Author Picture

মুহম্মদ ইমদাদ-এর তিনটি কবিতা

মুহম্মদ ইমদাদ

অতীত

বহু বছর ধরে আমরা আমাদের অতীতের
পাশ দিয়ে আসা যাওয়া করি।
কিন্তু একটাও কথা বলি না
অতীত আমাদের দুশমন ছিল নাকি?
মনে হয় ছিল।
না হলে কীভাবে
কীভাবে সে অল্প দামে কিনে নিয়েছিল
জীবনের প্রথম হাতঘড়ি
লাল ওয়াকম্যান
মানিব্যাগ
চিঠি?

 

আমিই আমার নৌকা, আমিই আমার মাঝি

জন্ম উত্তাল, রাগী, বিপদসংকুল
এক সমুদ্রে। জন্মমাত্র আমি তাই
পারে যাওয়ার জন্য আকুল হয়ে উঠি।
পারে আমার জন্য অপেক্ষা করছে কোনো সুমিষ্ট ফলের গাছ?
যার ফল খেলেই সার্থক আমার জন্ম?

আমি সাঁতরাতে থাকি
এক হাত এগোলে
একলক্ষ হাত পিছিয়ে দেয় উত্তাল ঢেউ
তবু আমি হাল ছাড়ি না
আমাকে যেতেই হবে
খেতেই হবে সেই ফল
কূল ও কিনারহীন অতল এই সমুদ্রে
আমি ভাসতে থাকি খড়ের মতো
ভাসতে ভাসতে ভাবি,
কেউ যদি পৌঁছে দিত
কোনো নৌকা বা জাহাজ, কিন্তু
ভবসাগরে নৌকা বা জাহাজের নিয়ম নাই
উদ্ধারের ঐতিহ্য নাই
সহায় ও সম্বলহীন
আমি
একদিন বুঝতে পারি
আমিই আমার নৌকা, আমিই আমার মাঝি!

মাঝিটি আর কেউ না, আমার রক্তাক্ত হৃদপিণ্ড
নৌকাটি আর কেউ না, আমার ক্ষত বিক্ষত চামড়া
চামড়ায় বহন করে শরীর, শরীরের ভেতর…
বিপদের মাঝে ভেসে চলি
সেই গাছের প্রতি

ভাসতে ভাসতে, একদিন
আমি পৌঁছে যাই
পৌঁছে যাই
একটা ক্ষুধার্ত তিমির পেটে!

তিমির পেটে গাছ আছে নাকি?
সূর্য ওঠে?

 

তারা হয়তো বেঁচে যাবে

অনেক দিন পরের কথা।
তখন কোন জীবের পেট থেকে কোন জীব জন্ম নেবে
আগে থেকে বলা অসম্ভব
ধরুন, হরিণের পেট থেকে বাঘ
বাঘের পেট থেকে গরু
গরুর পেট থেকে মানুষ…
এই নিয়ম আবার চিরস্থায়ী না
এইবার সাপ হয়তো মৌমাছি
মহিষ হয়তো কাছিম
জেব্রা হয়তো সিংহ জন্মালো
দেখা গেলো
পরের বছর সাপ জন্মাচ্ছে মানুষ
মহিষ জন্মাচ্ছে মাছ
মানুষ জন্মাচ্ছে জিরাফ
কাছিম জন্মাচ্ছে বানর…
কে কখন কী জন্ম দেবে তার যেহেতু কোনো ঠিক নাই
ফলে এখানে সকলেই সকলের সমান, কুটুম
বাঘ কখনো হরিণকে ভাবে না গোলাম
যেহেতু হরিণের পেট থেকেও বাঘের জন্ম সম্ভব
ফলে এখানে প্রাণি দ্বারা প্রাণিহত্যা নাই
এক প্রাণি অন্য প্রাণিরে খায় না
বরং তারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের বোন/ভাই
এখানে কেউ কারো শিক্ষক না
কেউ কারো ছাত্র না
সকলেই কৃষক
মাটিরে আদর করে
বীজ বপন করে
শস্য ফলে
আর সকলে মিলে খায়/বাঁচে
একটা দুঃশ্চিন্তা অবশ্য আছে
যদি উদ্ভিদ
প্রাণির ঘরে জন্ম নেয়া শুরু করে
যদি মাছের ঘরে অথবা জিরাফের ঘরে
একদিন জন্ম নিয়ে বসে
পেয়ারা বা আপেলগাছ
সেদিন থেকে তারা কী খাবে
উদ্ভিদও যদি হয়ে যায় প্রাণিদের ভাই
অবশ্য তারা এও জানে যে
ভাই ভাইরে খাওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো
এই জ্ঞান আছে বলে
তারা হয়তো বেঁচে যাবে
শুধু ভালোবেসে, ভালোবাসা খেয়ে

আরো পড়তে পারেন

তরুন ইউসুফের একগুচ্ছ কবিতা

বহ্ন্যুৎসব কত কিছু পুড়ল! গাড়ি পুড়ল বাড়ি পুড়ল দম্ভের দালান পুড়ে ক্ষার জলপাই সবুজ ট্যাংক নামল পুড়ল বই গল্প রূপকথার বেলুন হাতে পুড়তে পুড়তে ফানুস হয়ে উড়ে গেল বালক মায়ের আঁচল পুড়ল পুড়ল বুকের কাছের লোক যুবকের বুক পোড়াতে পোড়াতে পুড়ে গেল বন্দুক, থানার সেপাই কারো কারো স্বপ্ন পুড়ল আমিও পোড়ার গন্ধ পাই- আমার পুড়ল….

আজাদুর রহমান-এর একগুচ্ছ কবিতা

বাবা আপনার ব্যর্থ শরীর জানত নিরাময় উড়ে গেছে আসমানে, আপনার মৃত্যু হবে। শেষবেলায় আপনি বড় নিঃস্ব, ঈশ্বরের মত নিদারুন, একমাত্র একা। সেকারনেই আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে ভেন্টোলিন সিরাপ খেতেন, অ্যাসমা’র বড়ি গিলে সারা রাত কাঁশতেন। আপনার কফ গলানো কাঁশির শব্দে কোন কোন রাতে আমাদের কাঁচা ঘুম ছিঁড়ে যেত, আমরা বিরক্ত হতাম। তারপর, আপনার জবুথবু মুখের দিকে….

মাহমুদ দারবিশের ডায়েরি ‘নদী মরে যায় পিপাসায়’— (পর্ব: ২)

মেয়েটি আর তার চিৎকার সমুদ্রতীরের মেয়েটি, যার একটি পরিবার আছে আর সেই পরিবারটির একটি বাড়িও আছে। বাড়িটির মধ্যে দুটি জানালা আর একটি দরজা আছে। সমুদ্রে একটি যুদ্ধজাহাজ মজার ছলে তীরে হাটাহাটি করতে থাকা লোকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে: চার, পাঁচ, সাত জন বালির উপর পড়ে যায়। একটি অস্পষ্ট ঐশ্বরিক হাতের সাহায্যে মেয়েটি কিছুক্ষণের জন্য কোন প্রকারে….

error: Content is protected !!