Author Picture

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক পটভূমি – পর্ব-২

একেএম শামসুদ্দিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষই করেনি। বিরোধিতাকারীদের মধ্যে মুসলমান সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গও ছিলেন। এই বিরোধিতায় চার ধরনের মতবাদ পরিলক্ষিত হয়:

এক। পশ্চিমবঙ্গের কিছু মুসলমান–তারা মনে করেছিলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কোনো লাভ হবে না। পূর্ববঙ্গের মুসলমানদেরই লাভ হবে।

দুই। পূর্ববঙ্গের কিছু মুসলমান মনে করেছিলেন, এই অঞ্চলের খুব অল্প সংখ্যক ছাত্রই স্কুল পর্যায়ে পাশ করতে পারে। কলেজ পর্যায়ে তাদের ছাত্র সংখ্যা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা খুবই কম হবে। পূর্ববঙ্গে প্রাইমারি এবং হাইস্কুল হলে সেখানে পড়াশুনা করে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়বে। আগে সেটা দরকার। পূর্বের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা মনে করেছিলেন, যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে মুসলমানদের জন্য যে সরকারী বাজেট বরাদ্দ আছে তা থেকে বেশীরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যয় হয়ে যাবে। নতুন করে প্রাইমারি বা হাইস্কুল হবে না। যেগুলো আছে সেগুলোও অর্থের অভাবে ভুগবে।

তিন। বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং প্রখ্যাত দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা মৌলানা আকরাম খাঁন আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ করলে সাধারণ মুসলমানদের শিক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দানের ক্ষেত্রে অর্থের ব্যবস্থা করবেন না। মুসলমানদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা অপেক্ষা প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। কারো কারো মতে কয়েকজন ভাগ্যবানের জন্য অর্থ ব্যয় না করে বেশিরভাগ মানুষের জন্য তা ব্যয় করা উচিৎ। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান, ফলে বাংলার মুসলমানদের বিশেষ কিছু লাভ হবে না। বরং গরীব অথবা যোগ্য মুসলমান ছাত্রদের বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা এবং দু-একটি প্রথম শ্রেণির কলেজ স্থাপন ইত্যাদি করলে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার সম্ভব হবে।

চার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য উত্তর ও মধ্যপ্রদেশের অবাঙালি মুসলমান নেতাদেরও বিশেষ আগ্রহ ছিল না। তাঁরা মনে করতেন, এই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে পূর্ববঙ্গের মুসলমানরা আলিগড়ে আর পড়তে আসবে না। তাতে আলিগড় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিত্তবান মুসলমানরা আলিগড়কে আর সাহায্য করবে না।

হঠাৎ করে ১৯১৫ সালে সলিমুল্লাহের মৃত্যু ঘটলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর জমিদার নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী শক্ত হাতে এই উদ্যোগের হাল ধরেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় পূর্ববঙ্গের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও শিক্ষাবিদরা নানাপ্রকার প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। কিন্তু, হঠাৎ করে ১৯১৫ সালে সলিমুল্লাহের মৃত্যু ঘটলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর জমিদার নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী শক্ত হাতে এই উদ্যোগের হাল ধরেন। অন্যান্যদের মধ্যে আবুল কাশেম ফজলুল হক উল্লেখযোগ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় পূর্ব বাংলার হিন্দুরাও এগিয়ে এসেছিলেন। এদের মধ্যে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বলিয়াদির জমিদার কিশোরী লাল রায় চৌধুরী অন্যতম।

১৯২০ সালের ২৩ মার্চ The Dacca University Act, 1920 আইন আকারে পাশ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ গঠনের সময় যে প্রাণচাঞ্চল্য আসে, তার চেয়ে বেশি চাঞ্চল্য আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব হতেই নবাব সলিমুল্লাহ নবাব এস্টেটের জমি দান করার অঙ্গীকার করেন এবং তাঁদের ৬০০ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়ার ঘোষণা দেন। ইংল্যান্ড থেকে খ্যাতনামা স্থপতি মি. গ্যাথারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন নির্মাণের ব্যাপারে পরামর্শের জন্য আনা হয়েছিল। রমনায় প্রধানত নবাব এস্টেটের জমিতেই এবং নতুন প্রদেশ গঠনের সময় নির্মিত সরকারী ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়। যেমন কার্জন হল, পুরাতন ঢাকা কলেজ ( হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে পুরানো বাড়ি), ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মূল ভবন প্রভৃতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার চৌহদ্দি ছিল এখনকার নীলক্ষেত এএফএম রহমান হল থেকে নিমতলী (বঙ্গবাজার)রেলওয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত, সলিমুল্লাহ হল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের দক্ষিণ সীমানার চানখাঁরপুল পর্যন্ত। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অনুষদ ছিল- কলা, বিজ্ঞান এবং আইন। কার্জন হল ছিল বিজ্ঞান অনুষদের ভবন এবং মেডিক্যাল হাসপাতালের পুরোনো ভবনটি কলা ও আইন অনুষদের। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের নতুন ভবন নির্মাণের আগে মুসলমান ছাত্ররা মেডিক্যালের দোতালায় থাকতেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চ্যান্সেলর ছিলেন তৎকালীন প্রাদেশিক গভর্নর আলেকজান্ডার জর্জ রবার্ট বুয়ার লিটন এবং ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন পি জে হার্টগ। তিনি সতের বছর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ছিলেন। ধর্মীয় পরিচয়ে হার্টগ ছিলেন একজন ইহুদি, জাতিতে ব্রিটিশ। খান বাহাদুর নাজিরউদ্দিন আহমেদ ছিলেন প্রথম রেজিস্টার আর ট্রেজারার নিযুক্ত হয়েছিলেন নবাব পরিবারের খাজা শাহাবুদ্দিন। তিনি ছিলেন স্বাধীনতা উত্তর বঙ্গবন্ধু কর্তৃক জাতিসংঘে নিয়োজিত বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিনের পিতা।

খান বাহাদুর নাজিরউদ্দিন আহমেদ ছিলেন প্রথম রেজিস্টার আর ট্রেজারার নিযুক্ত হয়েছিলেন নবাব পরিবারের খাজা শাহাবুদ্দিন। তিনি ছিলেন স্বাধীনতা উত্তর বঙ্গবন্ধু কর্তৃক জাতিসংঘে নিয়োজিত বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিনের পিতা

১৯২১ সালের ১ জুলাই ২৮ জন কলা, ১৭ জন বিজ্ঞান এবং ১৫ জন আইনের শিক্ষক নিয়ে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানটি হয় কার্জন হলে। ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ডিগ্রি ক্লাসে অধ্যয়নরত ছাত্রদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। শুধু ছাত্র নয়, শিক্ষক এবং লাইব্রেরির বই ও অন্যান্য উপকরণ দিয়েও এই দুটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে।

ইংরেজি, সংস্কৃত ও বাংলা, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ, ফার্সি ও উর্দু, ইতিহাস, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, অঙ্ক বা গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন আইন এবং শিক্ষা এই ১২ টি বিভাগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু করে। বিভিন্ন বিভাগের বিএ, বিএসসি ও অনার্স এবং এমএ ক্লাসে মোট ৮৭৭ জন ছাত্র নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয়। সকল ছাত্রকে কোন না কোন হলে আবাসিক বাস সংশ্লিষ্ট থাকতে হত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম তিন বছরের অনার্স চালু হয় যা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু ছিল দুই বছরের। যে সব প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার সাথে জড়িত ছিলেন তাঁদের মধ্যে, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ.সি. টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, জি.এইচ. ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিউ.এ.জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, স্যার এ. এফ. রাহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ অন্যতম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল ঢাকা হল (পরে শহীদুল্লাহ হল), জগন্নাথ হল এবং মুসলিম হল (পরে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল) নিয়ে। শুরুতে পুরানো ঢাকা কলেজ ভবনকে রূপান্তরিত করা হয় ঢাকা হলে। বর্তমানে যেখানে জগন্নাথ হল ওই জায়গাটির মালিক ছিলেন বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী। আবাসিক হল নির্মাণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়েই তিনি জায়গাটি দান করেন। হলটির নামকরণ করা হয় তাঁর পিতা জগন্নাত রায় চৌধুরীর নামে। হলগুলো শুধু ছাত্রাবাস রূপেই নয় সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের শিক্ষা, সমাজ ও সাংস্কৃতিক জীবনে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা ও অনুশীলন কেন্দ্ররূপেও পরিকল্পিত হয়েছিল। পরিকল্পনায় ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক কোন না কোন হলের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, ছাত্রদের উপদেষ্টারূপে এবং অনুশীলনী ক্লাস নেবেন। প্রত্যেকটি হলকে চারটি হাউসে বিভক্ত করা হয়েছিল চারশত ছাত্রের জন্য আর প্রতি পঁচাত্তরজন ছাত্রের তত্ত্ববধানের জন্য একজন করে আবাসিক শিক্ষক বা হাউস টিউটরের ব্যবস্থা ছিল। হিন্দু ছাত্রদের জন্য জগন্নাথ হল, মুসলমান ছাত্রদের জন্য সলিমুল্লাহ মুসলিম হল আর সবধর্মের ছাত্রদের জন্য ঢাকা হল স্থাপিত হয়েছিল।

প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার সাথে জড়িত ছিলেন তাঁদের মধ্যে, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ.সি. টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, জি.এইচ. ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিউ.এ.জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, স্যার এ. এফ. রাহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ

প্রতিষ্ঠালগ্নে ঢাকা সমাজের রক্ষণশীলতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রী ভর্তির ব্যাপারে খুব দ্বিধান্বিত ছিলেন। কিন্তু কলকাতা বেথুন কলেজের গ্রাজুয়েট লীলা নাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে ছিলেন নাছোড়বান্দা। ১৯২১ সালে লীলা নাগ ইংরেজিতে এমএ ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯২৩ সালের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রিধারী হিসেবে বের হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ছাত্রী সুষমা সেনগুপ্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী ছিলেন গণিত বিভাগের ফজিলতুন্নেসা। ধীরে ধীরে ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ছাত্রী হোস্টেলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই উদ্দেশে ১৯২৬ সালের ২৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ নং বাংলো ‘চামেরি হাউস’-এ (বর্তমানে সিরডাপ ভবন) প্রথম উইমেনস হাউস প্রতিষ্ঠা করা হয়। উইমেনস হাউস মাত্র তিন জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ১৯৩৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন হল নির্মাণ করা হয়। অতঃপর চামেলি হাউজের মাত্র ১২ জন নারী শিক্ষার্থী নিয়ে এই হল যাত্রা শুরু করে। ১৯৬৪ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয় “রোকেয়া হল”।

১৯০৫ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে নতুন প্রদেশ গঠনের পরবর্তী ছয়টি বছরে পূর্ব বাংলার মানুষের, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি অর্জিত হয়, সেই ধারা অব্যাহত রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য ছিল। আধুনিক শিক্ষা সম্পর্কে বাঙালি মুসলমান উদাসীন ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর আধুনিক শিক্ষার স্বাদ পায় এবং এই আধুনিক শিক্ষার সুবিধা নিয়ে সরকারী চাকরীতে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এতে শুধু আর্থিক উন্নতি নয়, একটি সংস্কৃতিমান মধ্যশ্রেণি গড়ে উঠতে থাকে। যে মধ্যশ্রেণির সদস্যরাই জীবনের সব ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে ভূমিকা রাখেন। এই মধ্যশ্রেণি সদস্যরাই বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস থেকে এদেশের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি কৃষ্টিকে রক্ষা করে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের হাত ধরেই এসেছে আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

দেশে আজ পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-শিক্ষকদের দ্বারাই আজ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় সুপ্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানে যে অবস্থানেই থাকুক না কেন দেশের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজও সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেব প্রতিষ্ঠিত।

আরো পড়তে পারেন

ছাত্র-প্রতিবাদ: শক্তির এক প্রমাণপত্র

নিয়তি চিত্রনাট্য লেখে ঠিকই। তবে সেই কলমে কালিটা আপনাকেই জোগাতে হয়। নয়তো নিয়তি নিশ্চুপ বসে থাকে প্রাণহীন কলমের প্রান্ত হাতে; আর জীবন-ইতিহাসের পৃষ্ঠা সাদাই থেকে যায় আলস্যের করুণ পরিণতি হয়ে। সেই করুণ পরিণতির দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই হঠাৎ আমাদের ছাত্রসমাজ বৈষম্যবিরোধী এক্সটেনশন নিয়ে হাজির হলো নিয়তিকে দিয়ে বাঙালির বিজয়গাঁথা লিখিয়ে নিতে। ‘এমন কতদিন কাঁদিনি /….

বাংলাদেশে চার্টার্ড সেক্রেটারী পেশার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

কিছুটা বিলম্ব হলেও বাংলাদেশে চার্টার্ড সেক্রেটারী পেশার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সৃষ্টি হয়েছে। দেশের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সমূহে দক্ষ চার্টার্ড সেক্রেটারী তৈরিতে দেশে এই পেশার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারীজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি)’ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে চার্টার্ড সেক্রেটারী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে এই পেশার অগ্রযাত্রা শুরু হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন তিনটি….

একাত্তরের গণহত্যা প্রতিহত করা কি সম্ভব ছিল?

২৫ মার্চ কালরাতে বাঙালি জাতির স্বাধিকারের দাবিকে চিরতরে মুছে দিতে পাকিস্তানি নরঘাতকেরা যে নৃশংস হত্যাকান্ড চালিয়েছিল, তা বিশ্ব ইতিহাসে চিরকাল কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওই এক রাতেই শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই ৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। গ্রেফতার করা হয় প্রায় তিন হাজার। এর আগে ওই দিন সন্ধ্যায়, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা একতরফাভাবে….

error: Content is protected !!