
বিস্মরণের নদী
.
বিস্মরণের নদীতে আমি এক বোটসম্যান।
ঘুরতে দেখিনি…
নিজেই এক বোটসম্যান আমি ক্ষরস্রোতা বিস্মৃতির নদীতে।
দিশাময়ী, দূর গঞ্জের বাজারে তুমি হ্যাজাকের আলোর মতো। দীপ্তিময়ী তুমি, জোনাকের গুঞ্জরণ কালো আঁধারের মৌতাতে।
বিদগ্ধ ও বিষণ্ণ। নীরব ও একাকীনি। অসীম অপেক্ষার দাওয়ায় বসে আছো, বিপুল ডিপ্রেশনে।
তোমাকে তবুও আমি মাঝে মাঝে ভুলে যাই।
ভুলে যে গিয়েছি সেকথা মনে করে করে কেবলই ভুলে যেতে থাকি। বিস্মরণের নদীতে আমি নৌকা ঠেলেছি অনেক। দেখেছি জল, গভীর স্মৃতির মতো বয়ে যায়। সকল কথা ঢাকা পড়ে কলকল পানির কাকলীতে। এ নদীর পানি, ভাসিয়ে নিয়ে চলে স্মৃতির নৌকাখানি। তার সাথে ভেসে যায় মন। দূরের আকাশে না জানা পাখির মতন।
আমি নই সব এ নদীর দোষ। এ যেন নদী নয় কোনো স্মৃতিখোর নিমগ্ন রাক্ষস।
বিস্মরণের নদীতে আমি এক বোটসম্যান। কেবলই
ভুলে যাই। ভুলে যেতে যেতে। নিঃশব্দে, নিভৃতে-
আমি যেন তোমার ভেতর বয়ে যাচ্ছি নদীর মতন।
তুমি যেন আমার ভেতর বয়ে যাচ্ছো নদীর মতন।
ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর
.
বসন্তবণিক আমি।
শীতের শহরে বসন্তের
ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
বেচে দিচ্ছি ঝরাপাতা, উতল শুকনো বাতাস, ধুলোওড়া দিন।
ফুল আমি বেচি না কখনো।
ফেরি করি দুঃখই মূলত।
জনে জনে জাগাই হাহাকার।
বলি, সুখী নও, সুখী তুমি ছিলে না কখনো।
তোমার মেকি বসন্তের প্রান্তে বসে
খবর দিই- জানাই, এর চেয়ে ভাল, আরও দুখের ঋতু পৃথিবীতে ছিল। তারা তো আসে না শহরে।
গ্রামেও আর আসে না।
বিগত পৃথিবীর সেইসব দিন
আমরা এনেছি নতুন করে।
সুর দিচ্ছি পুরনো দিনের গানে।
তৈরি করছি মনোবেদনার তীব্র অসুখ, বহুযুগের আড়ালে ঢাকা পড়া
বিষণ্ন ফাল্গুন।
ক্রমে অসুখী করে তুলবো তোমাদের। বিক্রি করবো পুরনো দুখের দিন। অসুখী পৃথিবীর না দেখা
অসুখী বসন্ত।
বেচবো কামনার সারাৎসার।
বাসনার বিলাস।
বসন্তবণিক আমি,
পৃথিবীতে স্প্রিং এনেছি।
শহরে এনেছি মেলানকলি,
সহস্র দুঃখের বেসাতি নিয়ে ঘুরছি
পথে পথে।
তোমার সুখের বসন্তে আমি দেব
দুখের আরতি,
একাকীত্বের স্পর্শ দেব
তীব্র ভীড়ের ভেতর।
বসন্তের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর আমি। বসন্তবণিক আমি নিখিল যাতনার।
ধুলোর দিনে ফেরা
.
ঘনায়ে এসেছে আবার
ধূলো ওড়া দিন
পাতারা গাছের ডালে
টানটান সতর্ক
উড়ানের অপেক্ষায়
মায়াবী পাখনা লাগিয়ে
দুলছে বাতাসে
যেন কোনো বিউগেল
বেজে উঠলেই
ফুলেরা ফুটবে কোরাসে
সমস্বরে গেয়ে উঠবে কোকিল
পাতারা উড়াল দেবে
ডাল থেকে ডালে
ভেসে ভেসে
অনন্ত বাতাসে
দূরে
অনেক দূরে
চলে যাবে নিজেরও অজান্তে
এর চেয়ে ভাল কোনো
মরণ আছে নাকি পৃথিবীতে
মানুষও এমন করে
যদি মরে যেত পাতার মতো
নির্ভার বসন্তের
মুখরিত উড়ানে উড়ান
পৃথিবীতে মচমচে
বসন্ত এসেছে
এবার গোলাপের গ্রামে যাবো
গোলাপকে বলবো
তোমার কী নাম
গোলাপ বলবে না কিছু
নওশীনকে নিয়ে যাবো সাথে
নিরুত্তর গোলাপের পর
জিজ্ঞেস করবো তোমার কী নাম
নওশীন।
নওশীনও বলবে না কিছুই।
দেখবে বসন্ত এসে গেল
আদিগন্ত গোলাপ বাগানে
ফুল ফোটা
ধুলো ওড়া দিন
মরার কোকিল
ফিরে এলো
তুমিও কি ফিরে এলে
নওশীন তুমুল
হাওয়ায় হাওয়ায়
তবে তো
মরে গিয়ে বেঁচে ওঠার দিন
ফিরে এলো
আহারে আবার
বেঁচে থেকে মরে যাবার দিন
ফিরে এলো
আহারে আবার
আরও কিছু বেশি
.
তুমিও তো বোঝো না আমাকে
বলে নাবিলা তাকায় আমার দিকে
আমি তাকে নিবিড়ভাবে দেখি
কণ্ঠে অনুযোগ নেই
মুখে শ্লেষ নেই
শুধু যে
বলার জন্যই বলেছে
তাও আমি বুঝি
তবু আমি শুধু জানি
নাবিলার অনেক দুঃখ
এমন তো হতেই পারে
কেউ তাকে বোঝে না
পৃথিবীতে কে বা কারে বোঝে
একই ছাদের নিচে
নাবিলারা যাদের সঙ্গে থাকে
তারাও কি ঠিকঠাক বোঝে
তাদের নিজস্ব নাবিলাকে
নাবিলার দুঃখ
এর থেকে একটু বেশি
কখনো কেউ তাকে
বোঝার চেষ্টাটুকুও করেনি
জানতে চায়নি
একাকী প্রতিটি সন্ধ্যায়
কেন এত দেরি করে আলো জ্বলে
নাবিলার ঘরে, কেন সে
দিগন্তের শেষ আলো মিলিয়ে যাবার পরও
দাঁড়িয়ে থাকে জানালার সামনে
কী সে দেখে আগ্রহ ভরে
সহসা ঘনায়মান অন্ধকারে
দুনিয়াতে কার এত সময়
মনে করে নাবিলাকে
মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করবে
যখন সন্ধ্যা নামে তখন তুমি কী করো
নাবিলার দুঃখ আরেকটু বেশি
কেউ এমনকি তাকে
জিজ্ঞেসও করে না
নাবিলা, কেমন আছো
বরং নাবিলা প্রতিদিন দুপুরে
আমাকেই জিজ্ঞেস করে
কী খবর কেমন আছো
খেয়েছো তো দুপুরে
আর মাঝে মাঝে বলে
তুমিও তো আমাকে বোঝো না
একটা আয়না হয়ে
আয়নার মতো করে
নাবিলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি
কিছুটা মাথা নিচু করে
যেন আমিই অপরাধী
অথচ আমার আগে
অনেক পুরুষ আয়নার সামনে
নাবিলা দাঁড়িয়েছে
কেউ তাকে
একটি বারের জন্য জিজ্ঞেস করেনি
তোমার মুখ আজ
এতো ভার হয়ে আছে কেন
নাবিলার দুঃখ
এর চেয়ে আরও একটু বেশি
নওশীনের বাগান
.
কোনো এক গভীর রাতে
নওশীনের বাগানে আমি
ফুল হয়ে ফুটে থাকি
ভোরবেলা ঘুম ঘুম চোখে
বারান্দায় রোদের আলোয়
আমাকে দেখে
অবাক হয়ে যায় নওশীন
কিছুই বলে না মুখে
ভাবে ঘুমাতে যাবার আগে
কেন যে শেষবারের মতো
বারান্দায় এলো না
হয়তো তখনই আমি
ফুটেছি নওশীনের বাগানে
কিংবা তারও পরে
যখন হিম হিম শীত
রাতের শিশির আমাকে
জাগিয়ে তুলেছে তীব্র শিহরণে
তখন নওশীন গভীর ঘুমে
স্বপ্নে কোথাও চলে গেছে
একটা নদীর ধারে
চাঁদের আলোয়
আগুন জ্বালিয়ে বসে আছে
সঙ্গে অচেনা কয়েকটা লোক
নিজেকে দেখতে পাচ্ছে না
কাউকে চিনতে পারছে না
শুধু শুনতে পাচ্ছে নদীর স্বর
বারান্দা থেকে আমি নওশীনের
স্বপ্নের ভেতরে বইতে থাকা
নদীর কলহাস্য শুনি
ফুটে উঠি গোপনে
নওশীনের অজান্তে
আমার কাছে এসে ঘন করে
শ্বাস টানে, তীব্র আকাঙ্ক্ষায়
তবু কোনো গন্ধ সে পায় না
শুধু বলে, ধুর! রাতে যে কেন এলাম না
আমার কিছুই ভাল লাগে না
নওশীন।
এমনকি এভাবে ফুটে উঠতেও
ভাল লাগে না
তবু যে কেন ফোটালে
সকালের রোদের আগেই
ফুরিয়ে যাচ্ছি দেখো
তোমার চোখভরা মায়া
বুকভরা হাহাকার
এর চেয়ে
তোমার আকাঙ্ক্ষার ভেতর সুপ্ত হয়ে
থাকাই মনে হয় ভাল ছিল
তোমার বাসনার মধ্যে গোপনে
ভালই ছিলাম
এভাবে কেন যে বারান্দায় বুনে দিলে
সন্ধ্যা
.
এখন তো আমরা সকলেই জানি
কোথাও না কোথাও দিনভর
সন্ধ্যা নামছে এই পৃথিবীতে
সূর্য সরিয়ে নিচ্ছে আলো
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামছে
হয়তো সকালও হচ্ছে
কোথাও না কোথাও
কিন্তু সকাল নয়
সন্ধ্যা মানুষকে পাগল করে দেয়
অজানা ভয়ে
দিগবিদিক ছুটতে ইচ্ছা করে
একাকী মানুষের
কিন্তু সে উল্টোটাই করে
ঘরে ফেরে
ভয়ে ভয়ে আকাশের দিকে তাকায়
প্রতিটি সন্ধ্যা জরুরি প্রয়োজনে
ঘরে ফেরার তাড়া দেয়
এমনকি ঘরে থাকলেও
লোকে ভাবে ফিরতে হবে দ্রুত
শুধু সন্ধ্যা নয়, অকারণ বিষাদও
পুরনো স্মৃতি থেকে এসেছে
আমাদের ভেতর
আগে যেখানে আমরা থাকতাম
সেখানে সারাক্ষণ সন্ধ্যা লেগে থাকতো
আর থাকতো অকারণ বিষাদ
প্রত্যেক সন্ধ্যায় কিছুটা সময়ের জন্য
আমরা দূরতম অতীতের কথা
ভাবি মনেরও অজান্তে
আমাদের পুরনো ঘর
দূর থেকে ফেরার তাড়া দেয়
আকাশের দিকে তাকালে
ভয় লাগে
ঘোর সন্ধ্যা বেলা
আর আসে সঘন বিষাদ
দূরে
.
কিছুই ভাল লাগে না
এরকম দিনে।
দূরের একটা অচেনা জায়গায়
যাবো যাবো করেও
যাওয়া হয় না কোনোদিন।
যেখানে ঘন আমবাগানের ধারে
সূর্য ডোবার সময়
কোকিল ডাকে।
একবার মনে হয়
চলে যাই
একবার মনে হয় থাকি
বসন্ত আসার আগে
এমন হয়। শীত যাবার আগেও এমন হয়।
আসলে তো বসন্ত ফসন্ত কিছুই না
একটু মন কেমন করবে
আর কী? আর কিছুই না।
যা ছিল তাই
কোনো কারণ ছাড়া
মন খারাপ থাকার পর
সব ঠিক হয়ে যাবে
চলবে আগের মতো
শুধু মনে হবে কোথাও চলে যাই
হয়তো কোনো মটরশুটি ক্ষেতের পাশে
গ্রামের বাজারে পেঁয়াজু ভাজার গন্ধ
ঠান্ডার মধ্যে লোকে
চা খেতে খেতে আলু নিয়ে গল্প করছে
নদীর পর
দীর্ঘ সবুজ গম ক্ষেত
ওইসব জায়গায় গেলেও আসলে
কাজ হবে না
তাই বসে আছি
বিষাদের জানালার ধারে
নেমে আসা সন্ধ্যার মতো
কখন যে সন্ধ্যা হয়
বুঝতে পারি না
যখনই আনমনা হয়ে যাই
বুঝতে পারি বাইরে সন্ধ্যা নেমেছে।
কয়েকদিন টানা মন খারাপ থাকলে
মনে হয় বসন্ত আসছে।
কোথাও কোনো কোকিল
ডেকেছে নিশ্চয়ই।
রাত
.
কোথাও হয়তো নির্জন হয়ে আছে
এই রাতও
শব্দ করে শিশির পড়ছে
কাঁঠাল পাতার ওপর
মানুষের মুখ থেকে ভাপ বেরুেচ্ছে
যেন উনুন থেকে মাত্র নামানো হলো
এক পাতিল ভাত
ডিম ভাজার মৌ মৌ গন্ধ
ছড়ায়ে গিয়েছে গভীর রাতে
পাড়াগ্রাম জুড়ে
ধানের শীষে
প্রতিটি দানার ওপর জল
জমে আছে
হয়তো কোথাও শব্দহীন গভীর রাতে
উঠেছে মরণ চাঁদ
ধান ক্ষেতকে মনে হচ্ছে নদী
নদীকে মনে হচ্ছে বাঁকা গ্রামের রাস্তা
সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে জোছনায়
টুপটুপ করে ঝরে পড়ছে শিশির
এই দুনিয়ায়
নদী নিরবে বয়ে যাচ্ছে
যেন এই হিম বাতাসের ভেতর
নির্জন রাতের চাঁদ
উথালপাতাল ঢেউ লাগিয়ে দিয়েছে
সর্বনাশ হচ্ছে
কোথাও হয়তো একদম নিরব হয়ে আছে চরাচর
অনেক দূর থেকে
কিছুটা আভাস আমিও পাচ্ছি
টের পাচ্ছি কিছু স্পষ্ট আলামত
পেত্রা
.
তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি অনন্ত ধূলার দেশে, সময়ের স্রোতের ভেতর। যেন কোনো হড়কা বান ধুয়ে নিয়ে গেছে মরুর গহীনে লুকানো আমাদের তাসের আসর। আমাদের শহর ছিল পাথুরে খিলানে ছাওয়া, পাহাড়ে খোদিত ছিল ঘর। গোপন ঝরনা থেকে ঝরা এসে পানি দিয়ে যেত শুষ্ক ঠোঁটের ভিতর। হৃদয়ের তীব্র ব্যথা, অকস্মাৎ ধেয়ে আসা মারীও মড়কে। পেছনে ফেলে রেখে স্বপ্নের শহর, আবার নেমেছি অনামা ধুলোর সড়কে। পেটে কোনো দানাপানি নাই। তীব্র ধূলার ঝড়ে কাপড়ে ঢেকে রেখে চোখ। ভেবেছি সহস্রবার, আমার না হলেও, এ সংসার তোমার জন্য, অন্তত সুখের হোক। হয়নি তোমারও, আমার সকল মোনাজাত ম্লান করে দিয়ে পাহাড়ী নদীর মতো নিরন্তর ঝরেছে তোমার চোখের পানি। তোমার গভীর অসুখ, আমার মনেও বাসা বেঁধেছে একরাশ গ্লানি। বারবার ফিরে পেয়ে হারিয়ে ফেলেছি আমি তোমাকে আবার। নব এক ইতিহাসের বাঁকে। যেখানে নদীর শব, গাছপালা মরে পড়ে আছে, চারদিকে অনেক পাথর। গ্রেফতার হয়ে থাকা মানুষের আত্মারা ভূতের মতন করুণ আওয়াজ করে ডাকে। কবে কোন আর্কিওলিজস্ট, অনেক কাল পরে খুলে দেবে তোমার দরজা। আলতো করে ছুঁয়ে দেখবে আমাদের সভ্যতার রেশ। অপেক্ষা শেষ হবে। তাকে তুমি গলায় জড়াবে। আলিঙ্গনে ধরবে তার দেহ। বলবে, তুমি আমার আলো। হয়তো আমার মতো পুনরাবৃত্তি করবে সে। বলবে, তাহলে তো তুমি আমার চোখ। তবু, ধূলায় হারানো শহর বিস্মৃতির কোটর থেকে ফিরে আবার আমাদের হোক।
ফেক নিউজ
.
শহরজুড়ে ঘুরছে পুতিনের বাঘ। ঘরে থাকো, ঘরে থাকো- বলে তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অলি ও গলি। মহাচীনের প্রেসিডেন্ট টুপি পরে ঘুরছে মসজিদে মসজিদে। পরোয়ারদিগার, হামাকের মাফ করে দেন বলে বলে কানতেছে। হাত তুলে। ব্রিটেনের রাণী, তার ছেলে, বরিস জনসন- সবাইকে ধরেছে এক অলীক ভাইরাস। দেশ থেকে চলে যাচ্ছে শেষ মার্কিন। চলে যাচ্ছে ব্রিটিশ। থানকুনি পাতা খাচ্ছে লোকে। শুনছে ভোরের আজান। এত যে কড়া লোক ডোনাল্ড ট্রাম্প, তিনিও কোরআন খুলে করছেন করুণ তেলাওয়াত। ডেটল ঢেলে দিচ্ছে সদাশয় পাদ্রি। ভদকায় সেরে নিচ্ছে গোসল বেলারুশের লোকেরা। চীনাদের প্রতি বেলা চা খাওয়ানো হচ্ছে। আমলকি, দারচিনি, মাল্টিভিটামিন, এজিথ্রোমাইসিন- যার যা খুশী খাচ্ছে। শহর জুড়ে ঘুরছে পুতিনের বাঘ। ভয় পেয়ে গেছে সবাই। গুজবে কান না দেবার জন্য মাইকিং হচ্ছে চারদিকে। টেলিভিশনের সামনে বসানো হয়েছে কড়া পাহারা। চারদিকে ফেক নিউজ। মরছে মানুষ। মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে মানুষ। মানুষকে ছেড়ে যাচ্ছে মানুষ। প্রেমিকের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না প্রেমিকার। জ্বর আসছে শরীর উজাড় করে। কাশি হচ্ছে গমকে গমকে। গলা ব্যথা। টেস্ট হচ্ছে। প্রতিদিন মরছে মানুষ। মরছে একেকটা ফেকনিউজ। শহর জুড়ে ঘুরছে পুতিনের বাঘ।
ভয় তো পেতেই হবে, ভয়েরই যখন ব্যাপার। আতঙ্কিত হতে হবে। আতঙ্কিত হবারও তো ব্যাপার। যখন যা চলবে, তখন তাই পেতে হবে আমাদের। ভয়ের সময় ভয়, আতঙ্কের সময় আতঙ্ক। খুশীর সময় খুশী। আনন্দের সময় আনন্দ। মৃত্যু এসে মেসেঞ্জারে নক দিয়ে যাচ্ছে। একটা ফেক অডিওর মতো, কিংবা বড়জোর ভিডিও। পাঁচ মিনিটের। কেউ কারোটা শুনছে না। সবাই সবারটা শুনছে। সবই বিশ্বাস করছে। কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না আর। তবুও আমি বিশ্বাস করছি, গরম বাড়লে, প্রখর রোদে, আর্দ্র আবহাওয়ায় কমে যাবে এইসব। বিজ্ঞান কিছুই বলতে পারছে না। কবে যে যাবে করোনা। গেলে যাক। করোনা চলে গেলে একদিন ঘামতে ঘামতে আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে যাবো। চুমো খাবো। না। চুমো খাবার আগে দেখবো তোমার কপাল ছুঁয়ে। দেখবো তোমার শরীর অনেক গরম। অনেক ফেক নিউজের ভিড়ে তুমি একটা ফেক নিউজ। আর আমি একটা আস্ত গুজব। ঘুরে বেড়াচ্ছি চারপায়ে। যেন পুতিনের বাঘ। দস্তয়েভস্কির শহরে ঘুরে বেড়ানো ডায়ালজিক পলিফনি। মিখাইল বাখতিন।