
নষ্টনীড়
ম্যাগি টেবিলে খাবার সাজিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। পাদ্রী সাহেবের নাম বেন কারসন, সবাই তাকে ফাদার বলে ডাকে। তিনি ঘরে পড়াশুনা করছিলেন। বাইরে বেরিয়ে এসে বললেন, ‘খিদেয় পেট চোঁচোঁ করছে। চলো সবার আগে মুখে কিছু দেয়া যাক।’ টেবিলে খাবারের সামনে বসে কারসন সাহেব দুই হাত উঁচু করে প্রার্থনা করলেন, ‘হে প্রভু, হে জগতের পিতা, আজকের এই খাবারের জন্যে তোমার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’ কেভিন, ক্যারোল, এবং ম্যাগি করজোড়ে চোখবুঁজে ‘আমেন, আমেন’ বলে এই প্রার্থনাকে সমর্থন করলো। খেতে খেতে ফাদার জানতে চাইলেন,
‘গির্জায় আমার হিতোপদেশ তোমাদের কেমন লাগলো?’
‘আমার চমৎকার লেগেছে’, কেভিন বললো, ‘বাইবেলের সার্মন অন দ্য মাউন্ট, আমার সবচেয়ে প্রিয় অধ্যায়।’
‘তুমি বাইবেল পড়েছো?’
‘নতুন টেস্টামেন্টটা কয়েকবার পড়েছি, পুরানো টেস্টামেন্টের জেরিমিয়াতে এসে বারেবারে আটকে গেছি।’
‘রবিবারে নিয়মিত চার্চে এসো, ধীরেধীরে বাইবেলের সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
‘ক্যারোল, তুই কেভিনের কাছে UCLA তে ভর্তির ব্যাপারে যা জানতে চেয়েছিলি তা জানা হয়ে গেছে?’
‘না বাবা। লেক, পুকুর, হাঁস, আর বকের কথা বলতে বলতেই তো সময় শেষ হয়ে গেলো।’
‘বোকা মেয়ে, কাজের কথা সবার আগে শেষ করতে হয়।’
‘কেভিন তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না, খাওয়াটা শেষ হলেই ওকে আবার ধরবো।’
লাঞ্চের পালা শেষ হলে ক্যারোল কেভিনকে তার ঘরে নিয়ে এলো। চেয়ার-টেবিল, কম্পিউটার, বই-ভর্তি আলমারি, গিটার, ভায়োলিন। ঘরের দেয়ালে ক্রুশ-বিদ্ধ যীশুখৃষ্টের ছবির সাথে স্থান করে নিয়েছে অসংখ্য গায়ক-গায়িকা, নায়ক-নায়িকার ছবি।
‘বাবা ছাড়া তুমিই হলে প্রথম পুরুষ যে আমার ঘরে ঢোকার সুযোগ পেয়েছে।’
‘আমার প্রতি তোমার এই কৃপার কারণটা জানতে পারি?’
‘কারণটা আমি নিজেই তো জানি না।’
‘কাজের কথাটা সবার আগে শেষ করা যাক। আজ পর্যন্ত তুমি কয়টা উনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্যে দরখাস্ত করেছো? ACT এবং SAT পরীক্ষার ফলাফলে তোমার পার্সেন্টাইল স্থান কত ছিল?’
‘সাতটি। আমার স্থান ৯৬% এর উপরে ছিল।’
‘বল কি? তুমি তো সাংঘাতিক ভালো ছাত্রী! শুধু টঈখঅ কেন, আমেরিকার যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার তোমার জন্যে খোলা আছে। আমি ভাবতেই পারি নি তোমার মতো দুষ্টু একটি মেয়ে এমন মেধাবী ছাত্রী হতে পারে!’
‘আমি দুষ্টু নাকি?’
‘যে মেয়ে গির্জার আরাধনার সময় আরেকজনের পিঠে চিমটি কাটে, কাউকে ক্যাবলাকান্ত বা ভূতনাথ বলে ডাকে, তাকে লক্ষী মেয়ে বলা যায় কি? তবে তোমার বাবার কাছে শুনেছি সুজান খুব লক্ষী মেয়ে!’
‘সুজানকে তুমি কতদিন থেকে চেনো?’
‘প্রায় দুই মাস থেকে। ওর ছেলে জেসিকে নিয়ে এসেছিলো স্কুলের বেসবল ক্যাম্পে ভর্তি করতে। তারও আগে ওকে দেখেছি স্কুলের বাস চালাতে।’
‘আমি সুজানকে চিনি আমার জন্ম থেকে, ও আমার চেয়ে দশ বছরের বড়।’
‘আর আমি তোমার চেয়ে সাত বছরের বড়।’
‘তাতে কার কি আসে যায়! সুজান আমার বড় বোনের মতো, ছেলেবেলায় এক সাথে খেলেছি, গান গেয়েছি, স্পিড বোটে করে সুজান এবং ডেভের সাথে লেকের জলে ঘুরে বেড়িয়েছি, সাঁতার কেটেছি, মাছ মেরেছি।’
‘ডেভ আবার কে?’
‘ডেভ হলো সুজানের বর্তমান স্বামী। ওর পুরো নাম ডেভিড ব্রাউন্স।
‘ডেভ কেন স্ত্রী এবং ছেলেকে ছেড়ে অন্যত্র থাকে?’
‘ডেভ এখন বাস করছে জেনার সাথে। জেনা হলো ডেভের নতুন গার্লফ্রেন্ড। ডেভ এক চরিত্রহীন ছেলে, একেবারে ওর বাপের স্বভাব পেয়েছে। ওদের বিয়ে হয়েছিল নয় বছর আগে, কিন্তু বিয়ের দুই বছর হতে না হতে সুজানের ঘর এবং মন দুটোই ভেঙে গেলো। সেই থেকে সুজান ছেলে জেসিকে নিয়ে একা থাকে। ওদিকে ডেভ প্রতি বছর গার্লফ্রেন্ড বদলায়। কেন যে সুজান বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা ঠুকছে না তা বোঝার সাধ্য আমার নেই।’
কেভিন হতবাক হয়ে গেলো। বউকে ছেড়ে গার্লফ্রেন্ডের সাথে বসবাস! প্রতি বছর গার্লফ্রেন্ড বদল! তাও আবার এই পাড়াগাঁয়ে! কেভিনের ধারণা ছিল এমন ঘটনা শুধু টেলিভিশনের সিরিয়াল নাটকেই হয়।