Author Picture

দুখু বাঙাল-এর পাঁচটি কবিতা

দুখু বাঙাল

আঁধার বনাম অন্ধকার
.
দিতে চাও দিয়ো শাস্তি
মায়ের মূর্তির ন্যায় সাগরে ফেলিয়ো
ঢেউ হয়ে ফেনা হয়ে ছড়াইব সুরের কম্পন
হৃদকূপে ফেলিয়ো না একমাত্র এটুকু মিনতি।

দিতে চাও দিয়ো শাস্তি
সাড়ে তিন হাত মাটির গভীরে রেখো পুঁতে
ঘাস হয়ে ফুল হয়ে সাজাইব সমাধি প্রাঙ্গণ
হৃদকূপে ফেলিয়ো না একমাত্র এটুকু মিনতি।

পড়ে গেলে একবার হৃদকূপে কে পারে উঠিতে
আঁধারে আপত্তি নেই
অন্ধকারে ফেলিয়ো না হাসিতে হাসিতে।


আত্মার বিবর্ণ কুলুপ
.
ঋতুচক্রে বারবার ছিনতাই হয়ে যায় মধুচাক- টেন্ডারবক্স
অদূরেই অভিযোগবাক্সখানি অস্পৃশ্য শূন্য হাহাকার
‘শান্তি বিড়াজিত’- এই বলে সর্বত্র কপচায় পারিষদ দল
কোথাও নালিশ নেই এই দেশে, নেই ফরিয়াদ
বিশ্বাসের শূন্যতা বুকে লয়ে পড়ে থাকে অভিযোগবক্স।

কী বিশাল উচ্চতায় বক্ষের গুদামে সব নালিশের ভার!
কী বিশাল গভীরতায় নিমজ্জিত পরাজিত মানুষের হার!
কুহকেরা যা-ই বলুক, এখানে বিজয় নেই- বিজয় সুদূর
কোথাও নালিশ নেই- অভিযোগবাক্সগুলো শূন্য হাহাকার
শুধু একবার খুলে দেখো মানুষের আত্মার বিবর্ণ কুলুপ।


কবিও সাঁতার জানে
.
মানুষ বুভুক্ষু যদি, আমি গাছ- আমি এক পল্লবিত তরু
নদীজলে দোল খায় জ্যোৎস্নায় কবি এক চন্ডীদাস, বড়ু–।

মানুষ হলে একলাফে মরিপড়ি ঝাঁপ দিয়ে প্লাবিত জলে
চোখ বুঝে দিনমান ভাঙা যেত দুই কূল ঢেউ তুলে তুলে।

ইচ্ছেনদী- স্বৈরিণী, অবশেষে দ্বিধা হয়ে ভাসালে দুকূল
আমি তো চেয়েছি শুধু দোয়াব অঞ্চলজুড়ে শতবর্ণ ফুল।

কবিও সাঁতার জানে, যেই নদী বুকে ধরে কুসুমের ভেলা
কবির স্বভাব এই- বাকি সব ধারাপাত হাভাতেই গেলা।

মানুষ বুভুক্ষু যদি, আমি গাছ- আমি এক পল্লবিত তরু
নদীজলে দোল খায় জ্যোৎস্নায় কবি এক চন্ডীদাস, বড়ু–।


সমুদ্রটা দেখা দিয়ে যায়
.
আমার শব্দ কিংবা শব্দরাজির কষ্ট নেই কোনো
এরা সব শ্রমধন্য- গায়ে যার ফুটে থাকে লবণকুসুম
হেঁটে হেঁটে যায় এরা আর্যত্বে সমাসীন পাঠকের বাড়ি
খুশি হয় গৃহকোণে গীতবিতান ধর্মীয় কেতাব
কিংবা নজরুলের বিদ্রোহী সম্বলিত ‘অগ্নি-বীণা’ দেখে
বলা যায় পাঠদানে গুরুরাই বাড়ি বাড়ি ফেরে
পায়ে হেঁটে সমুদ্র দেখার ক্লেশ থাকে না এদের
সমুদ্রটা পদব্রজে ধীর লয়ে দেখা দিয়ে যায়।

আমার কবিতারা জরিপকারীর মতো পাঠককেই পড়ে
পড়ে তার যুগল চোখের ভাষা শ্রবণের ধারা এবং
হৃদয়ের জাহেরি বাতেনি সব অদ্ভুত লিখন
নিজেকে কর্তন করে দীর্ঘতর করে তুলে সৃষ্টির মিছিল
ফিরে আসতে কেটে আনে পাঠকের আধেকটা হৃদয়
ডাকাত স্বভাব কিনা অনুভবে মেলে ধরে শৌর্য পরিচয়।


হংস আর পদ্মের আকাল
.
কবিতা শোনার জন্যে রাতভর জেগে থাকে নক্ষত্র-তারা
কবিতা শোনার জন্যে কানপেতে জেগে থাকে
চিরদিন বিরহী পর্বত
কবিতা শোনার জন্যে নদীর চড়ায় এসে কুমিরেরা
গায়ে মাখে কবিতারোদ্দুর
কবিতা শোনার জন্যে রেজগি পয়সার মতো মারামারি করে
চলে জিন ও পরীরা
কবিতা শোনার জন্যে ধাবমান হরিণকে ছেড়ে
এসে কবির দুপায়ে যেমন চুমো খায় ব্যাঘ্রযুবরাজ।

সাপও তো বাঁশির সুরে কানপেতে রাখে চিরকাল
দিঘি, কবে যে ঘুচিবে তোর হংস আর পদ্মের আকাল।

আরো পড়তে পারেন

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১) মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার….

সোহরাব পাশা’র একগুচ্ছ কবিতা

নিদ্রিত ঘ্রাণের শব্দ দীর্ঘ যায় আশালতা ফিরে আসে বিষণ্ণ গোধূলি ফিরে আসে দুঃখিত সকাল, ক্ষয়ে যাওয়া এক দূরের উপনিবেশ পাখির চেয়ে মানুষের কোলাহল বেশি কোনো মৃত্যু মানুষকে অপরাধী করে না নিঃশ্বাসের রোদে আবছায়া নিদ্রিত মেঘ স্মৃতির অসুখ বাড়ে; দূরে নির্জন আধাঁরে জেগে ছিলো মানুষের কথা পুরনো সে বাড়ি সেই ছায়াপথ মায়াপথ জুড়ে কতো ভুল মানুষের….

error: Content is protected !!