
সাদা রূপের খেলা
কুয়াশা আর বৃষ্টি এক নয়।
কুয়াশা। বৃষ্টি। এক নয়। এক নয়।
একই রকম-, সাদা… মাঠা…।-
নিরাবেগ, মৃত- নীল ফুটে থাকা মাঠে, ধূসর হাওয়ায়-।
বৃষ্টি, ঝমঝম-
কুয়াশা। চোখ অন্ধ করে শুনি, বয়সী কুয়ার মতো করুণে-। নিস্তব্ধ- নৈঃসঙ্গের মজলিসে মত্ত রাতের মতো গমগম নয়। হিমায়িত মৃত্যু- শোনে, ওম- বলে চলেছে যে চোরা অন্তপুরী।
মেলে ফেলি চোখ।
কুয়াশা। কীরূপ! কী রূপ!-দেখা চাই পান করে। চলো তবে পাখি হই- কাক ও বুলবুলি। এই পৌষ আর ওই দূরের মাঘের খেজুরের বুকে বসি- ফোটা ফোটা সুধার কাছে।
সুধা। ফোটা ফোটা-
সুধা। বরিষণ হলো না একবার?
বৃষ্টি। কী রূপ! ছুঁয়ে দেখা যাক।
বৃষ্টি! -দাও না লুকাতে। একটু আড়ে। পারো না নিজেও। প্রেমে- প্লাবনে-।
[গম্ভীর, তীক্ষ্ণ স্তনের বোটা বুঝি- ফুটে থাকে-। শুকনো বুকে। ওখানে নেমে গেছে দেখো {নাভিমূল ছুঁয়ে পলিভরা উরুমাঠে গড়িয়ে, গড়িয়ে, পশ্চিমে- হিমমোচিকা আর বিষকাটালির সহজ শান্তি নিয়ে শুয়ে থাকা খালে- ঘুঙুরের আওয়াজ ফেলে ফেলে, লাল চুড়ির- ছড়িয়ে আওয়াজ, আর তার আলো, মধ্যাহ্নের সূর্যের থেকে,- শিশু এবং উছলানো কিশোরী।}
ঐখানে নেমে গেছে-
এখানে আছে উঠে- গম্ভীর, তীক্ষ্ণ স্তনের বোটার মতো- কী! শোনো শোনো কান পেতে। -পাতলাম তবে কান। পাতি? শব্দের গান শুনিনি বহুদিন। দশ মাস। দু’মাস তবে শুনি। শোনাও দেকিনি। দুমাস। দুমাস।]
বৃষ্টি।-
পারি না লুকাতে। দৌড়াই, এ-ক-টা কাচের ক্যানভাসে-।
বৃষ্টি। বৃষ্টি।
কুয়াশা! একা আমি- তোমার থেকে আলাদা, আলাদা- পালাতে পালাতে- খেলি, খেলি কি? ধীরের ভেতর? আলো-অন্ধকারের কুকুরুত- একদিন ঠিক রূপ নিয়ে রূপ থেকে পালানোর কানামাছি খেলা।
কুয়াশা- পালাতে, পালাতে- খেলে । খেলে কি ভিড়ের ভেতরে- আমার, আমার-? ভিড়ের বাহিরে আমার।
খেলি- খেলিতেছি খেলি তেছি- সাদা রূপের খেলা। আমি- আমরা। আঁরা।
কোথায় আমি, কুয়াশা কোথায়- দেখি না, কুয়াশার ভেতরে-।
পাতা সেলাই
আর্দ্র নরম ক’মুঠ মাটি
একটা বড়ইর চারা
লাগিয়ে দূরে যাই, তার পর
চেয়ে থাকি
একটু ছায়ায় সবুজ গামছা বিছিয়ে শুয়ে থাকি, চেয়ে থাকি- ঈষৎ শূন্যে, ক্রমশ হাওয়ায়- কিশলয় ছড়িয়ে দাড়িয়ে রয়েছে… আঁকা, আঁকা- জলের প্রলেপ মাখা- তকতকে সবুজ।
এরপর শ্বাস নিই বুক ভরে, এরপর ছেড়ে দিই-
বিস্ময়ে দেখি- হাওয়ায় নড়ছে কিশলয়, হাওয়ায় বাড়ছে হাওয়া, নতুন চারা শূন্য ফুড়ে বেড়ে উঠছে। বিস্ময়ে দেখি-
বিস্ময় নিয়ে নিয়ে ফিরে যাই মাটির ঘরে
ধুলোটুকু হাতে লেগে থাকে, তখনো-
কতকাল!- একটা হরিৎ পাতার সঙ্গে আরেকটা পাতার সেলাই করি সুতাহীন, কতকাল-!
আমাদের বধূ
আমাদের- আমাদের! হে হে!
সুটকেসে ভাজ করে তুলে রাখা সুখ!
আমাদের- সুটকেসে ভাজ করে তুলে রাখা সুখ।
আমরা রাত হলে বের করে আনি
গলগলে জোছনার মতো দেখতে
সে মুখ
সাপুড়ে যেভাবে ঝুড়ি থেকে আলোয় আনে শীতল চিকচিকে সাপ- হয় তো-
হয় তো এ সাপিনী আমাদের, বিষদাঁত ভাঙা আছে তার জন্মের পরে,
এ শীতল সাপিনী আমাদের, তোমাদেরও-
তামাটে শরীরের ওপর পেচিয়ে পেচিয়ে ওঠা ঠাণ্ডা বুনোলতার মতো
এই আমাদের সোনার দ্যুতিগুলো জমতে থাকে সুটকেসে- গহীন পাহাড়ে পড়ে থাকা অসূর্যস্পর্শা পাথরের মতো সুটকেসে
ঘাসে, ভেজা মাটিতে, ছায়ায় জোছনায় বেড়ে বেড়ে ওঠা পাথর-
স্বপ্ন ও সৌন্দর্য তুলে রেখে একদিন সেও পুরনো হয়।
তখনও কি লাউয়ের করুণ শুঁয়ার চন্দ্রালোকে ঔজ্জ্বল্য যায় মুছে?
তখনও কি ভোরের নদীর সঙ্গে পালা করে গায় না
শীতের জোছনায় ভেজা চন্দ্রের গান, কুয়াশায় ভোরে সূর্য্যরে গান?
রাইতকালের কথা
রাইতকাল!
দিলের ষোলআনা জো
কথা বলে চলেছে- নিভৃতি- না- নিশিথ। কে? কে যে!
স্ফীত। নীলতর; ছলছল,
-জল,
আন্ধারের লগ্নতা নিয়ে দুই হাত- লও!
নিশির বিলের মতো বুক- কীসের!
কীটের, পতঙ্গের- ঘুমের- আওয়াজ!
সূর্যাস্তের পরে। সূর্যাস্তের পরে; সূর্যাস্তের পরে-
নেবে না? শুনবে না রাত্রীর ব্যাকুল আওয়াজ! ঘুমাবে না! ঘুমাবে না!! ঘুমাবে না!!! এ জোছনার জোতে-?
এই- সূর্যোদয় হলো। চলে যাব-
আন্ধারের লগ্নতা নিয়ে দুই হাত- ফিরিয়ে
নিশির বিলের মতো বুক- চিরে! কীসের! কীসের!
কীটের, পতঙ্গের- ঘুমের-! ভাঁজ- ভেঙে! ভেঙে! ভেঙে!
এই যে- সবই তো ছিল আমারই, আমারই রয়েছে
সূর্যাস্তের পরে। সূর্যাস্তের পরে; সূর্যাস্তের পরে-
ঐ- টানা সূর্যোদয়-! যাও দেখে-