Author Picture

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

কাউসার মাহমুদ

(উৎসর্গ: বেলাল ভাই ও নাজমুস সাকিব’কে, কবিতাটি মসজিদে নববীতে বসে লেখা হয়েছে )

ও আমার হৃদয়ের মহাজন
তুমি তো বন্ধু মুমিনের
মনেতে বইছে মরুঝড়
তোমারও সাক্ষাৎ পরমের

আমি কি উন্মাদ কতকাল
সুতোতে গাঁথা যে প্রেমালাপ
তোমাকে স্বপ্নে গতকাল
বহুদূর ইবাদাতে শোকতাপ

তুমি কি অশ্রুর দীর্ঘ মোনাজাত
নির্ঝর বয়ে যাও অভিঘাত
তোমাকে ডাকি সেই ক্রমাগত
বহুকাল কেটে গেছে পরাজিত

আজকে দেখা দাও-
ক্লান্ত পাখিটিরে
সারা দাও মোনাজাতে-
আমারে দয়া করে

চোখেতে কতদূর মিনারের বীতশোক
সুস্থির ধীরপায়ে কাছে আসে পরলোক
তুমি তো মহারাজ হে রাসূল
অন্তিম মোনাজাতে ডাকছি কি ব্যাকুল
তুমি কি শুনো না এই ডাক
তোমাকে ডাকছি-
পুরনো সে নিনাদ
আমাকে ডেকে লও অন্তরে
ক্ষমাটি ঝুলে আছে-
নির্মেঘ প্রান্তরে।

ওই তো ডাকছে পাখিরা
সন্ধ্যার গায়ে চড়ে আখিরাত
উজ্জ্বল সমস্ত বালুচরে
সেজদায় কেঁপে ওঠে পুলসিরাত

কি ভীষণ ভয়াবহ সেইদিন
অশ্রুতে বিগলিত সারাদিন
তুমিতো ডাকবে রবেরে
ক্লান্ত নবীদের আখেরে

আহা কি সেইদিন
ভীতরব মানুষের
তুমি কি ঠায় দাঁড়িয়ে
নিমীলিত চোখ ওই-
তোমারও বারিশের

আমি কি মাফ পাব ওইদিনে
তুমি কি ডাকবে পেছনে
আহত পাখিটিরে দুর্দিনে
পুড়ে নেবে জামাটির আস্তিনে

কি রকম উড়ছে কবুতর
নীল গম্বুজে সাদামেঘ
এই তো পাশ থেকে
তোমাকে ডাকছি ক্রমাগত
ডুকরে জাগছে এই আবেগ

কাঁপছে আলোটি টুপ শিশিরের
চারদিক সমাহিত শান্তি প্রভাতের
গম্ভীর পাহাড়ে বাজছে ভায়োলিন
ইমামের কন্ঠে ফজরে সূরা ত্বীন

আহা কি আয়াতে ভিজছে পুরো বুক
কোথাও রুকুতে আয়োজিত ধুকপুক
এই ব্যাথা গোলামের ফুলেল কার্পাসে
সমস্ত চুরমার দীর্ঘ সেজদার বিন্যাসে

করুণ বাগডোরে জমা হয় হাহাকার
তসবীহর গুটিতে স্বচ্ছ হীমজল
আমারও মন বলে এই লও সালামের
আনত চোখ জুড়ে বিরহ আরামের
তোমাকে দেখি গো-
এইচোখে হে রাসূল
রওজা ভিজে যায়-
আমারও চোখে ফুল

সবুজে ছায়াপাটি সন্ধ্যা কাঁপছে
তীর্থে পাখিরা ডানা মেলে হাসছে
ওই তো গম্বুজ মিনারও আজানের
সমস্ত বিধূনন সাহাবী বেলালের

আমি তো ভাবছি পরাজিত মুসাফির
গভীর পরলোকে বে’খুদী কি আখির

পাকা ঘুম রোদটিতে উড়ছে ধূলিমেঘ
ছায়াতে নতজানু বিহঙ্গ সে কুলীন
আধা শোক বিত্রস্ত জমাট ও বায়ূবেগ
চিবুকে খুনসুটি খুশীতে যে মুমিন

করুণা বর্ষায় তিরতির মৃদুঠোঁট
আসরে নামছে বিনম্র ছায়ালোক
জমছে মধুবনে আনত যে পলক
বিষন্ন আয়ূতে হাঁটছে কত লোক

তুমি কি মায়া তিল নীরদ ঝুমকায়
ফুটছে জবা ফুল বহুদূর পাতাটায়
হামদে নিহারিল তামাম কায়েনাত
পারস্য ইরানে থমকে ওই আঘাত

কোথা কোন পাহাড়ে এখনো বাজে তান
নিরন্দ্র ছায়াঘেরা নিরিবিলি কি আজান
সমস্ত বর্ণিল নদী ও চমকানো মায়াবিল
এখনো চারপাশ জেগে তুলে সূরা ফিল

ঘনঘোর আন্ধারে কুঁজো পথ বিরামে
বিনীত আরজিতে পড়ে থাকি হারেমে
সাফা কি মারওয়াতে দৌঁড়ি যাতনায়
স্মরণে, শান্তিতে; তোমারও মদীনায়

সান্ধ্য দুরুদে আঙ্গুলে কাপে কড়
বলছি সালামে; সালাতে ভরা ঘর
এতো কি প্রেম দিলে কোথা হে তুমি গো
গুনাহ’রও বাগডোরে কাঁপছে দেহ মোর

আরো পড়তে পারেন

গাজী গিয়াস উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

বীভৎস খেলা নগরে বাতাসে মথিত জনস্রোতের কোলাহলে শুনতে পেয়েছি সারিগান গঞ্জের হাটে আকাঙ্খার গভীরে মন্দ্রিত অভিন্ন প্রাণ নীরব দর্শক ছিলাম ব্যর্থতার করুণ গান ফেরার মহড়ায় বঞ্চিত কুঁড়েঘরে সরাইখানার- শুঁড়িখানার মাছিরাও নেশায় বুদ্বুদ প্রকম্পিত কান্নার পর একদিন হাসির তিলকরেখা বিচ্ছুরিত শৈশবের ক্ষুধার্ত চিৎকার ক্রর হাসি চেপে মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলে ভাগ্য প্রহসনে যুদ্ধের ব্যগ্র দামামা থেমে গেলো-….

তোফায়েল তফাজ্জলের একগুচ্ছ কবিতা

উপায় অবলম্বন কাঁটা থেকে,  সুচালো কাঁকর থেকে পা রাখিও দূরে, জায়গা না পাক চলন-বাঁকা চেতনায় উড়ে এসে বসতে জুড়ে; এসবে খরগোশ কানে থাকবে রাতে, পড়ন্ত বেলায়, দ্বিপ্রহরে, পূর্বাহ্নে বা কাক ডাকা ভোরে। দুর্গন্ধ ছড়ানো  মুখ ও পায়ের তৎপরতা থেকে গ্রীষ্ম থেকে সমস্ত ঋতুতে একে একে নেবে মুখটা ফিরিয়ে তিলার্ধকালও না জিরিয়ে। কেননা, এদের চরিত্রের শাখা-প্রশাখায়….

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

error: Content is protected !!