Author Picture

কামরুল আলম সিদ্দিকী’র একগুচ্ছ কবিতা

কামরুল আলম সিদ্দিকী

জীবন
.
এক বসন্তের সখা তুমি আমের বোলে পাতা,
এক শ্রাবণে তোমার সাথে ভিজেছিলো খাতা।

এক পউষের সন্ধ্যাবাতি সাক্ষী আছে আজও,
স্বাক্ষী আছে পোড়া সলতে মুখোমুখি রাতও।

তেল পুড়লো সলতে পুড়লো, হলোনা শেষ কথা-
হলোনা আর চোখের দেখা, এখন চোখে ব্যথা।

বসন্ত রাত এলেই আজও চক্ষুপিদিম খুঁজি,
আসল কবে হারিয়ে গেছে নকল সলতে গুঁজি।

বোশেখ এলে বছর গুনি, গুনি বত্রিশ সন-
তোমার-আমার ভেস্তে গেছে, ভেস্তে গেছে পণ।

এক চৈতে কাটাকুটি, কাটাকুটি খেলতে খেলতে
কেটে গেছে বোল, জিতে গেছো তুমি। বেলতে বেলতে
জীবন, কোন সাকিনে আজ লটকে গেছি আমি।

 

কইর মানুষ কই যায়
.
বসন্ত লাগছে বঙ্গে,কইর মানুষ কই যাইবো উথালি বাওয়ে।
মাতালি ভোমরা পাতালি খাইবো ঘুইরা বনান্তি আধার বাদাড়ে।
তেরোশ সাতাইশে বাপ আছিন মা-ও আছিন ফাগুইন্যা চাতালে।
আজ উড়ে খালি বাও, খালি গাঁও হাহাকাল চৌদ্দশ সাতাইশে।
বসন্ত আইছেরে ফের কইর মানুষ কই গেছে বাউরি বাতাসে।
কই গেছে ছনুর মা ধনুর বাপ, আথাল-চাতাল থইয়া কোন পাতালে।
মায়া গেছে দয়া গেছে, হালে চক্ষের মণিত খালি আনিপাই নাচে।
কে যাইবা বিনালের পথে, দূরের বাওয়ের বনে কাল ফাগুনে।
চলো বন্ধু হই ঝাঁকে ঝাঁকে, আমসারোদের মতো হারাই সুদূরে।

 

টান
.
মায়াবনে মুখোমুখি মৃত্যু ও ফানুস,
টানে রোজ ছায়াভূত বিদেহী মানুষ-
মানস পাতালে তাই ঘর বাঁধি ঝড়ে
ঈশ্বরের বিস্ময়ের অমর পাথরে!

কৈলাস বাতাসে উড়ি শিখরে শিখরে,
তবু মহা টানাটানি মানুষে ঈশ্বরে-
টানছে কে অশরীরী কার আত্মা হাত!
জমিনের টান লাগে বসন্তের রাত।

 

এ কোন নক্ষত্র তুমি
.
আলোহীন ফুল ফোটে, অন্ধবনে মধুমাছি করে গুনগুন,
এ কোন জোনাক তুমি, তবু বনে জ্বেলে রাখো পৃথিবীর বুন।
অন্ধকারে পাখি ডাকে, বন্দীবায়ু ডেকে তোলে বসন্তের সুর,
এ কোন নক্ষত্র তুমি, কৃষ্ণপক্ষে তুলে রাখো আমাদের ভোর!

 

প্রার্থনা
.
সিডিউল ভেঙে
চতুর্দিকে বাজছে ঘন্টার পর ঘন্টা,
একে একে ট্রেনগুলো ছেড়ে যাচ্ছে স্টেশান,
এ কোন ঘন্টা তুমি অবিরাম বাজাও
ওহ্ স্টেশন মাস্টার!
তোমার সরাইখানা ভেঙে
কোন বিরামপুরে
একে একে তুমি সরাও প্যাসেঞ্জার?

ওখানে কি বসন্তের নতুন ফুটিয়েছো পুস্পধাম!

যে জগত শকুন আর শকুনেরা নিয়ে গেছে,
যে জগত হায়েনা আর হায়েনারা নিয়ে গেছে,
সে জগতে তুমি কি প্রতিদানে
নতুন নিল পরাজিতা ফুটাও!

চতুর্দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা…
ট্রেনগুলো ছেড়ে যাওয়ার একের পর এক
জ্বলে উঠা সবুজ সংকেত !!

এই সংকেত নামাও…
এই ঘন্টা থামাও!
ক্ষমা করো অচিন অনাদি বন্ধু আমার!
তোমারই যাদুঘরে আবার অপরাজিতা ফুটাও!!!

এই জংশনে পোড়া ছাই থেকে তুমি আবার
ফিনিক্স পাখি উড়াও!

আরো পড়তে পারেন

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

বীভৎস খেলা নগরে বাতাসে মথিত জনস্রোতের কোলাহলে শুনতে পেয়েছি সারিগান গঞ্জের হাটে আকাঙ্খার গভীরে মন্দ্রিত অভিন্ন প্রাণ নীরব দর্শক ছিলাম ব্যর্থতার করুণ গান ফেরার মহড়ায় বঞ্চিত কুঁড়েঘরে সরাইখানার- শুঁড়িখানার মাছিরাও নেশায় বুদ্বুদ প্রকম্পিত কান্নার পর একদিন হাসির তিলকরেখা বিচ্ছুরিত শৈশবের ক্ষুধার্ত চিৎকার ক্রর হাসি চেপে মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলে ভাগ্য প্রহসনে যুদ্ধের ব্যগ্র দামামা থেমে গেলো-….

তোফায়েল তফাজ্জলের একগুচ্ছ কবিতা

উপায় অবলম্বন কাঁটা থেকে,  সুচালো কাঁকর থেকে পা রাখিও দূরে, জায়গা না পাক চলন-বাঁকা চেতনায় উড়ে এসে বসতে জুড়ে; এসবে খরগোশ কানে থাকবে রাতে, পড়ন্ত বেলায়, দ্বিপ্রহরে, পূর্বাহ্নে বা কাক ডাকা ভোরে। দুর্গন্ধ ছড়ানো  মুখ ও পায়ের তৎপরতা থেকে গ্রীষ্ম থেকে সমস্ত ঋতুতে একে একে নেবে মুখটা ফিরিয়ে তিলার্ধকালও না জিরিয়ে। কেননা, এদের চরিত্রের শাখা-প্রশাখায়….

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

error: Content is protected !!