Author Picture

ত্রিভুজ প্রেমের মামলা

খন্দকার রেজাউল করিম

ভালোবাসি, ভালোবাসি

 

‘চিরকাল রবে মোর প্রেমের কাঙাল,
এ কথা বলিতে চাও বোলো।
এই ক্ষণটুকু হোক সেই চিরকাল।’

দুপুরে স্কুলের ক্যাফেটেরিয়াতে সুজানের সাথে কেভিনের দেখা। ডক্টর বর্গের সাথে সুজান ক্যাফেটেরিয়ার এক টেবিলে বসে লাঞ্চ করছিলো। এই স্কুলের বিশ জন শিক্ষকের মধ্যে তিন জনের ডক্টরেট ডিগ্রি আছে, ডক্টর বর্গ তাদের একজন। তিনি এই স্কুলে তিরিশ বছর ধরে ইংরেজি সাহিত্য পড়িয়ে আসছেন। স্কুল এলাকায় ডক্টর বর্গ ‘পাগল’, ‘খ্যাপা দূর্বাসা’ ইত্যাদি নামে পরিচিত।
‘এই যে কেভিন! এসো, এক সাথে লাঞ্চ করা যাক’, ডক্টর বর্গ আমন্ত্রণ জানালেন, ‘তবে তার আগে কিছু খাবার জোগাড় করে আনো।’
অনেকগুলো সারিসারি টেবিলে হরেক রকম খাবার সাজানো আছে, ট্রেতে পছন্দমতো কিছু খাবার নিয়ে ক্যাশিয়ারের কাছে দাম দিয়ে কেভিন ফিরে এলো।
‘আমার খাওয়া শেষ, এখনই উঠতে হবে’, সুজান উঠে পড়লো।
‘আমাকে দেখলেই তুমি পালাই পালাই করো’, কেভিন বললো, ‘যেন আমি বাঘ বা ভাল্লুক, হালুম ডাক দিয়ে যে কোনো মুহূর্তে তোমার ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়বো!’
‘তুমি মোটেও বাঘের মতো নও। জেসিকে স্কুল থেকে দাদুর বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে। দাদুকে কথা দিয়েছি। উনি ঘড়ির কাঁটার মতো সময় মেনে চলেন।’

পৃথিবীতে তিন ধরণের ইডিয়েট আছে। এক ধরণের ইডিয়টের কোনোকিছু ভাবার মতো বুদ্ধি নেই, তাই চট করে একটি মেয়েকে ‘‘ভালোবাসি’’ কথাটি বলে ফেলতে পারে। আরেক ধরণের ইডিয়টের মাথায় বেশি বুদ্ধি, সে অনেক ভাবে, তাই ‘‘ভালোবাসি’’ কথাটি বলতে অনেক দেরি করে ফেলে। আর তৃতীয় ধরণের ইডিয়েট হলো সেই সব মেয়ে যারা এসব কথা বিশ্বাস করে

সুজান বিদায় হতেই কেভিন ডক্টর বর্গকে প্রশ্ন করলো, ‘সুজানকে কতটা চেনেন?’
‘তুমি ভুলে যাচ্ছ যে আমি এই স্কুলে তিরিশ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। সুজান এই স্কুলের প্রাপ্তন ছাত্রী। দুই বছর ধরে ওকে মার্ক টোয়েন, রবার্ট ফ্রস্ট, ওয়াল্ট হুইটম্যান, শেক্সপিয়ার, কিটস গুলিয়ে খাইয়েছি। কিছু লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগের কোনো লক্ষণ দেখিনি। ওর মাথাটা গোবরে ভরা।’ ডক্টর বর্গ জানালেন।
‘সে কি কথা! আমি তো জানি ও পড়াশুনায় বেশ ভালো ছিল। তাছাড়া ওকে আমি সব সময় বই পড়তে দেখি।’
‘গোবর-ভর্তি মাথা নিয়েও ভালো গ্রেড পাওয়া যায়। বইগুলো সব সস্তা প্রেমের উপন্যাস। ওইসব ছাইপাস পড়েই ওর মাথাটা একেবারে গেছে।’

‘শুনেছি সুজান ডাক্তারি পড়তে চেয়েছিলো, সেটা হলো না কেন?’ কেভিন আবার প্রশ্ন করলো।
‘টাকার অভাবে। সে সময় সুজানকে বলেছিলাম শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে টাকা ধার করে পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে। কিন্তু ওর সাহস হয়নি। ও অনেক কষ্ট পেয়েছিলো, আমার ঘরে এসে একবার চোখের জল ফেলেছিলো। কিন্তু সুজান বড় লক্ষী মেয়ে। লক্ষী মেয়ে কাকে বলে জানো?’
‘কাকে?’
‘যে গুরুজনের আদেশ মেনে চলে, সাত চড়ে রা করে না, নাগিনীর মতো ফোঁস করে উঠতে জানে না, অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে না।’
‘সুজানের বিয়ে এবং স্বামীর কথা কিছু জানেন?’
‘আমার নিজের ছেলে এই স্কুলে সুজানের সহপাঠী ছিল। সুজান রূপসী মেয়ে। তোমাকে বলতে বাধা নেই, আরো দশটি ছেলের মতো আমার ছেলেটিও সুজানকে মনেমনে পূজা করতো। কিন্তু ডেভিড নামে কোন এক অগাচন্ডী ছেলে কোথা থেকে এসে সুজানকে জয় করে ফেললো। ছেলেটি হাইস্কুলটাও পাশ করে নি! ডাক্তার না হয়ে সুজান হয়ে গেলো এক স্থুলোবুদ্ধি যুবকের বধূ। বছর না ঘুরতেই সুজানের কোলে সন্তান এলো। যৌবনে পা দিতে না দিতেই সুজান নামে একটি মেয়ের অপমৃত্যু হলো, সন্তানের পরিচয়ের আড়ালে যে এখন বাকি জীবনটা কাটাতে চায়।’
‘ডেভিড স্ত্রী-সন্তানকে ছেড়ে অন্যত্র থাকে কেন?’
‘ডেভিড একজন দুশ্চরিত্র ছেলে।’
‘আপনার ছেলে এখন কোথায়?’
‘ও ডাক্তারী পাস করে এক হাসপাতালে ইন্টার্ণিশীপ করছে।
‘আপনার ছেলের মতো চৌকস যুবকদের ছেড়ে সুজান ডেভিডের মতো গবেটের গলায় মালা পরালো কেন?’ কেভিন আবার প্রশ্ন করলো।
‘পৃথিবীতে তিন ধরণের ইডিয়েট আছে। এক ধরণের ইডিয়টের কোনোকিছু ভাবার মতো বুদ্ধি নেই, তাই চট করে একটি মেয়েকে ‘‘ভালোবাসি’’ কথাটি বলে ফেলতে পারে। আরেক ধরণের ইডিয়টের মাথায় বেশি বুদ্ধি, সে অনেক ভাবে, তাই ‘‘ভালোবাসি’’ কথাটি বলতে অনেক দেরি করে ফেলে। আর তৃতীয় ধরণের ইডিয়েট হলো সেই সব মেয়ে যারা এসব কথা বিশ্বাস করে। প্রেমের প্রতিযোগিতায় প্রথম ধরণের ইডিয়েটদের জয় হয়। ‘‘ভালোবাসি’’ শব্দটা ক্ষনিকের অনুভূতি, চিরকালীন সত্য নয়। ‘‘তুমি সুন্দর’’ এবং ‘‘তোমাকে ভালোবাসি’’ এই দুটি কথার প্রলোভন থেকে যে মেয়ে আত্মরক্ষা করতে জানে না তার কপালে অনেক দুর্ভোগ আছে। দুঃখিত, আমার জবাবটা বেজায় লম্বা হয়ে গেলো’, ডক্টর বর্গ জানালেন।
কেভিন অবাক হয়ে গেলো। এমন ভালোবাসা-বিরোধী কথা সে আগে কখনো শোনেনি। এ যেন রোমান্টিক প্রেমের কবিতার পাতায় কালির দোয়াত উল্টে দেওয়া। সাধে কি সাহিত্যের পোকা ডক্টর বর্গকে এখানে সবাই ‘খ্যাপা দুর্বাসা’ বলে ডাকে!

আরো পড়তে পারেন

শেষ বিকেলের অতিথি

আজ চন্দ্রার কথা মনে পড়তেই ছল ছল চোখে অশ্রুবিন্দু ঝড়ছে। তার অভিমানের শেষ আকুতি মনের মধ্যে বারবার ধাক্কা দেয়। তার প্রস্থান শেষ পর্যন্ত এতো কঠিন হবে বুঝতে পারিনি। আগেও চন্দ্রার সাথে হয়েছে অভিমানের খুনসুটি। নিজেকে মেঘের আড়ালে ঢাকতে চেয়েছে, কিন্তু সে মানাভিমান ক্ষণিকেই ইতি ঘটে গেছে। জোছনা হয়ে সে ধরা দিয়েছে। খুব ছোট্ট বিষয় নিয়ে….

স্মৃতি এখন কী করবে

জেলখানা থেকে বেরিয়ে স্মৃতি বাসে চড়ে বসে। সঙ্গে ওর মেয়ে ফাতেমা। বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেনি হায়দারের সঙ্গে। শুধুই চোখ বেয়ে পানি পড়েছে। ফাতেমাও ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে। আর হয়তো দেখা হবে না বাবার সঙ্গে। হায়দারের চোখও ভেজা ছিল। আজই হয়তো ওদের শেষ দেখা। হায়দার বারবার স্মৃতির হাত ধরে অনুরোধ করেছে ওকে ক্ষমা করে দিতে।….

ইন্টারভিউ

কত দিন পর দেখা হলো রূপার সঙ্গে। তা মনে করতে পারছি না। চোখে চোখ পড়তেই কিছুটা থমকে গেলাম। চিন চিন করে উঠল বুকের ভেতর। ভেতর-বাইর শুরু হলো জ্বলন-পোড়ন। কথা বলব কি-না তা বুঝে ওঠার আগেই সে এলো এগিয়ে। আমাকে বলল, সায়েম তুমি এখানে? আমার ইন্টারভিউ আজ। তোমারও কি তাই? হ্যাঁ। আমারও তাই। কেমন আছ তুমি?….

error: Content is protected !!