Author Picture

একগুচ্ছ কবিতা

চৌধুরী রওশন ইসলাম

তোর কথা ভাবি
.
আকাশ যখন ঢেকে যায় কালো মেঘে,
তোরই সুখস্মৃতি হৃদয়ে ওঠে জেগে।
এখনও আমি এইটুকু করি দাবী,
মন খারাপ হলেই তোর কথা ভাবি।

গোল হয়ে চাঁদ আকাশে যখন ওঠে,
জ্যোৎস্নার শুভ্র ফুল আদিগন্ত ফোটে,
তখনও আমি এইটুকু করি দাবী,
জানালায় বসে তোর কথা শুধু ভাবি।

শুভ্র মেঘের দল শরতাকাশ জুড়ে
উদাসীন হয়ে বেড়ায় যখন ঘুরে,
স্মৃতির তালা খুলে দেয় কোন্ সে চাবি ?
আকাশের দিকে চেয়ে তোর কথা ভাবি।

মেঠো পথে যদি কিষাণ-কিষাণী এসে
মুখপানে চেয়ে সলাজ অবাক হেসে,
শুধায় আমারে, কোন গাঁয়ে তুই যাবি ?
আনমনা হয়ে তোর গাঁওখানি ভাবি।

ঘন আঁধারে মোড়ানো এ নিস্তব্ধ রাতে
স্বপ্নঘোরে রেখেছি এ হাত কার হাতে ?
চোখ মেলে দেখি আঁধার জগৎ-প্লাবী—
তারি মাঝে বসে একা তোর কথা ভাবি।


ভুল
.
এখন বুঝি আমার ছবি জাগে না তোমার অন্তরে।
মেনেই নিলাম ভুল করেছি,
নিজের হাতেই বুক চিরেছি,
পরাণ ধরে টান দিয়েছি,
খানিকটা পথ হেঁটে গেছি
তোমার মিথ্যে সে হাত ধরে।

এখন আমার বুক জ্বলে যায়, বুক জ্বলে যায় বেদন-বিষে।
বালিশ ভেজে অন্ধকারে,
স্বপ্ন গুলো ছুরি মারে
বুকের ভেতর, হাহাকারে
কেঁদে কেঁদে ডাকি কারে,
কেউ বোঝে নাই দুঃখ কিসে।

দীঘির ’পরে জলের বুকে নিশীথ-শিশির নিশ্চুপ ঝরে।
দীঘির তাতে কী আসে-যায় ?
শিশির-কণা কোথায় হারায় !
খানিকটা পথ তেমনি বৃথাই
হেঁটে গেছি বেভুল ভাবনায়—
সেসব কথা মনে পড়ে।

এখন বুঝি আমার ছবি জাগে না তোমার অন্তরে।
মেনেই নিলাম ভুল করেছি,
নিজের হাতেই বুক চিরেছি,
পরাণ ধরে টান দিয়েছি,
খানিকটা পথ হেঁটে গেছি
তোমার মিথ্যে সে হাত ধরে।


একতরফা
.
আমিতো তোমার পর নই;
আমায় বললে কী ক্ষতি হয় বলো ?
লুকিয়ে খাচ্ছ গুড় মুড়ি খৈ,
শুনতে গেলেই আরেক পথে চলো।

আমি আছি কাছের মানুষ;
হয়তো তুমি বোঝনাই এর মানে।
কিম্বা তোমার ফেরে নি হুশ;
আর সকলে সবই এখন জানে।

তুমি ডুবে ডুবে খাচ্ছ জল—
দোষ দেখি নাই। কী যায়-আসে তাতে ?
কেন যে এত চাতুরি-ছল,
কেনই বা তোমার ঘা লাগছে আতে ?

যারে নিয়ে এত কথা বলা,
যারে তুমি আজ লুকিয়ে ভালোবাসো,
তার জন্যে সব দ্বার খোলা;
তারে সাথে নিয়ে আমার বাড়ি আসো।

আমি তোমার আপন লোক,
তুমি আমায় নাইবা বাসলে ভালো;
আমার বাসা নিষ্ফল হোক,
তোমার মনে ফুটুক ভোরের আলো।।


আজকে তুমি
.
আজকে তুমি কাহার সাথে ঘুরতে গেলে জানতে চাই;
জানতে চাই নরম হাতে মুঠো ভরে কাহার আঙুল ধরেছিলে;
আল্পনাতে শরীর ঢেকে কাহার পাশে বসেছিলে জানতে চাই;
আড়-নয়নে চমক হেনে কাহার তুচ্ছ হৃদয় নিয়ে
ইচ্ছে মতো খেলেছিলে জানতে চাই জানতে চাই।

আজকে তুমি কোথায় গেলে কোন্ কাননের ফুল হলে জানতে চাই;
ভোরের বেলা শয়ন ছেড়ে কাহার কথা প্রথম তোমার স্মরণ হলো;
সাজ-সকালে সাজতে বসে কল্পনাতে কাহার পাশে বসেছিলে;
জানতে চাই জানতে চাই সারা দুপুর তপ্ত রোদে ঘাম ঝরিয়ে
কাহার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে পার্কে বসে হৃদয়-হৃদয় খেলেছিলে।

আজকে তুমি কাহার সাথে মেলায় ঘুরে রঙিন চুড়ি কিনেছিলে;
জানতে চাই দু’জন মিলে মেলার ভীড়ে কতটা পথ পাড়ি দিলে;
আজকে তুমি কাহার সাথে রঙিন ঘুড়ি উড়িয়েছিলে জানতে চাই;
জানতে চাই জানতে চাই দু’হাত ভরে কতটা সুখ ধরেছিলে;
আজকে তুমি দু’চোখ ভরে কতটা সুখ দেখেছিলে জানতে চাই।।


ভালোবাসা
.

আহা রে ভালোবাসা ! ফুলের পাপড়ির মতোন নরম কোমল;
পরাণের ক্ষতগুলো কেমন জানি জাদুর মতোন সব মিলায়ে যায়।

হায় রে ভালোবাসা ! ভাঙা কাঁচের চিকন ধারাল কোণ;
বুকের মধ্যে খচখচ,পরাণটা কাইটা ফালি ফালি হইয়া যায়।


পণ
.
তিন যুগ পার করে আজ এই কলি যুগে তোর জালে জড়িয়ে গেলাম;
আমারে ফান্দে ফেলে দেবতার বর কত সহজেই কেড়ে নিলি।
আমার স্বর্গ পুড়ে ছাই হলো নরকের আঁচে।

তবু তোর কাছে করা পণ আজও ভাঙি নাই;
ভরা চান্দের জ্যোৎস্নার মন্তর, আসমান-ভাঙা বৃষ্টির মন্তর—
তোরে ছাড়া আর কেউরে শিখাই নাই।

আরো পড়তে পারেন

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

বীভৎস খেলা নগরে বাতাসে মথিত জনস্রোতের কোলাহলে শুনতে পেয়েছি সারিগান গঞ্জের হাটে আকাঙ্খার গভীরে মন্দ্রিত অভিন্ন প্রাণ নীরব দর্শক ছিলাম ব্যর্থতার করুণ গান ফেরার মহড়ায় বঞ্চিত কুঁড়েঘরে সরাইখানার- শুঁড়িখানার মাছিরাও নেশায় বুদ্বুদ প্রকম্পিত কান্নার পর একদিন হাসির তিলকরেখা বিচ্ছুরিত শৈশবের ক্ষুধার্ত চিৎকার ক্রর হাসি চেপে মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলে ভাগ্য প্রহসনে যুদ্ধের ব্যগ্র দামামা থেমে গেলো-….

তোফায়েল তফাজ্জলের একগুচ্ছ কবিতা

উপায় অবলম্বন কাঁটা থেকে,  সুচালো কাঁকর থেকে পা রাখিও দূরে, জায়গা না পাক চলন-বাঁকা চেতনায় উড়ে এসে বসতে জুড়ে; এসবে খরগোশ কানে থাকবে রাতে, পড়ন্ত বেলায়, দ্বিপ্রহরে, পূর্বাহ্নে বা কাক ডাকা ভোরে। দুর্গন্ধ ছড়ানো  মুখ ও পায়ের তৎপরতা থেকে গ্রীষ্ম থেকে সমস্ত ঋতুতে একে একে নেবে মুখটা ফিরিয়ে তিলার্ধকালও না জিরিয়ে। কেননা, এদের চরিত্রের শাখা-প্রশাখায়….

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

error: Content is protected !!