Author Picture

রিয়াসাত আল ওয়াসিফের একগুচ্ছ কবিতা

রিয়াসাত আল ওয়াসিফ

কোভিড ১৯
.
আমাদের ড্রইংরুম হলো এয়ারপোর্ট
প্লেন যেখানে ল্যান্ড করে
সেটা পুহকেট, আমাদের মাস্টারবেড।
বারান্দাটা সি বিচ। উথাল-পাথাল ঢেউ।
চলো সমুদ্রস্নানে যাই,
চলো পাপ ধুয়ে ফিরে আসি!

 

মধ্যবিত্ত
.
মধ্যবিত্ত এমন একটি অসুখ
এমন এক আপসকামিতা
স্বার্থপরতা যার রক্তে মজ্জায়।
মধ্যবিত্তের কার্ল মার্কস নেই
বিল গেটস,শেক্সপিয়ার নেই।
কেবল মানিয়ে চলা, মেনে নেয়া।
যুতসই কোনো অতীত নেই
আগামীর জন্য জ্বলন্ত দুটি চোখ
মধ্যবিত্তের একমাত্র সম্বল।
প্রায়শ মধ্যবিত্ত হেঁটে বাড়ি ফেরে
কিংবা বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে।
একটি ছেলে বিদেশে যায়
একটি ছেলে বিপথে যায়
একটি ছেলে ডাক্তার হয়
একটি মেয়ে পালিয়ে যায়
একটি মেয়ে বিয়ে করে
চোখ মুছে মুছে বাধ্য হয়ে।
মধ্যবিত্ত এক অশনিসংকেত
কতিপয় পরাজিত কালো মুখ
মধ্যবিত্ত-চোখের কোণে জল
মধ্যবিত্ত- খাবলা খাবলা সুখ।

 

দর্শক
.
পতনের সিঁড়ি খুলে যায়
একের পর এক
কোনোটা খাঁড়া, কোনোটা সর্পিল
স্বর্গের সিঁড়ি একটাই।
আরোহণ ও পতনের মধ্যবিন্দুতে
দাঁড়িয়ে আছি একা
কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না
এখানে দাঁড়িয়ে থেকে
মানুষের পতন উত্থান দেখি!
দর্শক ছাড়া খেলাই তো জমে না!

 

অচেনা
.
মানুষ নদীকে যে কথা বলে
তোমাকে বলে না,
পাখির সুরে সুরে যে গান গায়
তা শোনোনি তুমি,
গাঁয়ের স্মৃতিময় পথ, পাড়ার গলিপথ
যা জানে, যতটুকু জানে
তুমি তাঁর কিছুই জানো না,
ছাদ থেকে উড়িয়ে দেয়া কুটিকুটি চিঠি
আজও উড়ছে বাতাসে,
বাতাসের মনে আছে সব,
তুমি বুঝতেও পারোনি হৃদকম্পন!
পাহাড় শীর্ষ ও বিশাল সমুদ্র জানে
মনভাঙা গানকত প্রকারের হয়,
বোকা মানুষ তাঁর কিচ্ছুটি জানে না!
মানুষ মানুষের কত গভীর অচেনা!

 

শ্যাওলা
.
আমি এক গৈ গেরামের সুনসান পুকুরের ভাসমান শ্যাওলা। যে বাড়ির পুকুরে আমি ভাসছি সে বাড়িতে এখন আর কেউ থাকে না। দুবাড়ি পরের এন্তাজ মিয়া দেখভাল করেন। দেখভাল মানে নারকেল, সুপারি পেড়ে বাজারে বিক্রি করে পকেট ভারী করেন। এ বাড়ির ঢেঁকির শব্দ দূর থেকে শোনা যেত। শিশুদের কলকাকলি, দাদীর খড়মের শব্দ, দাদার হাঁকডাক অনেকেই শুনেছে। তখন এ পুকুরে শ্যাওলা ছিল না। তেলাপিয়া, বেলে মাছ সাঁতরে বেড়াত দস্যি ছেলেদের মতো। কী সুন্দর বাড়ি করেছিলেন দাদা জমির সওদাগর। আজ আর কেউ নেই। ভিটেয় দুর্বাঘাস। এ বাড়ির ছেলেরা পড়তে যায় ঢাকায়। ঢাকা দেখতে কেমন গো? আমার তো এ পুকুরের বাইরে যাওয়ার সাধ্যি নাই! ছেলেগুলান ঢাকা শহরে বড় চাকরি করে বড় সাহেব হয়ে সেখানেই থাকে। ঢাকায় তাদের বড় বড় ফ্ল্যাট, ডুপ্লেক্স। তারা কয়েকবার গ্রামে আসলেও এখন আর আসে না। শুনি যে তাদের নাদুস নুদুসপোলাপানগুলো এখন বিলাত আমেরিকায় পড়াশোনা করে সেখানেই থাকে! ঢাকার ডুপ্লেক্স গুলিও খাঁ খাঁ বিরানভূমি।
কত আশায় মানুষ ঘর বাঁধে! পোলাপান ছাওয়ালরা থাকে না, চলে যায় অন্য কোনোখানে! ভিন গাঁয়ে অচিন দেশে!
মানুষ দেখি আমার মতোই ভাসমান শ্যাওলা!

 

অনুভব
.
তোমাকে ছুঁয়ে থাকলে পর
আঁধার নেমে আসে ঈগল ডানায়
স্নিগ্ধতার বৃষ্টি নামে শরীরের কোষে,
সবুজ শান্তি নিয়ে নির্ভার পাহাড়।
তোমাকে ছুঁয়ে থাকার পর
ঈর্ষারা নীল হয়ে মরে যায়
লক্ষ চাবুকেও নিশ্চল থাকে
আদিগন্ত লোভের ঘোড়া।
তোমাকে ছুঁয়ে থাকলে পর
কোলাহল ঘুরে যায় চৌকাঠ থেকে
হতাশারা ডুবে যায় মদির মদ্যে
সমুদ্র নিয়ে আসে আশাময় হাওয়া।
তোমাকে ছুঁয়ে থাকার পর
মানুষ, সর্প, পিঁপড়েকে যুগপৎ
দোস্ত মনে হয়!

 

আমি ঘুড়ি
.
আমি ঘুড়ি, উড়ছি আকাশে
কখনো পুব আকাশে কখনো পশ্চিমে
একেবারে মেঘের দেশে ঘুরছি,
কখনো হঠাৎ করে মুখ থুবড়ে পড়ি
এলিনাদের ছাদে।
কখনো আমি নীল, কখনো লাল বা সবুজ
হরেক রঙ দেহে ধারন করে
অবুঝের মতো উড়তে থাকি নীলিমায়..
আমি তখন আকাশে, অস্তমিত সূর্য
ডুবে যেতে যেতে বলে- হাই! দেখা হবে কাল।
প্রতিদিন আকাশে উড়ি পাখিদের সাথে,
পক্ষীরা মুক্ত স্বাধীন ফুরফুরে..
আমার কোথায় যেন খামতি
যদিও আকাশ দাপিয়ে বেড়াই, তবুও..
ঘেন্না ধরে গেছে
পরের জন্মে নাটাই হবো!

আরো পড়তে পারেন

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১) মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার….

সোহরাব পাশা’র একগুচ্ছ কবিতা

নিদ্রিত ঘ্রাণের শব্দ দীর্ঘ যায় আশালতা ফিরে আসে বিষণ্ণ গোধূলি ফিরে আসে দুঃখিত সকাল, ক্ষয়ে যাওয়া এক দূরের উপনিবেশ পাখির চেয়ে মানুষের কোলাহল বেশি কোনো মৃত্যু মানুষকে অপরাধী করে না নিঃশ্বাসের রোদে আবছায়া নিদ্রিত মেঘ স্মৃতির অসুখ বাড়ে; দূরে নির্জন আধাঁরে জেগে ছিলো মানুষের কথা পুরনো সে বাড়ি সেই ছায়াপথ মায়াপথ জুড়ে কতো ভুল মানুষের….

error: Content is protected !!