Author Picture

আলোকচিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড (ছয়)

সুদীপ্ত সালাম
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস ও মারিও বার্গাস ইয়োসার মধ্যে মিল অনেক। দুজনেই বিশ্বখ্যাত কথাসাহিত্যিক, দুজনেই লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং দুজনেই সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। মার্কেসের জন্ম ১৯২৭ সালে, কলম্বিয়ায়। তিনি ১৯৮২ সালে নোবেল পুরস্কার পান। আর ইয়োসার জন্ম ১৯৩৬ সালে, পেরুতে। তিনি নোবেল পান ২০১০ সালে।

বয়সের ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল চমৎকার। দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৯৬৭ সালের ১ আগস্ট, ভেনিজুয়ালার রাজধানী কারাকাসে। তখন দুজনেই প্রতিশ্রুতিশীল লেখক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। বের হয়ে গেছে মার্কেসের ‘নিঃসঙ্গতার একশ বছর’। সেপ্টেম্বরে তাদের দুজনের আবার দেখা হয়। এবার ইয়োসার দেশে— পেরুতে। পেরুর রাজধানী লিমার একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় দুজনের একটি সংলাপের আয়োজন করে। লাতিন আমেরিকান উপন্যাস নিয়ে দুই পর্বের সেই কথোপকথন নিয়ে পরে একটি বইও বের হয়। ১৯৭৬ সালের পর বইটির আর কোনো সংস্করণ বের হয়নি। কারণ, এই দুই লেখকের মধ্যে ব্যক্তিগত কলহ। আর এই কলহের ছাপ রয়ে গেলো মার্কেসের একটি পোরট্রেটে। পোরট্রেটটি তুলেছিলেন বিখ্যাত মেক্সিকান ফটোসাংবাদিক রদরিগো মোজা।

১৯৭৬ সালে মার্কেস ও ইয়োসা মেক্সিকো সিটির একটি সিনেমা হলে যান। সেখানে একটি ছবির প্রিমিয়ার ছিল। পুরো সিনেমা হল দর্শকে ঠাসা। এমন এক সময় ইয়োসা ভিড় ঠেলে মার্কেসের দিকে এগিয়ে গেলেন। মার্কেসও দুহাত বাড়ালেন। কিন্তু কোলাকুলি করা যে ইয়োসার উদ্দেশ্য ছিল না তা কে জানতো! ইয়োসা মার্কেসের কাছে এসে তার ডান চোখ বরাবর কষে ঘুষি বসিয়ে দিলেন। সবাই তো হতবাক, এ কি করলেন মারিও বার্গাস ইয়োসা! হট্টগোল বেঁধে গেলো। মার্কেস কিছু বুঝে ওঠার আগেই অন্যান্যরা এসে ইয়োসাকে সরিয়ে দিলেন।

রদরিগো মোজার তোলা মার্কেসের সেই আলোচিত পোরট্রেট

ফটোসাংবাদিক মোজা মার্কেসের বন্ধুর মতোই ছিলেন। চেহারায় চোট নিয়েই একদিন মার্কেস তার স্ত্রীসহ হাজির হন মোজার অফিসে। মোজা মার্কেসকে দেখে তো অবাক। চোখের এই হাল কেন—জানতে চাইলেন। মার্কেস ঠাট্টা করে বললেন, ‘বক্সিং করতে গিয়েছিলাম, আমি হেরেছি।’ পরে অবশ্য তিনি জানান যে, এটি ইয়োসার কাজ। মার্কেস মোজাকে বলেন, তিনি এই কালো চোখের কিছু ছবি তুলে রাখতে চান। মোজা ছবি তুলে দিলেন।

ইয়োসা কেন মার্কেসকে ঘুষি দিয়েছিলেন তা আজো স্পষ্ট নয়। অনেকে বলেন, দ্বন্দ্বটা রাজনৈতিক। অনেকে বলেন, ইয়োসার স্ত্রীকে নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। একজন দাবি করেছেন, ঘুষি দিয়ে ইয়োসা নাকি মার্কেসকে বলেছিলেন, ‘তুমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে যা করতে চেয়েছিলে তার জন্য এই শাস্তি।’ তবে মোজার দাবি, মার্কেসের স্ত্রী মার্সেডিজ তাকে বলেছেন, হিংসা থেকেই ইয়োসা এমনটি করেছিলেন।
মার্কেস মারা গেছেন। ইয়োসা এখনো জীবিত। এখনো যখন তাকে সেই অপ্রিয় ঘটনাটি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। তবে মার্কেসের প্রতি তিনি তার শ্রদ্ধা ও অনুরাগ প্রকাশ করেন অকপটে।

আরো পড়তে পারেন

মৃত্যুতেও থামেনি সমালোচনা

জাতিসংঘের একটি ফুড ক্যাম্পের পাশে একটি অসুস্থ শিশু পড়েছিল। শিশুটির ঠিক পেছনেই একটি শকুন অপেক্ষা করছে, কখন শিশুটি মরবে, কখন সে পাবে মাংসের স্বাদ! কি নিদারুণ দৃশ্য! এই ছবির সমমানের কোনো ছবি পৃথিবীতে আছে কিনা সন্দেহ। ১৯৯৩ সনে ছবিটি তুলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ফটোসাংবাদিক কেভিন কার্টার। একই বছরের ২৬ মার্চ ছবিটি দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়।….

আজও শরণার্থী ‘আফগান গার্ল’

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি ১৯৮৪ সনে পাকিস্তানের পেশোয়ারের কাছাকাছি এক শরণার্থী শিবির থেকে কিশোরী শরবত গুলার ছবি তোলেন। পরের বছর ছবিটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হওয়ার পরপরই আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে এই কিশোরী। আর ছবিটি ওয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত পোরট্রেটগুলোর একটি। গুলার পাথরের মতো চোখ দুটি ছিল বিস্ময়কর। সবুজ চোখে একই সঙ্গে ভয় ও….

টেসলার অপছন্দের ছবি

তার নামে যুক্তরাষ্ট্রে ১১২টি এবং অন্য ২৬টি দেশে আরো ১৯৬টি প্যাটেন্ট নিবন্ধিত আছে, এর মধ্যে ৩০টি শুধু ফ্রান্সেই নিবন্ধিত—এ থেকে অনুমান করা যায় নিকোলা টেসলা কত বড় মাপের বিজ্ঞানী ছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে এই সার্বীয়-মার্কিন ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার একের পর এক যুগান্তকারী আবিষ্কার দিয়ে মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করা শুরু করেন। বিদ্যুৎ ছাড়াও মোটর,….

error: Content is protected !!