Author Picture

ত্রিভুজ প্রেমের মামলা

খন্দকার রেজাউল করিম

মিস্টার এবং মিসেস এল এ

 

‘হ্যালো, ‘‘মিস্টার এল এ’’, কেমন আছো?’ ফোনের অপরপ্রান্তে ক্যারোলের কণ্ঠস্বর দারুন উল্লসিত।
‘আমার নাম কবে থেকে আবার ‘‘এল এ হলো?’’ কেভিন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
‘জানোই তো লস এঞ্জেলস কে সবাই ‘‘এল এ’’ বলে ডাকে। তুমি ওই শহর থেকে এসেছো তাই এই নাম।’
‘তোমার আগের দেয়া ‘‘ক্যাবলাকান্ত’’ এবং ‘‘ভোলানাথের’’ চেয়ে ‘‘মিস্টার এল এ’’ অনেক সম্মানজনক। তবে তোমাকে আজ খুব উৎফুল্ল শোনাচ্ছে। কারণটা জানতে পারি কি?’
‘হ্যা, একটা দারুন সুখবর আছে। একটু আগে UCLA থেকে চিঠি পেয়েছি। ওরা আমাকে ভর্তির অনুমোদন দিয়েছে, সেই সাথে স্কলারশিপ! খবরটা তোমাকেই প্রথম দিলাম। বাবাকেও এখনো জানানো হয় নি। ভীষণ ভালো লাগছে। আমার স্বপ্নের শহর এবং স্বপ্নের ইউনিভার্সিটি শেষ পর্যন্ত হাতের মুঠোয় ধরা দিলো।’
‘তাহলে তো তোমাকেও এখন থেকে ‘‘মিস এল এ’’ বলে ডাকা যেতে পারে!’
‘ইচ্ছে করলে ‘‘মিসেস এল এ’’ বলেও ডাকতে পারো’, ক্যারোল বেশ আহ্লাদী কণ্ঠে জানালো।
‘তা বটে, UCLAতে পড়ার সময় অনেক ‘‘মিস্টার এল এ’’ র সাথে তোমার পরিচয় হবে। তাদের একজনকে পাকড়াও করলেই চলবে।’
‘আমি কার কথা বলছি তা নিশ্চয় বুঝতে পারছো।’ ‘আমার গাড়ির এসি টা কয়েকদিন হলো কাজ করছে না। কোনো ভালো মেকানিকের খোঁজ জানো?’ কেভিন আলাপটা অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করলো। এই কিশোরী মেয়েটির ঘাড়ে যে প্রেমের ভুত ভর করেছে তাকে কোনো রকম প্রশ্রয় দিতে কেভিন রাজি নয়।
‘এই এলাকার একমাত্র গাড়ি মেরামতের দোকানের নাম ‘‘ডেভস অটোমোটিভ।’’ ওটার মালিক হলো সুজানের স্বামী ডেভিড। ডেভ দুশ্চরিত্র এবং মদ্যপ হতে পারে, কিন্তু খুব ভালো মেকানিক। শব্দ শুনেই ও বলে দিতে পারে গাড়ির কোথায় গন্ডগোল। নির্ভরযোগ্য এবং সৎ দোকানদার বলে ডেভের সুনাম আছে। তিরিশ কিলোমিটার দূরের শহর থেকেও অনেকে ওর দোকানে গাড়ি মেরামত করতে আসে।’
‘দুশ্চরিত্র, মদ্যপ, নির্ভরযোগ্য, এবং সৎ। দোষ-গুনের অদ্ভুত সমাহার! এমন লোককে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। আমি কালকেই গাড়ি নিয়ে যাবো ওর দোকানে।’
হাজার হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের শস্যক্ষেত থেকে যে ফসল, এবং গরু-মুরগির ফার্ম থেকে যে ডিম-দুধ-মাংস উৎপন্ন হয় তা আমেরিকার শহরাঞ্চলে এবং পৃথিবীজুড়ে চালান যায়। ক্ষেতের আশেপাশেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্যাকেজিং, ক্যানিং, মিট-প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি এবং স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি। যে শ্রমিকেরা শস্যক্ষেতে এবং এসব কারখানায় কাজ করতে আসে তারা অনেকেই ‘আন-ডকুমেন্টেড’ শ্রমিক, আমেরিকায় কাজ করার জন্য যে সরকারি অনুমোদন পত্র লাগে, তা এরা জোগাড় করতে পারে নি। আমেরিকার দক্ষিণ সীমা পার হলেই মেক্সিকো, তারপরে গুয়াতেমালা, এল সালভাদর, হণ্ডুরাস, নিকারাগুয়া, কলম্বিয়া, বোলিভিয়া প্রভৃতি দরিদ্র রাষ্ট্র। এসব দেশে মাদকপাচারকারী গুন্ডাদের খুনোখুনি লেগেই আছে।

হাজার হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের শস্যক্ষেত থেকে যে ফসল, এবং গরু-মুরগির ফার্ম থেকে যে ডিম-দুধ-মাংস উৎপন্ন হয় তা আমেরিকার শহরাঞ্চলে এবং পৃথিবীজুড়ে চালান যায়। ক্ষেতের আশেপাশেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্যাকেজিং, ক্যানিং, মিট-প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি এবং স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি

ক্ষুধা এবং দারিদ্রের হাত থেকে মুক্তি এবং প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে এসব দেশের অনেকেই আমেরিকার দিকে যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে আমেরিকার দোরগোড়ায় পৌঁছে কেউ শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় খোঁজে, কেউ চায় অতিথি-শ্রমিক হিসাবে কাজ করার ছাড়পত্র। অনেকেই এসব ঝামেলায় না গিয়ে চোরাগুপ্তা পথে সীমানা পেরিয়ে আমেরিকায় ঢুকে পড়ে। এরাই হলো সেই আন-ডকুমেন্টেড শ্রমিকের দল। এরা আইন ভেঙে আমেরিকায় ঢুকেছে, আমেরিকায় বাস করছে, চাকরি করছে, এদেরকে চাকরি দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ, কিন্তু এদের জন্যেই আমেরিকার কৃষি-অর্থনীতি টিকে আছে। আমেরিকার পোশাক বানায় বাংলাদেশের শ্রমিক, আই-ফোন বানায় চীনের শ্রমিক। আর ক্ষেতের ফসল তুলে, প্যাকেজিং করে পৃথিবীময় চালানের ব্যবস্থা করে দেয় বিদেশী আন-ডকুমেন্টেড শ্রমিকের দল।
সুজানের স্বামী ডেভ একসময় এখানকার এক মিট-প্রসেসিং কারখানার হিউম্যান-রিসোর্স বিভাগের কর্মচারী ছিল। কারখানার শ্রমিক জোগাড় করা, তাদের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরিতে নিয়োগ দেয়া, বেতন নির্ধারণ করা, এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা, এসব হলো হিউম্যান-রিসোর্স বিভাগের কাজ। মিট-প্রসেসিং কারখানার শ্রমিকেরা প্রায় সবাই মেয়ে, কিশোরী থেকে বুড়ি, কেউ কেউ আন-ডকুমেন্টেড। অল্প বেতন, হাড়-ভাঙা খাটুনি, অসম্মান, যৌন হয়রানি, এবং সেই সাথে ইমিগ্রেশন অফিসারদের কবলে পড়ে আমেরিকা থেকে বিতাড়িত হবার ভয়। দূর দেশে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যে এরা মুখ বুঁজে সব সহ্য করে যায়, মাসের শেষে বেতনের অংশ দেশে পিতা-মাতা-পরিবারের কাছে পাঠানোর জন্যে স্থানীয় ওয়ালমার্টের মানি-এক্সচেঞ্জ অফিসে ভিড় জানায়।
এতো সব মেয়ের উপরে যে পুরুষের শাসন, নিজেকে শাসন করা তার পক্ষে কঠিন। চাকরি শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই ডেভের পদস্খলন ঘটলো। ধীরে ধীরে সে এক দুশ্চরিত্র মাতালে পরিণত হল। অল্প বয়েসে ভালোবেসে সুজান এবং ডেভের বিয়ে হয়েছিল । স্বামীর পরনারী আসক্তি সুজান সহ্য করতে পারে নি। প্রতিদিন কোন্দল। সুজান এবং ডেভের ঝগড়া এক রাতে চরমে উঠলো; স্ত্রী এবং ঘুমন্ত সন্তানকে পিছনে ফেলে ডেভ চিরতরে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অন্য এক মেয়ের সাথে বসবাস শুরু করলো। পরে যৌন হয়রানির অভিযোগে ডেভ চাকরি হারায়। ছেলেবেলা থেকেই ডেভ হাতের কাজে দক্ষ ছিল, গাড়ি মেরামত করা ছিল ওর শখ। চাকরি হারিয়ে ডেভ গাড়ি মেরামতের দোকান “ডেভস অটোমোবিল” খুলে বসলো।

আরো পড়তে পারেন

মহামায়া (পর্ব-২)

পড়ুন—  মহামায়া (পর্ব-১) ৩. কাঁচা রাস্তায় উঠতে উঠতে কাপড় ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে। পায়ের সাথে কাপড় জড়িয়ে যাচ্ছে। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। সবার আগে মনিশঙ্কর হাঁটছে। তার হাতে মাথায় খাবারের টিন। একটা কাপড়ের ট্রাঙ্ক। সকলের হাতেই কাপড়ের পুটুলি। এতটুকু আসতেই হাপিয়ে উঠেছে। আরো অনেকটা দূর যেতে হবে হেঁটে। তারপর নৌকায় সীমানার কাছাকাছি কোনো একটা জায়গায়।….

মহামায়া (পর্ব-১)

১. সূর্য উঠতে এখনো অনেকটা দেরি। আকাশে কোনো তারা নেই। পুরোটা আকাশ মেঘে ঢাকা। রাতের অন্ধকারটা আজকে আরও বেশি চোখে লাগছে। বাতাস হচ্ছে। মাঝে মাঝে মেঘের আলোতে দেবীপুর গ্রামটা দেখা যাচ্ছে। মুহুর্তের জন্য অন্ধকার সরে আলোয় ভেসে যাচ্ছে। রাধাশঙ্করের ভিটাবাড়ি, ধান ক্ষেত, বাঁশঝাড় হাইস্কুল আলোয় ভেসে যাচ্ছে মুহূর্তের জন্য। মহামায়া আর মনিশঙ্করের ঘরে হারিকেন জ্বলছে।….

স্বর্ণবোয়াল

মোবারক তার কন্যার পাতে তরকারি তুলে দেয় আর বলে, আইজ কয় পদের মাছ খাইতেছ সেইটা খাবা আর বলবা মা! দেখি তুমি কেমুন মাছ চিনো! ময়না তার গোলগাল তামাটে মুখে একটা মধুর হাসি ফুটিয়ে উল্লসিত হয়ে ওঠে এই প্রতিযোগিতায় নামার জন্য। যদিও পুরষ্কার ফুরষ্কারের কোন তোয়াক্কা নাই। খাবার সময় বাপবেটির এইসব ফুড়ুৎ-ফাড়ুৎ খেলা আজকাল নিয়মিত কারবার।….

error: Content is protected !!