Author Picture

জাকিয়া এস আরা’র একগুচ্ছ কবিতা

জাকিয়া এস আরা

আমন্ত্রণ
.
আমাদের মুখের কথায় সভ্যতা নেচে ওঠে
কবে কোনকালে যেন শুনেছিলাম পরান
মাঝির গান, ওতে তার জীবন রহস্য ছিলো
অচেনা আঁধারের রুপক ছিলো, ঝরাপাতার
ফিস্ফিস যেমন বলে দেয়, আগামী প্রজন্মের কথা।

খাকি পোশাকের বুটের তলায় যখন স্বাধীনতা নেচে ওঠে,
ইথারে, ইথারে তখন গোল পাকায় চুপকথারা।

আমাদের মুখের কথায় সভ্যতা নেচে ওঠে,
তৃণে তৃণে বার্তা পৌঁছে যায় জাগরণের
কালোর ভেতরে জন্ম নেয় শাদা যিশু
কে, কোথায় আছো, এসো স্নাত হই একই ধারায় !


সেমন্তি হতে পারিনি
.
এতদিন লুকিয়ে ছিলাম বিবর্ণ ক্যাকটাসে
তোর কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে
আজো তোর “সেমন্তি” হয়ে উঠতে পারিনি !

ক্ষয়ে গেছে শালগ্রাম শিলা,
ঝড়ে উপড়ে পড়েছে শমীবৃক্ষ
শাসন করেছে বহতা নদীকে মানুষ !
তোর নামঙ্কিত পাথরে ফসিল
মাঝে মাঝে চোখ রাখি সে ফসিলে
হয়তো কদিন পর তাও পারবো না
চোখের আলো যে নিভু নিভু !

তোর সুনিকেতনের নকশা ভাসা দেখেছি
দুঃখগুলো সেরেসে রে! অসুখ কি হয়!
আর কতোকাল কেবল সুখ নিয়ে বাঁঁচবি রে !


ঘোর লাগা ভোর
.
আগে তো জানতাম না
জীবন একটা পেলব
সুতোয় গাঁথা !

অথচ, দেখো, চৌদিকে কেমন
হরিদ্রাভ ভোর!
অসুখী মেয়েটার গলা
জড়িয়ে আছে ঝলমলে গাঁদা !

লাল শিমুলের ডালে হতবাক
সবুজাভ টিয়া!

জড়তার এই পাহাড় ভেঙে
মন উড়ে যায়, এই ভোরে
সে কোন সুদূরের পিয়ালতলায়!

আগে তো জানতাম না
জীবন এমন
রহস্যজালে বাঁধা !


আসলে নিজেও জানিনা
.
যাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি
আসলে আমি নিজেও জানিনা
এলেবেলে লিখতে লিখতে
বয়স সমূদ্র সমান।
বাবার সাইকেল, মার গল্পের বই
এখন জাদুঘর,
চাপিলা মাছে যেনো ইলিশ স্বাদ !
ডুমুরের বাগান কেবল স্বপ্নেই দেখি
নীল অপরাজিতা নিজেই নীল বিষে
তার কাছে আর কখনো পারবো না যেতে !

ভূবন ভরা ঈর্ষার আলো
পথে পথে ব্যারিকেড
বাহারি মুখোশ ভাসমান আকাশে
আমি কী বাতাসে সাঁতার কাটবো !

যাচ্ছি, যাচ্ছি কোথায় যাচ্ছি
আসলে আমি নিজেও জানিনা


কি চাও তুমি
.
বনস্পতির বনে লেগেছে আগুন
নার্গিস বনে বাসন্তি বারতা
তবুও থেমে নেই
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা !

অথচ ভালোবাসার ভেলা
নিয়ত ভাসে বিনা পানিতে

কি চাও তুমি
ভালোবাসা নাকি
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা !


শীত কড়চা
.
একটু উষ্ণতা ভিক্ষে করতে করতে
আমি বড্ড ক্লান্ত।
রোদের চাদরে মাথা রেখে
একটু চোখ বুঁজতে চেয়েছি
আকাশের সহ্য হলোনা তা!

পৃথিবী এখন আমার কাছে অস্পষ্ট !
সময়ের কাজ সময়ে না করলে
ভেতরের ফুল কি প্রস্ফুটিত হয় ?
শীত কেবল পায়ের পাতায় নাচছে
অথচ উধার্ঙ্গ সাঁটা শীতের স্বরলিপিতে!
সামান্য উষ্ণতা ধার করতে করতে কখন
যেনো চলে এসেছি কুহকের পৃথিবীতে!

শীত কেবল পায়ের পাতায় নাচছে, নাচছে !

আরো পড়তে পারেন

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১) মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার….

সোহরাব পাশা’র একগুচ্ছ কবিতা

নিদ্রিত ঘ্রাণের শব্দ দীর্ঘ যায় আশালতা ফিরে আসে বিষণ্ণ গোধূলি ফিরে আসে দুঃখিত সকাল, ক্ষয়ে যাওয়া এক দূরের উপনিবেশ পাখির চেয়ে মানুষের কোলাহল বেশি কোনো মৃত্যু মানুষকে অপরাধী করে না নিঃশ্বাসের রোদে আবছায়া নিদ্রিত মেঘ স্মৃতির অসুখ বাড়ে; দূরে নির্জন আধাঁরে জেগে ছিলো মানুষের কথা পুরনো সে বাড়ি সেই ছায়াপথ মায়াপথ জুড়ে কতো ভুল মানুষের….

error: Content is protected !!