Author Picture

শাহ বুলবুল এর একগুচ্ছ কবিতা

শাহ বুলবুল

একগাছা ভুলের আউশ
~.~
নিরাক দুপুর থেমে আছে নিশাচর জীবনের পাশে
কড়ই পাতায় মোড়া মৌরালা ইসকুল
মটরের নিরালা মাঠে কয়েদির গল্প শোনায়
সোমত্ত আক্রোশে।

পালকির খালাসি গান শুনি মুমূর্ষু আকাশে
কাঠুরের ভবঘুরে অনুচ্ছেদ হলুদ ঘাসের ভাগাড়ে
নীল খামে মরাগাঙ ফেরি হয়
স্বার্থের স্নান শেষে।

নিরাশার হাট যেন কখন বসে
কবে যাবো বেদনাতুর আলগীবাজার
আনাজের খোসাতে রেখে ভাতের ফেন
আনাড়ি আঁচল খুঁজি আরব্য উপন্যাসে।

পাহাড়িকা পিরামিড ডুবে গেছে সিহোরের দেশে
চলছি অচেনা সে যাত্রায়
তেঁতুলের ঝোপঝাড়ে প্রাচীন সমাধি বুকে
যেখানে পিতামহের স্কুলজীবন খুঁজে ফিরি একগাছা ভুলের আউশে।

কলমিলতার বিল পুুুুুুুুুুুুুুড়ে গেছে হুঁকোর কার্ণিশে
ইছামতির খেয়াঘাট ডেকে যায় শ্যাওলার সোঁদালি বনে
বহুদূর দুর্গাপুরের মাঠ-চালতে পাতার বাঁকে
লেবুর জঙ্গলে রাখা শাঁখারীপুকুর-যুগের পাঁচিলে বুনি দোয়েলের বেশে।

সব যেন থেমে গেছে ধলচিতের চাঁদোয়া আকাশে
শান্তিপুরের নীলবরণী ভাতের বিন্তি খেলে
মনে হয় সুপারি বনের ঝুঁপি
একদিন খেসারির শ্যামলা বাতাসে।


লাল পোস্টারের গায় নীল অক্ষর
~.~
ছুঁয়ে থেকো … …
যেদিন আমি নার্সারির ক্যাকটাস
কুসুমের ওম ভেবে তোমার ঠোঁটের ইনডোরপ্লান্টে।
যত খুশি-যেভাবে খুশি ভালোবেসো।

তিশির ক্ষেতে মসুরের গোপন অভিসার
শ্রাবণের চাদর মাখা মেঘের মায়ায়
বৃষ্টির আদর রোদে শুকালেও
একটু কাছে থেকো… …

এভাবে আর ক’দিন
কালের টেমস অপেক্ষার নাভিতে পুরে
বিনিদ্র বিছানার চৌকিদারী।

একদিন বুকের বারান্দায় টু-লেট টানিয়ে
লাল পোস্টারের গায় নীল অক্ষরে লিখবো
ভালোবাসি …
ভালো থেকো … …

আর আমি মহাকালের পরপারে
টারসিয়ারি যুগের সন্ধ্যায় ফেলে আসা
সব বৃষ্টি চুমু দিয়ে মিনতি করি
ভালোবাসি …
ভালো থেকো … …


নিঃসঙ্গতার স্টিমারে এক স্বপ্নখোর
~.~
স্বপ্নরা হেঁটে যায়
স্বার্থের অন্তিম প্রদেশ
মিনতিভরা কুমারীর অপেক্ষায় বিকেল গড়ায়
পড়শীর সংলাপে সালোয়ারের সুগন্ধি কেশ।

তিস্তার পাড় ঘেঁষে সংসারী ইশকুলের মতন
হাঁটি সুস্বাদু পাথরের পলিপথে
সার্কাসের কচুরিপানায় জমা পাহাড়িয়া কাশবন
একমুঠো নষ্ট রাত্রির উল্কাপাতে।

পারদের বেহালায় কষ্টের ফেরিওয়ালা
অতসী ফুলের মোনালিসা ভালোবেসে
ডুবেছে নিঃসঙ্গতার স্টিমার
কালাহারির বিরাণ ইতিহাসে।

স্বপ্নখোর খুন্তির দাওয়ায়
অষ্টাদশীর বর্গা সংকলনে
বেঁচে আছি ইি ইি কষ্ট গিলে
তুমিময় চুক্তিবাস পৌরসভায়।


চরদুঃখিয়ার এক অচিন গাঁ
~.~
মরা প্রজাপতি আর স্টেশনের বেহুঁশ ট্রেন
জীবনের শিকে ধরা পেনশনভোগী আর তেতো সিগারেট।

স্মৃতির পুকুরে খোয়া তোমার নাকফুল
প্রতিটি কষ্টকে বলেছি বিদায়
সাঁঝের পিঁড়িতে বসে ব্যর্থতার দাওয়ায় ।

দেখেছি নিখোঁজ ছায়া ধুলোয় মিশে গেছে…

একটু পরেই রাত্রিরা নামবে
আমায় নিয়ে যাবে

কতকাল পড়ে রবো…
চরদুঃখিয়ার এক অচিন গাঁয়ে
একজীবনের সবকিছু ভুুলে রবো।

কালের পর কাল তোমাদের স্মৃতি হবো
আমাদের ভুলে গেলে
চরদুঃখিয়ার এক অচিন গাঁয়ে।


বরইতলার কলাপাতাঘর
~.~
দু’বেলা ভাগ্যের সিমেন্ট ঘষে
কে পেয়েছে পালকির গ্যালারি বেয়ারার স্কয়ারে।

তিশিদের একরত্তি সংসারে
সারারাত হলুদ স্বপ্নের নীল মোড়
আঁচলে লবঙ্গ রেখে এলাচের কারবারে।

হেঁটে চলে দেবদারু অ ল
প্রেয়সীর গ্রাম ছেড়ে মিনতির নারকেল কুটিরে।

দুঃখের বিলবোর্ডে পলিপাড়ার নিনাদি জল
অজানা আকাশের দ্বীপে তারাময় সমুদ্রবেলা।
বরফের নুড়িজমা ঘাসের খোঁপে
অনাগত প্রবাল কাঁদে স্বপ্নগলা তুষারে।

হাজার সালের ভূমিকম্প ফণা তোলে
বুভুুক্ষু সুড়কির ধারে।

বহুকাল বরইতলার কলাপাতাঘর
সেই সন্ধ্যাভেজা ডাকাতিয়ার বুকে
গোওয়াল ভাওরের বিল ছেড়ে অনেক দূরে …।

জোনাকির ঝাঁঝরা পিঠে ব্রাকেটভর্তি জীবন
পুরনো সিগন্যালে দেবে গেছে ভাড়ার নগ্ন অত্যাচারে।

আরো পড়তে পারেন

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১) মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার….

সোহরাব পাশা’র একগুচ্ছ কবিতা

নিদ্রিত ঘ্রাণের শব্দ দীর্ঘ যায় আশালতা ফিরে আসে বিষণ্ণ গোধূলি ফিরে আসে দুঃখিত সকাল, ক্ষয়ে যাওয়া এক দূরের উপনিবেশ পাখির চেয়ে মানুষের কোলাহল বেশি কোনো মৃত্যু মানুষকে অপরাধী করে না নিঃশ্বাসের রোদে আবছায়া নিদ্রিত মেঘ স্মৃতির অসুখ বাড়ে; দূরে নির্জন আধাঁরে জেগে ছিলো মানুষের কথা পুরনো সে বাড়ি সেই ছায়াপথ মায়াপথ জুড়ে কতো ভুল মানুষের….

error: Content is protected !!