নোরা রবার্টস। বিখ্যাত আমেরিকান এ ঔপন্যাসিক ১৯৫০ সালের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। রোমান্স রাইটার্স হিসেবে খ্যাত এই লেখিকার ২৫০টিরও বেশী প্রেমের উপন্যাস রয়েছে। স্ব-নামে ছাড়াও ‘জি, ডে রোব’ নামে তিনি তার বিখ্যাত ‘ইন ডেথ’ সিরিজ লিখেছেন। এবং ছদ্মনাম ‘জিল মার্চ’ ও ‘সারাহ হার্ডেসটি’ নামেও লিখেছেন বেশকিছু ফ্যান্টাসী ও সাসপেন্সধর্মী উপন্যাস।
‘আমেরিকা হল অব ফেমে’র রোমান্স রাইটার্স অন্তর্ভুক্ত প্রথম লেখক ‘নোরা রবার্টস’৷ ২০১১ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী তার উপন্যাসগুলো নিউইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় টানা ৮৬১ সপ্তাহ ছিল। এবং এরমধ্যে ১৭৬ সপ্তাহ শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছিল। সন ১৯৭৯। প্রবল তুষারঝড়ের দিন। দমকা হাওয়া ও অনবরত তুষারপাতে চারপাশ আচ্ছন্ন। বাইরে পাহাড়ে লেগে থাকা শুভ্র তুষারের প্রলেপ আশপাশের চরিত্র পুরোই পাল্টে দিয়েছে। এমন আবহাওয়ায় পরদিন কিন্ডারগার্টেনও বন্ধ। ঘরে কোন চকোলেট না থাকায় দুটি ছেলে সারাক্ষণ তা চেয়ে চেয়ে তাদের মাকে ক্রমাগত বিরক্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এমন অসহ্য বিরক্তিকর একটি দিন পার করার পর একপ্রকার ক্লান্ত মেয়েটি। অবশেষে একসময় বিরক্তির অবসান ঘটলে হঠাৎই সে একটি আইডিয়া খুঁজে পায়। এবং তড়িৎ সে তার কলম ও কিছু কাগজ নিয়ে বসে পড়ে আর মাথায় ঘুরতে থাকা অগোছালো আইডিয়াগুলো জড়ো করা শুরু করে। সবসময়ই সে রোমান্স বা প্রেমধর্মী লেখা পড়তে ভালোবাসতো এবং হতে পারে কখনো এমন কোন কাজ তথা লেখারও ইচ্ছে করেছিলো। সুতরাং তখন সে বিভিন্ন কাগজগুলোর উপর আলাদা আলাদা করে তার গল্পটি লিখে। এভাবে নিজের সুবিধামত ছেলেদের উপদ্রুব এড়িয়ে রোজ সে একটা সময় লিখে যায়। এবং বেশ ক’বছর নিরন্তর পর লেখা ও বেশকিছু প্রত্যাখ্যাত পত্রের পর তিনি তার প্রথম পাণ্ডুলিপিটি ‘সিলহট’র কাছে বিক্রি করেন। তার প্রায় বিশ বছর পর ক্রিটিকালি এবং ফিনানশিয়ালি উভয় দিক থেকেই ‘নোরা রোবার্টস’ এখন পৃথিবীর অন্যতম সফল ও বিখ্যাত লেখক। তার বইয়ের ৪২ মিলিয়নেরও বেশী অনুলিপি প্রিন্ট রয়েছে। তার ট্রিলজি বুক ‘সিক্স’ ১৯৯৭ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলার বই হিসেবে নির্বাচিত হয়। ইন্টারনেট সাইট রাইটার্স রাইটরের পক্ষ থেকে সাহিত্যের নানা অনুষঙ্গ ও নবীন লিখিয়েদের ব্যাপারে তার সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছেন সাংবাদিক ক্লেয়ার ই হোয়াইট। সাক্ষাতকারের চুম্বকাংশ বাঙলায়ন করেছেন কাউসার মাহমুদ।
১৯৮১ সালে আইরিশ থ্রোবার্ড থেকে আপনার প্রথম উপন্যাসটি কিভাবে আসে? এটা আপনার প্রথম বই। প্রথম বইটি লেখার সময় নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করেছিলেন?
: ১৯৭৯ এর সেই প্রবল তুষারঝড়ের একদিন। পরদিন ভোরে কিন্ডারগার্টেনে যাওয়ার তাড়া নেই। আমার ছোট সন্তান দুটো চকোলেটের জন্য আমাকে বিরক্ত করে তুলছিল। একসময় তাদের জন্য অল্পকিছু চকোলেট সরবারহ ও ক্যান্ডিল্যান্ডের দারুণসব গেমস ব্যবস্থা করা হলে তারা শান্ত হয়- এসব কিছুই আমাকে আমার প্রথম বই লিখতে সাহায্য করেছে। আমি আমার বাড়িতে ছিলাম- তখন পুরোটা সময়জুড়ে অনবরত তুষারপাত আমার তিন ও ছয় বছরের সন্তানের সাথে আমাকেও অসহ্য করে তুলছিল। মূলত আমি সবসময়ই পড়তে ভালোবাসি। এবং এসেছিও একটি পড়ুয়া পরিবার থেকে। কিন্তু তাই বলে কখনোই লেখাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেব; ভাবিনি। আমি মনে করি প্রতিটি মানুষই তার মাথার ভেতর কোন না কোন গল্প তৈরী করে। যাহোক সেদিন প্রবল তুষারঝড়ের সময় যখন রেডিওতে কিন্ডারগার্টেন না থাকার ঘোষণা দেয়া হলো; এবং অনবরত তুষারঝড়ের ভেতর সবকিছু কেমন অস্বাভাবিক হয়ে থাকলে- আমি এক প্রকার মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। সেসময় নিজেকে শান্ত ও কিছুটা এন্টারটেইন করতেই ভাবলাম মাথায় ঘুরতে থাকা একটা গল্প খাতায় লিখি।
যে মুহুর্তে আমি তা শুরু করলাম- একদমই স্তব্ধ ও নির্বিকার ছিলাম; যেন কি লিখবো বুঝতে পারছি ন। আসলে আমি লেখার প্রক্রিয়াটা ভালোবাসতাম। তাই কয়েক মুহুর্ত ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম ‘রোমান্স’ নিয়ে লিখবো। এবং সত্যিই আমি তখন বিষয়টিকে উপভোগ করছিলাম। আর তখন শুধুমাত্র ‘হার্লেকুইনস’ ছিলো আমার সামনে; সেগুলো মূলত ব্রিটিশ লেখকরা ব্রিটিশ রীতিতে লিখেছিলেন। তারপর প্রায় এক বছর ধরে নিয়মিত আমি আমার লেখাগুলো জমা দিই এবং নিয়মিতই তা প্রত্যাখ্যাত হয়। তবে শেষ কিছু প্রত্যাখ্যাত চিঠিতে কয়েকটি গল্পকে ভালো বলা হয়েছিল। এবং তা সুন্দর ও উন্নত বলে ইন্ডিকেট করে দেয়া হয়েছিল কিন্তু আমি ছিলাম আমেরিকান(হাসি)। অবশেষে ১৯৮০ সালে সিলহয়েট যখন নবীন লেখকদের সন্ধ্যান করলো; সেটা আমার জন্য দূর্দান্ত একটা টাইমিং ছিল। আমার ভাগ্যও সুপ্রসন্ন ছিলো যে, ৮০’র এক উজ্জ্বল গ্রীষ্মে সিলহয়েট আমার প্রথম বইয়ের পান্ডুলিপিটি কিনেছিল।
নোরা রবার্টস’র জীবনের একটি সাধারণ দিনের কথা আমাদের বলুন।
: সবচেয়ে দারুণ হলো যখন আমি ভোরে ৭-৩০ থেকে আটটার মধ্যে উঠতে পারি। তারপর ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ মিনিট হালকা শরীর চর্চা করে সোজা নিয়মমাফিক কাজে ঢুকে যাওয়া। সাধারণত প্রথমে আমি আমার মেইলগুলো চেক করি এবং উত্তর দিই। এমন নিয়মমাফিকতার ভেতর সুন্দর কোন উজ্জ্বল দিনে বিকেল পর্যন্ত ফোন বাজবে না অর্থাৎ ওসব দিনে বিকেল পর্যন্ত কোন প্রকার ফোনে থাকবো না আমি। তবে সত্যি বলতে কী এমন জ্বলজ্বলে রোদমাখা শুভ-সুন্দর দিন আমি খুব বেশী পাইনি-(হাসি)। এভাবে সাধারণত টানা চারটা-পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করার পর মধ্যদিবসের ছোট্ট একটা ব্রেক নিই। এবং নতুন আসা মেইলগুলো চেক করি, পড়ি অথবা কিছু লিখে পোস্ট করি। তারপর রাতের খাবারের আয়োজন করি এবং কিছু প্রয়োজনীয় মেইল তৈরি করি। এর মাঝে যদি এমন হয় যে কোন বই খুব ভালোভাবে পড়ছিলাম বা দিনে পড়ার মাঝে প্রচন্ড ডিস্টার্ব হয়েছিল; তখন পুনরায় ঘন্টা দুয়েকের জন্য তা নিয়ে বসি বা আরো দু’এক ঘন্টার জন্য লিখতে বসে পড়ি। এছাড়া সাধারণত সন্ধ্যার কিছুটা সময় টিভি দেখি বা কিছু পড়াশোনা করে থাকি।
আপনার স্বামীর বুকস্টোর সম্বন্ধে কিছু বলুন।
: এটা আমাদের চমৎকার একটা শপ। আমরা সবাই আমাদের বইয়ের দোকানটিকে খুব ভালোবাসি। এটা মেরিল্যান্ডের ছোট্ট বোন্সবোরো শহরের ঠিক প্রধান রাস্তায় অবস্থিত। সবসময়ই আমরা সেখানে নতুন প্রকাশিত বইগুলো রাখি। এটি একটি ছোট্ট দোকান। কিন্ত আমি জানাতে চাই যে, আমার স্বামী সবসময়ই এটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে অনিন্দ্য সুন্দর করে রাখে। ক্রেতাদের ভালো সার্ভিস দেয়ার জন্য সত্যিই সে অস্বাভাবিক পরিশ্রম করে। দোকানে নগদ বই বিক্রির পাশাপাশি একইসাথে সে মেইল অর্ডারগুলো গ্রহণ করে। এই তো গেলো বছর ইন্টারনেটে সে দূর্দান্ত কিছু ব্যবসা করেছে। সবসময়ই নানা ধরণের পেপারব্যাক করা ফিকশন, নন-ফিকশন, ও যুদ্ধ সম্পর্কীয় নতুন নতুন প্রকাশিত বই সংগ্রহ করে দোকানে আনতো। এবং এগুলোর নির্দিষ্ট কিছুর জন্য অটোগ্রাফেরও ব্যবস্থা করতো- তবে শুধু আমার বইয়েই অটোগ্রাফ না (হাসি)। এছাড়াও আমাদের এই বুকশপে ক্রেতাদের জন্য খুবই চমৎকার কফির ব্যবস্থা আছে। সাথে সুস্বাদু বিস্কুট ও কেক-ও। দোকানটিতে আমার বড় ছেলে ড্যানও কখনো কখনো আমাদের বিশ্বস্ত ও প্রিয় বিক্রেতা রুথ’র সঙ্গে কাজ করে। এমনকি আমিও, যখন আমার সময় থাকে তখন আমিও সেখানে যেতে খুব ভালোবাসি। সত্যিই ওটা এক অসাধারণ জায়গা। এবং কিছু আনন্দময় মুহুর্ত কাটানোর চমৎকার আবহ।
আবেগের দৃশ্য লেখার ক্ষেত্রে কীভাবে আপনি তা লেখেন?
: এটা ঠিক অন্যান্য দৃশ্য যেমন- ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া, আবেগ বা অনুপ্রেরণার দৃশ্য লেখার মতোই। মূলত এগুলোর সবই গল্পের চরিত্র থেকে আসে। একটি প্রেমের দৃশ্য লেখার জন্যও লেখকের অন্যান্য উপাদানগুলোর মতো প্রেমের উপাদান প্রয়োজন হয়।
আপনার স্বামী কি আপনার লেখা প্রেমের দৃশ্যগুলো পড়েন?
: যদি বলো আগেই পড়ে কি-না! তাহলে একদমই না। কারণ সে আমার কখনোই কোন লেখা ছেপে আসার আগে পড়ে না। ছেপে আসলে সমস্ত বই সে পড়ে।
কতক্ষণ (কতোটা) আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন?
: সত্যিই এটি অসাধারণ। আমি অনেক বেশী ইন্টারনেট ব্যবহার করি। আমি আমার রিসার্চের বেশীরভাগ কাজই এখন ইন্টারনেটে করে থাকি। এবং নিশ্চয়ই এর মাধ্যমে খুব সহজে আমি আমার কমিউনিটির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। আমার যেসব বন্ধুদের খুব কম খুঁজে পাই, তাদের খুব সহজেই এর মাধ্যমে পেতে সক্ষম আমি। আসলেই এটি চমৎকার। আর রিসার্চের ক্ষেত্রেও জরুরি কোন জিনিস অফিসে যাওয়া ছাড়াই মুহুর্তে খুঁজে পাই। জানি না এটি ছাড়া সবকিছু আমি এভাবে কিভাবে ম্যানেজ করতাম!
আপনি কি বিশ্বাস করেন যে লেখকদের অনলাইনে থাকা জরুরি?
: আমি মনে করি এটা নির্ভর করে লেখকদের উপর৷ তারা কি করতে চায়। তারা কি উপভোগ করে। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই উপভোগ করেছি এটি এবং নিশ্চয় আমি তাদের বলতে চাইবো; কোনরূপ প্রশ্ন ছাড়া, রিসার্চের জন্য তাদের যে কেউ এটি ট্রাই করে দেখতে পারে। আমি এটাকে সত্যিই অসাধারণ মনে করি। তাছাড়া অনলাইনে আমি আমার অনেক পাঠককে খুঁজে পেয়েছি। তারা আমায় অনেক আনন্দ দিয়েছে এবং তাদের সঙ্গে কাটানো মুহুর্তগুলো সত্যিই মূল্যবান ছিলো। আমি উপকৃত হয়েছি।
ভক্তদের ব্যাপারগুলো কীভাবে দেখেন?
: খুব সামান্য। ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই টুকটাক কথাবার্তা বা উত্তর দেয়া। যেমনটা রোজই পাঠকদের সঙ্গে কথা বলছি। এছাড়া প্রায়ই পাঠকদের বেশ বড়সড় একটা অংশ কখনো বুক সাইনিং বা এমনি দেখা করার জন্য আমাদের দোকানে আসে। তাছাড়া যখন আমি বুক ট্যুর বা ব্যবসার জন্য বেরুই তখন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে সাক্ষাত করি। এছাড়াও প্রায়ই আমি আমার একাউন্টে পোস্ট করি এবং এক কি দু’সপ্তাহের মধ্যে প্রায় সব পাঠকেরই মেইলের উত্তর দেবার চেষ্টা করি। সত্যিই এটা আমার জন্য দারুণ প্রশান্তির যে বিভিন্ন প্রান্তের লোক আমার লেখাগুলো পড়ছে। তারা আমার কাজগুলো উপভোগ করছে। এবং আমাকে তাদের ভালোলাগা সম্পর্কে বলতে চান- আমি তাদের এ ব্যাপারগুলোর প্রশংসা ও সম্মান করি।
অন্যান্য লেখকদের লেখা পড়ার সময় হয় কি? কাদের লেখা পড়তে ভালোবাসেন?
: আমি প্রচুর পড়ি এবং আমার সবচেয়ে আনন্দের হলো অন্য কারো লেখা পড়া। আমি ভীষণ পড়ুয়া এবং রোজই আমি বিভিন্ন ধরণের লেখা পড়ি। আমি পাল প্যাট্রিসিয়া গাফনির কাজটি সত্যিই উপভোগ করেছি। এছাড়া রূথ লায়ান, মেরিয়েন উইলম্যান ও জিল গ্রেগরির সাথে আরো একটি নৃতাত্ত্বিক কাজ করতে পেরে ভীষণ আনন্দিত হয়েছি। তাদের প্রত্যেকের আলাদা কাজও আমি উপভোগ করি। এছাড়াও জন স্যান্ডফোর্ডের ‘প্রি’ সিরিজ এবং সু গ্রাফটন ও লিন্ডা বার্নসও বেশ পছন্দের। তবে এলিজাবেথ বার্গ’কে আমার অবিশ্বাস্য মনে হয়। দূর্দান্ত সে। আর যদি মেরি স্টুয়ার্ট’র কথা বলি; সবসময় ও আমার কাছে দেবী হবে। যেকোনো সময় তার প্রথম বইগুলোর একটি বেছে নিতে পারি। সেসবের একটি তো আমি বহুবার পড়েছি এবং এখনও গল্পের ভেতরই আছি।
আপনার লেখক ক্যারিয়ার প্রেমধর্মী গল্প দিয়ে শুরু করেছিলেন। অথচ প্রেম সম্বন্ধীয় বেশ কিছু কঠোর প্যারামিটার রয়েছে। আপনি কি কখনো অনুভব করেছেন যে নির্দিষ্ট সাবজনরা’র প্যারামিটারগুলি আপনার পক্ষে সীমাবদ্ধ নয়। তাই এই কঠোর নির্দেশনাবলীর ভেতর লিখতে এবং এখনও আপনার এ সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে ‘সত্য’ থাকতে কখনও কোন সমস্যা হয় কী?
: আমি এটাকে কখনোই কোন সীমাবদ্ধ ক্যাটাগরী মনে করিনি। যদি আপনি কোনো ক্যাটাগরীতে লেখেন তবে তার কাঠামোগত সকল বিষয় সম্পর্কে জেনেই আপনি লিখবেন- এবং এটাই পাঠকের প্রত্যাশা। এটা যদি আপনার জন্য সুখকর বা স্বাচ্ছন্দ্যের না হয়; আপনার ওটা না লেখাই উচিত। আমি আমার নিজের জন্যও সবমসময় এ অনুভব করেছি যে, তুমি যদি সর্বদা এই প্রত্যাশাগুলোর কথা মনে কর এবং নায়ক ও নায়িকার চলমান সম্পর্কের দিকে মনোনিবেশ করো তবে বিষয়টি খুব অদ্ভুতভাবেই নমনীয় হয়ে যেতে পারে।’ বরং আপনি তাতে রহস্য, প্যারানরমাল, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি, মেলোড্রামা বা কৌতুক যোগ করতে পারেন। আসলে কি এ বিষয়ে যখন লেখা শুরু করি এটি আমাকে ছবি আঁকা ক্যানভাসের মতো দূর্দান্ত একটি ক্যানভাস দিয়েছে, যার উপর পেইন্টিং করতে হবে- এবং নির্ধারিত ক্যাটাগরীর বাইরে গিয়ে দ্রুত তার উপর আমার রঙের ছটা ও কাঠকয়লার স্কেচ হতে পারে। তবে সর্বোপরি কথা হলো শিল্প এখনও শিল্পই।
আপনার নতুন হার্ডকভার বই হোমপোর্ট। আবেগ, সাসপেন্স, ষড়যন্ত্র ও শিল্পজগতের আর্কষনীয় চেহারার উল্লেখসহ এটি একটি দূর্দান্ত গল্পের বই। গল্পটির জন্য আপনার অনুপ্রেরণা কি ছিল?
: তুমি ভুল মানুষের সঙ্গে কথা বলছ (হাসি)। কখনোই আমি শুধু বেশী বেশী অনুপ্রেরণার উপর নির্ভর করি না। এবং কখনো বা খুব কমই- আমি আমার মাথায় গল্পের কিসব ধারণা রেখেছিলাম তা নির্ধারণ করতে সক্ষম। মূলত আমি এমন একটি বই করতে চেয়েছিলাম- যা শিল্পজগৎকে কেন্দ্র করে- এবং পাঠকদের কিছু সময়ের জন্য ফ্লোরেন্সে নিয়ে যাবার অনুমতি দেয় আমাকে। আমি একটি রহস্য করতে চেয়েছিলাম এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই মূর্তিটির জন্য এটি খুবই দারুণ হবে। এবং যা আমাকে অভিভূত করে দিয়েছিল যে ‘বিজ্ঞান কি সত্যায়িত শিল্পকর্ম ছিল?’ এবং এটি সেখান থেকেই এসেছে।’
উচ্চাকাঙ্খী রোমান্স লেখকদের জন্য, লেখার ক্লাস নেয়া বা লেখার বই পড়া কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?
: আমি মনে করি এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এবং স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত। লেখক গোষ্ঠী বা আমেরিকার রোমান্স রাইটার্সদের মত কোন গোষ্ঠী তৈরিতে আমি দৃঢ় বিশ্বাসী। যারা সমর্থন, তথ্য এবং পরস্পর যোগাযোগ তৈরি করে। আমার মতে রাইটিং ক্লাসগুলো অবশ্যই নবীন লেখকদের সাহায্য করে। এবং আমি এমন কিছু লেখকদের জানি যারা লেখা বিষয়ক সাহায্যপূর্ণ নির্দিষ্ট কিছু বইও খুঁজে পেয়েছিলেন এবং সেসবের সাহায্যও গ্রহণ করেছেন। তবে এখানে আমি বলবো- ব্যক্তিগতভাবে লেখার জন্য কখনোই আমি কোন কোর্স করিনি। লেখার উপর কোন বইও পড়িনি। আসলে এসব আমার জন্য বিশেষ কোন কাজ করবে এমন কিছু নয়।
বুক ট্যুরস, নানান জায়গায় বক্তৃতা, এবং যাপিত জীবনের ব্যস্ততায় আপনাকে প্রচুর ভ্রমণ করতে হয়। এসবের ভেতর কীভাবে আপনি লেখার সময় পান? আপনি কি ভ্রমণপথে লেখালেখি করেন?
: আপনি লেখার জন্য সময় পান না; সময় তৈরি করুন। বলুন, এটা আমার কাজ, আমি যা করবো। আর আমি পথে লেখি না। বরং আমার ল্যাপটপ সর্বত্রই আমার সাথে যায়।
একজন লেখক হিসেবে আপনি আপনার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?
: প্রতিটি বই’ই একেকটা চ্যালেঞ্জ। আপনি কতো লিখেছেন তা গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং এমন পরিশ্রম করা উচিত যেন আগে আপনি লিখেননি। এবং প্রতিটি বই’ই যেন প্রতিবার আপনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টাটুকু পায়। কোন আলস্য বা উদাসীনতা নয়। তাহলে এটাই কাজ। আর আমি আমার কাজটিকে ভালোবাসার জন্য ভাগ্যবান। অবশ্যই লেখালেখি করা এবং এর ফলাফল নিয়ে কাজ করা- সবচেয়ে কঠিন সমস্যার।