
প্রার্থনাগার থেকে
ধুয়ে ফেল রক্তের দাগ; ওই পবিত্র কিরীচ।
ধর্মোন্মাদ মানুষের কাছে জমা রাখ তার
সব ক’টা গান। আজ ঈষাণ-সমুদ্র তীরে
নেমেছে যেখানে গৌণ দেবতারা, তাকে ঘিরে
নাচছে ঋষিপুরুষ আর পৃথুলা রমণীর দল।
এই স্নানাগার, এই সৌরস্মৃতি ফেলে
স্তোত্রের বিষ তারে আজও তাড়া করে।
ফলে প্রার্থনাগার থেকে ভুল স্মৃতি নিয়ে
ফেরে মানুষ। তুমি তার বক্ষ উন্মোচন কর।
তুমি তার হৃৎপিন্ডে উন্মাদ গানের স্মৃতি ভরে দাও।
ব্রুনো
আমাদের মনে তখনও বর্তুল পৃথিবীর ধারণা জন্মায়নি।
ধর্মগ্রন্থগুলোর প্রবোধের ফলে আমরা ভাবতাম, ওই যে
দূরের মাঠ; তার শেষে আকাশ এসে নেমেছে। সেখানে
একদিন নিশ্চয়ই পৌঁছোনো যাবে। আমাদের স্কুলঘরগুলো
ছিল হেয়াঁলি মাখানো, বিভ্রান্তিকর। কুয়াশার মধ্যে মাথা
তুলে রাখা একেকটা ডুবোপাহাড়ের মতন। ধর্ম-শিক্ষকেরা
প্রিয় ছিল আমাদের, আর বিজ্ঞান শিক্ষকেরা মিথ্যেবাদী।
আমরা তাদের ছলগুলো এড়িয়ে চলতাম। তারা যখন
আমাদের ব্রুনোর কথা বলতেন; আমরা ভাবতাম এমন
পাগল ও প্রপাগান্ডিস্টের পুড়ে মরাই ভাল। অথচ আমাদের
হৃদয় করুণায় আর্দ্র ছিল। আমরা ভাবতাম, গ্যালিলিওর
টেলিস্কোপে চোখ রাখলেই প্রভূ আমাদের অন্ধ করে দেবেন।
যদিও আমাদের জ্ঞানতৃষ্ণা ছিল প্রবল। প্রতি সন্ধ্যায় উদভ্রান্ত
বালকের মতন আমরা পিতার সামনে বসতাম। তিনি বলতেন,
প্রভূ সর্বজ্ঞ; আর তিনিই জানেন। একটা কালো কাপড়ে চোখ
বেঁধে তিনি আমাদের পৃথিবী দেখতে বলতেন। আর আমরা
দেখতে পেতাম তারকারাজি, সৌরঝড়, আমাদের তর্জনীর
উপর সাঁইসাঁই পৃথিবীটা ঘুরছে।
অর্ধসত্য
চিতার চোখের নিচে কালো দাগ কেন-
এমন মাসাই প্রশ্নের তরে ডুবে গেছে রাত।
এই আর্ত বনভূম গুমরে উঠছে কেবলই
কথা, উপকথায়। দূরে অর্ধসত্যের মত
চন্দ্র ডুবছে, একাগ্র- যেন ক্ষয়ে যাওয়াই
ভবিতব্য তার। বিলীয়মান শিকারের পিছু
ধাওয়া করে চির ক্লান্ত যেই কাফ্রি যুবক,
তার হাতে ক্রুদ্ধ এক হাতিয়ার জ্বলছে।
তার ফিরে আসার পথ ঘুরে, ঘুরে, ঘুরে
উন্মত্ত চিতার পেচ্ছাবের ঘ্রাণের মাঝে
হারিয়ে গেছে।