতনের পথও।

সন্ধ্যাগুলো বিষন্ন বানিয়ে দেয়ার দায়
শুধতেই হবে একদিন!
শুধতে হয় সবাইকেই!

গল্পজট
.
মূলত আমি গল্প খুঁজি
চাঁদ জোছনা শিশির কুয়াশার মাঝে!
গল্প কখনো খুঁজি আমি
পঙ্কিল আঁধার সূর্যিত আলোর মাঝেও!
নায়িকার মোহমায়া, শ্রমিকের ঘাম
রাজনীতির মাঠ, কফিশপের কাপ
তন্নতন্ন করি নতুন প্লটের আশায়!

গল্পের খোঁজে ভোর করেছি কত নিশুতি রাত!
ছুটতে চেয়েছি অবাধ্য বারবণিতার কাছে
সাহস হয়নি বলে হয়নি পাওয়া আরাধ্য গল্পটা!

তোমার ভাঁজে ভাঁজেও খুঁজে বেড়াই-
গল্পের আল্পনার ছাঁচ!
আছে তোমার কাছেই আছে-
সেই স্বর্গীয় লাইনগুলো জমা।

একদিন খুলবোই সকল গল্পের জট!

কুয়াশা
.
বিপ্লবীর লাশের ওপর কুয়াশা পড়ে-
কালঘুমে শায়িত আপামর জনতা!
মসনদের লালায় ভেজে রাজপথ
নুপংসুক হাতে পায় ক্ষমতা ঝাণ্ডা-

আপনি এবার ফেরান- দোহাই আপনি জাগুন।
হাজার বছরের জমা পঙ্কিল- জাগছে এবার ফসিল
আপনাকে ভরসা করে বাঁচে অজুত প্রাণ।

ভুলে গিয়ে সকল অভিমান- আবার বলুন-
শাণিত কথার ধারে ফালা ফালা করুন
বেহায়াপনার নির্লজ্জ ইতিহাস আমাদের।

অমরাবতীর ছায়ায় বসে- দুধ নহরে ভেসে-
আপনি কি দেখছেন না, বুঝছেন না?
ক্রমেই আমাদের তলিয়ে যাওয়া, ক্ষয়ে যাওয়া?
দোহাই আপনি জাগুন- দোহাই আমাদের বাঁচান!

আরো পড়তে পারেন

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

বীভৎস খেলা নগরে বাতাসে মথিত জনস্রোতের কোলাহলে শুনতে পেয়েছি সারিগান গঞ্জের হাটে আকাঙ্খার গভীরে মন্দ্রিত অভিন্ন প্রাণ নীরব দর্শক ছিলাম ব্যর্থতার করুণ গান ফেরার মহড়ায় বঞ্চিত কুঁড়েঘরে সরাইখানার- শুঁড়িখানার মাছিরাও নেশায় বুদ্বুদ প্রকম্পিত কান্নার পর একদিন হাসির তিলকরেখা বিচ্ছুরিত শৈশবের ক্ষুধার্ত চিৎকার ক্রর হাসি চেপে মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলে ভাগ্য প্রহসনে যুদ্ধের ব্যগ্র দামামা থেমে গেলো-….

তোফায়েল তফাজ্জলের একগুচ্ছ কবিতা

উপায় অবলম্বন কাঁটা থেকে,  সুচালো কাঁকর থেকে পা রাখিও দূরে, জায়গা না পাক চলন-বাঁকা চেতনায় উড়ে এসে বসতে জুড়ে; এসবে খরগোশ কানে থাকবে রাতে, পড়ন্ত বেলায়, দ্বিপ্রহরে, পূর্বাহ্নে বা কাক ডাকা ভোরে। দুর্গন্ধ ছড়ানো  মুখ ও পায়ের তৎপরতা থেকে গ্রীষ্ম থেকে সমস্ত ঋতুতে একে একে নেবে মুখটা ফিরিয়ে তিলার্ধকালও না জিরিয়ে। কেননা, এদের চরিত্রের শাখা-প্রশাখায়….

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

error: Content is protected !!