
অর্জিতার সাথে লং ড্রাইভ
.
হাইওয়ে ধরে আমরা যাচ্ছি বিদেশি বিকেলের দিকে, রংধনুর দিকে। যেতে যেতে ওয়েস্ট একজিট নিয়ে ইয়াং স্ট্রিট ধরে নেমে যাই শহরের দিকে। ড্রাইভ থ্রো থেকে চা আর আইচ ক্যাপ নিয়ে ট্রাফিক জ্যাম আর দুটি ইন্টার সেকশন ক্রস করে আবার ইস্ট একজিটে উঠে যাই, ফিরে আসি ফোর-ও-ওয়ানে।
দীর্ঘ পথে ইংরেজি রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজলো। তাতে আমি এবং অর্জিতা দু’জনেই গানে গানে ভেসে গেলাম। নদীর পাড়ে একটি পার্ক। পার্কের একটি আপেল গাছে নিচে ব্যাঞ্চি। আমরা যাত্রা বিরতি করে হালকা স্ন্যাক্স খেলাম, পাখিদের সাথে। প্রাকৃতিক সূত্রে পাখিরা আমাদের আত্মীয়।
আবার আমরা রওনা দেই ভিন্ন পথে। আমাদের সাথে হিন্দি রবীন্দ্র সঙ্গীত। হঠাৎ গান থামিয়ে অর্জিতা বললো- বাবা, আমরা পথ ভুলে ভুল পথে যাচ্ছি। এখন আর গুগোল-ম্যাপ কাজ করছেনা। চলো, আমরা বরং কুড়িগ্রাম ঘুরে সি। দাদাকেও দেখে আসি। দাদা তো আমাদের এক জাদুঘর!
ঐ দেখা যায় তালগাছ (গাছে তাল নেই), তারপর একটু এগুলেই ডান দিকে একটা মসজিদ (মসজিদে আজান হয় না), মসজিদের দক্ষিণ দিকে ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে একটা কাঁচা পথ মিশেছে চৌরাস্তায়। সেখানে একটা পুকুর (পুকুরে মাছ নেই), পুকুরের উত্তর পাড়ে একটা আমগাছ। গাছের নিচে ভাঙ্গা টিনের ঝাপড়ার চায়ের দোকান। সামনে বাঁশের ব্যঞ্চি। কিছু কিছু লোক হাট থেকে হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যার দিকে যাচ্ছিলো।
আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অর্জিতা ড্রাইভ করছে। কাঁচা রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে আমরা বাপ-বেটি বেঞ্চিতে পা দুলিয়ে দুধ চা খাচ্ছি। স্টারবার্কসের চেয়েও ঘনসরের চায়ের স্বর্গীয় স্বাদে পা দোলাচ্ছি। সেই সময় দোকানধারের রেডিওতে বাংলা রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজতেছিলো। আমাদের কাছে বাংলা টাকা ছিলোনা। ক্রেডিড কার্টেও বিল দেয়া হলোনা!
তখন একটি পুলিশের গাড়ি এলো। আমাদের মতো আগন্তুক দেখে তাদের সন্দেহ হচ্ছিলো। কিছু উল্টাপাল্টা প্রশ্নের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো আবার ভয়ও পাচ্ছিলো। পরে দোকানীর কাছে রেডিও’র লাইসেন্স চাইলো। তার লাইসেন্স নাই অথবা লাইসেন্স নবায়ন না থাকার কারণে পুলিশ জরিমানা করলো।
তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। রেডিও থেকে ঘোষণা করা হচ্ছে- আজ থেকে লক ডাউন। আজ থেকে অন্য রকম এক কার্ফ্যু। আমরা সেই লক ডাউনের জালে আটকা পড়ে রইলাম!
টরন্টো, জুলাই ১৪,২০২০
ফিরিয়ে দাও সভ্যতা
.
দাও; দ্রুত আগে ফিরিয়ে দাও তাদের পোশাক,
বিবস্ত্র করে বিব্রত করা মরণোত্তর অপরাধ!
ফিরিয়ে দাও দ্রৌপদী এবং তার সঙ্গমসঙ্গীর বস্ত্র।
তারপর দেখা যাবে। তারপর যা হবার হবে-
এক্ষণি ফিরিয়ে দাও নিবারণের নূন্যতম অধিকার।
তারা এখন ভীরু পায়ে নিরুপায়, নগ্ন আদিবাসী
ইজ্জত-লজ্জা রক্ষা করছে দুই দু’গুণে চার হাতে।
প্রার্থণাকারীদের বস্ত্র হরণ বন্ধ করো, ফিরিয়ে দাও সভ্যতা!
টরন্টো, জুন ২১, ২০২০
মৃত্যু
.
মৃত্যুর ক্ষুধার মতো গরীবদের একটু বেশি ক্ষুধা,
এবং অভাবও অনেক ধারালো
চিন্তা খাদ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ, সংক্ষিপ্ত।
জলপানে পেটের প্রাপ্তি মিটে না-
লালিত তীব্র অনাহারকে জানি,
যন্ত্রণাদগ্ধ অভিজ্ঞতায় নেতিয়া পড়া হাত কাঁদে
অথবা কাঁপে
অনটনে নড়বড়ে পা নড়ে অথবা পাথর।
ঘুম-ঘুম এলোমেলো, অস্থির ক্লান্তি।
মৃত্যুর খুব নৈকট্যে থাকে ক্ষুধা
অথবা প্রতিবেশি
জীবনের জানালা দিয়ে আমি তাকে দেখেছি,
মৃত্যুও আমাকে দেখেছে উঁকি দিয়ে।
আর আমরা হাসাহহাসি করি।
টরন্টো, ১৪ মে ২০২০
মিডিল ফিঙ্গার
.
কোবরা স্টারশিপ’এর মিডিল ফিঙ্গার বিখ্যাত গানটা আমাকে টানে নি,
তার চেয়ে আদিবাসীদের শিকারে ব্যবহৃত
সাংকেতিক ইশারার ভাষায়
বৃদ্ধা, তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা, কনিষ্ঠার কারুকাজে
আমি মুগ্ধ এবং আমিও ব্যবহার করি ভিন্ন ভাষায়
টিপসই-স্বাক্ষরে।
বডি লেঙ্গুয়েজ আর ফিংগার লেঙ্গুয়েজ সমগোত্রীয়
তবে তফাৎ বাংলা আর অসমীয় বর্ণমালার মতো।*
জেনেছি, চিকিৎসাবিজ্ঞানে আঙ্গুলের কোনো নাম নেই,
সেখানে নির্দেশিত হয়- [১ ২ ৩ ৪ ৫] সংখ্যায়।
ঐতিহাসিক তর্জনীর ভূমিকা ইতিহাসে আছে,
বাগদত্তা বন্ধনের জন্য নির্ধারিত
অনামিকা!
তবে মিডিল ফিঙ্গারের অনেক বদনাম।
তুমিও ভালোবাসো মিডিল ফিঙ্গার!
টরন্টো, ৭ জুন ২০২০
যে যা করতে চায়, করতে দাও
.
যে জাদুকর হতে চায়, তাকে জুয়েল আইচ হতে দাও,
যে গান গাইতে চায়, তাকে মাহফুজুর রহমান হতে দাও।
যে নেশা করতে চায়, করতে দাও
যে কবিতা লিখতে চায়, লিখতে দাও
যে ঘুমাতে চায়, তাকে ঘুমাতে দাও
যে দাস হয়ে চায়, তাকে ক্রীতদাস হতে দাও।
যে ধনী হতে চায়, তাকে বেল গ্রেড হতে দাও
যে শিল্পী হতে চায়, তাকে পিকাস্যু হতে দাও
যে ভুলে যেতে চায়, তাকে ভুলে যেতে দাও
যে আত্মহত্যা করতে চায়, করতে দাও
যে প্রধান মন্ত্রি হতে চায়, হতে দাও
যে যা করতে চায়, করতে দাও।
শুধু ধর্ষককে ধর্ষণ করতে দিওনা।
তার জন্য খুনের শাস্তি বিধান পাশ হোক জাতিসংঘে!
টরন্টো, এপ্রিল ২০, ২০২০