Author Picture

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের একগুচ্ছ কবিতা

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

বিষন্ন মাটি
.
এই অনাথ অন্ধকারে তোমাকে আমি খুঁজি
যেমন উঠানে বিছানো ধান খুঁজে বেড়ায় পায়রা,

আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য
তুমি কখন আসবে?
সকালে, মধ্যাহ্নে, রাত্রে?
জানো
আমার সকল আকাশপথ ঘন নীল,

প্রবাসের বিষন্ন মাটি পেরিয়ে
তুমি কি আসবে?
আমি ভাবতে ভাবতে
ই-মেইল করি তোমাকে,

জানি পৃথিবীর সকল মাটি বিষন্ন

তুমি আর আসবে না
সকালে, মধ্যাহ্নে, রাত্রে,

অনাথ অন্ধকারে তবু তোমাকে খুঁজি
যেমন উঠানে বিছানো ধান খুঁজে বেড়ায় পায়রা।

 

ভোরের জন্ম হচ্ছে
.
ভোরের জন্ম হচ্ছে
নক্ষত্রের রাস্তা মুছে যাচ্ছে
আমার জিজ্ঞাসার ভিতর তোমার স্বপ্ন।

তোমার শরীরে বৃষ্টি অস্থির
তুমি পেরিয়ে যাচ্ছ সকল আকাশপথ,
তবু পথ ফুরোয় না।

 

আমি তোমার কথা বলি
.
আমি তোমার কথা বলি
তুমি চিলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নদী হয়ে যাও

নদীর নাম ধরে ডাকি
যেমন ডাকি তোমাকে

এই ডাক কি ভালোবাসার

ভালোবাসা ধানের গন্ধ
নদীর গন্ধ
কিংবা নদীর নৈঃশব্দ

পৃথিবীর সব নৈঃশব্দ চোখে তুলে তোমার দিকে চেয়ে থাকি

তুমি গুলির শব্দের মধ্যে
নদীর চ্ছলচ্ছল স্রোত

গুলি এদেশে সস্তা
মানুষের জীবন টার্গেট
মানুষ এক বিলাপ রোদন কাঁদন
ঈশ্বর যেমন কাঁদেন মানুষকে সৃষ্টি করে

আমি তোমার দিকে অস্থির হৃদয় নিয়ে দিন কাটাই

আমার অস্থির হৃদয় ঈশ্বরকে অশান্ত করে তোলে
তোমাকে তো করে না।

 

ভবঘুরে বাতাসের ডাকে
.
ভবঘুরে বাতাসের সঙ্গে তুমি কোথায় যাচ্ছ
আমি ডাকছি তুমি শুনছ না,

তুমি বাতাসের হাত ধরে গাছপালার ভিতর
হারিয়ে যাচ্ছ,

আমি ডাকছি তুমি শুনছ না।

 

তোমার কথা ভাবছিলাম
.
তোমার কথা ভাবছিলাম
তুমি এলে না, বৃষ্টি এলো

সেই কবে, অনেকদিন আগে
প্রেমেন্দ্র মিত্রের একটি বই পড়েছিলাম

বৃষ্টি এলো

 

পাকা ধানক্ষেতের উৎসব নিয়ে
.
পিয়ানোর বাজনার মতো
তোমার চুল বাতাসে উড়ছে
তোমার চুলে ঠোঁট গুঁজে আমি ভাবছি

পেছনের কথা তোমার কি মনে পড়ে
যখন আমাদের ভালোবাসা শুরু হয়
এখন সামনের দিকে তাকালে আমি ভাবি
তুমি এক পাকা ধানক্ষেত আমার সামনে বিছিয়ে আছ

পিয়ানোর বাজনার মতো
তোমার চুল বাতাসে উড়ছে
গাছের ডালপালার মতো তোমার চুল কেঁপে কেঁপে উঠছে
পাকা ধানক্ষেতের উৎসব নিয়ে তুমি দাঁড়িয়ে আছ

তোমার চুলে ঠোঁট গুঁজে আমি ভাবছি
তোমার ঠোঁটে ঠোঁট গুঁজে আমি ভাবছি
যখন আমরা থাকব না
তখন কেউ কি আমাদের কথা ভাববে

পাকা ধান পড়ে থাকবে
পিয়ানোর বাজনা পড়ে থাকবে
কেবল আমরা থাকব না।
আর কেউ অন্য কারোর বাতাসে
চুলের ওড়াউড়ি দেখবে।

 

ঘুমোবার আগে
.
ঘুমোবার আগে অনেকদূর যেতে হবে

শুধু ভাবি যাব।

আমার বন্ধুরা একে একে ঘুমিয়ে পড়েছে
ঘুমোবার আগে অনেকদূর যেতে হবে

ফ্রস্টের কবিতা পড়ি
আর যাওয়ার কথা ভাবি।

আরো পড়তে পারেন

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

বীভৎস খেলা নগরে বাতাসে মথিত জনস্রোতের কোলাহলে শুনতে পেয়েছি সারিগান গঞ্জের হাটে আকাঙ্খার গভীরে মন্দ্রিত অভিন্ন প্রাণ নীরব দর্শক ছিলাম ব্যর্থতার করুণ গান ফেরার মহড়ায় বঞ্চিত কুঁড়েঘরে সরাইখানার- শুঁড়িখানার মাছিরাও নেশায় বুদ্বুদ প্রকম্পিত কান্নার পর একদিন হাসির তিলকরেখা বিচ্ছুরিত শৈশবের ক্ষুধার্ত চিৎকার ক্রর হাসি চেপে মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলে ভাগ্য প্রহসনে যুদ্ধের ব্যগ্র দামামা থেমে গেলো-….

তোফায়েল তফাজ্জলের একগুচ্ছ কবিতা

উপায় অবলম্বন কাঁটা থেকে,  সুচালো কাঁকর থেকে পা রাখিও দূরে, জায়গা না পাক চলন-বাঁকা চেতনায় উড়ে এসে বসতে জুড়ে; এসবে খরগোশ কানে থাকবে রাতে, পড়ন্ত বেলায়, দ্বিপ্রহরে, পূর্বাহ্নে বা কাক ডাকা ভোরে। দুর্গন্ধ ছড়ানো  মুখ ও পায়ের তৎপরতা থেকে গ্রীষ্ম থেকে সমস্ত ঋতুতে একে একে নেবে মুখটা ফিরিয়ে তিলার্ধকালও না জিরিয়ে। কেননা, এদের চরিত্রের শাখা-প্রশাখায়….

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

error: Content is protected !!