Author Picture

পান্ডুলিপি থেকে কবিতা

হাইকেল হাশমী

৮১
~
প্রিয় সত্তা,
তুমি হয়ত জানো
কবিতা লিখতে হলে
কল্পনায় ঝড় তুলতে হয়
সৃষ্টি করতে হয় প্রচন্ড শিলা বৃষ্টি
ভাবনায় দমকা হাওয়ার তীব্রতা,
তখন শব্দ সব উড়ে উড়ে
সাদা কাগজে পাখির মতো
সারি সারি বসে যায় আশ্রয়ের আশায়,
কিন্তু তারা তো চিরকালের জন্য বন্দি হয়ে যায়
কবিতার বন্দিশালায়
আর তো কোন দিন পায় না রেহাই,
তোমারও মুক্তি নেই হে আমার সত্তা
শব্দের মতো তুমিও বন্দি আমার হৃদয়ে।
সুখে থাকো
ইতি,
তোমার আপন সত্তা


৮২
~
প্রিয় সত্তা,
যখন কাছে থেকেও মনে হয়
দূরত্ব অসীম
আর যখন দূরে থেকেও
থাকো খুব নিকটে,
যখন কাছে থেকেও মনে হয়
খুব অচেনা
আর খুব দূরে থেকেও মনে হয়
খুব চেনা চেনা।
কী বলবে বলো?
নৈকট্য আর দূরত্ব, সবই আপেক্ষিক
মনের আকর্ষণ না থাকলে
কাছে থেকেও অনেক দূরে
আর ভাবনায় থাকলে
দূরত্ব হলেও খুব কাছে
হৃদয়ের মাঝে।
ইতি,
তোমার সত্তা


৮৩
~
প্রিয় সত্তা,
মনের আকাশে ব্যথার নীল মেঘ
উড়ে বেড়ায় এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে
যদি খুঁজে পায় এক বিন্দু সুখ এই আশায়,
সুখ তো মন-আকাশের শূন্যতায় বিলীন
পাবে কোথায়?
শূন্যতাই সকল বিষণ্ণতার উৎস
এই মহাবিশ্বের শূন্যতায় সূর্য, গ্রহ, তারা
সবই তো নিঃসঙ্গ
আর শূন্যতার অর্থ নিজের ভিতরে ভাংচুর।
তাই থেকো না কোন দিন নিঃসঙ্গ
বুঝলে হে আমার সত্তা।
ইতি,
তোমার আপন সত্তা


৮৪
~
প্রিয় সত্তা,
তুমি কি অনুভব করেছো
দিন কেটে যাওয়ার ক্লান্তি নিয়ে অপেক্ষারত রাত
কেমন বিচলিত হয়ে যায়।
তার অপেক্ষা, তার অন্ধকার নখের আঁচড় দিয়ে
কীভাবে করবে রক্তাক্ত স্বপ্নের শরীর।
চোখেরও যে কি নিদ্রার অভ্যাস
স্বপনের প্রতিক্ষায় জেগে থাকতে পারে না বেশিক্ষণ
ঘুমিয়ে পড়ে আর ক্ষতবিক্ষত স্বপ্ন নিয়ে
জেগে উঠে অনুক্ষণ,
সারা রাত হৃদয়ের মাঝে রণাঙ্গন
আঘাত সইবার হয়েছে তার অভ্যাস।
জেগে থাকো বা ঘুমাও
আঘাত থেকে নেই কোন রেহাই।
ইতি,
তোমার রক্তাক্ত সত্তা


৮৫
~
প্রিয় সত্তা,
এতো দিন তোমার সাথে বসবাস
তোমার সাথে কতো অভিযোগ
মন খারাপ করেছি তোমার কথায় অনেকবার
আবার মন দিয়ে শুনেছি তোমার অনেক কথা।
তুমি জানো, তোমার উপর আছে অনেক ভরসা
কিন্তু কেন যে অনেক সময় হয় মন খারাপ,
তাও মনে মনে ভাবি
তুমি আছো বলে বেঁচে আছি
শুধু দুঃখ হয় কেন তোমাকে চিনিলাম
এতো দিন পরে,
তাও তুমি আছো আমার সাথে
তোমাকে ধন্যবাদ।
ইতি,
তোমার সত্তা


৮৬
.
প্রিয় সত্তা,
জীবনের দীর্ঘ চলার পথে
কতো লোকের সাথে দেখা হয়
কতো লোকের সাথে কথা হয়
কাউকে কিছু দিন মনে থাকে
আবার কাউকে পরমুহূর্তে ভুলে যাই
কিন্তু কেউ কেউ আছে যাদের কোন দিন যায় না ভোলা।
জানি না কেন যে সে বিরহের রাত্রি দিয়ে
স্বপ্নে বারে বারে ফিরে আসে
এভাবে কি কাউকে ভুলে থাকা যায়?
তোমারো কি এমন হয়?
ভালো থেকো।
ইতি,
তোমার সত্তা


৮৭
~
প্রিয় সত্তা,
যদি কেউ মনে করে
হৃদয়ের মাটিতে
বিরহের বীজ বুনে গেলে
দুঃখের ফসল ফলবে
তা ঠিক নয়!
সে তো জানে না
সে চলে গেছে
কিন্তু তার স্মৃতির প্রজাপতি
এখনো তাদের রঙিন পাখা মেলে
আমার ভাবনার বাগানে উড়ে বেড়ায়।
তার চলে যাওয়ার পরে
আমি তো আছি তার ভাবনার সাথে

প্রতিটি মুহূর্তে, সব সময়!
তাকে এই কথা জানিয়ে দিও হে সত্তা আমার।
ইতি,
তোমার আপন সত্তা


৮৮
~
প্রিয় সত্তা,
আমি দুঃখ পেয়েছি
সে এভাবে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে
হঠাৎ পর হয়ে যাবে
এতো পরিচিত তাও এতো অপরিচিত হয়ে যাবে,
এটা কেমনে হয়?
আবার আমি ভাবি
সে প্রতারণা করেছে
নিশ্চয় সে অসহায় হবে!
কেন আমি তাকে সন্দেহ করি
যা করেছে ভালই করেছে।
সে ভালো থাকুক এটাই আমার চাওয়া!
ইতি
তোমার দুঃখী সত্তা


৮৯
~
প্রিয় সত্তা,
কিছু কিছু লোক আছে
যার কাছে সব জিনিসই কাজ,
প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা,
কারোর অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকা
কাউকে মনে রাখা
কাউকে ভুলে যাওয়া
কারোর ভাবনায় ডুবে থাকা
কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা
হায় কতো কাজ!
সে বলল কাউকে কি আমি ভালোবাসি?
চুপ থেকে, মুচকি হেসে বলি
বড় ভয় লাগে
আমি তো শুধু এই কাজই জানি
যদি এটাতেও ব্যর্থ হই তা হলে কী হবে?
এই কথা বলে এসেছি চলে
বুঝলে হে আমার সত্তা।
ইতি,
তোমার ভীতু সত্তা


৯০
~
প্রিয় সত্তা,
তাকে আমি বলে দিয়েছি
সব বাসনার অবসান হয় না
আমি তোমাকে ভালোবেসেছি
তাই বলে কি তোমার সাথে মিলন হবে নির্ধারিত?
আমি জানি, তুমি আর আমি আছি ভ্রমণরত
ক্ষণিকের সঙ্গী তার চেয়ে বেশী আর কিছু কি?
তোমার চোখে দেখি প্রত্যাশার আলো
আর আমি তো কোন পথই দেখতে পাই না।
তাই তারে বলে দিয়েছি
তোমার আশার প্রদীপ অন্য কোথাও জ্বালিয়ে রাখো!
বলাটা খুব কঠিন ছিল কিন্তু
সারা জীবনের দুঃখের চেয়ে ক্ষণিকের দুঃখ শ্রেয়।
কি বলো হে আমার অভিজ্ঞ সত্তা?
ইতি,
তোমার বিষণ্ণ সত্তা


৯১
~
প্রিয় সত্তা,
মেনে নিতে কোন দ্বিধা নেই
তার গোলাপ ঠোঁটের স্পর্শ
যেন টেনে বের করে আনে আমার আত্মা
গভীর দেহের শূন্যতা থেকে।
মনে হয় সেই স্পর্শ
আমার আবেগের প্রত্যেক কণায়
এক একটি চোখ বসিয়ে দিয়েছে
আমি স্পস্ট দেখতে পাই
আমার শিরায় শিরায় প্রবাহিত রক্ত
আর হৃদয়ের এলোমেলো কম্পন।
এই আবেগের অন্য প্রান্তে আমি জানি
আছে আলোর উৎস।
আমার গোপন কথা তোমাকে বললাম
তাকে বলে দিও না।
ইতি,
তোমার আবেগী সত্তা

আরো পড়তে পারেন

তরুন ইউসুফের একগুচ্ছ কবিতা

বহ্ন্যুৎসব কত কিছু পুড়ল! গাড়ি পুড়ল বাড়ি পুড়ল দম্ভের দালান পুড়ে ক্ষার জলপাই সবুজ ট্যাংক নামল পুড়ল বই গল্প রূপকথার বেলুন হাতে পুড়তে পুড়তে ফানুস হয়ে উড়ে গেল বালক মায়ের আঁচল পুড়ল পুড়ল বুকের কাছের লোক যুবকের বুক পোড়াতে পোড়াতে পুড়ে গেল বন্দুক, থানার সেপাই কারো কারো স্বপ্ন পুড়ল আমিও পোড়ার গন্ধ পাই- আমার পুড়ল….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

বাবা আপনার ব্যর্থ শরীর জানত নিরাময় উড়ে গেছে আসমানে, আপনার মৃত্যু হবে। শেষবেলায় আপনি বড় নিঃস্ব, ঈশ্বরের মত নিদারুন, একমাত্র একা। সেকারনেই আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে ভেন্টোলিন সিরাপ খেতেন, অ্যাসমা’র বড়ি গিলে সারা রাত কাঁশতেন। আপনার কফ গলানো কাঁশির শব্দে কোন কোন রাতে আমাদের কাঁচা ঘুম ছিঁড়ে যেত, আমরা বিরক্ত হতাম। তারপর, আপনার জবুথবু মুখের দিকে….

মাহমুদ দারবিশের ডায়েরি ‘নদী মরে যায় পিপাসায়’— (পর্ব: ২)

মেয়েটি আর তার চিৎকার সমুদ্রতীরের মেয়েটি, যার একটি পরিবার আছে আর সেই পরিবারটির একটি বাড়িও আছে। বাড়িটির মধ্যে দুটি জানালা আর একটি দরজা আছে। সমুদ্রে একটি যুদ্ধজাহাজ মজার ছলে তীরে হাটাহাটি করতে থাকা লোকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে: চার, পাঁচ, সাত জন বালির উপর পড়ে যায়। একটি অস্পষ্ট ঐশ্বরিক হাতের সাহায্যে মেয়েটি কিছুক্ষণের জন্য কোন প্রকারে….

error: Content is protected !!