Author Picture

বিতর্কের তুঙ্গে ‘পিস ক্রাইস্ট’

সুদীপ্ত সালাম

যে আলোকচিত্রকর্মের কথা বলছি, সেই ছবিটি ১৯৯৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ‘ন্যাশনাল গ্যালারি অব ভিক্টোরিয়া’য় প্রদর্শিত হলে স্থানীয় ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায় সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে— যাতে ছবিটিকে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তাদের আর্জি না মঞ্জুর করেন আদালত। ছবিটির সমর্থকেরা সব সময়ই বলে আসছেন, ছবিটিকে প্রদর্শিত হতে না দেয়া মানে শৈল্পিক ও বাক্ স্বাধীনতার পরিপন্থী। তুমুল বিতর্কিত হওয়া সত্ত্বেও, চার্চের আপত্তি থাকার পরেও— এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে আছে আলোকচিত্রকর্মটি। বলছি, মার্কিন দৃশ্যশিল্পী আন্দ্রেস সেরানোর ১৯৮৭ সালে করা ‘পিস ক্রাইস্ট’ শিরোনামের কনসেপচুয়াল আলোকচিত্রকর্মের কথা। যা আশি ও নব্বইয়ের দশকের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক যুদ্ধের সূত্রপাত করেছিলো।

১. ফ্রান্সে হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ ‘পিস ক্রাইস্ট’ ।।   ২. মার্কিন দৃশ্যশিল্পী আন্দ্রেস সেরানো

তিনি একটি ছোট কাচের বাক্সে কাঠ ও প্লাস্টিকের তৈরি ক্রুশবিদ্ধ যিশুর প্রতিকৃতি স্থাপন করেন এবং বাক্সটি নিজের মূত্র দিয়ে ভর্তি করেন। তারপর মূত্রে নিমজ্জিত মূর্তিটির ছবি তোলেন। গাঢ় কমলা রঙের আভা ৬০ ইঞ্চি বাই ৪০ ইঞ্চির ছবিটিতে।
প্রথম প্রদর্শিত হয় নিউইয়র্কের ‘স্টাক্স গ্যালারি’তে—১৯৮৭ সালে। তখন কেউ ছবিটির বিরোধিতা করেনি। গোল বাঁধলো— ১৯৮৯ সালে যখন ভার্জিনিয়ায় এটি প্রদর্শিত হলো। তখন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আলোচনায় ছবিটি। এমনকি মার্কিন কংগ্রেসও ছবিটির বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লেগেছিলো। কিন্তু বিতর্কের মধ্যেই শিল্পকর্মটি জিতে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের সাউথইস্টার্ন সেন্টার ফর কনটেম্পোরারি আর্ট-এর ‘অ্যাওয়ার্ডস ইন দ্য ভিজ্যুয়াল আর্ট’। পিস ক্রাইস্টের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, ‘এটি ধর্মবিরোধী’। যদিও সেরানোর দাবি, ছবিটি এতো বিতর্কের জন্ম দেবে তা তিনি জানতেন না। তিনি আরো বলেছেন, আপত্তিকর বা ধর্মবিরোধী কোনো শিল্পকর্ম তৈরি করা তার উদ্দেশ্য ছিল না। নিজেকে ক্যাথলিক এবং যিশুর অনুসারী হিসেবেও তিনি দাবি করেন।

ছবিটির মাধ্যমে সেরানো দেখাতে চেয়েছেন, কিভাবে যিশু মারা গেলেন। যিশুর শরীর থেকে শুধু রক্তই বের হয়নি—মল-মূত্রও বেরিয়েছিল। তিনি মনে করেন, ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ভয়াবহতাকে তুলে ধরেছে বলেই হয়তো পিস ক্রাইস্ট অনেককে ব্যথিত করেছে। বিখ্যাত মার্কিন শিল্পসমালোচক লুসি আর লিপার্ডের মতে, ‘এটি একটি রহস্যে ঘেরা সুন্দর আলোকচিত্রকর্ম।’ টাইম ম্যাগাজিনের সবর্কালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ আলোকচিত্রকর্মের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে সেরানোর ‘পিস ক্রাইস্ট’।
এমন শিল্পকর্মের জন্য সেরানোকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। হুমকি পেয়েছেন পিস ক্রাইস্ট প্রদর্শনীর আয়োজকেরাও। ২০১১ সালে ফ্রান্সেও এই ছবির ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এই ছবির বিরোধিতা থামবার নয়। হয়তো চলতেই থাকবে— যতদিন পর্যন্ত ছবিটির একটি কপিও অবশিষ্ট থাকবে।

আরো পড়তে পারেন

মৃত্যুতেও থামেনি সমালোচনা

জাতিসংঘের একটি ফুড ক্যাম্পের পাশে একটি অসুস্থ শিশু পড়েছিল। শিশুটির ঠিক পেছনেই একটি শকুন অপেক্ষা করছে, কখন শিশুটি মরবে, কখন সে পাবে মাংসের স্বাদ! কি নিদারুণ দৃশ্য! এই ছবির সমমানের কোনো ছবি পৃথিবীতে আছে কিনা সন্দেহ। ১৯৯৩ সনে ছবিটি তুলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ফটোসাংবাদিক কেভিন কার্টার। একই বছরের ২৬ মার্চ ছবিটি দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়।….

আজও শরণার্থী ‘আফগান গার্ল’

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি ১৯৮৪ সনে পাকিস্তানের পেশোয়ারের কাছাকাছি এক শরণার্থী শিবির থেকে কিশোরী শরবত গুলার ছবি তোলেন। পরের বছর ছবিটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হওয়ার পরপরই আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে এই কিশোরী। আর ছবিটি ওয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত পোরট্রেটগুলোর একটি। গুলার পাথরের মতো চোখ দুটি ছিল বিস্ময়কর। সবুজ চোখে একই সঙ্গে ভয় ও….

টেসলার অপছন্দের ছবি

তার নামে যুক্তরাষ্ট্রে ১১২টি এবং অন্য ২৬টি দেশে আরো ১৯৬টি প্যাটেন্ট নিবন্ধিত আছে, এর মধ্যে ৩০টি শুধু ফ্রান্সেই নিবন্ধিত—এ থেকে অনুমান করা যায় নিকোলা টেসলা কত বড় মাপের বিজ্ঞানী ছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে এই সার্বীয়-মার্কিন ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার একের পর এক যুগান্তকারী আবিষ্কার দিয়ে মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করা শুরু করেন। বিদ্যুৎ ছাড়াও মোটর,….

error: Content is protected !!