Author Picture

মারুফ আহমেদ নয়ন-এর একগুচ্ছ কবিতা

মারুফ আহমেদ নয়ন

আমার করুণ সুন্দর
.
কোন মুখে তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো আমার করুণ সুন্দর। আমার সমস্ত গান এক বেনামি সন্ধ্যার দিকে গেছে। যেভাবে নদী নিরবধি সাগরের দিকে বয়ে যায়। দীর্ঘ রাতের করাত আমাকে কেটে ফালা ফালা করেছে। আমার সমস্ত দীর্ঘশ্বাস তোমার দিকে উড়ন্ত চুমুর মতো ছুঁড়ে দিয়েছি। আমার সমস্ত শ্বাস-প্রশ্বাস চিরদিনের মতো থেমে যেতে পারে, যেহেতু হৃদপিন্ডে কেবল কুঠারের আঘাত। রক্তে ডুকে গেছে বিষ। দেহ তো চিরকাল মরফিন ঘুমের আঁধার। শুধু অকারণে এক ফুলের ভেতর বসে গুন গুন করছি যেনো বিষধর কীট।


আশ্চর্য ঋতুচক্র
.
একা নাচছে ময়ূরী। তার নাচের ভঙ্গিমার পাশে আমি এক পাতাঝরা দিন। আশ্চর্য বসন্ত ঋতু। আমাকে চিনতে পারছো না। বর্ষা এলেই তোমাকে বুকে জড়িয়ে নেবো। পলি মাটিতে ভরে দেবো বুক। পাবে রোদ ও জড় শস্যের সুখ। বহুকাল বেনামি স্রোতের সাথে ভেসে গেছি। পর-নারীদের সাথে শুয়ে পড়েছি। কলকল শব্দে আঁছড়ে পড়েছি তোমার কোমরের বাঁকে, যেনো অনাবিষ্কৃত দ্বীপ তুমি। জলঘুমে তোমার কাছে পৌঁছেছি। সম্বল শুধু ভাঙ্গা কাঠের নৌকা। তাই বুঝি ঘৃণায় লোহার পাতে লিখে রেখে নাম ভাসিয়ে দিলে জলে।


স্বীকারোক্তি
.
আমি যেনো তোমার নাম কখনো না ভুলি। সমস্ত আঘাত ও অপমানের স্মৃতি মগজের ভেতর পোকার মতো কিলবিল করে। ঘুমোতে পারি না। চোখ তীব্র লাল। যেনো এলার্জি। রক্তে দূষণ। জ্বর আক্রান্ত শরীর, তোমার দেয়া অভিশাপ বহন করে। লোমকূপে ঘাম জমে যেনো একশত চার ডিগ্রী ফারেনহাইট। অথচ তুমি এসব সৎ স্বীকারোক্তির থেকে দূরে এক নিঃসঙ্গ নিমফুলের ছায়া। আমার আরোগ্যের চাবিকাঠি। চিরদিনের এইসব খেলা যেনো দাবার ভুল ছক। হাতি, ঘোড়া, সৈন্য সামন্ত সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি। আমি কেবল বাকী রয়েছি, ভুল মানুষের ছায়া।


দেহের প্রাচীন বর্ণমালা
.
মৃত্যুর মতো হিম শীতলতা ভর করে আছে আমার চোখে মুখে। তুমি কি পাঠ করতে পেরেছিলে, দেহের প্রাচীন বর্ণমালা। দেখো হৃদয়ের খুব কাছাকাছি আগ্নেয়গিরি। সারা রাত বয়ে যায় আগুনের নদী। তোমার সুন্দর রুপকে চিরকাল মিথ্যা মনে হয়। রক্তাক্ত পালকের নিচে আহত পাখিদের করুণ মৃত্যু। অন্ধকার ও আলোর মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে, একটি ফুলের মরে যাবার কথা মনে পড়ে যায়। বহুদিন একা একা ফুলের কাছাকাছি আগুন হয়ে ফুটে আছি, ফুল ফুটবার দৃশ্য দেখবো বলে।


অবহেলা
.
মানুষ বলেই কি এমন। কোনো অবহেলা সহ্য করতে পারি না। যে ঘৃণা করে তার নিকটবর্তী হতে চাই। যে পাথরের গায়ে সূর্যের আলো ধরে না তার কাছে যাই। জলে দু-পা ডুবিয়ে বসে থাকি। মৎস্য শিকারের বাহানায় ছিপ ফেলি। জানি কোন সাড়া শব্দও পাবো না। এখন তোমার থেকে লুকিয়ে থাকার স্বভাব। তোমার নাম নেয়া নিষেধ। নিজেকে এখন ভূতগ্রস্ত বলে মনে হয়। নিবিড় পরিচর্যায় থাকি। খোলা মাঠে বসে থাকি। আয়নার সামনে হাসি-কান্নার অভিনয় করি। দেখি আমি কেবল মোমের মতো গলে যাবার সক্ষমতা নিয়ে বেড়ে উঠেছি। মাবুদ আমাকে করুণা করে কেনো মানুষ বানালে।


বৃক্ষজন্মের কবিতা
.
কৌশলী হয়ো না। নিজেকে সমর্পন করেছি। এখন হার-জিত কোনকিছুর সম্ভাবনা প্রবল নয়। আমি মূলত পৃথিবীতে এসেছিলাম, আমার অস্পষ্ট বেদনাগুলো প্রকাশ করতে। আমার জাগতিক কোন মোহ নেই। সমুদ্রের ঢেউয়ে গাছের বাকলে এক গুপ্তকথা লিখে রেখেছিলাম ঘোরের ভেতরে, এখন তা আর মনে করতে পারি না। যেনো কোন পুরনো বন্ধুর মুখ আমি ভুলে গেছি। ফলে তুমি যা বলছো, তাই বিশ্বাস করছি। এক সামুদ্রিক ডলফিন তার অনেক বছর আয়ু। এভাবেই ডুবে যাচ্ছি। দু-পায়ে অজস্র শেকড়-বাকড় জন্মাচ্ছে। নড়তে পারছি না। বৃত্তবন্দী জীবনে মনে পড়ছে, তোমাকে ভালবেসে আমার একটি বৃক্ষজন্ম পাবার কথা ছিল।

আরো পড়তে পারেন

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১) মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার….

সোহরাব পাশা’র একগুচ্ছ কবিতা

নিদ্রিত ঘ্রাণের শব্দ দীর্ঘ যায় আশালতা ফিরে আসে বিষণ্ণ গোধূলি ফিরে আসে দুঃখিত সকাল, ক্ষয়ে যাওয়া এক দূরের উপনিবেশ পাখির চেয়ে মানুষের কোলাহল বেশি কোনো মৃত্যু মানুষকে অপরাধী করে না নিঃশ্বাসের রোদে আবছায়া নিদ্রিত মেঘ স্মৃতির অসুখ বাড়ে; দূরে নির্জন আধাঁরে জেগে ছিলো মানুষের কথা পুরনো সে বাড়ি সেই ছায়াপথ মায়াপথ জুড়ে কতো ভুল মানুষের….

error: Content is protected !!