প্রাচীর
~
পাশাপাশি দুটি বাড়ি; হিন্দু-মুসলমানের
মাঝে গাঢ় মৌনতায় দাঁড়িয়ে একটি প্রাচীর
তবু দুই বাড়ির বন্ধুত্ব বেশ।
এ’বেলা, ও’বেলায় এ বাড়ির রান্না ও বাড়িতে যায়…
মুসলিমের ছেলেরা খেলতে হিন্দুর বাড়িতে আসে।
ধুলোবালি খেলতে খেলতে এ’বাড়ির ছেলেটির
ও’বাড়ির মেয়েটির সাথে ভালোবাসা হয়ে গেলে
দু’বাড়ির মাঝে পুনরায় ধর্মের প্রাচীর ওঠে।
দু’বাড়ির ছেলে মেয়েরা এখন মিলেমিশে শত্রু শত্রু খেলে।
হেমন্তের সাথে একদিন
~
হেমন্ত এলেই ধূর্ত শেয়ালিপনায় উত্তরের হিমেল বাতাস আমাদের গ্রামে ঢুকে পড়ে। গ্রামে হৈ হৈ রব ওঠে হেমন্তকে শায়েস্তা করতে দুরন্ত শিশুরা গেছে সবুজ অরণ্যে; শিশুদের দস্যিপনা বৃক্ষদল লোকনাথ ব্রক্ষ্মচারীর অভয় মুদ্রায় অর্ধেক উলঙ্গ দেহে শুধু দেখতেই থাকে। চরকা পেঁচিয়ে বিকেল যখন কুয়াশার তন্তুগুলো একটি সুগোল নাটাই বানিয়ে ফেলে শিশুরা তখনই টুপ করে হেমন্তকে ধরে উৎসব করতে করতে বাড়ি ফিরে দেখে মা বানাচ্ছেন পিঠা; খোলায় তেলের পিঠা সুপুষ্ট স্তনের দৃশ্যে ভেসে উঠলেই শিশুদল পুনরায় খুশিতে গাইতে থাকে নবান্নের গান।
বাস্তবতা
~
মা-
সংসারের প্রয়োজনীয়তা বাবার নিকট
এমন নিখুঁত ভাবে বলতেন
যেনো তিনি হিস্ট্রি’র ছাত্রী।
বিকাশোন্মুখ অপচয় ভেবে বাবা’র প্রিয় সাবজেক্ট তখন গণিত।
এ কথা সত্য যে-
উল্লেখিত বিষয় কারোরই সাবজেক্ট ছিলো না।
তা’হলে কি জীবন কঠিন বিষয়কেও মানুষকে পারদর্শী করে তোলে ?
ভালোবাসার উপগল্প
~
যে বাড়িতে হাসনাহেনা থাকে
যে বাড়িতে চামেলীরা থাকে ছাদে
এক পাশে নুয়ে থাকে বিনম্র মাধবীলতা
তাকে শুধু শুধু বাড়ি বলো কেনো- বাগানই তো বলা যায়।
যে বাড়িতে থাকে লাজুক কোমল এক জোড়া মেয়ে
হাসিতে ফোটে সারল্যের নীলপদ্ম
কামরাঙা ঠোঁটে পাপড়ির ঢেউ
তাকে শুধু শুধু বাড়ি বলো কেনো- বাগানই তো বলা যায়।
এক বিকেলে দেখি বাড়িটির ব্যালকনির ফাঁকে
ফুটে আছে দুটি মেয়ে
সেই দিন থেকে বাড়িটিকে আমি বাগানই বলি।
জীবন শাস্ত্র
~
পাখিওয়ালাকে বললাম-
উঁচু গাছের খোড়ল থেকে পাখি ধরে-
কি করে পালকের ওম হৃদয়ে পুষতে হয়?
একটু শিখিয়ে দেবে ভাই?
পাখিওয়ালা অবিচল কণ্ঠে বললো-
ছায়াকে কখনো আলিঙ্গন করতে চেওনা!
বরং তুমি চাও তো তোমার আনন্দের জন্য
মুহূর্তেই ধরে এনে দিতে পারি যে কোনো উড়াল জানা পাখি।
যে কোনো পাখি?
সবিনয়ে মাথা নাড়ালো পাখিওয়ালা।
বললাম যা মূল্য চাও দেবো;
আমাকে এক্ষুনি এনে দাও শৈশব নামের পাখি।
কোহিনুর
~
আমি দেবদাস হলে চন্দ্রমুখী নাকি পার্বতীকে বেছে নেবো?
সর্পিণী শরীরের ঢালু বেয়ে চন্দ্রমুখী বইয়ে দিচ্ছে অংশুমান মুগ্ধতা।
এবং বল্গাহারা খুনসুটি পার্বতী বইয়ে দিচ্ছে তার ঠোঁটের কৈলাসে।
পার্বতী নাকি চন্দ্রমুখী কার প্রেমের অংশীদার আমার মন?
এক চোখ পার্বতী’র জন্য কাঁদে এক চোখ কাঁদে চন্দ্রমুখীর জন্যে
দু’জনকেই ভালোবেসে আমি হাতুড়ি পেটা খেয়ে জং ধরা পেরেকের গান গাই।