Author Picture

জাহেদ সরওয়ারের একগুচ্ছ কবিতা

জাহেদ সরওয়ার

শব্দগন্ধ

নিঃশ্বাসের সাথে আমরা
পড়ি শব্দের নামতা
শব্দে শব্দে তৈরি হচ্ছে
নিরন্তর পৃথিবী

ওরা বলেছে থেমে
গেলেই আমার মৃত্যু।
থামিনা। নাকমুখ থেকে
বের হয় অবিরাম শব্দগন্ধ

এভাবে বসবাস করি
শব্দ আর মৃত্যু নিয়ে

 

ইটভাটা

যে দিকে তাকাবে
শুধু ইট, শুধু ইট
বৃক্ষদের বিদায়
দিয়েছে শহর।
প্রকৃতি বলতে
দূরে তাকিয়ে আমরা
ইটভাটার চিমনির
ধোঁয়াকেই বুঝি
ওখানেই তৈরি হচ্ছে
অনাগত সন্তানদের আত্মা।

 

শব্দ-রুটি

আমরা চেয়েছিলাম
শব্দ-রুটি খেয়ে বাঁচতে
এখানে রুটি তৈরি
হচ্ছে বুলেটে।
প্রতিবেশিদের কাছে
যা চেয়েছিলাম।-মরে গেছে
সে সব ভালবাসা।
গ্যারেজের ছিটকে পড়া
মবিলের আয়নায়, যার যার
মুখ দেখে
কাঁটিয়ে দেব
একেকটা নার্সিসাস জীবন!

 

মেশিনগান

তারা চেয়েছিল দুইমলাটের ভেতর
কিছু শব্দে জিতে নেবে গ্লোবটাকে
কিন্তু ডিএনএর ছক অন্য।
শব্দরাশি পরিণত হয়েছে
কেবলি বাকোয়াজে
শেষে তারা উৎপাদক
হয়েছে ভোদকা বা স্কচ
বা ঘাস আর চোলাইয়ের যোগানদার
বইভর্তি ঘরে বন্দি কয়েকজন বুদ্ধিজীবী
বাইরে সেলাই হচ্ছে নতুন পৃথিবী, কয়েকটি মেশিনগানে

 

কোষ

গহীনে কোথাও আমি দেখি নীল।
আকাশ সাদা হয়ে গেছে
পাখিরাও নীরবে পাড়ি দেবে পথ
যেন বেথোভেন বাজিয়ে চলেছে অনন্ত সোনাতা।
স্তব্ধতা যেখানকার মাতৃভাষা
কিছুই হয় না যেখানে অনুচ্চর কবিতা ছাড়া
নিষিদ্ধ হয়ে আছে কান্না
কাদার ভেতর শুধু হেঁটে যাওয়া পায়ের ছাপ

 

শব্দজব্দ

শব্দকে ধ্বংশ করার
সব চেষ্টা ওরা সমাপ্ত করে আনে
ওরা হাতড়ায়
তার উৎসে
শব্দ, তোমার উৎস কোথায়?

শব্দকে ওরা বানায়
নিজের বোনের ধর্ষক
তাকে ওরা কোঁপায়, খুচিয়ে মারে

ফাঁসি ও রাক্ষসরাজ্য
ছেড়ে যাবার আগে
সাড়ে চারফুট সেলের মধ্যে
আমরা অজস্র শব্দ পুঁতে দিই।

 

থাবার সমুদ্র

হে সমুদ্র
আমার প্রতিপালক
প্রথম যৌনতা
অন্ধ বংশীবাদক

তার কাছ থেকে
আমাকে ছিনিয়ে
নিল একটি থাবা

এই জীবন
সেই থাবা থেকে
বেরিয়ে আসার
এক ব্যর্থ যুদ্ধ।

 

শব্দের জঙ্গল

এখানে সূর্যের নিচে শুধু ভয়
পলকা বন্ধুতা ডুবে গেছে
চিরতরে
এখানে নয়া শত্রু তৈরির খেলা
তৈরি হচ্ছে একই মন্ডে

নিজেকে সর্ন্তপণে বাঁচিয়ে রাখা
শব্দের জঙ্গলে
যতদিন ইঁদুর আর বইপোকা
শব্দদের খেয়ে না ফেলে

 

সমুদ্র সন্ধান

আগামী বছর সব সমুদ্র
নাকি পশ্চিম দিক থেকে
মরে আসবে

তবে কি করে বাঁচাবো
আমাদের এই ভাসমান বন্দর

আমাদের পাড়ার মাঝির কাছে
আমরা সন্ধান করি
একটি জীবিত সমুদ্রের

 

শান্ত সাদা বাড়ি

ওখানে একটি শান্ত
সাদা বাড়ি-
যেখান থেকে নেমে আসে
মাঝে মাঝে শান্তির পসরা

এদিকে বুলেট সেলাই করছে
পিতৃভূমি আর
মাতামহদের কবর হয়ে যাচ্ছে
আগুনের ভেতর।

 

সমুদ্র জীবনের কথা

আমাদেরও ছিল মাছের জীবন
দেহ ডুবিয়ে ভেসে থাকা
জলমগ্ন আকাশে
ইচ্ছে ভেঙে দিল
জলজ বৃত্ত বাস্প হয়ে গেলে
নিজেদের সপে দেই
ডাঙায়

কাদায় ছটফট করার ইতিহাস
এত দ্রুত ভুলে যাবে?
তৃষ্ণা তোমাকে বারবার
মনে করায়
সমুদ্র জীবনের কথা।

 

কাফেলা

কাফেলাটি এগিয়ে যায়
বাড়তে থাকে গুঞ্জন
চষে বেড়ায় তারা দেশ
আর মহাদেশ

তার খুঁজে চলে
একটি বুলেটশূন্য পৃথিবী
ভয় ও দ্বিধামুক্ত চারণভূমি

তারা কেবল চাষ করে
এক নিষ্ফল মাঠে
একটি স্বপ্নফুলের
অবাস্তব বৃক্ষে।

আরো পড়তে পারেন

আহমেদ ফরিদের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার সাথে দেখা হওয়া জরুরী নয় সেদিন তুমি আমাকের ডেকে বললে, ”আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে এসো চা খেয়ে যাও ঝাল মুড়ি, পেঁয়াজ ভেজে দেবো সঙ্গে কাঁচালংকাও থাকবে। দুজনে চা খাব, মুড়ি খাব, আর গল্প করবো।’ আমি বললাম, ’না, আমি যাবো না । আমি আমার জানালায় বসে আকাশ দেখছি, বৃষ্টি দেখছি, আকাশের কান্না দেখছি, গাছেদের নুয়ে….

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ১৯৭১) মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন রুশ কবি নিকোলাই রুবৎসভ। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারাজীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার….

সোহরাব পাশা’র একগুচ্ছ কবিতা

নিদ্রিত ঘ্রাণের শব্দ দীর্ঘ যায় আশালতা ফিরে আসে বিষণ্ণ গোধূলি ফিরে আসে দুঃখিত সকাল, ক্ষয়ে যাওয়া এক দূরের উপনিবেশ পাখির চেয়ে মানুষের কোলাহল বেশি কোনো মৃত্যু মানুষকে অপরাধী করে না নিঃশ্বাসের রোদে আবছায়া নিদ্রিত মেঘ স্মৃতির অসুখ বাড়ে; দূরে নির্জন আধাঁরে জেগে ছিলো মানুষের কথা পুরনো সে বাড়ি সেই ছায়াপথ মায়াপথ জুড়ে কতো ভুল মানুষের….

error: Content is protected !!