
বয়সের ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল চমৎকার। দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৯৬৭ সালের ১ আগস্ট, ভেনিজুয়ালার রাজধানী কারাকাসে। তখন দুজনেই প্রতিশ্রুতিশীল লেখক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। বের হয়ে গেছে মার্কেসের ‘নিঃসঙ্গতার একশ বছর’। সেপ্টেম্বরে তাদের দুজনের আবার দেখা হয়। এবার ইয়োসার দেশে— পেরুতে। পেরুর রাজধানী লিমার একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় দুজনের একটি সংলাপের আয়োজন করে। লাতিন আমেরিকান উপন্যাস নিয়ে দুই পর্বের সেই কথোপকথন নিয়ে পরে একটি বইও বের হয়। ১৯৭৬ সালের পর বইটির আর কোনো সংস্করণ বের হয়নি। কারণ, এই দুই লেখকের মধ্যে ব্যক্তিগত কলহ। আর এই কলহের ছাপ রয়ে গেলো মার্কেসের একটি পোরট্রেটে। পোরট্রেটটি তুলেছিলেন বিখ্যাত মেক্সিকান ফটোসাংবাদিক রদরিগো মোজা।
১৯৭৬ সালে মার্কেস ও ইয়োসা মেক্সিকো সিটির একটি সিনেমা হলে যান। সেখানে একটি ছবির প্রিমিয়ার ছিল। পুরো সিনেমা হল দর্শকে ঠাসা। এমন এক সময় ইয়োসা ভিড় ঠেলে মার্কেসের দিকে এগিয়ে গেলেন। মার্কেসও দুহাত বাড়ালেন। কিন্তু কোলাকুলি করা যে ইয়োসার উদ্দেশ্য ছিল না তা কে জানতো! ইয়োসা মার্কেসের কাছে এসে তার ডান চোখ বরাবর কষে ঘুষি বসিয়ে দিলেন। সবাই তো হতবাক, এ কি করলেন মারিও বার্গাস ইয়োসা! হট্টগোল বেঁধে গেলো। মার্কেস কিছু বুঝে ওঠার আগেই অন্যান্যরা এসে ইয়োসাকে সরিয়ে দিলেন।

ফটোসাংবাদিক মোজা মার্কেসের বন্ধুর মতোই ছিলেন। চেহারায় চোট নিয়েই একদিন মার্কেস তার স্ত্রীসহ হাজির হন মোজার অফিসে। মোজা মার্কেসকে দেখে তো অবাক। চোখের এই হাল কেন—জানতে চাইলেন। মার্কেস ঠাট্টা করে বললেন, ‘বক্সিং করতে গিয়েছিলাম, আমি হেরেছি।’ পরে অবশ্য তিনি জানান যে, এটি ইয়োসার কাজ। মার্কেস মোজাকে বলেন, তিনি এই কালো চোখের কিছু ছবি তুলে রাখতে চান। মোজা ছবি তুলে দিলেন।
ইয়োসা কেন মার্কেসকে ঘুষি দিয়েছিলেন তা আজো স্পষ্ট নয়। অনেকে বলেন, দ্বন্দ্বটা রাজনৈতিক। অনেকে বলেন, ইয়োসার স্ত্রীকে নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। একজন দাবি করেছেন, ঘুষি দিয়ে ইয়োসা নাকি মার্কেসকে বলেছিলেন, ‘তুমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে যা করতে চেয়েছিলে তার জন্য এই শাস্তি।’ তবে মোজার দাবি, মার্কেসের স্ত্রী মার্সেডিজ তাকে বলেছেন, হিংসা থেকেই ইয়োসা এমনটি করেছিলেন।
মার্কেস মারা গেছেন। ইয়োসা এখনো জীবিত। এখনো যখন তাকে সেই অপ্রিয় ঘটনাটি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। তবে মার্কেসের প্রতি তিনি তার শ্রদ্ধা ও অনুরাগ প্রকাশ করেন অকপটে।