Author Picture

সফিকুল ইসলাম এর একগুচ্ছ কবিতা

সফিকুল ইসলাম

বর্গীর কবলে
.
বর্গীরা ঘুম পাড়িয়েছে
গণতন্ত্রের মন্ত্রে, অধিকারের তসবি জপে
ধর্মের তন্ত্রে, স্বর্গের লোভ দেখিয়ে।
বর্গীরা ঘুম পাড়িয়েছে
মানবাধিকারের ফুঁ-এ, শান্তির যাদুটোনায়।
বর্গীরা ঘুম পাড়িয়েছে
টেলিভিশন রেডিও দিয়ে, ফেসবুকের মজমা দিয়ে
উন্নয়নের কথা বলে, ইট পাথরের খেলা খেলে।
বর্গীরা ঘুম পাড়িয়েছে
চেতনার কথা বলে, উগ্রতায় মগজ ধুয়ে
শিল্পীর সুর দিয়ে, বাউলের ভান দিয়ে।
সবাই দেখছি ঘুমায়, উপুড় হয়ে ঘুমায়
নাক ডেকে ঘুমায়, লালায় বালিশ ভিজিয়ে ঘুমায়।
কেউ কেউ হাঁকডাক দিয়ে চারপাশ জাগিয়ে তুলে
দুরদুরান্ত আলোকচ্ছটায় ভরে দেয়; আর তা দেখে
বর্গীরা ছ্যা ছ্যা করে, বিষবাষ্পে সবই ঢেকে দেয়
ধ্বংস, গণহত্যা, ফাঁসি, আত্মঘাতি হামলা চলে।
বর্গীরা আবার ঘুম পাড়ায় ভাড়া করা চলচ্চিত্রে
মাজা ভাঙা বুদ্ধিজীবী দিয়ে ঘুম পাড়ায়
জ্বী হুজুর সংবাদপত্র দিয়েও, আগডুম টেক্সটবুক দিয়েও
কড়ি কেনা কবি দিয়ে, লোভাতুর আলেম দিয়েও
ভাড়া করা উকিল-আমলা, কাজী দিয়ে ঘুম পাড়ায়
সবাই থাকে ঘুমে, বর্গী অট্ট হেসে ছুটে বেড়ায়
আলো আসে কমে আঁধার, আঁধার এলে আলো যায়
রূপকথার সে ট্রাজেডির মতো বর্গী কেবল খেলে যায়।


আমি নরকেই যাবো
.
কাকডাকা ভোরে ঘুমে, বিছানায় জবুথবু আমি
শয়তান মোলায়েম হাত বোলায় আমার দেহে
প্রার্থনা করবো বিধায় ওঠার চেষ্টা বৃথা যায়।
ঘুমিয়ে আবার স্বপ্নে হারাই আবছা কী সব দেখি
দেখি উড়তে উড়তে সপ্তাকাশের উপরে আমি
স্বর্গ ও নরকের মাঝে দ্বাররক্ষীর বাঁধা। আমি থামি
বলা হলো স্বর্গ বা নরকে যেথায় খুশি যেতে পারো।
তবে একটা শর্ত আছে। স্বর্গে গেলেও তোমাকে সেবার
জন্য নয়জন স্বর্গসেবক বেছে নিতে হবে।
কুড়ি জন থেকে নয়জন। আমি খুব খুশি,
স্বর্গেও যাবো, সেবার জন্য স্বর্গসেবক মুফতেও পাবো।
বললাম দারোয়ানকে, চলুন কুড়িজন দেখি।
বেছে নিই। কুড়ি প্রার্থী লাইনে দাঁড়িয়ে,
তাদের গলায় ঝুলছে যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতা।
গণতন্ত্র ও নির্বাচনের নিয়ম মেনেই চলি
আমি প্রত্যেকের গলায় ঝোলানো অভিজ্ঞতা পড়ি।
চক্ষু চরকগাছ হলো অভাগা আমার! দেখি
একজন তিরিশ বছর ধরে বড় অফিসের
সিবিএর নেতা, ত্রিশ কোটি টাকার মালিক। পাশে
অন্যজনের নামে চুরি ডাকাতির নয়টি মামলা, পরের
জন বোমাবাজ, তারপরেই মাদক সম্রাট। পরে
গার্মেন্টস জুট চাঁদাবাজ, তারপরে বখাটে যে
কিছুই না করে শতকোটি টাকার মালিক। আরো
দেখি দালাল ও গাঞ্জুটি, পঁয়ষট্টি খুনের আসামী দেখে
সামনে আগাই। চোখ বড় হয়। আবারো আগাই।
চোখ বড় হয়। বড় হতে হতে পুরো শরীর আমার চোখে
পরিণত হয়। গোল বল যেরকম। সাথে রাগে
আগুন জ্বলতে থাকে। বিশাল ফুটবলের মতো
চোখ থেকে রাগে আগুন বেরোতে থাকে। সঙ্গে তীব্র
ধোঁয়া। হঠাৎ দারোয়ানকে বলি আমি স্বর্গে যাবো না। না।
আমি নরকেই যাবো। নরকের আগুনের সাথে
আমার চোখের আগুনের একখানা মুলাকাত
হয়ে যাক। নরকের আগুন ও আমার রাগের
আগুনের যুদ্ধ নিয়ে মহাকাব্য রচিত হউক।
সে যুদ্ধের দামামায় আমার গভীর ঘুম ভাঙে
স্বর্গের যন্ত্রণার আগুণের চাইতে নরকে যাওয়া ভালো।


ধাঁধাঁয় চিত্ত
.
টিয়া পাখিটার লাল ঠোঁট দেখে
প্রেমে সাঁতার কেটেছিলাম
আহাহা কী বাঁকা নজরকাড়া!
পরে কবুতরের নরম তুলতুলে
গোলাপী পা দেখলে আমার কেমন যেন
হাসফাঁস লাগতো। ঘুরে ঘুরে নেচে নেচে
কী অবাক ভাব বিনিময়! মনে হতো
ওই সুন্দর পদযুগলে গভীর চুম্বন খেতে
আমি অনেক দূর যেতে পারি।
দিন যায়, আমি সব ভুলে যাই। পরে
সাদা বক ভালো লাগে আমার।
লম্বা সাদাটে বক দেখলেই আমি
আবেগে কেমন যেন বিহ্বল হয়ে পড়ি।
সাদা বক নিয়ে থাকতে থাকতে
আমার এখন সাদা ভালো লাগেনা।
তাই রোদে পোড়া কালো তেলতেলে
রাজার ঘোড়ার প্রতি অনুরাগী হই।
ক্যাটওয়াক-হারমানা কামুক হাঁটা!
এ মোহও টিকেনাই বেশিদিন
এখন একটিমাত্র গুণের শোভা
আর মনে ধরেনা তেমন। তাই
ময়ুরের প্রতি জেগে উঠে প্রেম।
যার আছে সব রঙ। কত অপরূপ
দেখি বিস্ময়ে নয়ন ভরে, হারাই নিজেকে।
কিছু দিন যেতে না যেতেই ঘোর কাটে
ভাবনা হয় এত রঙের সমাহার বিরক্তিকর।
রঙহীন জীবন ও জীবনহীন রঙের গোলকধাঁধায়
জীবনটাই ফাঁকা এখন।


সত্যের ঠিকানা
.
সে এখন সত্যের ঘোরে আছে।
সত্য দেখতে ঝাপসা লাল
সত্য পরিস্কার দেখার ইচ্ছে নিয়ে সে
কোটি বছর উড়ে অনেক দূরে গেলো
দেখলো সত্য নীল।
তারপরে আবার লক্ষ কোটি যুগ ধরে
চড়ে রকেটে অনেক দূরে গেলো
দেখলো সত্য উজ্জ্বল শাদা
মনে হয় ভুল দেখছে। সত্য সত্যই
ভাবনার ক্ষুদ্রত্ব, সময়ের ব্যবধান আর
অবস্থানের পার্থক্যের কারণে হয়তো
প্রহেলিকার খোয়াবে হারিয়েছে।
তাই সত্যের রঙ পরিবর্তন হয়েছে মনে হচ্ছে
এমন সময় আবছা শরীরীরের এক পাগলের ছায়া
তার সামনে এলো। মনে হলো প্রশ্ন করছে।
বৎস, কী সমস্যা? তোমাকে ভীষণ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে!
সে পাগলে বিস্তারিত বললো। তিনি বিড়বিড় করে
কী ভাষায় যেন প্রশ্ন করার চেষ্টা করলো
সত্য কী? শাদা কী? লাল কী? ঝাপসা কী? সময় কী?
সে বুঝলো এর ব্রহ্মান্ডে তার কোন অস্থিত্ব নেই।

আরো পড়তে পারেন

তরুন ইউসুফের একগুচ্ছ কবিতা

বহ্ন্যুৎসব কত কিছু পুড়ল! গাড়ি পুড়ল বাড়ি পুড়ল দম্ভের দালান পুড়ে ক্ষার জলপাই সবুজ ট্যাংক নামল পুড়ল বই গল্প রূপকথার বেলুন হাতে পুড়তে পুড়তে ফানুস হয়ে উড়ে গেল বালক মায়ের আঁচল পুড়ল পুড়ল বুকের কাছের লোক যুবকের বুক পোড়াতে পোড়াতে পুড়ে গেল বন্দুক, থানার সেপাই কারো কারো স্বপ্ন পুড়ল আমিও পোড়ার গন্ধ পাই- আমার পুড়ল….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

বাবা আপনার ব্যর্থ শরীর জানত নিরাময় উড়ে গেছে আসমানে, আপনার মৃত্যু হবে। শেষবেলায় আপনি বড় নিঃস্ব, ঈশ্বরের মত নিদারুন, একমাত্র একা। সেকারনেই আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে ভেন্টোলিন সিরাপ খেতেন, অ্যাসমা’র বড়ি গিলে সারা রাত কাঁশতেন। আপনার কফ গলানো কাঁশির শব্দে কোন কোন রাতে আমাদের কাঁচা ঘুম ছিঁড়ে যেত, আমরা বিরক্ত হতাম। তারপর, আপনার জবুথবু মুখের দিকে….

মাহমুদ দারবিশের ডায়েরি ‘নদী মরে যায় পিপাসায়’— (পর্ব: ২)

মেয়েটি আর তার চিৎকার সমুদ্রতীরের মেয়েটি, যার একটি পরিবার আছে আর সেই পরিবারটির একটি বাড়িও আছে। বাড়িটির মধ্যে দুটি জানালা আর একটি দরজা আছে। সমুদ্রে একটি যুদ্ধজাহাজ মজার ছলে তীরে হাটাহাটি করতে থাকা লোকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে: চার, পাঁচ, সাত জন বালির উপর পড়ে যায়। একটি অস্পষ্ট ঐশ্বরিক হাতের সাহায্যে মেয়েটি কিছুক্ষণের জন্য কোন প্রকারে….

error: Content is protected !!