Author Picture

কাউসার মাহমুদের একগুচ্ছ কবিতা

কাঁঠালগাছ মারা যাচ্ছে

কিরূপ অযাচিত হয়ে ম্রিয়মাণ অস্তগামী এ রোদটুকু আমাকে ঘিরে ধরে। যেন কোনপথ খালি নেই তার। কোন ফাঁক নেই পালাবার। শুধু এই! আমার এই গন্ধকূট পর্দার আড়াল থেকে একবার উঁকি মেরে ছুঁয়ে যাওয়া। নিঃশব্দ তরঙ্গ ঘিরে কেমন এক ভীত, কম্পিত পরিবেশ তখন; মৃত হাওয়ার দোলাচালে আরেকটু খালি হলে রোদের পথ- ঝরে যাবার আগে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে এবার। আর আমার আপাদমস্তক ঘিরে ধরে নিভৃতে, কি এক অসীম বেদনায় মেরে ফেলে।

মরার আগে, কুঞ্চিত ভ্রুর কোণে মনে পড়ে, আমার দেশের কথা। নিহত মানুষের কথা। একশো একটা খুনের কথা। তাজা ধর্ষনের কথা। অপরূপ কায়দায় লাখলাখ বিচারহীনতার কথা।

এসব ভাবতে ভাবতে, কখন যে আধমরা রোদটি মরাগাঙ হয়ে ভেসে ওঠলো বদ্ধ ঘরের চৌকাঠে। তার কোলে জেগে ওঠলো চর। দ্যাখি! তাতে একপাল শুয়োর ও পাঁঠার পাল লাঠি হাতে অজস্র মানুষকে তাড়াচ্ছে। নির্জিব সেসব মানুষেরা ক্লান্ত। যেন স্থবির; তবুও তারা দৌঁড় দেয় আর পড়ে যায়। পাঠা ও শুয়োরেরা তখন সোল্লাসে চিৎকার করে।

এমন দৃশ্যে! আমি কাঁদতে কাঁদতে উঠে বসি। কিছুটা ধাতস্থ হতে জল খাই। আর প্রলম্বিত বিকেলের হাঁটুতে মুখ রেখে মনে করি; বাড়ির পেছনে লাগানো কাঁঠাল গাছটির কথা। যেন বহুদূরে আত্মার শেষ চিহ্নটি ক্ষয়ে যাচ্ছে। চারপাশ বিষে ভরা বাতাসে, ক্রমশ দমবন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে তার সবুজ পাতারা….

দূরের হাওয়ায় বিস্তারিত দুঃখ

আমি দূরের হাওয়া, ঈষৎ কুঞ্চিত লঘুস্বর। ছিন্ন করোটির তলে, কতদূর মেঘ উড়ে; সম্প্রসারিত নিধুবন। সেখানে তোমার মায়া, অবলুপ্ত প্রেম কুঞ্জবনে অনাবৃত আমি এক স্ফুটনোন্মুখ কবি; সন্ধ্যাগম বালুকাবেলায় গভীর তৃষ্ণায় মরে যাচ্ছি।

মারা যাচ্ছি এই ঘাসবিচালির ছায়ায়। ছায়াময় পর্দাবৃত দিনের দখিনে বসে উলঙ্গ হচ্ছি। যেন- আমাদের পূর্বপরিচয়, চলে যাওয়া দিনের মতোই প্রভাস্বর। যেখানে কোনদিন কেউ কারো মুখ দেখবো না।

সন্ধ্যার মেয়ে

তুমি কোথায় চলে গেছো সন্ধ্যা, আমি তা জানি
বিকেলের পায়ে পায়ে, সূর্যের মুখ ধরে-
যে পাতার আড়াল হলে, আমি তাকে চিনি সন্ধ্যা।

তোমার বুকের উপর হেঁটে হেঁটে, কেঁদে কেঁদে
আঁচলে মুখ গুঁজে- চিরহরিৎ বৃক্ষের পিছে যে মেয়েটা লুকাল;
আমি তাকেও চিনি।

তার স্বর, কণ্ঠে আটকে থাকা ওই নাম
যা এখন তোমার এ স্তব্ধতার ভেতর ফাটছে
বিযুত পদভারে বারবার আছড়ে পড়ছে
আমি তাও জানি।

তোমার মেয়েকে একা ফেলে,
তুমি কোথায় চলে গেছো সন্ধ্যা, আমি তা জানি।

ছায়া ও কলি বিষয়ক

যে ছায়াটি সস্নেহে নিবিড় আনন্দ ভরে ঢেকে দিয়ে গেল। ঢেকে দিয়ে গেল সদ্য ফোঁটা ফোঁপানো কলির ঠোঁট। তৃণাচ্ছন্ন এই বনভূঁই কোলে আমাকে কেবল ও’ই ডেকেছে। বিপুল এই বনসাই মাঝে ;একাকী নির্বাণ প্রদীপের মত মরে যেতে যেতে- ওই দেখেছি শুধু।

দেখেছি, স্নিগ্ধ বাতাসের চালে, ঢলে ঢলে কি করে তা ডাকে! কীভাবে তা জাগিয়ে তোলে মানুষের মন। বহুরাগ পরাঙ্মুখ, ছুটি দেয়া জীবনের মুনি-ও তাতে ফিরে ফিরে চায়। আর অস্তমিত মাগরেবের মাঝে মনে করে, প্রথম ও শেষ রতিক্রিয়া’র কথা।

মানুষ

কোথায় হাঁটছো মানুষ? কে তোমাকে মনে রাখে বলো!
তোমার পেছনে শতশত পথ, স্নিগ্ধ নদীর তট।
নীলাভ আকাশ ছেটে কোথায় উঠলে চূড়ায়!
অথচ কেবল বেঁচে আছো খোদাইয়ে।
কোনদিন ঘুরতে গিয়ে সেই যে পাথরে লিখেছিলে নাম-
ও’ই তোমাকে ডাকে।

আরো পড়তে পারেন

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

বীভৎস খেলা নগরে বাতাসে মথিত জনস্রোতের কোলাহলে শুনতে পেয়েছি সারিগান গঞ্জের হাটে আকাঙ্খার গভীরে মন্দ্রিত অভিন্ন প্রাণ নীরব দর্শক ছিলাম ব্যর্থতার করুণ গান ফেরার মহড়ায় বঞ্চিত কুঁড়েঘরে সরাইখানার- শুঁড়িখানার মাছিরাও নেশায় বুদ্বুদ প্রকম্পিত কান্নার পর একদিন হাসির তিলকরেখা বিচ্ছুরিত শৈশবের ক্ষুধার্ত চিৎকার ক্রর হাসি চেপে মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলে ভাগ্য প্রহসনে যুদ্ধের ব্যগ্র দামামা থেমে গেলো-….

তোফায়েল তফাজ্জলের একগুচ্ছ কবিতা

উপায় অবলম্বন কাঁটা থেকে,  সুচালো কাঁকর থেকে পা রাখিও দূরে, জায়গা না পাক চলন-বাঁকা চেতনায় উড়ে এসে বসতে জুড়ে; এসবে খরগোশ কানে থাকবে রাতে, পড়ন্ত বেলায়, দ্বিপ্রহরে, পূর্বাহ্নে বা কাক ডাকা ভোরে। দুর্গন্ধ ছড়ানো  মুখ ও পায়ের তৎপরতা থেকে গ্রীষ্ম থেকে সমস্ত ঋতুতে একে একে নেবে মুখটা ফিরিয়ে তিলার্ধকালও না জিরিয়ে। কেননা, এদের চরিত্রের শাখা-প্রশাখায়….

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

error: Content is protected !!