Author Picture

আজাদুর রহমানের একগুচ্ছ কবিতা

আজাদুর রহমান

অন্য কেউ
.
অফিসে যেতে যেতে
সংসার চালাতে চালাতে
বাজার করতে করতে
আপনি একদিন
আপনাকে হারিয়ে ফেলবেন।
দেখবেন, আপনি আসলে আপনি না!
আপনার বদলে অন্য কেউ দাঁড়িয়ে আছে,
যিনি কি না আপনার হয়ে
অফিসের জন্য, সংসারের জন্য,
বাজারের জন্য ছুটছেন।
আপনি তখন সেই অন্য কাউকে
কাপড় পরাবেন,
অফিসে নিয়ে যাবেন,
সংসারে খেতে দেবেন,
ঘুমুতে দেবেন।
এভাবে দিনের পর দিন
আপনার মত অন্য কাউকে দিয়ে
এই সব করাতে করাতে, একদা
আপনার অভ্যেস হয়ে যাবে,
সবকিছু সবার কাছে তখন স্বাভাবিক মনে হবে।
তারপর, কোন একদিন ঘুম ভেংগে গেলে দেখবেন,
উদোম শরীর,আপনার গ্রামের বিছানায়।
কোথাও কেউ নাই। বুধবার
বৃষ্টি হচ্ছে। বাইরে শীতকাল।


অভ্যেস
.
গাছের প্রথম পাতাটি ঝরে যাবার সময়
তার শরীর কেঁপে ওঠে। চোখে শোকের ছায়া পড়ে।
মরতে তার বড় ভয় করে তখন।
তারপর আজ কাল পড়শু যখন একের পর এক,
দুই থেকে চার, আট অথবা বত্রিশ,
এ ডাল, ও ডাল, ডাইনে বায়ে
সমস্ত ডাল থেকে টুপ টাপ করে
অনবরত পাতা খসে পড়তেই থাকে-
তখন অজস্র মৃত্যুর ভিতর থেকে থেকে, একদিন
তার আর মরতে ভয় করে না ।
-মরতে মরতে মানুষের মত
তারও অভ্যেস হয়ে যায়।


দুপুরবেলা
.
আজ ৪০ মৃত্যু, আক্রান্ত ৩০০০।
টিভি বন্ধ করে,
তুমি খেতে বসেছ,
বিআর-আটাস চাউলের ভাত।
চিবুতে চিবুতে ভুলে যাচ্ছ
তোমার গ্রামের নাম।
চোখের সামনে সার সার লাশ,
তুমি গিলতে পারছ না।
তোমার গলার মধ্যে
একটা কবর আটকে আছে !


গন্তব্যগুলো জানা নাই
.
পৃথিবীর অধিকতর গন্তব্যগুলো
আমার জানা নাই,
কেউ কেউ আমাকে ঘৃনা করে,
কেউ ভুলগুলোকে ফুল করে তুলে নেয়
কাঁধে কপালে অথবা হৃদয়ে।
কেউ কেউ আমাকে অভিশাপ দেয়,
কেউ পাপগুলো অশ্রু করে তুলে নেয়
কান্নায় চোখে অথবা নাকে।
আমি প্রেমের নামে
এক গ্লাস বিষ পান করি,
সত্যের মত সিলিংয়ের দিকে চেয়ে থাকি,
পাশে রেখে আত্মহননের কোমল রশি।
পিতা শুয়ে আছেন, শুয়েই আছেন
তার পাশে দিনে একবেলা করে শুয়ে থাকি,
গোরস্থান ফেলে ইদানিং অন্যকোথাও
আর যাই না।
পৃথিবীর অধিকতর গন্তব্যগুলো
আমার জানা নাই।

আরো পড়তে পারেন

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১) মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার….

সোহরাব পাশা’র একগুচ্ছ কবিতা

নিদ্রিত ঘ্রাণের শব্দ দীর্ঘ যায় আশালতা ফিরে আসে বিষণ্ণ গোধূলি ফিরে আসে দুঃখিত সকাল, ক্ষয়ে যাওয়া এক দূরের উপনিবেশ পাখির চেয়ে মানুষের কোলাহল বেশি কোনো মৃত্যু মানুষকে অপরাধী করে না নিঃশ্বাসের রোদে আবছায়া নিদ্রিত মেঘ স্মৃতির অসুখ বাড়ে; দূরে নির্জন আধাঁরে জেগে ছিলো মানুষের কথা পুরনো সে বাড়ি সেই ছায়াপথ মায়াপথ জুড়ে কতো ভুল মানুষের….

error: Content is protected !!